অসাধারণ একটি সত্যি প্রেমের গল্প আজ নিয়ে আসা হয়েছে। এই ভালোবাসার গল্পটির কেন্দ্রে রয়েছে এক যুগল। এই স্বামী স্ত্রীর গভীর ভালোবাসার গল্পটি আশা করছি আপনাদের পছন্দ হবে।
সত্যি প্রেমের গল্পঃ- ‘প্রেম স্মৃতি’
আজ ভ্যালেন্টাইন্স ডে, অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময় দোকান থেকে একটি ফুলের বাকেট কিনে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলাম।
নমস্কার আমি সুজন সরকার, একটি সরকারি পোস্ট অফিসের কর্মী। আমার কর্ম জীবনের এটিই শেষ বছর।
বাড়ি ফিরে নিতার হাতে ফুলের বাকেট দিয়ে জড়িয়ে ধরে কপালে একটি চুমু দিয়ে বললাম ‘হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন ডে পাগলী।’
নিতার জবাব – “উম্মম তোমার বয়স কি কমছে নাকি! এই বুড়ো বয়সে মনে আবার প্রেম জাগছে যে!”
প্রেমের কোনো বয়স হয়না রে পাগলী! বয়স বাড়লেও মনটা তো আর বয়সের সাথে বুড়ো হয়নি! নিতা আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে মিটিমিটি হেসে চলে গেল।
এরপর আমি ফ্রেশ হলাম। এদিকে সূর্য দেব দিনান্তের ঘণ্টা বাজাতে ব্যস্ত। সন্ধ্যা হতেই আমি লাইটের সুইচ অন করতে যাব, অমনি আমার মহীয়সী তেড়ে এসে বলল, “উহু আজ কোনো লাইট জ্বলবে না এই বাড়িতে।” এই বলে আমার হাতে কতকগুলি মোমবাতি ধরিয়ে দিয়ে বলল, “বসে বসে এগুলিতে আগুন দাও, আমি আসছি, দেখ আবার আগের বারের মত হাত পুড়িয়ে ফেল না যেন।” বলার পরই সে হনহনিয়ে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়াল।
কিছুক্ষন পর মিতা সুন্দর ভাবে সেজে গুজে আমার সামনে হাজির! আমি তাকে দেখে রীতিমত তাজ্জব বনে গেছি।
-তা কোথায় চললে আবার সেজেগুজে!
-তোমার মনের আঙিনায় বিচরণ করতে।
দুইজনে অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়লাম। নিতা আমার হাতে কফির কাপটা ধরিয়ে দিল। মোমবাতির আবছা আলোয় নিতাকে দেখে যুবতী লাগছে। আজ আমার জন্য নিতা সেজেছে, ভাবতেও অবাক হচ্ছি। আমার চিন্তা জাল ছিন্ন করে সে আমাকে জিজ্ঞাসা করল “আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে কি দেখছ!”
-দেখছি তোমাকে। একসাথে বুড়ো হয়ে গেলাম, অথচ তোমার রূপ এখনও সেই কলেজের নিতার মতই আছে। একটুও পরিবর্তন হও নি।
আমার কথা শুনে সে বলল, “জান কি মেয়েরা অনেক সাজুগুজু করলেও ছেলেরা কেন সাজুগুজু করে না?”
আমি উৎসাহ ভরে জবাব দিলাম, কেন কেন!
সে আমার পাশের সোফাটায় এসে বসল, আর বলতে শুরু করল, “মেয়েরা সাজে ছেলেদের জন্য, জান তো ছেলেদের চোখে রূপ তৃষ্ণা প্রচুর, তারা নিজের পছন্দের মানুষকে সর্বদা আগ্রহ ভরে দেখতে পছন্দ করে, কিন্তু আমাদের মেয়েদের চোখে ছেলেদের মত তেমন রূপ তৃষ্ণা নেই বলে, ছেলেদের তেমন না সাজলেও চলে।
নিতা আমাকে প্রশ্ন করল – “আচ্ছা কলেজ জীবনের সেই দিনগুলির কথা মনে পরে তোমার!”
