আজ আমরা হাজির হয়েছি এক মধ্যবিত্তের প্রেম- এর গল্প নিয়ে। মধ্যবিত্ত এক ছেলের জীবনে কিভাবে প্রেমের আগমন হয় এবং সেই প্রেমের শেষ পরিণতি কি হয়, তা নিয়েই আজকের গল্প।
মধ্যবিত্তের প্রেম। স্বামী স্ত্রীর ভালবাসার গল্প:-
আকাশ মধ্যবিত্ত পরিবারের এক ছেলে। বাবা এক মুদি দোকানে কাজ করে, কোনো মতে তাদের দিনপাত হয়। নার্সারি থেকে হাই-স্কুল, কলেজ ইত্যাদি পেড়িয়ে বর্তমানে সে একটি বেসরকারি অফিসে কাজ করে, মাস গেলে যা মাইনে পায় তা দিয়ে তাদের চলে যায়। তবে কোনো শক বা ইচ্ছা সে পূর্ণ করতে পাড়ে না, এদিকে বাবারও বয়স বেড়েছে, তাই আর সে বাবাকে কাজে যেতে দেয় না।
রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তাকে পাশ কাটিয়ে কত দামী দামী বাইক চলে যায়, সে শুধুই তাকিয়ে থাকে, ইসস তারও যদি একটা বাইক থাকত, তাহলে আজ কি, হেঁটে হেঁটে তিন কিলোমিটার পথ গিয়ে বাস ধরতে হত, সোজা সা করে কোম্পানিতে চলে যেত। তবে সেই ভাবনা বাস্তবে দেখে লাভ নেই তার, স্বপ্নকে স্বপ্নের জগতেই মানায়, এই সব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাসে উঠে সে তার কাজে চলে যায়। এই ছিল তার নিত্য রুটিন।
এরকমই একদিন সে অফিস থেকে বাসে বাড়ি ফিরছিল, বাসে পরিচয় হয় পারমিতা নামে এক মেয়ের। মেয়েটা দেখতে ভালই, একটু শ্যামলার আভা ঠোঁটের উপর তিল, কোমর পর্যন্ত কালো কুচকুচে চুল, প্রথম দেখাতেই তার ভালো লেগে যায় মেয়েটাকে। কিন্তু এই সব প্রেম-ভালোবাসা মধ্যবিত্তদের জন্য না। প্রেম করতে গেলে টাকা লাগে, এখন যা দিনকাল মেয়েরা মধ্যবিত্ত ছেলেদের পাত্তাই দেয় না, কি জানি এই মধ্যবিত্তরা ভগবানের কাছে কি দোষ করেছে, না পাড়ে তারা নিজের স্বপ্নের একটা বাইক কিনতে, না পাড়ে একটা ভালো মোবাইল কিনতে, আর না পাড়ে নিজের পছন্দের এক মেয়ের সাথে প্রেম করতে।
ভালোলাগার কথা বললেই মেয়েরা, কি কাজ করো, স্যালারি কত আরও নানান কথা জিজ্ঞেস করে বসে। যখন মেয়ে শুনবে আকাশ মাস গেলে মাত্র ১৬০০০ টাকা মাইনে পায়, তখন মেয়েটা নিশ্চয়ই হেঁসে উড়িয়ে দিয়ে বলবে, নিজেরই তো দিন আনতে পান্তা ফোরায়, আবার প্রেম করার শখ আসে কোন উজানের তরিতে?
যাকগে, কি সব ফালতু জিনিস ভাবছে সে, বাস থেকে নামার পালা যে চলে এল।
সেই মেয়েটাকে দেখার পড় প্রায় ১৫ দিন কেটে গেছে, আবার একদিন মেয়েটাকে দেখল আকাশ। হুম এবার মেয়েটা বসেছে তারই পাশের সিটে। মেয়েটা আকাশকে টাইম জিজ্ঞেস করে, কিন্তু আকাশ এতে আতঙ্কিত হয়ে যায়, কারণ তার না আছে হাত ঘড়ি, না আছে ভালো সেল-ফোন। তার কাছে যে কি-প্যাড মোবাইলটা আছে, সেটারও বোতাম গুলির অবস্থা ছন্ন-ছাড়া। পাশে একটা মেয়ে বসে আছে, তার সামনে এই ভাঙ্গাচোরা মোবাইল বেড় করলে অনেকটা সম্মানে লাগে! চুপটি করে লুকিয়ে পকেট থেকে মোবাইল বেড় করে, টাইম দেখে মেয়েটিকে সে জানাল ৬.৪৫।
এবার সেই মেয়েটার প্রতি তার আগ্রহ অনেক বেড়ে যায়, এরপর তিনমাসের মধ্যে মেয়েটার সাথে তার ৮ বার দেখা হয় এরমধ্যে ৩ বার মেয়েটা তার পাশের সিটে বসেছে, সবই হিসেব কষে রেখেছে সে। একদিন অফিস থেকে সবে বেড়িয়েছে আকাশ। সে দেখে সেই বাসের মেয়েটা তার পথ আগলে দাঁড়িয়ে। এই রে, মেয়েটা বুঝি ধরে ফেলেছে যে আকাশ ওকে চুপিচুপি ফলো করে। এবার নিশ্চয়ই মেয়েটা আকাশের বসকে বলবে, তারপর থানা-পুলিশ এরপর চাকরিটাও বুঝি যাবে।
কিন্তু এরপর আকাশের সাথে যা হল আকাশ তা মোটেও ভাবতে পাড়েনি। মেয়েটা এসেই আকাশকে সরাসরি বলল-
“কি ব্যাপার চুপি-চুপি আমাকে দেখ কেন? আমাকে ভালো লাগে?”
