আজ আমরা একটি ভয়ংকর ভুতের গল্প পড়তে চলেছি। এই গল্পটি একটি হোটেলের ভূত, শাঁকচুন্নির গল্প অর্থাৎ ডাইনির গল্প। এই ভয়ানক ভুতের গল্প সম্পর্কিত আপনার মতামত আমাদের জানাতে ভুলবেন না যেন।
ভয়ংকর ভুতের গল্প। হোটেলের ভূত
শিলিগুড়ি থেকে জলপাইগুড়ি যাওয়ার রাস্তায় একটি জনপ্রিয় নিরামিষভোজী হোটেল ছিল। শিলিগুড়ি থেকে জলপাইগুড়ি গামী অনেক গাড়ি এখানে দাঁড়িয়ে খাবার খেত। এই হোটেলটির নাম ছিল, হোটেল অনুজা। এই প্রসঙ্গে আপনাকে বলে রাখি, এই হোটেলটি কোনো বড় হোটেল নয়, বরং এই হোটেলটিকে অনেকটা ধাবা টাইপের বলা যায়। হোটেল চালাতো সুরেশ ও অনুজা নামের দুই স্বামী-স্ত্রী।
একদিন, এলাকার সুপরিচিত ব্যক্তি ভোম্বল সর্দার, তাদের হোটেলে আসেন। তিনি বললেন- বা সুরেশ খাবারের গন্ধ তো ভালোই পাওয়া যাচ্ছে, আমার জন্যও এক প্লেট সাজিয়ে নিয়ে এসো। এটি বলে তিনি হাত ধুতে গেলেন, হঠাৎ তিনি চিৎকার করে উঠলেন- “আরে রক্ত রক্ত, এত রক্ত কোথা থেকে আসল, আমার হাঁতে এত রক্ত লেগে গেল কিভাবে? জল নিয়ে এসো, তাড়াতাড়ি জল নিয়ে এসো।
চিৎকার শুনে অনুজা ভিতর থেকে মগে জল নিয়ে আসল। “সর্দারজি কোথায় রক্ত?” আপনার হাত তো একদম পরিষ্কার“। “না দেখ, কত রক্ত। তোমাদের নল থেকে রক্ত বেড়িয়ে আসছে। “সর্দারজি আপনি হয়ত স্বপ্ন দেখেছেন।“ “না না কোনো স্বপ্ন নয়, এই যে দেখ কত রক্ত লেগে রয়েছে আমার হাঁতে।“ বলেই তিনি তার হাত অনুজাকে দেখাতে লাগলেন।
“ছাড়ুন, ওই সব কথা, বলুন আপনি কি খেতে চান?” “উমম, রুটি-তরকা দিয়ে দাও, আর লস্যি দিয়ে দাও, আর হ্যাঁ, একগ্লাস গরম জল আনতে ভুলো না যেন।“ এরপর অনুজা খাবার নিয়ে আসলে, সে সর্দারকে টেবিলে বসতে বলে, সর্দার টেবিলে বসে, খাবার খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। সর্দারজি প্রথমে গরম জল খাওয়ার জন্য গ্লাসটি হাঁতে নিল, সে ঘাবড়ে গেল, গরম জলের জায়গায় রক্ত কেন? সে বাকি খাবার গুলির দিকেও তাকিয়ে দেখল, নিরামিষের জায়গায় আমিষ খাবার এবং সবগুলিতে রক্ত।
সর্দার ভীষণ ঘাবড়ে গেলেন, এবং অনুজাকে বললেন- “তোমরা আমিষ খাবার বানানো, কবে থেকে শুরু করলে, আর তোমাদের সব খাবারে এত রক্ত কেন?” অনুজা বলল- “কি যে বলেন সর্দারজি, সবই তো নিরামিষ খাবার, আর রক্ত কিসের রক্ত? কোথায় রক্ত? আপনার আজ কি হয়েছে, আপনি সব জায়গায় রক্ত দেখছেন কেন?”
