অসাধারণ একটি মজাদার প্রেমের গল্প থাকছে আজ। প্রেমের আদলে মা- বাবার প্রতি যে ভালোবাসা সেটাই সিদ্ধহস্তে ফুটিয়ে তুলেছেন গল্পের লেখক।

মজাদার প্রেমের গল্প- সারপ্রাইজঃ-

সুপ্রান্তিকার সাথে আমার সম্পর্ক ঠিক আগের মতো নেই, বছর পাঁচেক আর আগের মতো কথায় কথায় ঝগড়াও করে না শাসন করছে না। আগে আমাদের সম্পর্ক ছিল ফুচকা চুরমুরের এখন সম্পর্কটা ডাক্তারে ডায়েট চার্টের স্বাস্থ্যকর খাবারের মতো। স্বাদহীন না হলেও মুখরোচক নয়। কেমন যেন ভিজে মুড়ির মতো নেতিয়ে গেছে।

দোষটা ঠিক ওর নয়, এ পাড়ার হাতে গোনা ওর যে কয়েকটা বন্ধু আছে তাদের। তবে এতে আমার সুবিধা হয়ে। কথায় কথায় রনং দেহি রূপ নেই ওর। অনেকটাই শান্ত। বলা চলে আমুল পরিবর্তন , শাসন করা দূরে থাক , আমি যা চাই তাই করতে দেয় কোন বাধা দেয় না। মোটকথা ওর বক্তব্য আমদের দুইজন এক থাকতে হবে শক্ত থাকতে হবে। আসলে ও খুব ভয় পেয়ে আছে । আমাদের ছেলে বিট্টুর বিয়ে নিয়ে।

মধ্যবিত্ত পরিবার আমাদের , শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পদ। বিট্টু কলেজ লাইফ থেকে প্রেম করে একটি মেয়েকে তাকেই বিয়ে করবে। যদিও আমরা জানতে পেরেছি এক দুই বছর যখন ওর চাকুরী পাকা পোক্ত হলো। সুপ্রান্তিকা ওর জন্য মেয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিলো। তখন ও ওর সিদ্ধান্ত জানালো। প্রেম করতো এতে আপত্তি করা কথা নেই। বয়স্কদের থেকে গোপন রাখাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু আমার গিন্নীর শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু বান্ধব কিছু বিপদের আভাস দিয়ে সতর্কতা করায় সে একটু চিন্তিত। এতে আমিই লাভবান হয়েছি, আমার খাতির যত্ন খানিকটা বেড়েছে, এবং শাসন শূন্য জীবন পেয়েছি।

মজাদার প্রেমের গল্প
মজাদার প্রেমের গল্প

মৃদু স্বরে কিছু দিন একটা আশঙ্কায় কথা জানালো। ” প্রেম করে বিয়ে করলে ছেলেরা বৌ এর কথায় ওঠে বসে। বিট্টু কি তাই করবে!”
আমার ভাবলেসহীন জবাব “সেটাই স্বাভাবিক। তবে প্রেম করে বিয়ে না করেলেও, স্বামীরা চিরকাল পরাধীন হয়ে যায় বিয়ে পরে। বলতে পারো বিবাহিত পুরুষ মানে মৃত। তাদের সব ইচ্ছা অনিচ্ছার মৃত্যু ঘটে বিবাহের পর।”

কথাটি বলার পর আশা করছিলাম একটা খন্ড যুদ্ধ বাঁধবে। কিন্তু , ও কেমন উদাস হয়ে বললো
” তাহলে বাবুও কি আমাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেবে…।”
আমি ওর চোখের কোনায় জল দেখে ভরসা দিয়ে বললাম ” নিজের দেওয়া শিক্ষা ও সংস্কৃতি ওপর ভরসা রাখো। আমরা আমাদের মা বাবার সাথে কোন দিন খারাপ ব্যবহার করি নি। তাই তাদের আশির্বাদ আমাদের সাথে আছে। আমাদের এরকম দিন দেখতে হবে না। তাছাড়া এটা আমার বাড়ি। বেশি বেচাল দেখলে, ওদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড় করে দেবো।”

হঠাৎ দেখি ওর মাতৃস্নেহ উথলে উঠলো ” খালি আজেবাজে কথা বললো তুমি। ছোটবেলায় চারআশ্রমের কথা পড়ো নি। আমাদের বয়েস হয়েছে , আমাদের উচিত বানপ্রস্থে যাওয়া। তেমন কিছু হলে আমরা বৃন্দাবন গিয়ে একসাথে শেষ জীবনটা কাটিয়ে দেবো কেমন, কিন্তু মরার সময় আমি যেনো তোমাকে পাশে পাই।”

