অসাধারণ দুটি শিক্ষামূলক ঘটনা নিয়ে আজকের ছোট গল্প দুটি। এই শিক্ষণীয় ছোট ঘটনা দুটিতে দেখানো হয়েছে, কেউ নিজের স্বার্থের জন্য ঝাঁপিয়ে পরছে আবার কেউ নিজ স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে অপরের মুখে হাসি ফোটানোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত।
শিক্ষামূলক ঘটনাঃ-
শিক্ষণীয় ছোট ঘটনাঃ-০১
রিকশায় বসে টাউনে যাচ্ছি, হঠাৎ একটা বাড়ীর সামনে রিকশাটা দাঁর করিয়ে চালক বললো, ” দাদা এক মিনিট দাড়াবেন? এখানে আমার স্ত্রী কাজ করে, আজ আসেনি, মেয়ের বাড়ীতে গেছে, মেয়েটার শরীর বেশি ভালো না তাই, গতকাল ওর মাইনে নেবার কথা ছিল, আজ অল্প পরে বন্ধন এর কিস্তি দিতে হবে একশো টাকা কম আছে, নিয়ে আসি।”
এক শ্বাসে সে কথাগুলো বলে করুন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো।বললাম “ঠিক আছে তুমি যাও আমি অপেক্ষা করছি।” তিনবার কলিং বেল টিপতেই এক ভদ্রলোক দরজা খুললেন, সঙ্গে ৭- ৮ বছরের একটা বাচ্চা। দেখে মনে হলো উনি কোথাও বেরোবেন এখন সেজেগুজে আছেন। রিকশাওয়ালা আর ভদ্রলোকের কথোপকথন আমি নিচে তুলে ধরলাম –
রিকশাওয়ালা – “বাবু, আজ ও আসতে পারেনি জানেন তো! তাই বলেছিল ওর মাইনেটা যদি দিয়ে দিতেন, গতকাল বেশি রাত হয়ে গেছে তাই আপনাদের বিরক্ত করিনি।”
ভদ্রলোক – (কর্কশ মেজাজে) আজ আসেনি কেন? বলেছিলাম তো মেয়ের বাড়ি যেতে হবে না, কাজে না এসে আমাদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে। এখন আমি আর আমার ছেলে একটু ঘুরতে বেরোবো, তুমি এখন যাও, কাল তোমার স্ত্রীর হাতে টাকা দিয়ে দেবো।”
রিকশাওয়ালা –( নম্র সুরে) “ঠিক আছে বাবু, আপাতত আমাকে ১০০ টি টাকা দিন, বন্ধনের কিস্তি দেবো অল্প পরে, ১০০ টাকা কম আছে আমার কাছে। জানেন তো এই মাসিক কিস্তিগুলির কি ঝামেলা না দিলেও হয় না!”
ভদ্রলোক – “১০০ টাকা হবে না, যাও তো এখন আমার তাড়া আছে, বিরক্ত করোনা।”
রিকশাওয়ালা – “বাবু ১০০ টি টাকা হবেনা? দিন না অনেক বেশি মুশকিল তাই চাইছিলাম।”
ভদ্রলোক – “হবে না যাও এখন।”
ছোটো ছেলেটা এতক্ষন থেকে ওদের কথাবার্তা শুনছিল মন দিয়ে, হঠাৎ সে বলতে লাগল, ” বাবা, এই যে আমার কাছে ১০০ টাকা আছে সকালে দিয়েছিলে চকোলেট খাবো বলে, ওটা কাকুকে দিয়ে দাও, আমার লাগবে না। ওর দরকার মনে হচ্ছে?
ভদ্রলোক – (ধমক দিয়ে বাচ্চাকে) “চুপ করো !, তুমি মার কাছে যাও। (রিকশাওয়ালার উদ্দেশ্যে) আরে তুমি যাও তো এখন ১০০ টাকা হবে না।”
ঘরের দরজা সশব্দে বন্ধ হলো।
রিকশাওয়ালা বিষণ্ণ মনে ফিরে এসে আবার রিকশা চালাতে আরম্ভ করে। ওকে বললাম “ভদ্রলোকের কাছে তো টাকার অভাব হবে না, এতো বড়ো বাড়ি, গাড়িও দেখলাম, কিন্তু তোমাকে টাকা দেবেন না যা বুজলাম। তুমি আমার কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়ে নাও”
রিকশাওয়ালা তৎক্ষণাৎ বললো, “না দাদা আপনার থেকে টাকা কি ভাবে নেবো? তা হয় না, আবার কোথায় পাবো আপনাকে টাকা ফেরত দেবার সময়?”