সর্দারজি এবার আরও ঘাবড়ে গেলেন। কি ব্যাপার সব কিছুতেই সে রক্ত দেখছে কেন? এবার সর্দারজির নজর গেল, তার সামনের টেবিলের বেঞ্চে। সে দেখল বিকট আকৃতির মুখ, এবং বড় বড় চোখ, দুটি বড় বড় দাঁত, বেড় করে, একটি শাঁকচুন্নি বসে রয়েছে।
শাঁকচুন্নির হাতের নখ, অনেক বড় বড়, নখে লেগে রয়েছে রক্ত। শাঁকচুন্নিটি, তার আঙ্গুলগুলি জিহ্বা দিয়ে চেটে চেটে রক্ত পরিষ্কার করছে। এই দৃশ্য দেখার পর সর্দারজি নিজের অজান্তেই ভয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন- “ আরে বাপরে, এ কি ভয়ানক কাণ্ড, গরম জলের বদলে রক্ত, লস্যিতেও রক্ত, নিরামিষের বদলে আমিষ, সামনে শাঁকচুন্নি, পালাও রে, পালাও, জীবনকে যদি ভালো বাসো তাহলে এখনি পালাও এখান থেকে। নাহলে নির্ঘাত সবাই মরে যাবে।“ এই কথা বলার পরেই সর্দারজি দৌড়ে হোটেল থেকে বেড়িয়ে যান, উপস্থিত লোকগুলি রীতিমত অবাক হয়ে যান। সর্দারজির এরকম আচরণ কেউই দেখেননি কোনোদিন।
শাঁকচুন্নির কথা শোনা মাত্রই, সব লোকগুলি টাকা, না দিয়েই সেখান থেকে পালিয়ে গেল। সুরেশ ভিতরে রান্নার কাজ করছিল। অনুজা নরেশকে সব কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলল। তবে এই ঘটনা এই কয়েকদিন থেকেই ঘটছে, হোটেলে আসা কোনো না কোনো ব্যক্তি ভূত ভূত করে আবার কেউ ডাইনি ডাইনি বলে চিৎকার করে পালিয়ে যায়।
অনুজা বলল- “ আমার মনে হয় লোকগুলি হয়ত নিশ্চয় খারাপ কিছু দেখেছে, তুমি কালকেই তান্ত্রিকের কাছে যাও।“ সুরেশ বলল- “ আমিও আমাদের হোটেলে কয়েকদিন থেকেই বিভিন্ন ভূতুড়ে কাণ্ড লক্ষ্য করছি। তাই তোমার বলার আগেই আমি তান্ত্রিকের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু তান্ত্রিক কিছু কাজে কলকাতায় গেছেন, বাড়িতে বলে এসেছি, তিনি আসলেই আমার সাথে দেখা করবেন। আপাতত কয়েকদিন আমাদের এভাবেই কাঁটাতে হবে।“
এই ঘটনার পরের দিন, পাশের গ্রামের বৃদ্ধ মোড়ল, তাদের হোটেলে আসল। অনুজা এবং সুরেশকে দেখে সে বলল- “আমি এই হোটেলের অনেক পুরানো কাস্টমার, অনেকদিন পর আজ আবার আসলাম এই হোটেলে, আরে ভাই, এখানে আগে রাখি আর পলাশ নামের দুইজন ছিল, তারা কোথায়, তাদের দেখছি না তো!” এই কথাটি শোনার পর, সুরেশ ও অনুজা ঘাবড়ে যায়। সুরেশ বলে-“ও ওরা, এই হোটেলটি বিক্রি করে দিয়েছে, অন্য জায়গায় তারা আরেকটি হোটেল খুলেছে। আ আর তাদের কিছু টাকার দরকার ছিল, তাই তারা হোটেলটি বিক্রি করে দেয়।“ কাঁপা গলায় সুরেশ বলল।