“না,মানে সে রকম মানে কিছু না!”
“যদি কাউকে ভালো লেগে থাকে, তাহলে তাকে সরাসরি বলে ফেলা ভালো”
তুমি তো বললে না, তা আজ না হয় উত্তরটা নাই দিলে, কাল রবিবার অফিস বন্ধ, ঠিক চার টায় হাই-স্কুলের পেছেনের পার্কে চলে এস।
পরেরদিন আকাশ সেই পার্কে গিয়ে দেখল, মেয়েটা একটা বেঞ্চে বসে, আছে। আকাশ কাছে যেতেই মেয়েটা বলল-
“দেখ আমি অনেক স্পষ্টবাদী, কিছু লুকোতে পছন্দ করিনা, আমি সরাসরি বলছি, তোমাকে আমার ভালো লেগেছে, তোমার কোনো বলার থাকলে বলতে পারো।“
আকাশ বলতে শুরু করল-
“আমি মধ্যবিত্ত আমার ইনকাম অনেক কম, মাস গেলে যা টাকা পাই তা দিয়ে, আমাদের তিনজনের চলে যায়”
“তিন জন মানে?”
“মা বাবা আর আমি, হ্যাঁ তোমাকেও আমার ভালো লাগে কিন্তু আমার পক্ষে এক মেয়ের পেছনে টাকা খরচ করা সম্ভব নয়”
“খরচ করতে কে বলেছে?”
“আমি কোনো রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে খাবার খাওয়াতে পাড়ব না”
“আমি রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে দশ টাকার ফুচকা খেয়েই খুশি থাকতে পছন্দ করি, তাছাড়াও রেস্টুরেন্টের খাবারে আমার এলার্জি হয়।”
“প্রতিদিন নতুন নতুন গিফট দিতে পাড়ব না”
“কে বলেছে গিফট দিতে, আমার সাথে প্রতিদিন দেখা করতে তো পাড়বে?”
“মাস গেলে, আমার শপিং করাতে নিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য নেই”
“মাস গেলে কুড়ি টাকা দিয়ে একটা গোলাপ তো কিনে আনতে পাড়বে!”
“আমি মোবাইলে ঘণ্টার পড় ঘণ্টা কথা বলতে পাড়ব না, কারণ মোবাইলে রিচার্জ কম থাকে”
“মোবাইলে ঘণ্টার পড় ঘণ্টা কথা বলা আমি পছন্দ করি না”
“শেষকথা- অফিসে যদি দেড়ি হয়, আমার পক্ষে প্রতিদিন দেখা করা সম্ভব নাও হতে পাড়ে।“
“আলাদা করে দেখা করার কোনো প্রয়োজন নেই, বাসে আমাদের এখন প্রিতিদিন দেখা হবে, পাশাপাশি বসে গল্প করব, ব্যাস আমি এতেই খুশি।“
পড়ুনঃ- প্রথম প্রেমের গল্প
আকাশ অবাক হয়ে যায়, কিভাবে মেয়েটা তার এত কিছু মানিয়ে নিতে পাড়বে, এ সত্যি ভাবার বিষয়, বর্তমান দিনেও কি এরকম মেয়ে পাওয়া সম্ভব!
