জীবনে অনেককেই তো ভালোবেসেছেন, কিন্তু মায়ের ভালোবাসা তথা পিতামাতার ভালোবাসার মত খাঁটি ভালোবাসা কোথাও খুঁজে পাবেন না। আজকের এই motivational short story টির মাধ্যমে আমাদের বর্তমান প্রজন্মের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং শিক্ষণীয় কথা বলতে চাওয়া হয়েছে।

মায়ের ভালোবাসা। মোটিভেশনাল ছোট গল্পঃ-

প্রতিদিনের অভ্যেস মত, রোহিত কলেজ থেকে বাড়ি ফিরেই তার ব্যাগটা, চেয়ারে ফেলে দিয়ে চেঁচিয়ে উঠল- “মা, খাবার কোথায়।“ কিন্তু তার মায়ের কোনো উত্তর সে শুনতে পেল না। সে আবার ডাকল, কিন্তু আবারও কোনো সাড়া পেল না। এবার সে তার মায়ের রুমে গিয়ে দেখল তার মা বিছানায় শুয়ে আছে। তার মেজাজটা বিগড়ে গেল- “আমি এত ডাকছি, তুমি তবুও সাড়া দিতে পাড়ছ না। আমার খিদে লেগেছে কই কোথায় কি আছে, খেতে দাও শিগগিরি।”

মা বিছানা থেকে উঠে বসে বলেন- “ঘুমিয়ে পড়েছিলাম রে, বাবু” এরপর মা খাবার সাঁজাতে চলে যান। রোহিত এখনও রাগে গজ গজ করছে। কিন্তু তার মা কিছুই বলল না। খবার খাওয়ার পড়, রোহিত চলে যায় ফুটবল খেলতে।

রোহিতের বাবা থাকেন মুম্বাইয়ে। সেখানে তিনি এক কোম্পানিতে কাজ করেন, ছুটি পেলেই বাড়ি ফিরে আসেন। তবে বছরে মাত্র কয়েক বারই ছুটি পান, তাই বাবার সাথে দেখা-সাক্ষাৎকার খুব কম হয়। বাবার সঙ্গে যা কথা হয় সব মোবাইলেই। রোহিত এবং তার মা থাকে শিলিগুড়িতে। শিলিগুড়ির এক কলেজে সে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। রোহিতের এক দিদি থাকলেও, তার বিয়ে হয়ে গেছে আসামে। বাবা যখন বাড়িতে আসেন তখনই দিদিও আসেন। আর ঠিক তখনই পুরো পরিবার একত্রিত হয়।

motivational short story bengali. sikkhonio golpo
motivational short story bengali. sikkhonio golpo

বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল, রোহিত বাড়ি ফিরে দেখে, এখনও লাইট জ্বলেনি। আবার সে তার মাকে ডাকতে শুরু করল- “মা কোথায় তুমি এখনও লাইট জ্বালোনি কেন?” সে রুমে গিয়ে দেখে তার মা আবার শুয়ে আছেন। রোহিত আবার তার মাকে ডেকে তুলল।

রোহিত তার মাকে একটু চা বানাতে বলে হাত-মুখ পরিষ্কার করতে চলে গেল। মা উঠে এসে রান্নাঘরে গেলেন। কিছুক্ষণ পড়েই একটা বিকট শব্দ রোহিতের কানে আসল। শব্দটা এসেছে রান্না ঘড় থেকেই। রোহিত দৌড়ে গিয়ে দেখে, তার মা মেঝেতে পড়ে আছেন। রোহিত তার মায়ের শরীরে হাত দিতেই চমকে গেল, কারণ তার মায়ের শরীর প্রচণ্ড গরম। জরে মায়ের শরীর পুড়ে যাচ্ছে।

রোহিত মাকে নিয়ে বিছানায় চলে আসে। মাকে বিছানায় রেখে দিয়ে সে ওষুধ আনতে যায়। কিছুক্ষণ পড় ফিরে এসে সে মায়ের হাঁতে ওষুধ দিয়ে দেয়। এবার রোহিত রান্না ঘড়ে যায় এবং তার জন্য ও তার মায়ের জন্য চা তৈরি করে। সে তার মাকে চা দিয়ে আসে। তার মা চায়ে একটি চুমুক দিয়ে জানায় যে, চায়ে চিনি দিতে সে ভুলে গেছে।

