আজ আবার আমরা হাজির নতুন আরও কিছু মজার শিক্ষণীয় গল্প নিয়ে। এই শিক্ষণীয় গল্প গুলি থেকে অনেক কিছুই আপনি শিখতে পাড়বেন। কেবল দরকার মন দিয়ে এই গল্পগুলির নিহিত অর্থগুলিকে অনুধাবন করার চেষ্টা। আশা করছি এই শিক্ষামূলক গল্পগুলি আপনাদের পছন্দ হবে।
মজার শিক্ষণীয় গল্প। অসাধারন শিক্ষণীয় গল্প।
আব্রাহাম লিঙ্কনের গল্পঃ-
আব্রাহম লিঙ্কন-কে আপনি হয়ত অবশ্যই চেনেন। তিনি ছিলেন আমেরিকার ১৬তম রাষ্ট্রপতি।
একবার লিঙ্কন তার নিজের গ্রামের কাছে একটি জনসভায় তার ভাষণ দিচ্ছিলেন। সবাই চুপচাপভাবেই তার গুরুত্বপূর্ণ কথা গুলি শুনছিলেন। নীরবতা কাটিয়ে একজন মহিলা উপস্থিত জনসমাবেশের মধ্যে থেকে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বললেন- “আরে, এ রাষ্ট্রপতি? এ তো আমাদের গ্রামের মুচির ছেলে।“
এই কথাটি শুনে লিঙ্কন খুবই খারাপ পেলেন। আমাদের সমাজে সবাইকে সমান চোখে দেখা হয়না। এখনও নিচু-জাত আর উঁচু জাত নিয়ে চলি আমরা। কিন্তু রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্যেও লিঙ্কন রেগে গিয়ে তার ক্ষমতার অপব্যবহার করলেন না। তিনি বিনম্র ভাবে বললেন- “মহাশয়া, আপনি একটি খুব ভালো কাজ করলেন, যে এই এত মানুষের সাথে আমার আসল পরিচয় করিয়ে দিলেন। হ্যাঁ আমি আপনাদের গ্রামের সেই মুচিরই ছেলে। আচ্ছা আমি কি আপনাকে একটি কথা জিজ্ঞেস করতে পাড়ি, যদি অনুমতি দেন!” মহিলাটি বলল- “হ্যাঁ অবশ্যই”
![মজার শিক্ষণীয় গল্প আব্রাহাম লিঙ্কন শিক্ষণীয় ছোট গল্প](http://charpatra.com/wp-content/plugins/a3-lazy-load/assets/images/lazy_placeholder.gif)
এরপর লিঙ্কন বললেন- “একটু কষ্ট করে মনে করে দেখবেন কি, যে আমার বাবা সেদিন যে আপনার জুতো সেলাই করেছিল, সেটিতে কোনো ভুল বা ত্রুটি আছে কিনা? তিনি আপনার জুতো ঠিকমত মেরামত করে দিয়েছেন তো? তার কাজে আপনার কোনো অভিযোগ আছে কি?” এটি শুনে মহিলাটি বলল-“না না, একদম না, তার কাজ সম্পর্কে আমার কোনো অভিযোগ নেই। সে তার কাজ খুব ভালোভাবে মন দিয়ে করে।“
এরপর লিঙ্কন বললেন- “মহাশয়া, যেরূপ আমার মুচি পিতা তার কাজে কোনো ত্রুটি রাখার চেষ্টা করেননা এবং সব কিছু ঠিকমত সারিয়ে তুলতে চেষ্টা করেন, ঠিক সেভাবেই আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে, আপনারা আমাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে আপনাদের সেবা করার যে সুযোগ দিয়েছেন সেটিও আমি আমার বাবার মতনই একদম নিখুত এবং ত্রুটি হীন রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করব। যাতে আমার সম্পর্কে কোনো অভিযোগ না থাকে।“