একঝলকে কলেজ জীবনের সেই সব স্মৃতি যেন টাটকা হয়ে উঠল।
ইতিহাস ক্লাসে নিতাকে আমি প্রথম দেখি। শিক্ষকের জিজ্ঞাসা করা প্রশ্নের সে উত্তর দিচ্ছিল আর আমি আগ্রহ ভরে তার উত্তর শুনছিলাম। একজন কিভাবে এত সুন্দর গুছিয়ে কথা বলতে পারে তা ভেবেই আমি অবাক হচ্ছিলাম। সেদিন থেকেই নিতার প্রতি একটি অন্যরকম ‘টান’ আমাকে টেনে নিয়ে যেত সেই ইতিহাস ক্লাসে।
সত্যি মেয়েটার মধ্যে অবশ্যই বিশেষ কিছু আছে যা তাকে উর্ধ্বে স্থান দিয়েছে, আমার মনে হয় না যে কলেজের কোন শিক্ষক-শিক্ষিকা নিতার নাম জানত না!
একটি প্রশ্নের উত্তর জানার অছিলায় নিতার সঙ্গে প্রথম আলাপ হয়। এরপর আরো বেশ কয়েকবার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর তার কাছে জেনে নিই। তবে আমার মূল উদ্দেশ্য প্রশ্নের উত্তর জানা নয়, মিতার সংস্পর্শে আসা ছিল। কারণ পড়াশোনায় আমিও কোন খারাপ ছিলাম না।
এরপর ধীরে ধীরে বন্ধুত্বের সম্পর্ক, এখনও তাজা মনে আছে ১৬ই জুলাই সেমিস্টার শেষে নিতা কে প্রপোজ করেছিলাম। সে মুখ ফিরিয়ে চলে গেলেও পরে আমাকে একান্তে ডেকে বলেছিল, ” এভাবে এত জনের সামনে কেউ কি এ কাজ করে!” তাছাড়াও তার নাকি এইসব রিলেশন ফিলেশনে আসার কোন ইচ্ছাই নেই। সে নাকি আমার বন্ধু হিসেবে থাকতেই রাজী।
পড়াশোনায় ভালো থাকা সত্ত্বেও নিতার বাবা তার বিয়ে ঠিক করে ফেলে। কিন্তু তার ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার। তার ইচ্ছে ছিল সে অধ্যাপিকা হবে কিন্তু তার সেই ইচ্ছেতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল তার বাবার নেওয়া নিতার বিবাহের সিদ্ধান্ত।
অন্যদিকে আমি তখন কলেজ শেষে একজন চাকরি প্রার্থী। একদিন হঠাৎ করেই নিতার ফোন আসে, তাকে নাকি বিয়ের মন্ডপ থেকে তুলে নিয়ে আসতে হবে। যার পেছনে এক সময় ঘুরঘুর করতাম তার মুখে এরকম কথা শুনে নিজেরও বিশ্বাস হয়নি।
কিন্তু অতটা সাহস আমার ছিল না যে একজন মেয়েকে বিয়ের মন্ডপ থেকে তুলে নিয়ে পালিয়ে যাব। তবে সব পরিকল্পনা নিতা-ই ঠিক করে রেখেছিল, আমি শুধু তাদের বাড়ির পিছনে অপেক্ষা করছিলাম।
পড়ুনঃ- স্কুল জীবনের ব্যর্থ প্রেম
একটি ছোট্ট সফল প্রেমের গল্প
এরপর নিতার হাত ধরে পালিয়ে যাই কলকাতায়। প্রয়োজনীয় অর্থ থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা সব নিতা-ই করেছিল আমি শুধু তার সহযোগী হিসেবে ছিলাম।
পরিস্থিতির আকস্মিকতায় আমি এতটাই বিস্মৃত হয়েছিলাম যে নিজের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে গিয়েছিল, এমনকি ভালোবাসার মানুষের টানে বাবা মায়ের কথা না ভেবেই নিতার সঙ্গে কলকাতায় পালিয়ে যাই। এদিকে নিতার পরিবার তখন হন্যে হয়ে আমাদের খুঁজছে। অনেকবার ধরা পরতে পরতেও পরিনি। পালিয়ে যাওয়ার তিন থেকে চার মাসের মাথায় নিতা একটি চাকরি পেয়ে যায়। কিন্তু তখনও আমরা একে অপরের অতটাও কাছাকাছি আসিনি। সে আলাদা রুমে থাকত আমি আলাদা রুমে।
নিতা অফিসে যাওয়া আসা করত বোরখা পরিধান করে। একদিন শুনি সে অসুস্থ এরপর তার সেবা যত্ন করতে থাকি আমি। কারণ এই অবস্থায় বাইরে গেলেই বিপদ।
নিজের সব টা দিয়ে তাকে পরিচর্যা করতে থাকে কিছুদিন পর সে সুস্থ হয়ে যায়। এরপর সেইই আমাকে বিবাহের প্রস্তাব দেয় কিন্তু আমি যতদিন না পর্যন্ত নিজে কিছু করছি ততদিন আমি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হব না।
সে জানায় সে আমার জন্য অপেক্ষা করবে। যে একসময় আমার ভালবাসাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল, তার মুখেই এমন কথা শোনার আশা আমি আদও করিনি। এর প্রায় এক বছরের মাথায় আমিও একটি ভালো সরকারি চাকরি পেয়ে যাই।
আমি চাকরিটা পেতেই নিতা তার চাকরি ছেড়ে দিল, তার কথামতে দুইজনই যদি চাকরি করি তাহলে ‘আমাকে’ খাবার বেড়ে দেবে কে!