এরপর রোহিত চায়ে আবার চিনি দিয়ে মায়ের হাঁতে দেয়। চা খাওয়ার পড়, মা জানায় তার কপালে একটু জলের পটি দিতে। রোহিত তাই করে এবং সেখান থেকে সে আবার রান্না ঘড়ে চলে যায়।

এদিকে রোহিতের মায়ের হাত থেকে ওষুধটা মেঝেতে পড়ে যায় এবং গড়িয়ে কোথায় চলে যায়  তা তিনি দেখতে পেলেন না। এরপর রোহিত সেখানে আসতেই মা তাকে ওষুধটা খুঁজে দিতে বললেন- এবার রোহিত অনেক রেগে গেল- “আরে মা তোমার ব্যাপারটা কি বলতো? কখনো চায়ে চিনি নিয়ে সমস্যা, কখনো মাথায় জল পটি দাও, কখনো ওষুধ খুঁজে দাও, উফফ তোমাকে নিয়ে আর পাড়ছি না। আমি কখন আমার কাজ করবো বলতো“

একদম মিস করবেন নাঃ- বাংলা অনুপ্রেরণামূলক গল্প

In-case you missed it…

এই বলে সে ওষুধটা খুঁজে মায়ের হাঁতে দিল।

মা বললেন- “এখানে আয় আমার পাশে বোস।“ “এটুকুতেই তুই বিরক্ত হয়ে গেলি? যখন তোর শরীর খারাপ হয়, কতটা চিন্তায় আমি থাকি বলতো? কখনো তোর ছোলা ভাজা লাগবে। কখনো শরবত লাগবে। আবার কখনো কফি লাগবে। তুই খাবার না খেলে, আমারও খাবার যে কিছুতেই পেটে যায় না রে! ছেলেটার অসুখ কবে ছাড়বে, সেই চিন্তায় রাতে ঘুম আসতে চায় না। তোর কিছু হলে তুই কিছুই খেতে চাস না, তখন তোর সব পছন্দের জিনিস একে একে আমি তোর সামনে নিয়ে আসি, যে করেই হোক ছেলেটা আমার যেন শুঁকিয়ে না থাকে। যে করেই হোক তোকে অসুখ থেকে সাড়িয়ে তোলাটাই যে আমার কাছে তখন বড় চ্যালঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

এত্ত এত্ত কাজ তোর আমি সারাদিন করতে থাকি, আমি বিছানায় পড়ে আছি ঠিকই, কিন্তু সবসময় আমার মাথায় তোর চিন্তাই ঘুরছে। ছেলেটা কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, চিন্তায় কিছুতেই শান্তিতে থাকতে পাড়ি না রে! সবক্ষেত্রে তোর পাশে থেকেও আমি কি কখনো তোকে বলেছি যে, আমারও কাজ আছে। আজ এটুকুতেই তুই বিরক্ত হয়ে গেলি।“

রোহিত এতক্ষণ ধরে মাথা নিচু করে তার মায়ের কথা শুনছিল, সে মাথা তুলতেই দেখা গেল, তার চোখের কোণায় জলে ভড়ে গেছে। সে তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলল- “আমি আর কখনো এমন করব না মা। তুমি আমার জন্য কত কিছুই না করো, কিন্তু আমি তোমার এমন এক ছেলে যে কখনো জানতে চাইনি যে, তোমার শরীর কেমন আছে। তুমি কেমন আছো। বাবা আজ বাইরে আছেন, শুধু আমার জন্যই আছেন, যাতে আমি ভবিষ্যতে ভালো থাকতে পাড়ি। তোমরা যা কিছু করছ সব আমার জন্যই করছ। কিন্তু আমি তোমাদের এমন এক সন্তান যে নিজের দায়িত্ববোধটাও ভুলে যেতে বসেছে।“

রোহিতের কথা গলায় আঁটকে যায়, সে তার মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। তার মা তাকে শান্তনা দিতে থাকে।

