রহস্যজনক ঘটনা TUNNEL NO 33 & BRIJ HAVELI
শিমলা টানেল নং ৩৩-
কালকা থেকে শিমলা যাওয়ার পথে আপনি অনেক গুলিই টানেল দেখতে পাবেন। কিন্তু এদের মধ্যে সবথেকে রহস্যময় টানেল হল টানেল নং-৩৩। মনে করা হয় এই জায়গাটিতে আজও সেই ইঞ্জিনিয়ারটির আত্মা ঘুরে বেড়ায়। সেই ইঞ্জিনিয়ারটি এই টানেলটির সামনেই আত্মহত্যা করেছিল। এবার আপনাদের এই টানেলটির সাথে জড়িত রহস্যের ব্যাপারে বিস্তারিত জানাই।
এই টানেলটির নাম দেওয়া হয়েছিল দ্য বরেগ টানেল, এই টানেল টিকেই টানেল নং-৩৩ বলা হয়। টানেলটি ১১৪৩.৬১ মিটার লম্বা। হিমাচল প্রদেশের কালকা থেকে শিমলা যাওয়ার পথে বারোগ রেল ষ্টেশনের পাশে অবস্থিত এই জায়গাটি। এই টানেলটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ আমলেই। কর্নেল বারোগ নামের এক ইঞ্জিনিয়ার এই টানেলটির নির্মাণ দায়িত্বে ছিলেন। সেই কালে পাহাড় কেটে টানেল তৈরি করার সময় নানান প্রকার সিসা এবং অ্যাসিটিলিন গ্যাস ব্যবহার করা হত।
রহস্যজনক ঘটনা রহস্যময় গল্প SHIMLA TUNNEL NO 33 BREEZE HORROR STORY BENGALI বাংলা ভূতের গল্প***
কর্নেল একটি পাহাড়ের উপর উঠেন এবং দুটি চুড়ার উপর দাগ দেন। এরপর তিনি এই চুড়াদুটির মধ্য দিয়েই মজুরদের সুড়ঙ্গ কাটার নির্দেশ দেন। তার ধারনা ছিল দুইদিক দিয়ে খনন করার ফলে সুড়ঙ্গ দুটি একসময় একসঙ্গে মিলে যাবে। কিন্তু তার অনুমান সম্পূর্ণ ভুল ছিল। যার ফলে তার কাজে ত্রুটি দেখা যায়। এরপর ব্রিটিশ সরকার ভুল কাজের জন্য এবং প্রচুর টাকা নষ্ট করার জন্য কর্নেলকে প্রচুর তিরস্কার করেন এবং তাকে ১ টাকার জরিমানা ধার্য করা হয়।
কর্নেলের সাথে যে সমস্ত কর্মীরা কাজ করেছিল তারাও কর্নেলকে নানান বাজে ভাষায় আক্রমণ করতে থাকেন। এরপর থেকেই কর্নেল প্রচুর ডিপ্রেশনে চলে যান। একদিন সকালে তার কুকুরটিকে সঙ্গে নিয়ে তিনি মর্নিং ওয়ার্কের জন্য বেড় হন। এরপর তিনি তার বন্দুকের গুলিতে প্রাণ দেন। রক্তাক্ত ইঞ্জিনিয়ারের দেহটি সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে পড়েছিল। কারণ সেই সময় সেই জায়গাটির আশে- পাশে কেউই ছিল না। এই ঘটনাটির প্রত্যক্ষদর্শী কুকুরটি ছাড়া আর কেউই ছিল না। গ্রামবাসীদেরও সেই জায়গাটিতে পৌঁছাতে কয়েক ঘণ্টা লেগেছিল।
রহস্যজনক ঘটনা রহস্যময় গল্প SHIMLA TUNNEL NO 33 BREEZE HORROR STORY BENGALI বাংলা ভূতের গল্প***
সেই অর্ধনির্মিত টানেলটির সামনেই কর্নেলকে কবর দেওয়া হয়। এরপর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে টানেলটির কাজ আবার শুরু হয়। ১৯০৩ সালে টানেলটির কাজ সম্পূর্ণ হয়। ব্রিটিশ সরকার কর্নেল বারোগের নামানুসারে এই টার্নেলটির নাম রাখেন বারোগ টার্নেল। এই টার্নেলটি তৈরি করতে মোট প্রায় ৮.৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল।
রহস্যজনক ঘটনা রহস্যময় গল্প SHIMLA TUNNEL NO 33 BREEZE HORROR STORY BENGALI বাংলা ভূতের গল্প***
সেখানকার স্থানীয় লোকেদের মতে আজও সেই ইঞ্জিনিয়ার এর আত্মা এই জায়গাটিতে ঘুরে বেড়ায়। আর এই কারনেই এই টানেলটিতে রাতের বেলা কোনো লোকের পাত্তা পাওয়া যায় না। স্থানীয় লোকেদের মতে অনেক সময় রাতের বেলা টানেলটি থেকে কিছু আজব শব্দ এবং নিরাশার হা-হুতাশের শব্দ শোনা যায়।