তার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা আমার মোটেও ছিল না।
বাবা মাকে খবর দিই, তারাও এতদিন পর ছেলেকে দেখে আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন। এরপর তারাপীঠে নিতা ও আমার বিবাহ সম্পন্ন হয়। কর্মসূত্রে শিলিগুড়িতে চলে আসি। তারপর থেকে এখানেই আছি।
আজ প্রায় ৩০ বছর ধরে নিতা আমার সাথে আছে, কোনদিনও বাপ-দাদাদের খবর নেয়নি। আমার চিন্তা জাল ছিন্ন করে নিতা বলে উঠলো “কি ভাবছো অত!”
আমি জবাব দিলাম, ভাবছি পুরনো সেই দিনের কথা, আর অবাক হচ্ছি এটা ভেবে যে কিভাবে একজন মেয়ে বাবার পছন্দ করা পাত্রের সাথে বিবাহ না করে প্রায় অচেনা একটি ছেলের সাথে কলকাতায় পালিয়ে গেল, এরপর তাদের বিবাহ হল। এরই মধ্যে কেটে গেছে প্রায় ৩০ বছর কিন্তু এই বিস্তর সময়ে মেয়েটি তার বাবা-মা দাদা সবাইকে ছেড়ে তাদের কোন খবর না নিয়েই আমার সাথে এতটা সময় কাটিয়ে দিল কিভাবে! ‘
আমি নিতাকে অনেক বার তার বাবা- মায়ের খবর নিতে বলেছি। কিন্তু সে তার বাবার উপর এতটাই রেগে আছে যে, সে বাবার মুখ পর্যন্ত দেখতে চায় না। মাঝে মাঝে মায়ের জন্য ছোট্ট বাচ্চার মত কান্না করে সে। টুকিটাকি মায়ের সাথে পার্কে দেখা করত সে। তার মতে, আমার বাবা- মা ই নাকি তার নিজের বাবা-মা।
আমার কথা শেষ হওয়ার পর নিতার দিকে তাকিয়ে দেখি তার চোখে জল। তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম “চলো আজ বাইরে খেয়ে আসি।”
চোখ মুছে, উঠে দাড়িয়ে আমার মহীয়সীর জবাব- “আমি যে এত্ত এত্ত রান্না করেছি, সেগুলি কি ভূতে গিলবে নাকি।”
আমি জবাব দিলাম, “ভূতের সাথে সাথে একটি পেত্নীও গিলবে। হা হা হা …”
এরপর দুইজনে আবার অট্টহাসিতে মেতে উঠলাম। এই আমাদের জীবন, বয়সের সাথে সাথে খুনসুটিও বেড়েছে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
ছাড়পত্রের কিছু all time best love story-
ইউনিভার্সিটি প্রেমের গল্প
স্কুল লাইফের প্রেম
একটি সুন্দর প্রেমের গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
সত্যি প্রেমের গল্প। একটি ভালোবাসার গল্প। স্বামী স্ত্রীর গভীর ভালোবাসার গল্প।
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।