পড়ুনঃ- পঞ্চতন্ত্রের গল্প

কিছু কাজের কথাঃ-

যখন আমরা মায়ের গর্ভে ছিলাম, তখন থেকে শুরু করে জীবনের শেষ পর্যন্ত বাবা-মা সন্তানের শুভকামনাই করে থাকেন। যখন গর্ভে ছিলাম, তখন বাবা-মা কতই না যত্ন করেছিলেন, যেন চাপ না পাই আমরা। আমাদের যেন অসুবিধা না হয়, তার জন্য মা প্রায় দশ মাস ধরে একপাশেই ঘুমিয়ে রাত কাটিয়েছেন। যখন গর্ভে থেকে মায়ের পেটে লাথি দিতাম, মা কতই না আনন্দিত হতেন এটা ভেবে যে, ছেলেটা/মেয়েটা আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইছে। এরপর যখন ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় হল, তখন নিজের জীবনের কথা পরোয়া না মা আমাদের জন্ম দিয়েছেন। একবার ভাবুন তো সেই নবজাতকদের কথা যারা ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময়ই মাকে শেষ দেখেছিল, তাদের সেটাই শেষ দেখা।

সারাটা জীবন তাদের মায়ের স্নেহ-মমতা-ভালোবাসা ছাড়াই বড় হতে হয়। স্কুলে অন্য বাচ্চাদের মা তাদের এগিয়ে দিতে গেলেও, পেছন থেকে- “সাবধানে যাস বাবা” ডাকটা তারা মিস করে। অন্য বাচ্চারা যখন কেঁদে এসে মাকে বলে- তাকে কেউ মেরেছে, তখন মা তাকে শান্তনা দেয়। কিন্তু সেই মায়ের স্নেহ ছাড়া বেড়ে উঠতে থাকা বাচ্চাটি কার কাছে নালিশ জানাবে, যে  তাকে কেউ মেরেছে, তাকে কেউ বকেছে?

মায়ের ভালোবাসা। মোটিভেশনাল ছোট গল্প
মায়ের ভালোবাসা। মোটিভেশনাল ছোট গল্প image sikkhonio golpo

আর আমাদের পাশে তো মা-বাবা রয়েছে। কোনো জিনিস থাকতেই তার মূল্য বুঝতে হয়। বাবা-মা আমাদের জন্য কত কিছুই না করে থাকেন। কিন্তু তাদের অসুবিধার মুহূর্তে, তাদের বার্ধক্যের সময় যদি তাদের পাশে না থেকে, ব্যস্ততা দেখিয়ে দূরে চলে যাই, তাহলে ঈশ্বরের কাছে নিজেকে ছোট প্রমান করা ছাড়া কিছুই হবে না। ঈশ্বরও কোনোদিনও ক্ষমা করতে পাড়বেন না। বাবা-মায়ের মনে যতই কষ্ট দাও না কেন, দিন শেষে “আমার খোকা যেন থাকে দুধে-ভাতে”এই প্রার্থনা টি তারা ঈশ্বরের কাছে করবেই করবে। বাবা-মায়ের অসুস্থতায় তাদের সঙ্গে থাকুন। তাদের যেন আপনার শূন্যতা অনুভব না হয় সেই চেষ্টা করুন। বাবা-মা যেমন আমাদের যত্ন নেন, ঠিক তেমনই আসুননা আমরাও তাদের যত্ন নিই।

অনেক ছেলেই আছেন যারা বিবাহের পড়ই বাবা-মা কে ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। আমার মতে এমন দায়িত্বহীন সন্তানের আগুনে পুড়ে মরে যাওয়া ভালো।

শুধু ছেলেদেরই উদ্দেশ্য করে আমি এই কথাটি বলছি না, শুধু ছেলেরাই কেন মেয়েরাও বাবা-মাকে সমানে যত্ন করুক।

আসুন না, বৃদ্ধাশ্রম মুক্ত দেশ গড়ি। বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়েই পথ হাঁটি। তারা যেমন সবসময় ঈশ্বরের কাছে আমাদের ভালো রাখার প্রার্থনা করেন, আমরাও ঠিক তেমনই ঈশ্বরের কাছে তাদের ভালো স্বাস্থ্যের প্রার্থনা করি।

আমরা এখন টেলিগ্রামেও:- ছাড়পত্র অফিশিয়াল

আমাদের ফেসবুক পেজের লিংকঃ- গল্প আর গল্প
charpatra.com কিভাবে লেখা পাঠাতে হয় 4
charpatra.com-কিভাবে-লেখা-পাঠাতে-হয় sikkhonio golpo
<

মায়ের ভালোবাসা। মোটিভেশনাল ছোট গল্প। sikkhonio golpo

Spread the love

Leave a Reply