এই কথাগুলি শোনার পর, মোড়লের মনে কেমন যেন খটকা লাগে, কারণ তাদের কথা বলার ভঙ্গি অন্য কিছু নির্দেশ করছিল। এবার মোড়ল বললেন- “ ঠিক আছে, আমার জন্য খাবার তৈরি কর, আমি হাতমুখ ধুয়ে আসছি।“ এই কথা বলার পর মোড়ল হাত মুখ ধুতে চলে যান। নলের সামনের আয়নায় মোড়ল দেখতেই, সে রাখি আর পলাশের ছবি দেখতে পায়, তাদের ছবি থেকে রক্ত বেড়িয়ে আসছে। এটি দেখার পর মোড়ল, কিছুটা চিন্তা করল, আর ঘাবড়ে গেল, এরপর সে বাইরে টেবিলে এসে বসল।
অনুজা খাবার নিয়ে আসলে, মোড়ল দেখল- প্লেটে তার প্রিয় খাবার সাজানো আছে, এটি দেখে মোড়ল বললেন- “আরে বোন, তুমি কি ভাবে আমার প্রিয় খাবারের ব্যাপারে জানলে? আমি হোটেলে আসলে, এই খাবারগুলিই আমার প্রিয় ছিল।”
প্লেটের দিকে তাকিয়ে অনুজা ভয় পেয়ে গেল। কারণ প্লেটে যে খাবার গুলি সে দেখছে, সেগুলি আজ হোটেলে বানানোই হয়নি, অথচ এই প্লেটগুলি সে নিজেই সাজিয়ে নিয়ে আসল। হঠাৎ করেই খাবারগুলি বদলে গেল কিভাবে? অনুজা আতঙ্কে কাঁপতে লাগল। এমন সময় কিছু ভিখারি বাচ্চা হোটেলে এল, তারা এসে খাবার চাইল। এটি দেখার পর অনুজা রেগে গেল এবং বলল- “ যা যা পালা এখান থেকে, এমনিতেই কয়েকদিন থেকে হোটেলে আজব ভূতুড়ে কাণ্ড হচ্ছে, ব্যাবসা একদম লাটে উঠেছে, তারপর আবার এরা এসে হাজির ফ্রিতে খাবার খাওয়ার জন্য, উঃ বাবা এদের নিয়ে আর পাড়ি না, পালাবি নাকি লাঠি নিয়ে যাব?”
এই কথা শোনার পর বাচ্চা গুলি সেখান থেকে চলে গেল। সাথে সাথেই অনুজার মনে হল কেউ তাকে সাপটে চড় মারল, কিন্তু সে কাউকেই দেখতে পেলনা, আবার অপরদিকে রান্নাঘর থেকে সুরেশ চেঁচিয়ে উঠল, অনুজা দৌড়ে গিয়ে দেখল, সুরেশের হাতের তালু কড়াইয়ে লেগে পুড়ে গেছে। সুরেশ যন্ত্রণায় চিৎকার করছে।
ঠিক এই সময় তাদের কাছে খোঁজ আসে যে, তান্ত্রিক ফিরে এসেছে। এরপর তারা সেই রাতেই তান্ত্রিকের বাড়িতে যায়। সেখানে তারা হাত জোর করে, তান্ত্রিকের কাছে বলতে শুরু করে- “ আমাদের বাঁচান বাবা, কয়েকদিন থেকেই আমাদের কাছে নানান ভূতুড়ে কাণ্ড হয়ে চলেছে। কিছু একটা করুন। আমাদের বাঁচান। আমাদের হোটেলে শাঁকচুন্নি এসেছে, আপনি কিছু একটা করুন। আজ আমাকে থাপ্পড় মেরেছে শাঁকচুন্নি।“
এই কথা শোনার পর তান্ত্রিক বললেন- “তোমাদের হোটেলে নিশ্চয় কারও লাশ কবর দেওয়া হয়েছে, আর সেই লাশ মুক্তি খুঁজছে, অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে তাকে, তার আত্মা শুধু মুক্তি খুঁজে, শুধু মুক্তি। তার আত্মার মুক্তি না হলে, সে তোমাদের জীবন নিয়ে নিতে পাড়ে। চলো এখনি চলো তোমাদের হোটেলে।“
“না বাবা এ এত রাতে আ আমরা যা যাব না হোটেলে। সেখানে শাঁকচুন্নি আছে,” আতঙ্কিত হয়ে অনুজা বলল।
“না গেলে তোরা মরবি, চল”
এরপর তারা তান্ত্রিকের সাথে ভয়ে ভয়ে হোটেলে যায়। এবার তান্ত্রিক বলে-“আমাকে পরিষ্কার ভাবে বলো,এখানে কাকে কবর দেওয়া হয়েছে। আর কোথায় আছে তাদের কবর?”
