মাকে নিয়ে গল্পটিতে দুর্গা মায়ের প্রতিভূ প্রতিটি মায়ের মধ্যে খুঁজে নেওয়ার প্রশান্ত বানীর সঞ্চারকের ভুমিকা পালন করছে।
মাকে নিয়ে গল্পঃ-
সপ্তমীর সকাল মানেই ঢাকে কাঠি আর মায়ের আগমনী। চারিদিক মুখরিত নানান থিমের প্যান্ডেল পুজো আর মানুষের পোশাক আসাক আর সাজ সজ্জার বহরে। সত্যিই সব মিলিয়ে যেন বার্তা দেয় পুজো মানেই একরাশ আনন্দের আতিশয্য। আর তাই পুজোতে আপনি যত দূরেই থাকুক না কেন , বাড়ি কিন্তু ফিরতেই হয় । প্যান্ডেল ঘুরে ঘুরে প্রতিমা দর্শন আর আনন্দ আড্ডা সব মিলিয়ে যেন পূজার আসল আনন্দ।
ষষ্ঠীর রাত্রে দিল্লি থেকে পূর্বা এক্সপ্রেস করে রওনা দিচ্ছিলাম কলকাতায়। বাড়ি ফেরার আগে সব লিস্ট মিলিয়ে দেখে নিচ্ছিলাম , যে যেটা আবদার করে চেয়েছে সেটা কিনেছি কিনা ! না , সব ঠিকঠাক নিয়ে নিয়েছি দেখে ক্যাব বুক করে সোজা রেল স্টেশন এসে পৌছালাম ।
মাইনেটা ঠিক মনের মত নয় তারপর আবার পুজোর মাস তাই জেনারেল বগিতেই টিকিট বুক করে উঠে পড়লাম । কোনরকমে নিজের বসার একটা ব্যবস্থা করার পর বাড়িতে জানিয়ে দিলাম আমি আসছি।
ট্রেন টা ছাড়ার কিছু সেকেন্ড আগে জানালা দিয়ে লক্ষ্য করলাম একজন মহিলা আর সাথে কয়েকটা ছোট বাচ্চা ভীষণ দ্রুত গতিতে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে শেষমেশ ট্রেনে চাপতে সক্ষম হলো। কিন্তু না সব বাচ্চা নয় শেষে একটা বছর বারো এর বাচ্চা স্টেশনে রয়েই গেল। খুব অবাক হলাম এটা দেখে যে সেই বাচ্চাটি অন্য একটি বাচ্চাকে ট্রেনে তুলে দিলেও নিজে চাপলো না । মনে ভীষন রকমের একটা কৌতূহল জন্মালো তাদের নিয়ে । তাই নিজের সিট এর সাথে একজন কে রিকোয়েস্ট করে সিট টা এক্সচেঞ্জ করে নিলাম , কারণ ওই সিট এর পাশে ওই মহিলা বাচ্চাগুলোকে নিয়ে দাড়িয়ে ছিলো ।
বেশ কিছুক্ষন ধরে তাদের ওপর নজর রাখলাম , পোশাক পরিচ্ছদ দেখে তো ভিখারী বা দিন দুঃখী কোনোটাই মনে হচ্ছে না। তাহলে বাচ্চাটাকে ছেড়ে এই মহিলা এদের নিয়ে কোথায় যাচ্ছে ?
আর নিজের কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে , মহিলাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপ কেয়া দিল্লিমে রেহেতে হো?
মহিলাটি হেসে জবাব দিলো , আপনি কি বাঙালি ?
আমি খুব অবাক হয়ে বললাম , হ্যাঁ, কিন্তু আপনি কিভাবে জানলেন ।
মহিলাটি বললো বাঙালি হয়ে বাঙালিকে কি চিনতে না পারি।
এরপর আর অন্য কথা না তুলে সরাসরি জিজ্ঞাসা করলাম , আচ্ছা দিদি এই বাচ্চা গুলো কি আপনার ?
সে বললো হ্যা এরা সবাই আমার নিজের সন্তান।
পড়ুনঃ- ভয়ানক ভূতের গল্প
একটু অবাক হলেও , পুনরায় আবার জিজ্ঞাসা করলাম , দিদি আপনার স্বামী কি দিল্লিতে কাজ করেন ?