বললাম “ফেরত দিতে হবে না,আমি বড়োলোক না মধ্যবিত্ত ছেলে, ওই ভদ্রলোকের মত টাকা আমার নেই তবে তোমাকে এই টাকা দিলে আমার তেমন অসুবিধা হবে না, আছে তাই বলছি নিয়ে নাও।
কিন্তু আমি বুজলাম ও কিছুতেই আমার থেকে টাকা নেবে না, হয়তো ফেরত দিতে আমাকে পাবে না এই লজ্জায় বা অন্য কোনো কারণে।সে আরো বলতে লাগলো, “ঘরে গিয়ে দেখি কোনো উপায় বের করবো, কিন্তু কি উপায় বের করবো তাও তো বুঝতে পারছি না। ধন্যবাদ আপনার আমাকে সাহায্য করতে চাইলেন দাদা।”
টাউনের কাছে এসে গেছি, বুদ্ধি করে পকেট থেকে ১০০ টাকার একটা নোট বের করে চুপচাপ রিকশায় ফেলে দিয়ে, রিকশা থেকে নেমে ওর প্রাইপো ভাড়া দিয়ে চলে আসছি। এমন সময় ও ডাকতে লাগলো, ওহ দাদা আপনার টাকা পড়ে গেছে নিয়ে যান।
ফিরে গিয়ে বললাম “কই আমার টাকা পড়েছে দেখি?”
-“এই দেখুন ১০০ টাকা নিয়ে যান।” বললাম “কিন্তু আমার কাছে তো ১০০ টাকার কোনো নোট ছিল না, ৫০০ টাকা এর একটা নোট আছে এই দেখো, আর ২০ টাকা ছিল তোমাকে ভাড়া দিলাম।”
নিশ্চয় আরো কেউ আমার আগে ফেলে গেছে, আমি চললাম আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে দাদা। চলি”
রিকশাওয়ালা অবাক চোখে বললো, “সবই বুঝতে পারলাম দাদা, উমমমম ঠিক আছে যান আপনি, ভগবান তার মঙ্গল করুন যে এই ১০০ টাকা টা ফেলে গেছে।” অপূর্ব এক হাসি দিল সে আমার দিকে তাকিয়ে, যে হাসির অর্থ আমি আর ও ছাড়া কেউ হয়তো বুঝতে পারেনি।
এই গল্প গুলি হয়ত আপনার পছন্দ হতে পারে-
নীতিকথার গল্প- ঠাকুমার ঝুলি
গল্পে গল্পে শিক্ষা
শিক্ষণীয় রূপকথার গল্প
শিক্ষণীয় ছোট ঘটনাঃ-০২
বড়ো রাস্তার পাশে এক গলির মুখে এক ছোটো কলার দোকান, এক বুড়ি ঠাকুমা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কলা বিক্রি করেন, ফুটপাতের এই সামান্য এক চালার দোকানটাই ওর বেচেঁ থাকার সম্বল। তিন ছেলে ও এক মেয়ে থাকা সত্ত্বেও ওকে কেউ দেখে না, ওরা ওদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। দোকানের অপর দিকের জোয়ার আড্ডা থেকে মদ্যপ অবস্থায় দুই যুবক কি সব আলোচনা করতে করতে এই দিকেই আসছিল।
প্রথম যুবক – আজ আবার সব হেরে গেলাম।
দ্বিতীয় যুবক – আমি হারলেও ৫০০ টাকা আছে হাতে।
প্রথম যুবক – কই দেখি?
দ্বিতীয় যুবক – এই দেখো।(একটা ৫০০ টাকার নোট দেখালো)
প্রথম যুবক – এইটা দিয়ে এখন মদ খাওয়াতে হবে ভাই। আমার মনে অনেক দুঃখ।
দ্বিতীয় যুবক – ঠিক আছে চলো।
অতঃপর তারা পাশের ওয়াইন শপে গেলো। কিন্তু ওদের আর মদ কিনা হলো না, দোকানদার জানিয়ে দিল ওর দেওয়া ৫০০ টাকা টা নকল।
প্রথম যুবক – মদের নেশায় বুঝলে না তুমি কেউ তোমাকে নকল নোট দিয়েছে।
দ্বিতীয় যুবক – কি করি এখন?
প্রথম যুবক – দেখি কি করা যায়, আসো।(চলতে চলতে)
দ্বিতীয় যুবক – ওই দেখো ওই বুড়ি কলা বিক্রি করছে, ওর কাছেই দেবো নোটটা। ও চিনতে পারবে না।
বুড়ির দোকানে-
প্রথম যুবক – মাসী, ভালো কিছু কলা দাও তো?
দ্বিতীয় যুবক – দাও গো দাও, বেশি করে দাও, বাড়িতে কাল পুজো আছে।
বুড়ি – দিচ্ছি বাবা, কতো গুলো দেবো? কতো টাকার দেবো বলো?
