আজকের মোটিভেশনাল স্টোরি গুলিতে জীবন সম্পর্কিত দুটি বিশেষ শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। ছাড়পত্র আশা রাখছে এই অনুপ্রেরণামূলক গল্প দুটি আপনাদের ভালো লাগবে। গল্প সম্পর্কিত মতামত কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
অসাধারণ মোটিভেশনাল স্টোরিঃ-
মোটিভেশনাল স্টোরি দুটিতে ভিন্ন ভিন্ন বার্তা দেওয়া হয়েছে। তাই গল্প পড়ার পরে অন্তর্নিহিত অর্থ বোঝার প্রয়াস করুন।
মোটিভেশনাল স্টোরিঃ-
বিষ্ণুগড় গ্রামে এক ধনী ব্যক্তি বসবাস করত। হাতের কাছে সব পেলেও তার অনেক দুঃখ। দুঃখ টাকা পয়সার নয়। দুঃখ হল সন্তানের। ধনী হলেও সেই ব্যক্তির কোনো সন্তান ছিল না। একদিন রাতে সে তার স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে লাগল যে, তাদের অবর্তমানে এই বিশাল সম্পত্তির মালিকানা কাকে দিয়ে যাবে!
তাদের দরকার এমন কাউকে, যে সৎ হবে এবং বৃদ্ধ বয়সে তাদের দেখাশোনা করবে। অবশেষে তারা ঠিক করল যে, গ্রামের মধ্যে অনেক শিশু আছে, এবং এদের বেশিরভাগই গরীব পরিবারের। এই শিশুগুলির মধ্যে কাউকে তারা দত্তক নেবে।
যথারীতি পরের দিন গ্রামে ঘোষণা করে দেওয়া হল যে, যদি কেউ নিজের সন্তানকে দত্তক দিতে চান, তাহলে নিজের সন্তানকে নিয়ে যেন আগামীকাল সেই ব্যক্তির প্রাঙ্গণে হাজির হন।
এত ধনী একজন ব্যক্তিকে নিজের সন্তান দত্তক দিতে অনেকেই ইচ্ছা প্রকাশ করল। পরের দিন সেই ধনী ব্যক্তির প্রাঙ্গণে প্রচুর মানুষ নিজের সন্তানকে নিয়ে হাজির হল।
সেই ধনী ব্যক্তি ঘোষণা করলেন- “একটি বড় পাত্রে গাছের বীজ রাখা আছে। প্রতিটি শিশু এক এক করে এসে নিজের পছন্দ মত গাছের বীজ নিয়ে যাবে।“
যথারীতি বাচ্চাগুলো এসে গাছের বীজ নিল। এরপর সেই ব্যক্তি বললেন- “আজ থেকে ছয় মাস পর, সবার সঙ্গে আবার দেখা হবে। যে গাছের বীজ গুলি নিয়েছ সেগুলো সবাই বাড়িতে গিয়ে একটি পাত্রে বীজটি লাগাবে। আর ছয় মাস পর এখানে সেই বীজ থেকে জন্ম নেওয়া গাছ নিয়ে আসবে। সবাই গাছের যত্ন নেবে। যার গাছটি সবচেয়ে বেশি বড় হবে তাকে আমার উত্তরাধিকারী মনোনীত করা হবে।“
এরপর সবাই যার যার মত বাড়ি চলে যায়। এদের মধ্যে একটি ছোট্ট ছেলে খুবই চিন্তিত কেননা, এক মাস হয়ে গেলেও তার নেওয়া বীজ থেকে এখনো কোন গাছ বেড় হয়নি। সে বীজটিকে যত্ন করে লাগিয়েছে, প্রতিদিন সে বীজটির যত্ন নেয়। কিন্তু সেই বীজ থেকে আর চারাগাছ বেড় হয় না। দেখতে দেখতে কেটে গেলো তিন মাস। এখনো সেই বীজ থেকে গাছের জন্ম হয়নি। চিন্তিত ছেলেটিকে তার মা সান্ত্বনা দিয়ে বলেন- “তুমি যদি যত্ন করে যায় ঠিক গাছ জন্মাবে।“
পড়ুনঃ- জীবন নিয়ে শিক্ষনীয় গল্প