এবার অনুজা বলতে শুরু করল-“ এই হোটেলে আগে যিনি ছিলেন, তিনি প্রতিদিন গরীবদের খাবার বিলিয়ে দিতেন, আজ থেকে প্রায় সাত মাস আগে, আমরা দুইজন এখানে কাজের সন্ধানে আসি। তাদের মন খুব ভালো ছিল বাবা, আমাদের তারা সহজেই কাজ দিয়ে দিল, আমরা দেখতাম যে, সারাদিন হোটেলে যতগুলি খাবার তৈরি হত, তার অর্ধেকই গরীব দের দিয়ে দিত মালিক ও তার স্ত্রী। কিন্তু এরফলে হোটেলের লোকসান হত, তাই আমরা চুপিচুপি, খাবারে বাসি খাবার মিশিয়ে দিতাম, যার ফলে একদিন সেই খাবার খেয়ে গরীব বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে যায়, এই কথা হোটেল মালিক জানতে পেরে, আমাদের কাজ থেকে বেড় করে দেওয়ার হুমকি দেয়।“
“এতে আমরা রেগে যাই, আবার এই সময় এই পুরো হোটেলটিকে পাওয়ার ইচ্ছা আমাদের পেয়ে বসে, কারণ সারাদিন হোটেলে অনেক কাস্টমার আসেন। তাই আমরা একদিন হোটেলের মালিক ও তার স্ত্রীর খাবারে কৌশলে বিষ মিশিয়ে দিই। এরপর তারা সেই রাতেই মারা যায়। আমরা তাদের লাশ, এই হোটেলের পেছনে কবর দিয়ে দিই। আর আমরা রটিয়ে দিই যে, আমাদের এই হোটেলটি বিক্রি করে দিয়ে হোটেলের মালিক অন্যত্র চলে গেছেন। মানুষ সেটিই বিশ্বাস করে ফেলে। কিন্তু বাবা তাদের আত্মা আমাদের পিছনে পড়েছে, আমাদের রক্ষা করুন বাবা”
পড়ুনঃ- জল দিয়ে আগুন নেভে কেন? সাবানের ফেনা সাদা হয় কেন?
এই কথা শোনার পর তান্ত্রিক হো হো করে হেঁসে উঠলেন, এবং বললেন- “আরে মূর্খ, এই হোটেল আমার মামার রে, প্রথম থেকেই তোদের উপর আমার সন্দেহ হচ্ছিল, আমার মামা বেপাত্তা হয়ে গেল, আর হোটেলে তোরা, তাই তোদের মুখ থেকেই আসল ঘটনা শোনার ইচ্ছে ছিল আমার, হাঁ হাঁ হাঁ, তোদের পেছেন দেখ কারা, দাঁড়িয়ে আছে” সুরেশ আর অনুজা পেছন ফিরে দেখল, পুলিশ আর কয়েকজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে, পরেশ আর অনুজা এই অন্ধকারে লক্ষ্যই করেননি, যে কখন এই লোকগুলি তাদের পেছেন এসে দাঁড়িয়েছে।
এরপর পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়, আদালতের রায়ে তাদের দুইজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়, এরপর সেই অনুজা হোটেল চিরকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। শোনা যায় যে, হোটেল বন্ধ থাকা সত্যেও কোনো এক অজানা শক্তি প্রতিদিন সেই হোটেলে রান্না করত, এরপর সেই রান্না করা খাবার গুলি গরীব মানুষেরা হোটেলে এসে খেয়ে যেতেন, কে এই খাবার রান্না করেন, তা দেখার জন্য অনেকেই সেখানে যান, কিন্তু কেউই কিছু দেখতে পায়না, অনেকেই আবার দেখতে পান চুলায় আগুন জ্বলছে, তারউপর কড়াইয়ে তরকারী রান্না হচ্ছে, তাওয়াতে রুটি নিজে থেকেই উল্টে যাচ্ছে, এরকম ভূতুড়ে কাণ্ড দেখে তারা পালিয়ে এসেছিলেন। এরপর আর কেউই সেখানে যাওয়ার সাহস করেননি। এখনও নাকি সেখান থেকে গরীবদের খাবার বিতরণ করে কোনো এক অজানা শক্তি।
পড়ুনঃ- পৃথিবীর ভয়ানক জায়গা
চাইলে তুমিও আমাদের সাথে লিখতে পারো। লেখা পাঠানোর জন্য এই পেজের একটু নীচে যাও, দেখবে “আপনার লেখা প্রকাশ করুন” নামে একটি বোতাম আছে, সেখানে ক্লিক করে তুমি অতি সহজেই লেখা পাঠাতে পারো। এই ভয়ংকর ভুতের গল্প ।। হোটেলের ভূত গল্পটি সম্পর্কিত আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।
ভালো থেকো বন্ধু। বাংলা নতুন ভূতের গল্প
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।