হ্যাঁ এরকমটিই ছিলেন আমেরিকার মহান রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কন। অনেক মহান ছিলেন তিনি, যার জন্যই তাকে আজও শ্রদ্ধা করা হয়। এটি কেবলমাত্র একটি উদাহরণ এরকম বহু উদাহরণ রেখে গেছেন তিনি।
বিনম্রতা এবং আত্ম-সম্মানের এক বিশেষ গুন থাকে। এই বিশেষ গুন ব্যক্তিকে মহান করে তোলে। এই বিনম্রতা এবং আত্ম-সম্মান বোধ মানুষকে আকর্ষিত করে, মানুষের কাছে নিজের পরিচয় করিয়ে দেয়।
জীবনে যত বড়ই হোননা কেন, নিজের অতীত কখনো ভুলবেন না। যে জায়গা থেকে আপনি উঠে এসেছেন, যে পরিবেশ থেকে আপনি বড় হয়েছেন সেই পরিবেশকে সম্মান করুন, আপনার সম্মান আপনার মহানশীলতা এমনিতেই প্রকাশ পাবে, আপনার কাজের মধ্য দিয়ে।
![অনুপ্রেরণামূলক ছোট গল্প](http://charpatra.com/wp-content/plugins/a3-lazy-load/assets/images/lazy_placeholder.gif)
আরও পড়ুনঃ-নীতিকথার গল্প ঠাকুমার ঝুড়ি
তিন চোরের গর্ব:
অনেক দিন আগের কথা, এক শহরে রমেন, সোনা এবং রাকা নামে তিন ব্যক্তি বাস করত। এদের পেশা ছিল চৌর্য বৃত্তি। উঁহু তবে সাধারণ চোর নয় এরা, এরা হল বড় ধরনের চোর। তবে চোর মানে যে পড়াশোনা জানেনা তেমনটা নয়, এদের প্রত্যেক জনই কিছুটা শিক্ষিত ছিল, তবে এদের শিক্ষা যেমন-তেমন শিক্ষা নয়, এরা জাদুগরী শিক্ষায় শিক্ষিত। এরজন্যই আবার এদের একটু অহংকার ছিল একটু বেশি। শিক্ষিত হওয়ার সুবাদে এরা নিজের বিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে বড় বড় লোহার সেল কেটে চুরি করে নিত বিভিন্ন দামী দামী জিনিসপত্র। কেবলমাত্র শহরের জিনিসপত্র নয়, লোকেদের কষ্টার্জিত টাকা এবং বিভিন্ন সোনা গয়না ব্যঙ্কের যে ভল্টগুলিতে রাখা হত, সেগুলিতেও তারা হানা দিয়ে দিত। কিন্তু কেউই তাদের ধরতে পেত না। যার ফলে শহরের লোক দারুন দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়।
একদিন রাতের কথা, এই তিনজন চোর শহরের একটি বড় ব্যঙ্কে হানা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যেই ভাবা সেই কাজ, তারা সেই ব্যাঙ্কের প্রায় সব কিছু নিয়ে নেয়। শুধু রেখে দেয় কিছু কাগজ। স্থানীয় পুলিশ তাদের ধাওয়া করে ধরে ফেলে, কিন্তু তারা কোনো মতে গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায়। তারা নিজের প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে একটি জঙ্গলে ঢুকে পড়ে।
জঙ্গলে ঢুকেই তারা দেখে যে, কিছু হাড় এদিক-ওদিক ছড়িয়ে রয়েছে। এরপর এটি দেখে রমেন বলল আমি চাইলে আমার জাদুগরী বিদ্যা দিয়ে এই হাড়গুলিকে জোড়া লাগাতে পাড়ি। এরপর সে হাড় গুলিকে জোড়া লাগাতে থাকে, জোড়া লাগানোর পর রমেন চেঁচিয়ে বলল, আরে এ তো একটি সিংহের হাড়।
![মজার শিক্ষণীয় গল্প sikhhonio golpo bangla](http://charpatra.com/wp-content/plugins/a3-lazy-load/assets/images/lazy_placeholder.gif)
