এমন কোনো ব্যক্তি পৃথিবীতে খুঁজে পাবেন না, যাদের জীবনে ব্যর্থতার গল্প নেই। শুধু দরকার সেই ব্যর্থতা গুলিকে সাজিয়েই নিজের পরবর্তী পদক্ষেপ গুলি তৈরি করা। আজ আপনার জন্য থাকল কিছু সফলদের ব্যর্থতার গল্প। অধিকাংশ মানুষই ব্যর্থতা গুলিকে নিয়েই বসে থাকে, এক সময় ভালো সময় আসবে এই আশায়। কিন্তু তারা এটা বোঝে না যে, ব্যর্থতার মাধ্যমেই ভালো সময় নিয়ে আসা যায়। তাহলে নীচের মোটিভেশনাল গল্প গুলি পড়তে থাকুন, এবং উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন।
সফলদের ব্যর্থতার গল্প। ব্যর্থতার গল্প।
ওয়াল্ট ডিজনির ব্যর্থতার গল্পঃ-
আমাদের অনেকেরই ছোট বেলার একটা বিরাট অংশ কেটেছে কার্টুন দেখে, পৃথিবী বিখ্যাত কার্টুন গুলির মধ্যে অন্যতম হল মিকি মাউস, আর ডোনাল্ড ডাক। হয়ত আপনিও নিশ্চয়ই এই কার্টুন গুলি দেখেছেন। কিন্তু এই কার্টুন চরিত্র গুলি কে নির্মাণ করেছিল, জানেন কি? ওয়াল্ট ডিজনি, তিনিই এই জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্র গুলির নির্মাতা।
প্রথম জীবনে তিনি একটি নিউজ প্যাপার কোম্পানিতে কাজ করতেন। একদিন এডিটর তাকে কোম্পানি থেকে বেড় করে দেন, অভিযোগ ওয়াল্ট ডিজনির মাথায় কোনো ক্রিয়েটিভিটি নেই। এমনকি কোনো কল্পনা শক্তি পর্যন্তও নেই তার। শুধু কি তাই, তাকে অলস প্রাণী বলতেও কোনো দ্বিধাবোধ করেননি সেই নিউজ প্যাপার ইডিটর।
এরপর শুরু হয় তার নতুন পথ চলা, তবে এই পথও যে ছিল অনেক কঠিন, বারংবার ব্যর্থ হতে হয়েছে তাকে। কার্টুন নিয়ে কাজ করতে গেলে সেখানেও তিনি ব্যর্থ হন, এরপর তিনি অভিনয়ের জগতে নামেন, কিন্তু সেখানেও একের পড় এক ব্যর্থতা তাকে নিরাশ করে দেয়।
এরপর তিনি আবার কার্টুন চরিত্র নির্মাণে মননিবেশ করলেন। অনেক উথান-পতনের পড় অবশেষে তিনি নিজের একটি সুন্দর স্থান বানাতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর আজ তার জনপ্রিয়তা গোটা বিশ্বজুড়ে।
তিনি একসময় বলেছিলেন, হ্যাঁ মানছি আমার জীবনে অনেক কঠিন পরিস্থিতি এসেছিল, কিন্তু তারা আমাকে ভাঙ্গতে আসেনি, বরং আমাকে কোনো কিছু করতে উৎসাহ জোগাতে এসেছিল।
তার বিখ্যাত কথা, “যদি তুমি স্বপ্ন দেখতে পাড়, তুমি অবশ্যই এটিকে বাস্তবে পরিণত করতে পাড়বে।“
“আপনি নিজেকে যত বেশি চিনবেন ঠিক তত বেশিই আপনার নিজেই নিজেকে ভালো লাগতে শুরু করবে, এরপর আর অন্যকে ভালো লাগা এখানেই কমতে থাকবে। তাই নিজেকে প্রথমে ভালোবাসুন।“
টমাস আল্ভা এডিসনের ব্যর্থতার গল্প:-
আপনি বাল্বের আবিষ্কারক টমাস আল্ভা এডিসনের নাম হয়ত অবশ্যই শুনেছেন। শুধুমাত্র বাল্ব নয়, তিনি আরও বহু উল্লেখযোগ্য যন্ত্রের আবিষ্কর্তা। টমাস আল্ভা এডিসনের সাথে একটি বিখ্যাত গল্প জুড়ে আছে।
একদিন এডিসন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে আসলেন, এবং তার মায়ের হাঁতে একটি চিঠি দিয়ে বললেন- “স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল এই চিঠিটা তোমাকে দিতে বলেছেন” চিঠিটা দেখার পড় এডিসনের মা কাঁদতে থাকেন। এডিসন তার মাকে কান্না করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তার মা জানান- “এই চিঠিতে কি লিখা রয়েছে জান, লেখা রয়েছে আপনার বাচ্চা খুবই চালাক চতুর এবং হুঁশিয়ার, আমাদের স্কুলে এরকম কোনো শিক্ষক নেই যে তাকে পড়াবে, তাই আপনার বাচ্চাকে আপনি দয়া করে নিজেই পড়ান।“
এই ঘটনার পড় অনেক কাল কেটে গেছে, এদিকে এডিসনও অনেক বড় হয়ে গেছে, নতুন নতুন বিভিন্ন আবিষ্কার পৃথিবীবাসিকে উপহার দিচ্ছে। এমনই একদিন তিনি কোনো কাজে তার বাড়ির পুরানো জিনিসপত্র গুলিতে কিছু একটা খুঁজছিলেন। তখনই তিনি তার মাকে পাঠানো শিক্ষকের চিঠিটা পেলেন, খুলে দেখলেন তাতে লেখা রয়েছে-
