আজ থাকছে সফলতার ছোট গল্প। দুইজন বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরব। কিভাবে ব্যর্থতা থেকে ঘুরে নিজেকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করিয়েছিলেন, তারই গল্প থাকবে আজ। এই দুইজন সফল ব্যক্তিদের জীবনী পড়ার পড়, আপনি বর্তমানে যে বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছেন, তা তুচ্ছ মনে হবে।

সফলতার ছোট গল্প। সফল ব্যক্তিদের জীবনী। অনুপ্রেরণা ও সফলতার গল্প।

স্যর আইজ্যাক নিউটনের মর্মস্পর্শী সফলতার গল্পঃ-

বিজ্ঞানের ইতিহাসে, স্যার আইজ্যাক নিউটনের নামটি নিশ্চয়ই কারও অজানা নয়। কিন্তু এই নামের পিছনে যে হাড় কাঁপানো ইতিহাস রয়েছে তা কি জানেন? আমাদের জীবনে একটু বাঁধা আসলেই, আমরা ভেঙ্গে পড়ি, কিন্তু নিউটনের জীবনের গল্প পড়ার পড় আপনার মনে হবে, আপনি যে বাঁধাগুলির সম্মুখীন হচ্ছেন, সেগুলি কিছুই নয়।

আইজ্যাক নিউটনের জন্মই হয়েছিল নির্দিষ্ট সময়ের আগে। অর্থাৎ একজন স্বাভাবিক শিশু মাতৃগর্ভে যে পরিমাণ সময় থাকার পড় ভূমিষ্ট হয় তার অনেক আগেই। স্বভাবতই জন্মের পড় থেকেই তিনি অত্যন্ত দুর্বল ছিলেন। এমন দুর্বল একটি শিশুর ভূমিষ্ট হওয়ার তিনমাসের মধ্যেই নিউটনের বাবা মারা যান।

পিতার দেহ ত্যাগের মাত্র তিন বছর পড়েই, নিউটনের মা আবার একটি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সৎ বাবার কাছে ঠাই হয়নি শিশু নিউটনের। দুর্বল নিউটন তার দিদার কাছে বড় হতে থাকে। ভূমিষ্ট হওয়ার মাত্র তিন মাস পড়েই তিনি বাবাকে হারিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু মাত্র তিন বছর পড়েই, মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত হলেন তিনি।

যখন নিউটনের একটু বোঝার ক্ষমতা হল, তখন থেকেই তার মা এবং তার সৎ বাবার প্রতি একটি বিরূপ মনোভাব তার মধ্যে জন্ম হয়। পিতা-মাতার আদর আর মায়ের স্নেহ-মমতা ছাড়া বেড়ে উঠা, একজন শিশুর মধ্যে এরূপ মনোভাব জন্ম নেওয়াটাই স্বাভাবিক।

এরপর তাকে একটি স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়। সেখানেই চলতে থাকে তার পড়াশোনা। নিউটনের বয়স যখন পনেরো বছর, তখনই তার সৎ পিতার মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যুর পড়, নিউটনের মা, পুনরায় নিউটনের দিদার বাড়িতে ফিরে আসেন। ফিরে আসার পড়েই, তিনি নিউটনের পড়াশোনা বন্ধ করে দেন, এবং তাকে খামারে কাজ করতে যেতে বলেন, যাতে করে কিছু অর্থ হাঁতে আসে!

সফলতার গল্প অনুপ্রেরণা ও সফলতার গল্প স্যর আইজ্যাক নিউটনের মর্মস্পর্শী সফলতার গল্প
সফলতার গল্প অনুপ্রেরণা ও সফলতার গল্প স্যর আইজ্যাক নিউটনের মর্মস্পর্শী সফলতার গল্প

কিন্তু নিউটন পড়াশোনা ছেড়ে খামারে কাজ করতে মোটেই ইচ্ছুক নয়। এমন পরিস্থিতিতে নিউটনের রক্ষাকর্তা হিসেবে নেমে আসেন একজন শিক্ষক। তিনি নিউটনের পড়াশোনার প্রতি ঝোঁক দেখে, পুনরায় নিউটনের শ্রেণীকক্ষে ফেরার ব্যবস্থা করেন।

এত সংঘর্ষময় জীবনে থাকার পড়েও, তার জীবনে প্রেম এসেছিল। এক মেয়ের সাথে তার প্রেম হয়ে যায়। ধীরে ধীরে সেই প্রেম বিবাহে পরিণতি পায়। যখন তারা বিবাহ করেছিলেন, তখন নিউটনের বয়স ছিল মাত্র উনিশ বছর। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সেই মেয়েটি নিউটনকে ছেড়ে চলে যান। যাকে তিনি জীবন সঙ্গী হিসেবে পাশে পেয়েছিলেন, সেও তাকে ছেড়ে চলে গেল। এরপর তিনি আবার একা হয়ে গেলেন। এরপর নিউটন সারাজীবন অবিবাহিত ছিলেন।

