সফলতার গল্প।মোটিভেশনাল উক্তি।বিখ্যাতদের সফলতার গল্প।
আজ আমরা এমন কিছু ব্যর্থ মানুষদের সফলতার গল্প জানতে চলেছি, যারা জীবনে কোনো না কোনো দিন খুবই গরীব ছিলেন বা প্রচুর সমস্যায় ছিলেন অথবা প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন। কিন্তু তারা আমাদের মত হার মেনে নেন নি। একবার- দুইবার নয় বরং তাদের অনেক বারের প্রচেষ্টার ফল তাদের বর্তমান অবস্থান। আমরা সকলেই সফল ব্যক্তিদের দেখি তাদের অনুসরণ করার চেষ্টা করি।
কিন্তু আমরা কেউই এই সমস্ত সফল ব্যক্তিদের বর্তমান অবস্থানের পেছনে থাকা কঠোর শ্রম এবং ব্যর্থতার কাহিনীটি ঘেঁটে দেখি না। আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন যে, পৃথিবীর বেশিরভাগ সফল ব্যক্তির পেছনে রয়েছে কিছু হৃদয়বিদারক কাহিনী। তারা জীবনে সফল হয়েছেন দেখে আমরাও অন্ধ ভক্তের মত তাদের অনুসরণ করতে থাকি কিন্তু আমরা কেউই তাদের মত চেষ্টা বা মনোবল ধরে রাখতে পারি না বা একবার ব্যর্থ হওয়ার পর হাত গুটিয়ে বসে থাকি। অথচ আমরাও মানুষ তারাও মানুষ। পার্থক্যটা শুধু এখানেই যে আমরা একটুতেই হাল ছেড়ে দিই আর তারা যতদিন না পর্যন্ত তাদের লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত হাল ছাড়তে নারাজ।
সফলতার গল্প মোটিভেশনাল উক্তি বিখ্যাতদের সফলতার গল্প
তাই আজকের এই ব্লগটিতে রইল কিছু ব্যর্থ ব্যক্তির সফলতার গল্প।
আমরা প্রায় সকলেই জ্যাক মা কে বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি এবং আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেই জানি। কিন্তু আপনি কি জানেন তার এই সফলতার পেছনের গল্পটি? তিনি যখন চাকরির জন্য পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন তার প্রত্যেকটিতেই তিনি প্রত্যখ্যাত হয়েছিলেন। আচ্ছা আপনি আপনার জীবনে কয়টি চাকরির পরীক্ষা দিয়েছেন বলুন তো? জ্যাক মা সর্বমোট ৩০ টি চাকরির পরীক্ষা দিয়েছিলেন, আর তার সবকটিতেই তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু এত ব্যর্থতার পরেও তিনি কি হাল ছেড়েছিলেন? ছাড়েননি আর তাই আজ আমরা জ্যাক মা কে পেয়েছি। আলিবাবা নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে পেয়েছি। যদি চাকরির পরীক্ষাতে ব্যর্থ হয়েই তিনি হাত গুটিয়ে বসে থাকতেন তাহলে কি আর আজ তিনি এত দূর আসতে পারতেন?