সে যাই হোক বাস্তবেও কিন্তু এই টানেলটি দেখতে খুবই ভয়ংকর। যদি দিনের বেলাতেও এই টানেলটির সব আলো নিভিয়ে দেওয়া যায় তাহলে ভিতরে কিছু অদ্ভুত রকমের ফিলিং হয়। এটা শুধু আমি বলছি না, সেখানে যতজন যাত্রী হঠাৎ করে আলো নিভে যাওয়ার ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন তাদের সবার কাছেই সেই সময়টির অদ্ভুত অনুভূতির কথা শোনা যায়।
রহস্যজনক ঘটনা রহস্যময় গল্প SHIMLA TUNNEL NO 33 BREEZE HORROR STORY BENGALI বাংলা ভূতের গল্প***
এই টানেলটির মধ্য দিয়ে কিছুদুর পর, একটি সুড়ঙ্গ রয়েছে। সেই সুড়ঙ্গটি থেকে বেশিরভাগ সময় ভূতুড়ে শব্দ ভেসে আসতে শোনা যায়। অনেক সময় শোনা যায় কোনো মানুষ জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে। সরকার সেই সুড়ঙ্গটি লোহার গেট লাগিয়ে বন্ধ করে দেন, এবং তাতে তালা লাগিয়ে দেন। কিন্তু পরদিনই সেই তালাটি ভাঙ্গা অবস্থায় আবিষ্কৃত হয়। এরপর যতবারই তালা লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, ততবারই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। এরপর সরকার আর সেখানে তালা লাগানোর চেষ্টা করেনি। যে কেউই সেখানে গেলে অদ্ভুত ভয়ানক শব্দ শুনতে পাবে। এমনকি আপনিও যদি সেখানে গিয়ে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থাকেন, আপনিও এই ভয়ানক শব্দ শোনার অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেন।
রহস্যজনক ঘটনা রহস্যময় গল্প SHIMLA TUNNEL NO 33 BREEZE HORROR STORY BENGALI বাংলা ভূতের গল্প***
রাজস্থানের ব্রিজ ভবনঃ-
রাজস্থানের কোটা শহরের এক পুরানো হাভেলি হল ব্রিজ ভবন। এই হাভেলিটিকে বর্তমানে হোটেলের রূপ দেওয়া হয়েছে। দেশ- বিদেশ থেকে অনেক পর্যটক এখানে এসে বাস করেন। যখনই আপনি এই হোটেলটিতে আপনার প্রথম পা রাখবেন ঠিক তখন থেকেই আপনার মনে খটকা লাগা শুরু হয়ে যাবে। আর সেখানকার বাসিন্দাদের মতে, এই খটকা লাগার মত অনুভূতির মূল কারিগর হল, সেখানে অবস্থিত আত্মার প্রভাব। সেখানকার বাসিন্দাদের মতে এই ব্রিজ ভবনে এক ইংরেজের আত্মা আজও মুক্তির দিশায় ঘুরে বেড়ায়। সেই ইংরেজটি এই বিশাল ভবনটির হল রুমের পাশে তার দুই যমজ ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাস করতেন। এই ভবনটি প্রায় ১৮৫ বছরের পুরানো।
রহস্যজনক ঘটনা রহস্যময় গল্প SHIMLA TUNNEL NO 33 BREEZE HORROR STORY BENGALI বাংলা ভূতের গল্প***
আসুন এবার এর পেছনে জড়িত কাহিনিটি শুনে নিই। ১৮৫৭ সালের কথা। এই সময়টিতে সারা ভারত জুড়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে এক বিশাল আন্দোলনের সুত্রপাত হয়। চম্বল নদীর তীরে ব্রিটিশ সরকার তাদের প্রেসিডেন্সি রুপে এই ব্রিজ ভবনটি নির্মাণ করে। ব্রিটিশ সরকার বিভেদ নীতিকে কাজে লাগিয়ে হিন্দু- মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করার চেষ্টা চালায়। এরপর যখন দুই ধর্মের মানুষের কাছেই ব্রিটিশ সরকারের চাতুরি ফাস হয়ে যায় তখন দুই সম্প্রদায়ের মানুষই ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণ আন্দোলনের ডাক দেন।
