আজ আমি ষ্টেশনের ভুতের গল্প তোমাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি। আশা করছি এই হাড়হিম করা ভুতের গল্প তোমাদের ভালো লাগবে। [BANGLA VUTER GOLPO]

ষ্টেশনের ভুতের গল্প bangla vuter golpo

রাতের ট্রেন ছিল,গাড়ি থেকে যখন আমি নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নামি রাত তখন ঠিক একটা।যাত্রিদের স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে রেল গাড়িটি আবার চলতে লাগলো। আমার সহযাত্রীদের বেশিরভাগ জনই আত্মীয়দের সঙ্গে চলে গেলেন। আমি মামাদের সারপ্রাইজ দিব বলে ফোন করিনি। সঙ্গে থাকা ব্যাগ দুটির একটি কাঁধে ঝুলিয়ে অপরটি হাঁতে নিয়ে স্টেশন মাস্টারের রুমের দিকে গেলাম।

ভিতরে ঢুকতে দেখি সেখানে একজন লোক বসে আছে। উনি হয়তো স্টেশন মাস্টার। তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম এখান থেকে জলপাইগুড়ি কত দূর? তিনি উত্তর দিলেন এখান থেকে জলপাইগুড়ি ৪০ কিমি রাস্তা। আমি তাকে বলি, এখন কোনো গাড়ি পাওয়া যাবে কি না? তিনি বললেন কিছুক্ষণ আগেই একটি গাড়ি জলপাইগুড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে, এত রাতে এখান থেকে জলপাইগুড়ি যাওয়ার আর কোনো গাড়ি পাওয়া যাবেনা। তাই রাতটা কষ্ট করে এখানে কাটাতে। তার সাথে কথা শেষ করে ঐ রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।

ষ্টেশনের ভূতের গল্প STATION VUTER GOLPO
ষ্টেশনের ভুতের গল্প STATION VUTER GOLPO

বাইরে এসে দেখি চারপাশটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা কোনো মানুষ-জন নেই। পাশের ওয়েটিং রুমে গিয়ে একটি চেয়ারে বসলাম। ভাবলাম মামাদের ফোন করে জানিয়ে দিই, তারা যেন আমাকে নিতে আসে। কিন্তু কি ঝামেলা দেখুন, মোবাইলটিরও ব্যাটারি শেষ। আর কোনো উপায় না দেখে চিন্তা করলাম কোনো মতে আজ রাতটা এখানে কাটিয়ে কাল সকালের দিকে জলপাইগুড়ির উদেশ্যে রওনা হব। দেয়ালে ঝুলে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত দেড়টা বেজে গেছে। আর মাত্র ৩-৪ ঘণ্টা কোনোমতে কাটিয়ে দিই। চোখে একটু একটু ঘুম ঘুম ভাব। তাই চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম। হঠাৎ এমন সময় একজন লোক এসে উপস্থিত। এসে বলল-

-স্যার কোথায় যাবেন?

-জলপাইগুড়ি যাব।

-কিন্তু তুমি কে?

-আমার নাম নরেশ, এই এলাকায় গাড়ি চালাই।

-ও তাই নাকি। আচ্ছা তুমি কি জলপাইগুড়ি যাবে?

–হ্যা স্যার যাব, চলেন।

মনে মনে চিন্তা করলাম কষ্ট করে স্টেশনে রাত কাটার চেয়ে গন্তব্যে চলে যাওয়া ভালো। তাই ব্যাগটা হাতে নিয়ে বলি চল নরেশ। মনে মনে ভাবলাম যাক ভালোই হল। হাটতে হাটতে নরেশের গাড়ির সামনে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি একজন লোক আগে থেকে সিটের উপর বসে আছে। লোকটি সমস্ত শরীর চাদর দিয়ে ঢেকে রেখেছে।চেহারাটা পর্যন্ত ভাল করে দেখা যাচ্ছে না।আমি কোনো কথা না বলে লোকটার পাশে গিয়ে বসলাম।

হাড়হিমকরা ভূতের গল্প VUTER GOLPO IN BANGLA
হাড়হিমকরা ভুতের গল্প VUTER GOLPO IN BANGLA