পড়াশোনাতে আপনি পাড়ছেন না, অন্য রাস্তা দেখুন। সবাই সব বিষয়ে পারদর্শী হয়না। আপনি পড়াশোনাতে পাড়ছেন না, তার মানে এটা নয় যে আপনি কিছুই পারবেন না। দেখুন অন্য কিছু চেষ্টা করে! সেখানে হয়ত ভাল কিছু আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আর আপনার ক্লাসের ফার্স্ট বয়টির হয়ত আপনি যেটি করতে পারবেন সেটি করার দক্ষতা নেই। তাই সবসময় আপনার ভাল লাগাকে গুরুত্ব দিতে শিখুন।
আচ্ছা আপনি কি J.K.Rowling এর নাম শুনেছেন? শোনেননি হয়ত। কিন্তু আপনি নিশ্চয় হ্যারি পোর্টার সিনেমাটি দেখেছেন বা হ্যারি পোর্টার গল্পটি পড়েছেন। এই গল্পটি তাঁরই লেখা। এই লেখিকা বর্তমানে ইংল্যান্ডের একজন অন্যতম ধনী ব্যক্তি। কিন্তু তার জীবনে এমনও সময় এসেছিলেন যেদিন তিনি পুরো বেকার ছিলেন। তার অবস্থা ছিল আর কয়েকটা গরীব মানুষের থেকেও খারাপ।
ছোট্ট বেলা থেকেই ছিল তার লেখা-লেখি করার শখ। সেই শখকে সঙ্গে করেই তিনি অনেক লেখা লেখেছিলেন। কিন্তু ১২ টি পাবলিশার্স কোম্পানি তার লেখার গুনগত মান দেখার পর, সেগুলি ছাপাতে নারাজ হয়। তাকে নানান অকথ্য কথা শোনায়। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। তাদের সেই অকথ্য কথা গুলিকেই প্রেরনা হিসেবে নিয়ে আবার লিখতে শুরু করেন তিনি। লিখলেন বিখ্যাত সিরিজ হ্যারি পোর্টার। কিন্তু এবারও সেই পাবলিশার্স গুলি তাকে ফিরিয়ে দেয়, তাদের মত ছিল এই সব গল্প বাচ্চাদেরও মাথায় ঢুকবে না। কিন্তু এরপর যা হয় সেটি পুরো ইতিহাস বদলে দেয়। ৮ থেকে ৮০ সবাই হ্যারি পোর্টারের গল্পে মাতোয়ারা।
এবার আসি শাহরুখ খানের গল্পে। শাহরুখ খান সম্পর্কে আশা করি বিশেষ কিছু বলতে হবে না। কিন্তু আমি আপনাকে তার পেছনের কাহিনীটি শোনাই। এমন একটা সময় ছিল যখন বাড়ি ভারা দিতে না পারায় বাড়ির মালিক শাহরুখকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয়। অভিনয়কে নেশা হিসেবে নিয়েই তিনি তার যাত্রা শুরু করেছিলেন।
এমন একটা সময় ছিল যখন তিনি কেবল মাত্র কিছু পয়সার জন্য সিনেমাতে সাইন করতেন। তিনি তার প্রথম বেতন কত পেয়েছিলেন জানেন, মাত্র ৫০ টাকা। হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন মাত্র ৫০ টাকা এই টাকাটা তিনি পেয়েছিলেন দিল্লির একটি কনসার্টে। যে টাকাটা আমাদের চাইউমিনের দোকানে গেলেই শেষ হয়ে যায়, সেটিই ছিল শাহরুখের প্রথম বেতন। তার শিক্ষক তাকে বলেছিলেন- তোমার যা স্বপ্ন যে, বড় অভিনেতা হবে, সেটি তোমার কোনোদিনই পূরণ হবে না। কারণ তুমি সেই যোগ্যতা নিয়ে জন্মাওনি। কিন্তু আজকে তিনিই King of Bollywood।
এবার রোনাল্ডোর কথায় আসি। বিশ্ব বিখ্যাত ফুটবল প্লেয়ার রোনাল্ডোকে সকলেই চেনেন। আপনি হয়ত ভাবেন- আমি তো গরীব ঘরে জন্ম নিয়েছি, আমার দ্বারা কিছুই হবে না। তাহলে আমি আপনাকে একটু রোনাল্ডোর ব্যাক গ্রাউন্ড ঘেঁটে দেখতে বলব। একটা ছোট্ট রুমেই তারা তিন ভাই-বোন মিলে থাকতেন। স্কুল থেকে তাকে বেড় করে দেওয়া হয়েছিল। কারণ তিনি নাকি তার শিক্ষককে সম্মান দিয়ে কথা বলেননি। ছোট বেলায় তিনি এক রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন সেই রোগে হৃৎপিণ্ডের কম্পন অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায়, আর যার কারণে ডাক্তার তাকে বসে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ডাক্তার তার পিতামাতাকে এও বলে দিয়েছিলেন যে, এই রোগ কোনোদিনও সারবে না। আর দৌড়াতে গেলে সে দম বন্ধ হয়ে মারা যেতেও পারে। কিন্তু প্রবল মনের জোর এবং দারিদ্রতা কাটিয়ে তিনি আজ স্বনামে উজ্জ্বল।
আচ্ছা আপনি কি আতিফ ইসলামকে চেনেন? হ্যাঁ সেই বিখ্যাত গলা। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন- সবসময় আপনার প্যাশনকে গুরুত্ব দিন। সেটাই করুন যেটা আপনার মন চায়। যেটার প্রতি আপনার মন উদাসীন সেটি করতে গিয়ে বৃথা সময় নষ্ট করবেন না। আতিফ ইসলামের বাবা-মা চাইতেন ছেলে বড় হয়ে একজন ডাক্তার হোক। কিন্তু ছোট্ট বেলা থেকেই আতিফের শখ তিনি একজন বড় গায়ক হবেন। আর একসময় কলেজের ক্যান্টিনে বসে গান গাওয়া ছেলেটা অন্যতম একজন বিখ্যাত গায়ক।
YOU MAY READ-
বাংলা মোটীভেশনাল উক্তি CHANAKYA NITI BENGALI
এবার আসি আমাদের প্রিয় ক্যাপ্টেন মহেন্দ্র সিং ধোনির কথায়। একসময় ছিলেন রেলের টিকিট কালেক্টর। ঘুরতে যাওয়ার শখ পূরণ করতে বন্ধুদের বাইক ধার করে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া। স্কুলের ক্রিকেট টিমে একের পর এক সাফল্য তারপর অনেকটা চাপান-উতোর পেরিয়ে আজ তিনি-MSD. জার্সি নাম্বার -৭।
গুগল আমরা সবাই ব্যবহার করে থাকি। আর গুগলের CEO সুন্দর পিচাই-এর নাম আপনারা হয়ত সবাই শুনেছেন। ভারতের সবথেকে বেশি বেতনের চাকরি করে থাকেন তিনি। হুম এ তো গেল তার সফলতার গল্প। কিন্তু তার পেছনের গল্পটি জানেন কি? গরীব পরিবারেই তার জন্ম হয়েছিল। বাড়িতে ছিল কেবলমাত্র দুটি রুমের একটি ছোট্ট ঘর। তিনি এবং তার ভাই ড্রয়িং রুমে থাকতেন। তার বয়স যখন ১২ বছর তখন তার পিতামাতার একটি ল্যাপটপ তো দুরের কথা একটা সামান্য কিপ্যাড যুক্ত মোবাইলও কেনার সামর্থ্য ছিল না। কিন্তু তিনি কালের গহ্বরে হারিয়ে যান নি। তিনি সময়ের সাথে সাথে নিজের যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন।
পৃথিবীতে যতজন ব্যক্তি সফল হয়েছেন আপনি দেখবেন যে, তাদের কেউই বিলিয়নিয়ারের ঘরে জন্ম নেননি, তারা প্রায় সবাই কোনো মধ্যবিত্ত কিংবা কোনো গরীব পরিবারের সন্তান। তাই অযথা নিজের দারিদ্রতাকে দোষ না দিয়ে নিজের প্যাশন বা ভাল লাগাকে গুরুত্ব দিন। হয়ত সফলতা অর্জন করতে কিছুদিন সময় লাগবে বা হয়ত আপনি অনেকবার ব্যর্থও হবেন। কিন্তু তাই বলে কি আপনি হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন? না কক্ষনোই নয়। অপেক্ষা+প্যাশন= সাফল্য।
আপনার কোনো মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
“All our dreams can come true if we have the courage to purse them”, “Good things come to people who wait, but better things come to those who go out and get them”
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।