এভাবেই দুর্ভাগ্য নিয়ে তার পথ চলা শুরু হয়েছিল। কঠোর মনোবল নিয়েই আবার পড়াশোনায় মননিবেশ করলেন। রক্তে যার সংগ্রাম আছে, জীবনযুদ্ধে সে হারবে কিভাবে? ভাবছেন, তিনি পড়াশোনায় অত্যন্ত বিচক্ষন ছিলেন? উঁহু তা নয়। পড়াশোনায় তিনি ছিলেন মাঝারি ধরণের। তবে তার মধ্যে ‘বদলা’ এই শব্দটার প্রতিফলন প্রচুর পরিমাণে দেখা যেত। তবে তার বদলা নেওয়া আর আমাদের বদলা নেওয়ার মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক।

আমরা বদলা নেওয়া বলতে বুঝি, লড়াই করা। কিন্তু নিউটনের ক্ষেত্রে বদলা নেওয়ার অর্থ ছিল, নিজেকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে হাসিল করা। আর এই প্রচেষ্টাতে তিনি সফলও হয়েছিলেন। একবার স্কুলের এক ছাত্র তাকে নানান ভাবে অপমান করে। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে, পড়ের বছর মাঝারি মেধাবী ছাত্র নিউটন হয়ে গেলেন ক্লাসের সেরা ছাত্র।

কলেজ জীবনে তিনি কলেজের ফিস এবং নিজের খরচ চালানোর জন্য কলেজের একজন কর্মচারী হিসেবেও কাজ করতেন। সেই সময় বিজ্ঞান ছিল অ্যারিস্টটলের ধারণা কেন্দ্রিক। কিন্তু নিউটন চাইছিলেন, এই ধারণাকে আরও উন্নত এবং আধুনিক করতে। তিনি অ্যারিস্টটলের ধারনার মধ্যে কিছু একটা অনুপস্থিতি অনুভব করছিলেন। ১৬৬৪ সালে নিজ প্রতিভার কারণে কলেজ তাকে স্কলারশিপের বন্দোবস্ত করে দেয়।

এখান থেকেই তার ঘুরে দাঁড়ানো শুরু। এরপর শুরু হল বিস্তর অধ্যয়ন ও নতুনকে জানার প্রচেষ্টা। আর এর পড়ের গল্প তা আমাদের সবারই জানা। মাধ্যাকর্ষণ থেকে শুরু করে, উড়োজাহাজ যে শর্তের উপর আজ আকাশে উড়ছে, সবই নিউনের গবেষণার ফলপ্রসূত।

নিউটনের এই সংঘর্ষময় জীবনের ইতিহাস জেনে আপনার কি মনে হচ্ছে, আপনার জীবন বেশি কঠিন? উঁহু মোটেই তা নয়। তিনি যদি এত কিছু বাঁধাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমান করতে পাড়েন আপনি কেন পাড়বেন না?

অনুপ্রেরণা ও সফলতার গল্প বিখ্যাতদের জীবনী সফলতার ছোট গল্প
অনুপ্রেরণা ও সফলতার গল্প বিখ্যাতদের জীবনী সফলতার ছোট গল্প

আমাদের সবার মধ্যেই কিছু না কিছু ট্যালেন্ট লুকিয়ে রয়েছে, শুধু দরকার সেই প্রতিভাকে খুঁজে বেড় করে, তার যথার্থতা প্রমান করার দৌড়ে শামিল হওয়া। সেই সময় অ্যারিস্টটলের আদর্শে পুড়ো বিজ্ঞান চলত, কিন্তু তার আদর্শের থেকেও নিউটন নিজের গবেষণাকে যেভাবে প্রতিস্থাপিত করেছিলেন, তা শুধুই অনবদ্য নয়, বরং দুষ্করও বটে।

পড়ুনঃ- বিখ্যাতদের মজার ঘটনা

স্টিভ জবস -এর জিরো থেকে হিরো হওয়ার গল্প। স্টিভ জবসের জীবনীঃ-

স্টিভ জবস, নামটি হয়ত আপনার কাছে নতুন নয়। এই নামেই একডাকে সবাই চেনে যায়, বিশ্ববিখ্যাত Apple কোম্পানিকে। কিন্তু জানেন কি, স্টিভ জবস-এর লড়াই করার কাহিনী? সফলতা সবাই দেখে, কিন্তু সেই সফলতার আড়ালে থাকা, ইতিহাসের পাণ্ডুলিপি কেউই ঘেঁটে দেখে না। স্টিভ জবস-এর জীবনটাই শুরু হয়েছিল, সংঘর্ষ দিয়ে। যেদিন থেকে তিনি জন্মেছিলেন সেদিন থেকেই তিনি ছিলেন তার মায়ের মাথা ব্যাথার কারণ। কারণ তার মা ছিলেন একজন কলেজ ছাত্রী। উঁহু শুধু কলেজ ছাত্রীই নন, অবিবাহিত কলেজ ছাত্রী! কি এবার অবাক হলেন তো?