“আপনার বাচ্চার মাথায় কোনো বুদ্ধি-শুদ্ধি নেই, আমরা এরকম বাচ্চাকে আমাদের স্কুলে পড়াতে পাড়বনা, তাই আপনার বাচ্চাকে আর স্কুলে পাঠাবেন না।“ এরপরের কাহিনী খুবই পরিষ্কার, এডিসন তার একটি পার্সোনাল ডাইরিতে এই চিঠিটির ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন, এবং লিখেছেন, কিভাবে একজন মা তার বুদ্ধিহীন বাচ্চাটিকে একজন বিজ্ঞানীতে পরিণত করল।
অর্থাৎ তার মা প্রথমে এডিসনকে নিজের মত করে বুঝিয়ে পড়িয়েছিলেন, কেবলমাত্র মায়ের আদর্শেই বেড়ে উঠা এডিসন জায়গা করে নিলেন পৃথিবীর প্রথম সারির বিজ্ঞানীদের মধ্যে। সাধেই কি আর বলা হয়-“পৃথিবীর সবথেকে বড় শিক্ষক হল মা”
তার বিখ্যাত উক্তি-
“আমি ব্যর্থ হইনি, আমি শুধুমাত্র ১০,০০০ টি নতুন রাস্তা পেয়েছিলাম, যেগুলি কাজ করেনি। “
“অনেক ব্যর্থ মানুষেরই ব্যর্থ হওয়ার মূল কারণ হল যখন তারা সফলতার দোরগড়ায় পৌঁছে যায় ঠিক তখনই তারা হাল ছেড়ে দেয়।“
“আমাদের সবথেকে বড় দুর্বলতা লুকিয়ে আছে, আমাদের হাল ছেড়ে দেওয়ার মধ্যে। আর সফলতার সবচেয়ে সহজ রাস্তা হল কেবল মাত্র আরেকবার বলে চেষ্টা করে যাওয়া।“
পড়ুনঃ-ব্যর্থদের সফলতার গল্প
নিক ভুজিসিকের গল্পঃ-
আপনি যদি আমাদের পেজ নিয়মিত অনুসরণ করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আপনি হয়ত নিক ভুজিসিকের নাম জেনে থাকবেন। নিক যখন তার মায়ের গর্ভে ছিল তখন বিরল টেট্রা অ্যামিলিয়া উপসর্গের জন্য তার হাত এবং পা বিকশিত হয়নি। স্বভাবতই তার জন্ম হয়েছিল হাত পা ছাড়াই।
কিন্তু হাত পা না থাকলেও মন তো রয়েছে, আবার সেই মনে ইচ্ছাও তো রয়েছে, সেই ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে জীবনে অনেক কিছুই করে ফেলেছেন তিনি।
নিক অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা। যখন সে ছোট ছিল তখন সে বারংবার তার এই শারীরিক ত্রুটির জন্য তার বাবা-মায়ের কাছে কারণ জানতে চাইত, কিন্তু তাদের কাছে কোনো জবাব ছিল না। যখন অন্য বাচ্চারা খেলায় মগ্ন থাকত, নিক মনের দুঃখে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকত। এরপর যখন তার বয়স প্রায় ১০ বছর তখন সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়।
প্রায় ৭ বছর পড় একদিন নিকের মা তাকে একটি খবরের কাগজ পড়তে বলেন। যেখানে একজন নিকের মতনই মানুষের সফলতার কাহিনী তুলে ধরা হয়েছিল। এরপর হঠাৎ করেই নিকের মধ্যে দেখা দিল এক অন্য রকমের পরিবর্তন। শুরু করলেন এক নতুন পথ চলা।
বর্তমানে তিনি একজন বিশিষ্ট মোটিভেশনাল বক্তা, আর্টিস্ট এবং লেখক। শুধুমাত্র তাইই নয়, তিনি সাঁতার কাঁটা থেকে শুরু করে একে একে আয়ত্ত করে ফেলেন, বাজনা বাজানো, ছবি আঁকা, ফুটবল খেলা এমনকি কম্পিউটারে টাইপিং কোনো কিছুই বাদ গেল না।
তিনি নিজে শারীরিক দিক থেকে অক্ষম হলেও, বর্তমানে তিনি একটি অলাভজনক NGO চালান।
তার কথায়- “আমি চেষ্টা করছি তো করছিই, ব্যর্থ হলে আবারও চেষ্টা করব। কারণ যেই মুহূর্তে আমি চেষ্টা করা ছেড়ে দিব, সেই মুহূর্তেই আমি হেরে যাব।“
হুম এবার বলুন, উল্লিখিত ব্যক্তিগণ যদি এত বিপুল পরিমাণ দুর্বলতাকে কাটিয়ে উঠে সফলতার চূড়ায় পৌছাতে পাড়েন তাহলে আপনি কেন পারবেন না? আমি জানি আপনি অনেক দূরদর্শী ও প্রতিভাবান শুধু পাড়ছেন না নিজের সেই সুপ্ত শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে।
তাহলে আজ এতটুকুই থাকছে। দেখা হচ্ছে নতুন আরেকটি ব্লগে। নিয়মিত আপডেটের জন্য আমাদের ফেসবুক পেজ অবাক বিশ্ব অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে পাড়েন।
ধন্যবাদ। শুভকামনা রইল।
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।