তার পরে নরেশ  গাড়ি চালাতে শুরু করে। প্রায় ২০ মিনিট আসার পরে আমরা একটি পিচের রাস্তায় উঠলাম।সেই রাস্তার দুই পাশে ছিল বিস্তৃত ধান ক্ষেত। আমার মনে হচ্ছে এই জায়গাটির নাম বেলাকোবা। যত দূরে চোখ যায় শুধু হলুদ পাকা ধান, আর চাদের আলোয় সুন্দর লাগছে, দেখে। আহা কি মনোরম দৃশ্য। কতকাল আসিনি এই দিকে।

মাঝে মাঝে রাস্তার দুই পাশে হালকা কিছু গাছ দেখা যাচ্ছে। আর খরা মৌসুমে চাষাবাদের জন্য এক পাশে একটি খাল খনন করা আছে। আকাশে হালকা চাদের আলো তার পরেও চারপাশটা বেশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।আশেপাশে কোনো জনবসতি নেই তাই চারদিকে শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না।মাঝে মাঝে দূর থেকে একটি খেঁক শেয়ালের ডাক কানে ভেসে আসছে। কার্তিক মাসের শেষের দিকে তাই হালকা একটু শীত পড়ছে। মাঝে মাঝে হিমেল হাওয়া শরীরে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। তাই ব্যাগ থেকে জ্যাকেট নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিলাম।

একটু পরে নরেশ জিজ্ঞেস করে “স্যার জলপাইগুড়িতে আপনার কে থাকে?” আমি বললাম  “জলপাইগুড়িতে আমার মামা বাড়ি। কিছুদিন পরে আমার ছোট মামার বিয়ে তাই যাচ্ছি।“ –“ও আচ্ছা” মাঝ পথে আসার পরে নরেশ বলল “স্যার আপনারা বসেন আমি একটু খালি করে আসি।“  বুঝতে পারলাম সে উচ্চচাপে পরেছে। নরেশ পিঁছনের দিকে একটু দূরে গিয়ে রাস্তার থেকে নিচে নেমে গেল। তাকে আর দেখা যাচ্ছেনা।

অনেকক্ষন বসে থেকে আমার কোমরে ব্যথা হয়ে গেছে। তাই গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার মধ্যে হাটাচলা করতে লাগলাম। প্রায় ৪৫ মিনিট হয়ে গেছে কিন্তু নরেশ এখনো ফিরে আসছে না। আমি তখন তার নাম ধরে ডাক দিলাম কিন্তু উত্তর পেলাম না।আমার মাঝে কেমন একটা টেনশন কাজ করছে। কিন্তু আমার পাশে বসা লোকটি কোনো সাড়া-শব্দ নেই, চুপচাপ বসে আছে।

ব্যাগ থেকে তখন টর্চলাইটটা নিয়ে আস্তে আস্তে আলের নীচের দিকে গেলাম, কিন্তু সেখানে গিয়ে কিছুই দেখতে পেলাম না। আস্তে আস্তে আরো একটু সামনে গেলাম।হঠাৎ লক্ষ্য করলাম খালের জলের রং কেমন যেন একটু লালচে দেখাচ্ছে। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে আমার মনে হল আলের পাশে কার যেন লাশ পড়ে আছে। কাছে গিয়ে দেখি এটি নরেশের লাশ। হে ভগবান, কে যেন তাকে গলা কেটে হত্যা করেছে। আর তার রক্ত গড়িয়ে খালের জলে মিশে সেটি ও লাল হয়ে গেছে। এমন সময় লক্ষ্য করলাম ধান ক্ষেতের মাঝখান থেকে কিছু একটার শব্দ হচ্ছে। একসময় শব্দের তীব্রতা বাড়তে থাকে। বুঝতে পারলাম ধান ক্ষেতের ভেতর দিয়ে কিছু একটা এদিকে আসছে। ভয়ে তখন দৌড় দিয়ে গাড়ির সামনে চলে আসি।

রক্তে ভরা খালের জল বাংলা ভুতের গল্প BANGLA
রক্তে ভরা খালের জল বাংলা ভুতের গল্প BANGLA VUTER GOLPO IMAGE SOURCE
<

কিন্তু এখানে এসে দেখি চাদর গায়ে দেয়া সে লোকটা নেই। আমি চারপাশ ভাল করে দেখলাম কিন্তু কোথাও লোকটির দেখা পেলাম না। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম দূর থেকে কতগুলো কুকুর শব্দ করতে করতে এদিকে ছুটে আসছে। কুকুর গুলোকে দেখে আমি দ্রুত গাড়ির উপর উঠে গেলাম।কুকুর গুলো গাড়ির সামনে এসে কান্নার সুরে ডাকেতে শুরু করে। মনে হচ্ছে কুকুর গুলো কিছু একটা দেখে ভয় পেয়েছে। তাই ঐ দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। এমন সময় খেয়াল করলাম ঐ দিকে আলের নিচ থেকে কেউ একজন রাস্তার উপরে উঠেছে। হাতে থাকা টর্চলাইটটি সে দিকে ধরলাম।দেখি রাস্তার উপর এক মধ্য বয়সী মানুষ দাড়িয়ে আছে।