কিন্তু না সেই বীজ থেকে আর গাছ জন্মায় না। দেখতে দেখতে কেটে গেল ছয় মাস। অবশেষে সেই দিনটি চলে এলো, যেদিন সবাইকে সেই ব্যক্তির বাড়িতে নিজেদের চারাগাছ নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
সেই ছোট্ট ছেলেটি কিছুতেই আর সেখানে যেতে চায়না। কেননা সবার বীজ থেকে গাছ জন্মে হয়ত বড় বড় হয়ে গেছে, কিন্তু তার বীজ থেকে গাছ জন্মায় নি। অবশেষে সে তার মায়ের কথা মত খালি পাত্র নিয়েই সেই ব্যক্তির প্রাঙ্গণে হাজির হল।
সেই ছোট্ট বাচ্চাটি দেখল, সবার বীজ থেকে বড় বড় গাছ জন্মেছে, সবার পাত্রে গাছ রয়েছে কিন্তু তার পাত্র এখনো খালি অবস্থায় পরে রয়েছে। সে খালি পাত্র হাতে নিয়ে মন খারাপ করে একদিকে দাঁড়িয়ে রইল তার মায়ের সাথে।
এরপর সেই ব্যক্তি এক এক করে সবার গাছ দেখাতে বললেন। এদিকে সেই ছোট্ট ছেলেটির খালি পাত্র দেখে বাকি সবাই হাসাহাসি শুরু করে দিয়েছে। সেই ব্যক্তিটি সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললেন সবার এত খুশি হওয়ার কোন কারণ নেই। সেই ছোট্ট ছেলেটিকে দেখিয়ে তিনি বললেন, ওকেই আমার উত্তরাধিকারী মনোনীত করব।
এরকম কথা শুনে শিশুগুলির বাবা-মায়েরা রেগে গেলেন। কারণ কথা ছিল যার গাছ বেশি বড় হবে তাকে উত্তরাধিকারী করা হবে।
সেই ধনী ব্যক্তি মৃদু হেসে বলতে লাগলেন- “আমি যদি আপনাদের বীজ না দিই, তাহলে গাছ জন্মায় কীভাবে! আমি কাউকে কোন গাছের বীজ দিই নি। সবাই বীজ মেনে যেগুলো নিয়ে গেছে সেগুলো আসলে ছোট্ট ছোট্ট গোল গোল নুড়ি পাথর। পাথর থেকে গাছ জন্মানো অসম্ভব । সেই শিশুটি বাদে বাকি সবাই যখন দেখল বীজ থেকে গাছ জন্মাচ্ছে না, তখন সবাই নিজেরাই একটি গাছের বীজ পুঁতে দিয়েছে। আর ভেবেছে আমাকে বোকা বানিয়ে দেবে।
কিন্তু সেই শিশুটি নিজের সততা বজায় রেখেছে। তার পাত্র দেখেই বোঝা যাচ্ছে, গাছ না জন্মালেও সে বিশেষ যত্ন নিয়েছে সেই পাত্রটির কেননা সে বিশ্বাস করত যে সেখান থেকে গাছ জন্মাবে, তাই সে একটা আগাছাও জন্মাতে দেয় নি।
আমার উত্তরাধিকারী হিসেবে একজন সৎ শিশুকেই চাই আর আমি সেই সৎ শিশু পেয়ে গেছি।“
এরপর তিনি সেই শিশুটির মাকে ডেকে বললেন- “আপনার সন্তান কে সৎ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে আপনার হাত রয়েছে, আজ থেকে আপনার সন্তানের সাথে আপনি এবং আপনার স্বামী আমার এখানে থাকবেন।“
সুতরাং বোঝা গেল, চালাকি করে কোনোকালে কোনোকিছু অর্জন করা যায় নি এবং ভবিষ্যতেও যাবে না। কিন্তু নিজের সততা দিয়ে অনেক কিছুই জেতা যায়, আর এটাই চিরন্তন সত্য। তাই চালাকি নয়, নিজের সততা বজায় রাখুন, দেখবেন শেষ হাসি আপনিই হাসবেন। চালাকি করে ক্ষণিকের সুখ মিললেও সেটি স্থায়ী নয় কেননা দিন শেষে আপনার চালাকি ধরা পরবেই। কিন্তু সততার সুখ স্থায়ী। তাই চালাক নয়, সৎ হওয়ার চেষ্টা করুন।