তখন একটি বাচ্চা বলে উঠলো ” আম্মা আমাকে জল দাও “
বুঝতে পারলাম মহিলাটি তারমানে মুসলিম। ভিড়ের মাঝে বোতল বের করার অবস্থায় ওই মহিলা ছিলেন না। তাই নিজের ব্যাগ থেকে বোতল তে বের করে বাচ্চাটিকে আগিয়ে দিলাম ।
জলপান করার পর বাচ্চাটি বলে উঠলো ” থ্যাঙ্ক ইউ আম্মা”
আমি তো পুরো বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম , আমায় আম্মা বলছো কেন ? উনি তো তোমার আম্মা।
বাচ্চাটি জবাবে বলল , আম্মা আমায় শিখিয়েছে প্রতিটি মেয়ের মধ্যে মায়ের অবস্থান । আর আমরা তো মা কে আম্মা বলি । তাই তুমিও আমার আম্মা। এখানের সব মেয়েরা আমার আম্মার সমতুল্য।
দুই চোখ ছল ছল করে উঠলো ওই বাচ্চার জবাব শুনে। মনে পড়লো ব্যাগে বেশ কয়েকটা চকলেট নিয়েছি ভাই বোনদের জন্য। সেগুলো বের করে প্রথম বাচ্চাটাকে দিতে গেলে , সে আবার বললো ” থ্যাংক ইউ আম্মা ” , ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল আমার।
তারপর দ্বিতীয় বাচ্চাটাকে চকলেট টা দিতে গেলে বললো ” থ্যাঙ্ক ইউ মা “
তারপরের বাচ্চাটা বললো আমি তো চকলেট খাই না মম, তুমি বাকিদের দিয়ে দাও।
কেউ আম্মা, কেউ মা আবার কেউ মম, এসব কি মানে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না । ঠিক তখন আগমন ঘটলো টিটির , পরের পর টিকিট চেক করার পর টিটি মহিলার সামনে উপস্থিত হয়েও কোনোরূপ টিকিট চাইলো না । চলে গেলো পরের কামড়ায়।
সব বিষয় গুলো মিলিয়ে আমার মনে তখন কৌতূহলের জোয়ার বইছে , তাই সরাসরি জিজ্ঞাসা করে ফেললাম , দিদি আপনি কে? মানে আপনার পরিচয় কি ?
মহিলা আবারও হেসে জবাব দিলো, আমি একজন মা , আর সবাই আমার সন্তান , এটাই আমার পরিচয় ।
পড়ুনঃ- জীবন নিয়ে গল্প
কিছুতেই কোনো প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে মন ভীষন চঞ্চল হয়ে উঠলো তবে সেই মহিলা পাশে ফাঁকা সিট পেয়ে ওদিকে বাচ্চাগুলোকে নিয়ে বসে পড়েছেন তাই পুনরায় ওদিকে গিয়ে বসা আর আমার পক্ষে সম্ভব হলো না। তবে মনের মধ্যে একরাশ প্রশ্ন নিয়েই শিয়াহদা স্টেশনে নেমে পড়লাম , আর সেই মহিলাও বাচ্চা গুলোকে নিয়ে সেখানেই নামলো ।
তবে কিছুদূর আসার পর আর তাদের দেখতে পেলাম না। ভিড়ের মাঝে কোথায় যেন হারিয়ে গেলো । তবে আমার পাশে যেই ভদ্রলোক বসে ছিলেন তিনিও এই স্টেশনে নেমেছেন তাই তাকে কৌতুহলের বসে বলে ফেললাম , কাকু ওই মহিলা বেশ রহস্যজনক তাই না । কিছুতেই নিজের পরিচয় দিল না ।
ভদ্রলোক জবাবে বলল , কোন মহিলা ? ওই বগিতে তুমি আর এক বৃদ্ধা ছাড়া তো আর কোনো মহিলা ছিল না ।
বিস্ময়ে মাথা ঘুরে গেলো আমার , এই ভদ্রলোক এসব কি বলছে। আমি তো ওই মহিলা বাচ্চাদের সাথে কথাও বললাম । তাহলে সেসব কি কিছুই লক্ষ্য করেনি এই ভদ্রলোক।
উৎকন্ঠিত মনে ক্যাবে করে বাড়ি ফেরার পথে ফোন বের করতে গিয়ে দেখলাম ব্যাগটা চকলেট এ ভর্তি। কিন্তু আমি তো মাত্র কয়েকটা চকলেট কিনেছিলাম আর সেগুলো ওই ট্রেনের বাচ্চাগুলোকে দিয়েছিলাম। তাহলে ব্যাগে এতগুলো চকলেট এলো কিভাবে!
এসব কি হচ্ছে আমার সাথে ? সেই লোক বললো কোনো মহিলা ছিল না আবার এত এত চকলেট এলো কোথা থেকে সব কথা বাড়িতে এসে বলার পর কেউ কেউ মজার ছলে কথা উড়িয়ে দিল আবার কেউ সাবধানে থাকার কথা বলে চলে গেলো। কিন্তু মা মাথায় হাত দিয়ে বললো , “মা তোকে নিজে বোধয় বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন পাগলী…”
আসলে তিনি তোকে বোঝাতে চেয়েছেন , প্রতিমা তে নয়, প্রতি ” মা ” তেই দুর্গা আছেন ।
গল্পের শুভময় ভাবনায়-
পড়ুনঃ- বাস্তব জীবনের শিক্ষণীয় গল্প সেরা নৈতিক শিক্ষামূলক গল্প
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- ফেসবুক Group - গল্প Junction ফেসবুক- ছাড়পত্র টেলিগ্রাম- charpatraOfficial WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
মাকে নিয়ে গল্প। মা দুর্গা নিয়ে গল্প awesome story dedicated to mother bengali
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।