ওর কথাটা শুনে আমি জড়িয়ে ধরলাম। যাইহোক বিট্টুর বিয়েটা দিয়ে দেওয়া হলো। উর্মি মেয়েটা ভালোই। ছটফটে একটু। একটু পরিষ্কার কথা বলতে ভালোবাসে। চাকরি সে ছাড়বে না, খুব খোলাখুলি বলে দিয়েছে। সে তার মা বাবার একমাত্র সন্তান তাই তার একটা দায়িত্ব আছে, তাদের দেখার। সে তার বাবা মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালনের জন্য বিট্টুর কাঁধে বাড়তি বোঝা চাপানোর পক্ষপাতি নয়।

মা বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসার গল্প
মা বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসার গল্প

আমার গিন্নীর বন্ধু বান্ধবদের প্রথম ভবিষৎবাণীটা ব্যার্থ হলো। চাকরি ওয়ালা আধুনিকা বৌ সংসারে কোন কুটিটি নাড়বে না। কিন্তু তাহলো না। সে রান্না বান্না , ঘরগোছানো , কাপড় চোপড় ধোঁয়া সব কাজ করে থাকে। এতেও যদি মহিলা মহলে কানা ঘুসো কমলো না। বলতে শোনা গেলো সংসারে লাগামটা নিজের হাতে নিয়ে নিচ্ছে নতুন বৌ। এই বিপদ সংকেত নিয়ে যদিও সুপ্রান্তিকা অতোটা চিন্তিত নয়। কারণ আমার গিন্নী বরং খুশি, আমি বিপদে পড়েছি দেখে। আর আমার সাত আটবার চা খাওয়া হয় না। খুব বেশি হলে তিন বার তাও, গ্রীন টি। আর মুখোরোচক খাবার খাওয়া বন্ধ। বিট্টু রক্ষে পায়নি। রবিবার সংসার সব কাজ তাকে মুখ বুজে করতে হয়। সকালে উঠে , দুধ আনতে যাওয়া, বাজার করতে যাওয়ার দায়িত্বটা আমার কাছে থেকে কেড়ে নিয়ে ওর কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বেশ সুখের আবহাওয়ায় দিন কাটছিলো। কিন্তু আবার চিন্তিত হয়েছে আমার গিন্নী। গত সপ্তাহে আমাদের পাড়ার প্রোমোটার সন্দীপন এসেছিলো বাড়িতে। সন্দীপন আমাদের বাড়িতে এসেছিল একটা চাবি দিতে। শুনলাম বৌ মা নাকি একটা ফ্লাট কিনেছে ওর কাছ থেকে। তার চাবিটাইও দিয়ে গেলো ‌আমার কাছে। এই খবর শুনে আমি খুশি হয়েছি শুনে, আমার গিন্নীর বন্ধু বান্ধবরা আমাকে নির্বোধ উপাধি দিয়ে দিলো। কারণ তারা একশ শতাংশ নিশ্চিত এবার বিট্টুকে নিয়ে বৌমা আলদা হয়ে যাবে ।

আমি এ বিষয় এও নির্বিকার বলে ও অভিমান করলো। আমি ওকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম অনেক, বললাম-” এমনিও তো কিনতে পারে ওরা ফ্ল্যাট, ওরা তো চলে যাবো সেটা তো এখনো বলে নি এসব নিয়ে শুধু শুধু ভেবো না ।”
সুপ্রান্তিকা বা আমাদের ছেড়ে চলে যাবার কথা ছেলে বা বৌমা কেউই তোলেনি। কিন্তু সুপ্রান্তিকা কদিন ধরে উর্মির সাথে ভীষণ ই খারাপ ব্যবহার করছে কারণ ছাড়া। আমি কথা বলার চেষ্টা করেছি এ বিষয়ে কিন্তু লাভ হয়নি ।

আর কদিন পরেই আমার গিন্নীর জন্মদিন, এদিন টা যে বিশাল বড়ো করে পালন হয় সেটা নয়, ওই আমি আর বাবু দুজনে উপহার দিয়ে থাকি রাতে হোটেলে জমিয়ে খাওয়া দাওয়া এই আর কি । জন্মদিন সকালে গিন্নী তাড়াতাড়ি উঠে স্নান করে তৈরী হয়ে নিল। কিন্তু কি অদ্ভূত কেউই তাকে শুভেচ্ছা জানালো না। ওর মুখটা ভার । কারণ বিট্টুই ওকে শুভেচ্ছা জানায় প্রথম। সবাই খুবই স্বাভাবিক অন্য দিনের মতোন। সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিল এ লুচি দেখে আমিও বেশ খুশি হলাম ওর মতো।যদিও রান্নার লোক রাখা হয়েছে কয়েকটি দিন হলো। সুপ্রান্তিকা বেশ উৎসাহী হয়ে জিজ্ঞেস করলো তাকে ” বিট্টু বাবু কি তোমায় লুচি করতে বলছে?”

