আজকের সন্ন্যাস শীর্ষক গল্পটিতে খুঁজে পাবেন একজন সন্তান হারা মায়ের কষ্ট এবং সন্তানের প্রতি অধীর অপেক্ষা। বিস্তারিত গল্পে।

সন্তান হারা মায়ের কষ্টঃ- “সন্ন্যাস”

এই যে শুনছেন, এদিকে, আমি বলছি , হ্যাঁ হ্যাঁ আমিই বলছি। এই রাস্তা দিয়ে বয়েস সাতাশ এর কাছাকাছি একটি ছেলেকে যেতে দেখেছেন কি ? তার পরনে ছিল গেরুয়া আর হাতে একটা কুমুন্ডুল। রুদ্রাক্ষের একটা মালাও পরে জানেন, তবে সেটা একমুখী না দুমুখি ঠিক মত লক্ষ্য করতে পারিনি। দয়া করে বলবেন দেখেছেন কিনা তাকে ?

ছেলেটি বিস্ময় ভরে মহিলার দিকে তাকিয়ে রইলো , তখন হঠাৎ করে পাস থেকে এক দোকানদার এসে বলে উঠলো , “এই পাগলী আবার এসব শুরু করেছিস তুই ? যা বলছি এখুনি । চুপচাপ একদিকে গিয়ে বোস। কোনো ছেলেকে দেখলেই ওর এই একই বাহানা নিয়ে বিরক্ত করা শুরু।”

-“ধুর ! যত্তসব” মহিলাটি কাঁদতে কাঁদতে ফুটপাতের এককোনায় গিয়ে বসে কি যেন নিজ মনে বলতে লাগলো ।
দোকানদার ছেলেটিকে ওই মহিলার সম্পর্কে আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেলো। ছেলেটির কৌতূহলী মনে কি উদয় হলো কি জানি । ছেলেটি দোকান থেকে কিছু খাবার কিনে নিয়ে ওই মহিলার পাশে গিয়ে বসলো । আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল “মা আপনি কি আপনার ছেলে কে খুঁজছেন ?”

সন্তান হারা মায়ের কষ্ট
সন্তান হারা মায়ের কষ্ট

তুমি তু উ উ উ মি কে ? আমার ছেলেকে চেনো বুঝি ? নিয়ে যাবে আমাকে তার কাছে, আমি যে ওকে ছাড়া বাঁচব না বাবা ।”

-“কি হয়েছিল মা? একটু পরিষ্কার করে বলবে!”

আদো আদো গলায় কান্না থামিয়ে ওই মহিলা বলে উঠলো, “কেউ যে আমায় বিশ্বাস করে না বাবা। সবার চোখে যে আমি পাগল । কেউ আমার কথাকেও তাই গুরুত্ব দেয় না। তুমিও হয়তো সবটা সোনার পর আমাকে পাগল বলেই গণ্য করবে।”

“খুব সুখের সংসার ছিল আমার । আমার স্বামী আর আমার নয়নের মনি , মানে আমার ছেলে বুবাইকে নিয়েই ছিল আমার ভরা সংসার। বুবাইয়ের বাবা খুব কর্মনিপুন মানুষ জানো, সে তো এখনো একা হাতে ওই অত বড় কোম্পানি চালায়। কিন্তু সে আমায় তার জীবনে ঠায় দেইনি। সেও আমায় পাগল বলে তাড়িয়ে দিয়েছে । আমিই নাকি তার ছেলের গৃহ ত্যাগের জন্য দায়ী।”

-“মা তুমি পুরোটা ভালো করে বলো আমাকে । আমি তোমার ছেলেকে নিয়ে জানতে চাই ।”


পড়ুনঃ- 
প্রেমের সঙ্গে যুক্ত কিছু সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্ট 

পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া অমীমাংসিত ঘটনা 

একটি সুন্দর প্রেমের গল্প 

-“হ্যাঁ ঠিক ঠিক । বুবাই কে নিয়ে জানতে চাও তো তুমি , আচ্ছা ওকে নিয়েই বলবো সব” , হো হো করে উচ্চস্বরে হেসে মহিলা বুবাই “বুবাই … বাবা ফিরে আয়” বলে চিৎকার করে আবার কাঁদতে শুরু করে। একটু পর নিজেকে সংবরণ করে বলতে শুরু করে
“বিয়ের বছর ছয় পর আমার জীবনে এলো বুবাই । ছোট থেকেই তীক্ষ্ণ বুদ্ধি আর আত্মসংযম শক্তি যেন ওকে অন্যদের থেকে পৃথক করতো। ওর অন্যান্য সমবয়সী বাচ্চারা যে সময় খেলা ধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকত সে সময় ওই দুটি চোখ নানান বইয়ের পাতায় আবদ্ধ থাকতো ।

এতটুকু বুবাই টা যখন একটু একটু করে বড়ো হতে লাগলো ,তখন ওর বুদ্ধিদীপ্ততা যেন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলো । শিক্ষকদের পাশাপাশি ওর বাবাও ওকে নিয়ে গর্ব করে বলত “এই ছেলে দেখবে একদিন আমার কোম্পানিকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যাবে “। তবে বুবাই এর প্রথম থেকেই জানো কেমন উদাসিন ভাব ছিল সংসারের প্রতি । প্রাইমারি শিক্ষা শেষের পর বললো আমায় মঠে ভর্তি করো। আমি মঠে থাকতে চাই। যেখানে রামকৃষ্ণ দেবের স্মৃতি থাকবে আর থাকবে স্বামীজির আদর্শ।