এভাবেই দেখতে দেখতে আকাশ আর পারমিতার প্রেম শুরু হয়, কেটে যায় তিনটি বসন্ত। এবার পরস্পরের আরও কাছে আসার পালা। পরিবার থেকে তাদের কোনো বাধারই সম্মুখীন হতে হয়নি, পারমিতার পরিবারের কথায়-“মেয়ে যদি চায় সে আকাশের সাথে ভালো থাকবে, তাহলে আমরাও অবশ্যই চাই আকাশই যেন তার জীবনসঙ্গী হয়, কারণ মেয়ের সুখই তাদের সুখ।“
ভালো একটা দিন দেখে তাদের বিয়ে হয়ে গেল, দেখতে দেখতে তাদের বিয়ের দুই বছর কেটে গেল। এই দুই বছরে তাদের সম্পর্ক আরও অনেক বেশি মজবুত হয়েছে। পরস্পরকে আরও বেশি ভালোভাবে বুঝতে শিখেছে, পারমিতা নিজেকে অনেকটা মানিয়ে নিয়েছে। এদিকে, আকাশের জন্মদিন চলে আসে, আকাশ অফিস থেকে বাড়ি ফিরতেই সবাই “হ্যাপি বার্থডে,” বলে চেঁচিয়ে উঠে।
পারমিতা- “তোমার জন্য একটি বিশেষ উপহার আছে, চোখ বন্ধ করো”
এরপর পারমিতা আকাশকে একটি বাইকের সামনে নিয়ে যায়, আকাশ বাইক দেখে অবাক হয়ে বলে-“এটা কার বাইক”
পারমিতা-“তোমার বাইক”
আকাশ-“আমার! এত টাকা কোথা থেকে আসল?”
পারমিতা-“তুমি আমাকে প্রতিমাসে হাত খরচের জন্য যে টাকাটা দিতে সেটি আমি খরচ করিনি, তা জমিয়ে রেখেছি, আর আমার আগে থেকেই জমানো কিছু টাকা ছিল, বাকি টাকাটা বাবা দিয়েছেন।“
পারমিতার কথা শুনে, আকাশের চোখ দিয়ে জল পড়তে থাকে, সে কোনো দিন আশাও করেনি যে, বাইকে চেপে সে অফিসে যেতে পাড়বে, পারমিতা তার স্বপ্ন পূর্ণ করেছে।
সে মনে মনে ভাবতে থাকে, না সব মেয়েরা টাকা খোঁজে না, কিছু কিছু মেয়ে ভালবাসাও খোঁজে, তারা স্বামীর কাছে টাকা নেই, জেনে বিরিয়ানি খাওয়ার কথা ছেড়ে দিয়ে বলে-“আমার ওইসব খেলে এলারজি হয়” পরিবর্তে পাঁচ টাকার ছোলা ভাজা খেতে খেতে স্বামীর হাত ধরে বাড়ি ফেরে। পুজোর সময় স্বামী দামী বেনারসি সাড়িটা কিনে দিতে চাইলে, “আমার ভারী শাড়ি পড়তে ভালো লাগে না”, বলে সাধারণ মানের একটা কাপড় নিয়েই খুশি থাকে। আবার দিনশেষে স্বামীর মুখে সারাদিনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা কৌতূহল ভঁরে শোনে।
এরকম স্ত্রী যদি প্রতিটা ছেলের কপালে জুটত, না জানি কত শান্তি থাকত পৃথিবীতে। অনেক টাকা দিয়ে কি হবে, যেখানে সুখ নেই, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিল নেই, কথায় কথায় ঝগড়া হয়, অভিমান হয়। তারচেয়ে বরং আমার এই মধ্যবিত্তের জীবনই অনেক ভালো।
এই সব কথা ভাবতে ভাবতে কতক্ষণ পর্যন্ত যে, আকাশ পারমিতাকে জড়িয়ে ধরে ছিল, তা সে নিজেও জানে না।
আসলে মধ্যবিত্তদের স্বপ্ন পূরণের কাণ্ডারি টাকা না থাকলেও, স্ত্রী এবং স্বামী যদি খাঁটি হয়, তাহলে প্রেমটা বেশ ভালোই জমে।
আমাদের লেখা পাঠানোর জন্য যোগাযোগ করুন charpatrablog@gmail.com –এ অথবা আমাদের গল্প আর গল্প পেজের মেসেঞ্জারে লেখা পাঠান।
পড়ুনঃ- স্কুল জীবনের প্রেম
সতর্কবার্তাঃ-
এই সাইটে প্রকাশিত সমস্ত পোষ্টের কপিরাইট charpatra.com এর অ্যাডমিন দ্বারা সংরক্ষিত। কোনো লিখিত পূর্ব অনুমতি ব্যতিত কোনো পোষ্টের লেখা কিছু অদল-বদল করে, ভিডিও বানালে, বা অন্য কোনো উপায়ে পুনঃপ্রকাশ করলে কপিরাইট আইন অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মধ্যবিত্তের ভালোবাসার গল্প স্ত্রীর প্রেম স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।