রহস্যজনক ঘটনা রহস্যময় গল্প SHIMLA TUNNEL NO 33 BREEZE HORROR STORY BENGALI বাংলা ভূতের গল্প***
এরপর আরেকটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এই সময় গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, বন্দুকের কার্তুজে গরু এবং শুঁয়োর এর চর্বি মেসানো আছে। এরফলে হিন্দু এবং মুসলিম সিপাহিরা ব্রিটিশ সরকারের উপর আরও বেশি ক্ষেপে যায়। এরপর সিপাহী বিদ্রহের সূচনা হয়।
এরপর কিছিদিনের মধ্যেই বিদ্রোহরত সিপাহীরা ব্রিটিশ সরকারের প্রেসিডেন্সী ব্রিজ ভবনকে ঘিরে ফেলে। সেখানে এক ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সেইসময় সেই ভবন টিতে মেজর ব্রটন তার দুই যমজ ছেলের সাথে এই ভবনটিতে বাস করত। সেপাহিরা ভবনের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে। সেপাহিদের বিদ্রোহ দেখে মেজরের দুই ছেলে খিলানের উপর চলে যায়, এবং তারা সাহায্যের জন্য কাতর চিৎকার করতে থাকে।
এদিকে সিপাহীরা ভিতরে ঢুকেই মেজর ব্রটনকে ধরে ফেলে এবং বিশাল হল ঘরের মধ্যে মেজরকে ছুড়ির আঘাতে হত্যা করে। পিতার মৃত্যু দেখে দুই যমজ ভাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য ভবনের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। এরপর আর কোনো পথ না দেখতে পেয়ে তারা ভবনের ছাঁদ থেকে লাফিয়ে পড়ে। সাথে সাথেই সিপাহীরা তাদের হত্যা করে। বাবার কৃত কর্মের জন্য তার নিষ্পাপ ছেলে দুটিও এভাবে প্রাণ হারায়।
রহস্যজনক ঘটনা রহস্যময় গল্প SHIMLA TUNNEL NO 33 BREEZE HORROR STORY BENGALI বাংলা ভূতের গল্প***
অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর জন্য মেজরের আত্মা শান্তি পায় নি। সেখানকার মানুষদের মতে আজও ব্রিজ ভবনে মেজরের আত্মা ঘুরে বেড়ায়। এই কথার বড় প্রমান পাওয়া যায়, ব্রিটেনের এক সাংবাদিককে মহারাণীর দেওয়া সাক্ষাৎকারে। মহারাণীর মতে- তিনি যখন এই ভবনটির ড্রয়িং রুমে ছিলেন তখন তিনি বেশ কয়েকবার মেজরের মত দেখতে আজব কিছু দেখেছিলেন। মহারাণী এও বলেছেন যে তিনি একটি বৃদ্ধ মানুষের ছায়া দেখেছিলেন। আর সেই ছায়াটি একটি লাঠি হাতে নিয়ে ঘুরছে। যদিও তারমতে সেই আত্মাটি কোনোদিনও তার কোনো ক্ষতি করেনি।
বর্তমানে ব্রিজ ভবনকে কোটা স্টেট গেস্ট হাউসে পরিণত করা হয়েছে। সেখানে কর্মরত ব্যাক্তিদের মুখে শোনা যায় যে, তারা গভীর রাতে বাগানে হাঁটার শব্দ শুনেছেন। সেখানকার মানুষরা এও বলেছেন যে, যদি রাতে কেউ একাই বাগানে যায় বা ছাঁদে যায়, তাহলে কোনো অদৃশ্য শক্তি এসে থাপ্পড় মেরে যায়। আর এই থাপ্পড়ের তীব্রতা এত বেশি যে মানুষ এক থাপ্পড়েরই বেহুশ হয়ে পড়ে থাকে। তাই রাতের বেলা ছাঁদে এবং বাগানে যাওয়া সম্পূর্ণ রুপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
রহস্যজনক ঘটনা রহস্যময় গল্প SHIMLA TUNNEL NO 33 BREEZE HORROR STORY BENGALI বাংলা ভূতের গল্প***
আপনি আরও পড়তে পারেনঃ-
রহস্যজনক ঘটনা রহস্যময় গল্প SHIMLA TUNNEL NO 33 BREEZE HORROR STORY BENGALI বাংলা ভূতের গল্প***
রহস্যজনক ঘটনা রহস্যময় গল্প SHIMLA TUNNEL NO 33 BREEZE HORROR STORY BENGALI বাংলা ভূতের গল্প***
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।