প্রথম যুবক – ৫০০ টাকার মিল করে দাও।
বুড়ি – (কলা হিসেব করে ব্যাগে এ দিতে দিতে) এই নাও বাবা, ১০/১২ টা বেশীই দিয়েছি।
যুবকরা চলে গেলো। বুড়ি আজ খুব খুশি অনেকদিন পর এত্ত বিক্রি হয়েছে। ব্যস্ত হয়ে পাশের দোকানে যায় চাল, ডাল কিছু জিনিস কিনবে বলে। দরকারি জিনিসগুলি নিয়ে ৫০০ টাকা টা দোকানদারকে দিয়ে দেয় ,অল্প পরে ‘টাকাটা নকল’ বলে চিৎকার শুরু করে দোকানদার l
দোকানদার বলতে থাকে, “নকল টাকা দিয়ে ঠকিয়ে জিনিস নিতে এসেছ, আর জায়গা পাওনি তুমি?” জিনিসগুলি জোর করে কেড়ে নিয়ে বুড়ির হাতে নোটটা ফেরত দিয়ে দেয়। বুড়ি কি করবে বুঝতে পারছে না, ওর মনে হচ্ছে পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে, এতগুলো কলা দিয়ে দিল ওদের আর তার বদলে নকল নোট!
নিজের দোকানে এসে ও কাদতে শুরু করে, এমন ভাবে যুবকগুলি ওকে ঠকিয়ে চলে যাবে বুঝতেই পারেনি। নিজের জায়গায় বসে হাঁটুতে মুখ গুজে বার বার কাদতে থাকে। অপর এক যুবক সেই সময় গলি দিয়ে নিজের বাড়ি ফিরছিল, বুড়ির কান্না দেখে থামলো, “কি হয়েছে গো ঠাকুমা তুমি কাদছো কেনো?”
মুখ তুলে বুড়ি ৫০০ টাকার নোটটা ওর হাতে দিয়ে আবার হাঁটুতে মুখ গুজে কাঁদতে কাঁদতে সমস্ত ঘটনা ওকে বলল। যুবকটি সব বুঝল আর তার পকেট থেকে একটা ৫০০ টাকার নোট বের করে নকল ৫০০ টাকার সঙ্গে বদলে নিল বুড়ির অজান্তেই। বুড়িকে বলল, “আমি তো এইটা নকল দেখছি না ঠাকুমা, কোথায় নকল?” ওই দোকানী ভুল দেখছে, তুমি উঠো, যাও তো অন্য দোকানে যাও আমি দাড়িয়ে আছি এখানে।”
বুড়ি চোখের জল মুছে আস্তে আস্তে অন্য দোকানে গেল ওর কথামত। বুড়ি ভয়ে এইবার বেশি জিনিস না কিনে অল্প চাল আর ডাল কিনে টাকাটা দিল দোকানদারের হাতে। দোকানদার ৫০০ টাকাটা রেখে বাকি পাওনা টাকা বুড়ির হাতে দিল। বুড়ি নিজের দোকানে ফিরে এলো। যুবক বললো, “দেখলে তো নোটটা নকল না, শুধু শুধু কাঁদছিলে। যাও এবার দোকান বন্ধ করে বাড়ি যাও, আমিও যাই অনেক দেড়ি হয়ে গেছে।
এই দুটি গল্পের মাধ্যমে, কি বুঝলেন? এখানে কোনো রহস্য নেই হঠাৎ পাল্টে যাওয়া টুইস্ট নেই কিন্তু আছে মানবতা আর মানুষের স্বার্থপরতার এর জলজ্যান্ত উদাহরণ। টাকা বেশি হলে ওই প্রথম গল্পের ভদ্রলোকের মত অহংকার বেড়ে যায়। আর দেখুন না এই গল্পের যুবকের মত কতজনেই বা পারে নিঃস্বার্থভাবে মানুষকে সাহায্য করতে? নিজের কথা না ভেবে অপরের মুখে হাসি ফোটাতে!
গল্পটির কপিরাইট ছারপত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটি চুরি করে যেখানেই লুকান না কেন, ছাড়পত্র ঠিক খুজে বের করবে। তাই চুরির খাতায় নিজের নাম লিখাবেন না।
ছাড়পত্রে আপনার গল্প প্রকাশ করার জন্য, গল্প পাঠাতে পারেন- WhatsApp এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে অথবা ইমেলের মাধ্যমে- charpatrablog@gmail.com -এ।
পড়ুনঃ-
মোটিভেশনাল ছোট গল্প
মায়ের ভালবাসা- একটি শিক্ষণীয় গল্প
ছাড়পত্রের সমস্ত আপদেত এখন হাতের মুঠোয়-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
শিক্ষামূলক ঘটনা। শিক্ষণীয় ছোট ঘটনা। bengali short educational story.
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।