কিন্তু ওর আশায় জল ঢেলে রান্নার দিদি জানায় “বৌদির লুচি খেতে ইচ্ছা করেছে তাই বানিয়েছে, সাথে এটাও জানায় রান্নার দিদি আজ তার একটু তাড়া আছে তাই সেটা দুপুরের রান্না করতে পারবে না “
আমি জানালাম- ” তোমার চিন্তা নেই। রান্না করার অভ্যাস চলে গেছে বলে মুখ ব্যেজার করে লাভ নেই। দুপুরের জন্য খাবার অর্ডার করে দেবো..” ছেলে বৌমা দুজনে ই অফিস চলে গেলো‌।

গীন্নি বললো” ভেবেছিলাম, আজ হয়তো ওরা বাড়ী থাকবে, কিন্তু ছেলেটাও আমার পর হয়ে গেলো।” আমি শুনেও না শোনার ভান করলাম। দুপুরে ওর পছেন্দের মতোন ই খাবার ওর্ডার করেছিলাম। দেখে খুব খুশি। একবার চেষ্টা করলেও মনে করানো আজ যে ওর জন্মদিন। বিষয়টিকে আমি পাত্তা দিলাম না বিশেষ।

ভিতরে ভিতরে একটা যন্ত্রনায় ছটফট করছে দেখে বললাম ” অনেক দিন দক্ষিণেশ্বর যাইনা। যাবে?”
বলতেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে বললো ” তুমি যাও আমার দরকার নেই।”
আমি তৈরি হয়ে বেড়াচ্ছি দেখে সুর সুর করে অনুসরণ করলো।

বাড়ি ফিরে আমরা দেখি বাড়িটা পুরো অন্ধকার। ওর চোখ ভরা জল। বললো “ওরা আজকের দিনে চলে গেলো।”
দরজা খুলেই অবাক হলো ‌। দরজার সামনে গোলাপের পাঁপড়ি দিয়ে লেখা “ওয়েলকাম”, এগোতে দেখতে পেলো সারা ঘর সুন্দর বেলুন দিয়ে সাজানো, একসাথে অনেক গুলো আলো হটাৎ করে জ্বলে উঠলো, চারদিক সুন্দর করে সাজানো সামনে বড়ো একটা কেক রাখা আছে, আর তার পাশে গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিট্টু উর্মি, উর্মির বাবা মা, কিছু আত্মীয় স্বজন, ওর বন্ধুমহল।রান্নার দিদি ।

ভালোবাসার গল্প
ভালোবাসার গল্প
<

সবাই এক সাথে বলে উঠলো হ্যাপি ব্যার্থ ডে আমি ওর হাতে ওর প্রিয় অর্কিড গাছে চারা ধরিয়ে দিয়ে বললাম -” sorry.,,, আমার কোন দোষ নেই তোমাকে এভাবে চমকে দেবার প্ল্যান টা কিন্তু তোমার বৌমার । ওই এসব করেছে। তুমি কষ্ট পেয়েছো জানি।ভেবেছিলে আমরা সবাই আজকের দিনটা ভুলে গেছি না !”

ও হাসলো। উর্মি ওকে সবচেয়ে বড় উপহার দিলো এটা বলে যে ও ওই ফ্লাটটা কিনেছে ওর মা বাবার জন্য যাতে উনারা ও আমাদের কাছে কাছে থাকতে পারে। আমাদের ছেলের সাথে আমাদের দূরত্ব বাড়াতে নয়।

লেখক- মানব মণ্ডল facebook

গল্পের সম্পূর্ণতা প্রাপ্তি যার হাত ধরে- (মজাদার প্রেমের গল্প)
লেখকের আরও কিছু অসাধারণ লেখা- 

অসাধারণ হাসির গল্প 

রাজনৈতিক রম্য রচনা- শিব ঠাকুরের সমস্যা 

বিরহের গল্প 
অতি সহজেই আমাদের লেখা পাঁঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এর মাধ্যমে। 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

“মজাদার প্রেমের গল্প। মা বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসার গল্প। ভালোবাসার গল্প”

Spread the love

Leave a Reply