সন্তান হারানোর বেদনা
সন্তান হারানোর বেদনা

মায়ের মন কোনোদিনও বোঝেনি ছেলেটা। তাই ওর জেদের সামনে হারতেই হলো । চোখের জল নিয়ে মঠে রেখে এলাম ওকে । প্রথম দুই বছর ছুটি পেলেই মা মা করে ছুট্টে আসতো। আর এসে সারাক্ষণ আঁচল ধরে পিছু পিছু ঘুরে বেড়াতো। সবই ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু হটাৎ করে কি যে হলো! ছুটি পেলেও আর বাড়ি ফিরতে চাইতো না । বলতো আমি মৌন নেবো কথা বলতে পারবো না কারুর সাথে । আমাকে উপেক্ষা করতে শুরু করলো ।

তারপর হঠাৎ একদিন মঠ থেকে কোথায় চলে গেলো । অনেক অনেক খোঁজ করেছিলাম জানো কিন্তু কোথাও খুঁজে পাইনি ওকে । ও সবার আড়ালে কোথায় আশ্রয় নিয়েছিল , কেউ জানতাম না । এরপর দীর্ঘ দশ বছর পর একদিন বাড়ির বাইরে দাড়িয়ে কে যেন বলে উঠলো “ভিক্ষাং দেহি মাতঃ ” ।


পড়ুনঃ- 
অবাক করা তথ্য- কি ও কেন! 

অনুপ্রেরণা মূলক গল্প 

কেঁপে উঠেছিল আমার হৃদয় … অদ্ভুত এক শিহরণ সারা দেহ জুড়ে অনুভব করেছিলাম সেই গলা শুনে । সেই গলা যে আর অন্যকারুর নয় সে আমার বুবাইয়ের গলা । ছুট্টে বাইরে যেতেই দেখি গেরুয়া বসনে হাতে কুমুন্ডুল আর একটা ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে সে হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে ভিক্ষা খুঁজছে ।

কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিলাম ওকে । বারবার বলেছিলাম একটি বার মায়ের কোলে ফিরে আয় বাবা , একটি বার আয়। কিন্তু সব উপেক্ষা করে সেদিন এই রাস্তা দিয়েই ও চলে গেছিলো। একটি বারও ফিরে তাকায়নি নিজের মায়ের দিকে। সেই থেকেই আমি এই রাস্তায় ওর জন্য অপেক্ষারত…।”

পুরো ঘটনাটি শোনার পর ছেলেটি চোখের জল মুছে বলে উঠলো ” মা আমার সাথে চলো, আমি নিয়ে যাবো তোমায় তোমার ছেলের কাছে।” ছেলেকে ফিরে পাবার আসায় ওই মহিলা খিল খিল করে নিষ্পাপ শিশুর মতো হাসি মুখে ” তুমি আমায় নিয়ে যাবে আমার ছেলের কাছে সত্যি ! সত্যি তো! ” বলতে বলতে গাড়িতে উঠে পড়ল ছেলেটির সাথে ।

বাংলা গল্প সন্ন্যাস
বাংলা গল্প সন্ন্যাস
<

পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি , মহিলার একটি মাত্র ছেলে আছে আর সে হলো সেদিনের ওই ছেলেটি যে তাকে সাথে করে নিয়ে গেলো। তবে ওই মহিলার জীবনে এই ছেলেটি আসার আগেই , তিনি একটি অনাথ বাচ্চাকে বাড়িতে ঠাই দিয়ে নিজের ছেলে বানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ছেলে একদিন সব উপেক্ষা করে সন্ন্যাস নিয়ে গৃহ ত্যাগী হয় । আর তার নিজের ছেলে, যাকে তিনি কোনোদিনও নিজের বলে মেনে নেননি। সেইই তার আদর যত্ন করে খেয়াল রাখে । আর প্রতিদিন ওই মহিলা বাড়ি থেকে পালিয়ে এই রাস্তায় চলে এলে , তার ছেলে নানান সাজে সেজে তার জীবনের গল্প শুনে, তাকে ভুলিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

কি কঠিন বাস্তব তাই না ! যা নেই তার জন্য যা আছে তার মূল্য না দেওয়া। হয়তো এটাই সমাজের নিয়ম , না না মানব সভ্যতার নিয়ম । শান্তি নেই , শান্তি নেই জীবনে … এসব না বলে বেড়িয়ে হয়তো শান্তির খোঁজ করাটাই শ্রেয়। যেভাবে বুবাই খোঁজ করে নিয়েছে নিজের শান্তিকে , ভন্ড সাধু সেজে নয় আদর্শ সন্ন্যাসীর মতাদর্শকে বাঁচিয়ে রেখে । প্রমাণ করেছে সন্ন্যাসের মুল মন্ন্ত্রকে – “ত্যাগেই শান্তি”

সন্তান হারা মায়ের কষ্ট। বাংলা গল্প সন্ন্যাস। সন্তান হারানোর বেদনা । 1 new bengali story. monk life.

আলোরানি মিশ্র

ভাবনায়-

পড়ুনঃ- 

স্কুল জীবনের প্রেম 

কিছু জ্ঞানের কথা 

আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
Spread the love

Leave a Reply