পড়ুনঃ- জীবনকে সুন্দর করে তুলুন
অনুপ্রেরণামূলক গল্পঃ-
রঞ্জনলাল নামের এক ব্যক্তি মাঝে মাঝেই বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়াতেন। এই ঘুরে বেড়ানোটা তার নেশা। এরকমই একবার তিনি একটি মরুভূমি অঞ্চলে ঘুরতে গিয়েছিলেন। মরুভূমির সুবিস্তীর্ণ ধু-ধু মরু প্রান্তর দেখে সে মনে মনে বলতে লাগল- কত সুন্দর একটি জায়গা, দেখলেই যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। কিন্তু এরকম সুন্দর জায়গাতেও মানুষ শুধু ঘুরতে আসে। আজ এখানে যদি একটি জলের উৎস থাকত এই জায়গাটিতে গাছপালা জন্মাত।
আর সবুজের সমারোহে ভরে যেত আশপাশ। আর প্রাণের সঞ্চার দেখা যেত। যদি এখানে জল থাকত তাহলে ঘাস জন্মাত আর যার ফলে এখানেও পশু পাখির বসবাস হত। জাস্ট দরকার একটা জলের স্রোত। আমি যদি একটা এখানে জলের উৎস খুঁজে পাই, আমি এই মরুভূমিতে গাছ লাগিয়ে দেবো। আর সেই গাছ যত্ন করে বড় করব।
পড়ুনঃ- বাস্তব শিক্ষনীয় গল্প
এই সব ভাবতে ভাবতে সে এগিয়ে যাচ্ছিল। এদিকে ঈশ্বর সেই লোকটির মনের সব ভাবনা জানতে পেরে একটি বড় কুয়ো তৈরি করে দিলেন। কিছুদূর গিয়ে সে দেখল একটি অনেক বড় কুয়ো। সেই কুয়োর যেন কানায় কানায় জল ভর্তি।
লোকটি এই মরু প্রান্তরে এরকম কুয়ো দেখে অবাক হয়ে বলতে লাগল- এখানে একটি কুয়ো রয়েছে আবার সাথে দেখছি একটা বালতিও রয়েছে। এখানে তো অনেক পর্যটক ঘুরতে আসেন, কেউই এই জায়গাটির কথা ভাবে নি। থাক কেউই যখন উৎসাহ দেখাচ্ছে না যে জায়গাটি সবুজের সমারোহে ভরে যাক, আমি একাই আর এই বিষয়ে উৎসাহ দেখিয়ে কি লাভ! এই বলে সে আবারও এগিয়ে যেতে লাগল।
পরিস্থিতিকে দোষ দেওয়া আমাদের স্বভাব। আমরা ভাবি যদি এমনটা হত তাহলে এমন হত যদি আমার কাছে এমন থাকত তাহলে এমন হত।
অর্থাৎ সবাই একটি উৎস এর কথা ভাবি যে যদি এরকম থাকত তাহলে এরকম হত। কিন্তু যদি আপনি সেই উৎস হাতের কাছে পেয়ে যান পারবেন কি আপনি পরিস্থিতি বদলাতে! নাকি আপনিও গল্পের লোকটির মত পরিস্থিতিকে দোষারোপ করে পাশ কাটিয়ে চলে যাবেন!
পরিস্থিতিকে দোষারোপ না করে, উৎসকে কাজে লাগিয়ে সেই পরিস্থিতির সামনে গিয়ে দাঁড়ান, তবেই আলাদা একটা পরিচয় পাবেন।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- অজানা ও অবাক করা তথ্য পড়তে এখানে ক্লিক করুন অসাধারণ হাসির গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- ফেসবুক Group - গল্প Junction ফেসবুক- ছাড়পত্র টেলিগ্রাম- charpatraOfficial WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।