রমেনকে তার বিদ্যা প্রয়োগ করতে দেখে, সোনা তার বিদ্যা প্রদর্শন করতে চাইল, এবং দেখাতে চাইল যে সেও কিছুতে কম না, সে বলল আমি চাইলেই মন্ত্রের মাধ্যমে এই হাড়গুলিতে মাংস এবং চামড়া লাগিয়ে দিতে পাড়ি। এরপর সে সেই হাড় গুলিতে জাদুশক্তির মাধ্যমে মাংস এবং চামড়া লাগিয়ে দিল।
পড়ুনঃ-বিখ্যাতদের মজার ঘটনা
এটি দেখে রাকা চুপ থাকতে পাড়ল না, সেও চাইল তার বিদ্যা সে প্রকাশ করুক। বাকিরা যখন নিজের বিদ্যাশক্তির প্রকাশ করেছে সেও আর চুপ থাকবে কেন? বাকিরাও দেখুক সেও কিছুতেই কম নয়। সে বলল আমি চাইলেই এর উপড়ে প্রাণ দিয়ে দিতে পাড়ি, বলতে বলতেই সেই মন্ত্র পড়া শুরু করে দিল, এদিকে মন্ত্র শেষ হওয়ার সাথে সাথেই সেই সিংহের মাংস ও জোড়া লাগানো হাড়গুলিতে প্রাণ চলে এল।
এদিকে সিংহ দাঁড়িয়ে গেল, কারণ সে এখন জীবিত। সামনে সিংহ দেখে তিন চোর ভয়ে কাঁপতে লাগল। সিংহ নিজের চোখের সামনেই শিকার দেখতে পেয়ে আর কাল বিলম্ব না করে দ্রুত ঝাঁপিয়ে পড়ল তিন চোরের উপর, আরামে কড়মড় করে সবাইকে খেয়ে ফেলল। এরপর ভোজন শেষ করে সিংহ বাবাজী বনের ভীতরে চলে গেল।
সুতরাং, কখনোই অহংকার করা উচিত নয়, অহংকারই হল পতনের মূল কারণ, যদি সেই তিনজন চোর নিজের বিদ্যার অহংকার না দেখাত তাহলে হয়ত তারা বেঁচে যেত, কিন্তু তাদের অহংকার তাদের পতনের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
![মজার শিক্ষণীয় গল্প শিক্ষণীয় ছোট গল্প arrogant people](http://charpatra.com/wp-content/plugins/a3-lazy-load/assets/images/lazy_placeholder.gif)
এই গল্পটি থেকে আমরা আরও একটি শিক্ষা নিতে পাড়ি- বিদ্যা শুধুমাত্র গ্রহণ করলেই হবেনা, কোথায় কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে সেটাও জানতে হবে, বাহাদুরি দেখাতে গিয়ে অযথা নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না। সর্বদা নিজের শিক্ষার প্রমান দেওয়ার দরকার নেই। তাই নিজের বিদ্যার প্রয়োগ ভেবে-চিন্তে করুন।
আরও পড়ুনঃ- বাংলা মোটিভেশনাল স্টোরি
প্রতিদিনের আপডেটের জন্য আমাদের গল্পের ফেসবুক পেজ গল্প আর গল্প-তে যুক্ত হতে ভুলবেন না। আমাদের গল্প পাঠানোর জন্য পেজের ম্যসেঞ্জারে অথবা এই পেজের নীচে “আপনার লেখা প্রকাশ করুন” নামে বোতামে ক্লিক করুন।
ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।
All copyright reserved to “ছাড়পত্র”
![charpatra.com ছাড়পত্র](http://charpatra.com/wp-content/plugins/a3-lazy-load/assets/images/lazy_placeholder.gif)
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।