হুম আপনি যেটা ভাবছেন, ঠিক সেটাই হয়েছে। তাই তার মা স্টিভ জবসকে একটি ভালো পরিবারে দত্তক দিয়ে, ঝামেলা মুক্ত হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যাকে, দত্তক দিতে চেয়েছিলেন, তিনি শুধু এটা বলে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন যে, তারা একজন ছেলেকে দত্তক নিবেন না, তাদের প্রয়োজন একজন মেয়ে। এরপর আবার খোঁজ শুরু হল। অবশেষে তার মা, ক্যালিফোর্নিয়ার Paul এবং Kaalra নামে এক দম্পতির কাছে স্টিভকে দত্তক দেন।

১৯৭৩ সালে তাকে একজন টেকনিশিয়ানের রূপে দেখা যায়। আবার কিছুদিন পড়ে তিনি আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে তার কয়েকজন কলেজ বন্ধুকে নিয়ে চলে আসেন ভারতে। কিন্তু তিনি যে সাধুটির সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন, তিনি স্টিভ আসার এক বছর আগেই দেহ ত্যাগ করেন। তাই স্টিভের আর সেই সাধুর সঙ্গে দেখা করা হয়ে উঠল না। এরপর তিনি আরেকজন সাধুর সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। আর এই কারণেই তিনি তার জীবনের বেশ কিছুটা সময়, ভারতের উত্তর প্রদেশ, হিমাচল, দিল্লীতে কাটিয়েছেন।

১৯৭৬ সালে স্টিভ ওয়জনিয়াক, Apple-1 Computer তৈরি করেন। এরপর তিনি জবস কে তার এই কাজটি দেখান। জবস, ওয়জনিয়াক কে, এই কম্পিউটারটি বিক্রি করার পরামর্শ দেন। এরপর দুইজন মিলে জবস-এর বাবার গ্যারেজেই, ব্যাবসায়িক রূপে কম্পিউটার তৈরির কাজে লেগে পড়েন। সেখানে তারা কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম- MAC তৈরি করেন। আর এই অপারেটিং সিস্টেমটি বিক্রি করার জন্য তারা একটি কম্পিউটার বানানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, টাকার অভাব। কিন্তু তাদের এই সমস্যা মাইক নামে এক বন্ধু সমাধান করে দেয়, এবং সাথে সাথে সেই কোম্পানিরও একজন অন্যতম যোগদানকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করতে থাকেন।

এরপর জবস কম্পিউটার তৈরির কাজে লেগে পড়েন। কিন্তু জবসের কাজ কোম্পানির অন্যান্যদের পছন্দ হয়নি। এরপর স্টিভ জবসের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ আসতে থাকে। এরপর অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে কোম্পানি তার জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে। ধীরে ধীরে কোম্পানি লোকসানে চলতে থাকে এবং একটা সময় পড় কোম্পানির অনেক টাকা ঋণ হয়ে যায়। কোম্পানির বোর্ড অফ ডাইরেক্টরের মিটিং-এ  স্টিভকে এর জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়, এবং তাকে কোম্পানি থেকে বেড় করে দেওয়া হয়। আর এই সময়টিই ছিল তার জীবনের সবথেকে দুঃখের সময়।

এরপর শুরু তার জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প, আর এর পড়ের গল্পটা খুবই পরিষ্কার। যার ফল আজকের অ্যাপেল। তার হাত ধরেই আজ অ্যাপেল বিশ্বের দরবারে নিজের আধিপত্য স্থাপন করেছে।

স্টিভ জবস -এর জিরো থেকে হিরো হওয়ার গল্প স্টিভ জবসের জীবনী
স্টিভ জবস -এর জিরো থেকে হিরো হওয়ার গল্প স্টিভ জবসের জীবনী image
<
পড়ুনঃ- সফলদের ব্যর্থতার গল্প

স্টিভ জবস এর উক্তিঃ-

১. এসো, আগামীতে কি হবে সেই চিন্তা না করে, আগামীতে নতুন কি করা যায়, সেই চিন্তা করি।

২. আপনার সময় সীমিত, তাই অপরের জন্য নিজের জীবনকে অতিবাহিত করবেন না।

৩. ফালতু ফালতু চিন্তাতে নিজেকে জড়াবেন না। আপনার জীবনকে অপরের ইচ্ছে অনুযায়ী চালাবেন না। অপরের বিচার-ধারার মধ্যে নিজেকে বিসর্জিত করবেন না। নিজের বুদ্ধিকে কাজে লাগান।

৪. আপনাকে কি করতে হবে না, তা ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ, আপনাকে কি করতে হবে সেটা যতটা গুরুত্বপূর্ণ। 

৫. সবসময় এই কথাটা মনে রাখবেন- আমি অতিশীঘ্রই মারা যাব। আর এই সময় টুকুতেই আমাকে আমার জীবনের সবথেকে বড় নির্ণয় নিতে হবে। তাই সর্বদা নিজের কথা শুনুন, অপরের কথায় গা ভাসাবেন না।

FOR TELEGRAM UPDATES:- charpatraOFFICIAL

click the above link for never-ever miss an update……

“সফলতার গল্প। সফল ব্যক্তিদের জীবনী। অনুপ্রেরণা ও সফলতার গল্প। বিখ্যাতদের জীবনী। সফলতার ছোট গল্প। SUCCESS STORY OF 2 FAMOUS PERSONS BANGLA”

Spread the love

Leave a Reply