মুখে আর পোষাকে রক্ত মাখা দাগ। চোখ যেন জ্বল জ্বল করছে আর এক দৃষ্টিতে এদিকে তাকিয়ে আছে। এবার বুঝি আমার পালা, মাথার সব বুদ্ধি যেন, হাঁটুতে নেমে গেছে। এই লোকটিই হয়ত নরেশকে খুন করেছে। লোকটিকে দেখে কুকুর গুলো ভয়ে সামনের দিকে দৌড় দিল। আমি তখন কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এদিকে এই ভয়ানক দৃশ্য দেখে আমার হার্টবিট খুব বেড়ে গেছে।

READ MORE:-

অ্যানাবেলা অভিশপ্ত পুতুল

ভূত আছে কি নেই ভূত কি আত্মা কি 

বাংলা ভূতের গল্প । 

 চিন্তা করলাম ভাগ্যে যা থাকে থাকুক ব্যাগটা নিয়ে সামনের দিকে দৌড় দেব।কারণ এই ব্যাগটিতেই আছে, নতুন মামির জন্য এক বিশেষ ডায়মন্ড জুয়েলারি। তাই ব্যাগটি হাতে নিয়ে দিলাম একটা দৌড়। কিছু দূর আসার পরে খেয়াল করলাম সামনে দিয়ে একজন লোক হেটে যাচ্ছে। দ্রুত তার কাছে গেলাম। কাছে গিয়ে দেখি এটি গাড়ির সেই চাদর গায়ে দেয়া লোকটি। তাকে দেখে মনে কিছুটা সাহস পেলাম। লোকটিকে বললাম “দাদা আপনি হেটে চলে আসলেন ঐ দিকে কে যেন নরেশ ড্রাইভার কে খুন করেছে।“

লোকটি গম্ভীর গলায় উত্তর দিল-“তাই নাকি?” এই প্রথম আমি লোকটির গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম।কিন্তু আওয়াজটি আমার কাছে অতি পরিচিত মনে হচ্ছে। মনের মাঝে কেমন একটা খটকা লাগে। তাই লোকটিকে বলি “দাদা আপনি চাদর দিয়ে এভাবে মুখ ঢেকে রেখেছেন কেন? আপনে কি আপনার চেহারাটা দেখাবেন।“  আমার কথা শেষ হওয়ার পরে লোকটি রাবণের হাসি হাসতে লাগলেন, বললেন “মুখ দেখবি, তুই মুখ দেখবি? এই দেখ।“ এটি বলে তার মুখ থেকে চাদর সরালেন। চেহারাটা দেখে আমি হতভাগ হয়ে গেলাম।

বাংলা ভয়ানক ভুতের গল্প VOYANOK VUTER GOLPO
বাংলা ভয়ানক ভুতের গল্প VOYANOK VUTER GOLPO

এটা কিভাবে সম্ভব! একটু আগে মারা যাওয়া নরেশ ড্রাইভার, তার হাঁতে কাটা মুন্ডূ নিয়ে ঘুরছে।  আমার সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দুর্বল হয়ে যাচ্ছিল। আমার মুখ থেকে তখন আর কোন কথা বের হচ্ছিল না। একসময় মনে হল আমি জ্ঞান হারাতে যাচ্ছি।তার পরে আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরে আসার পরে দেখি আমি মামার খাটিয়ায়, মামাবাড়ির সবাই আমার চারপাশে বসে আছে। আর কে যেন আমার মাথায় জল ঢালছে।

পড়ে জানতে পারি, কাল রাতে আমার সঙ্গে যা কিছু হয়েছে, সেটি আসলে একটি অতৃপ্ত আত্মার হত্যালীলা। বছর দশেক আগে নাকি, নরেশ নামে এক ড্রাইভার যাত্রী নিয়ে জলপাইগুড়িতে যাচ্ছিল। ঠিক ওই জায়গাটিতেই গাড়ি থামিয়ে সে পেট খালি করার জন্য নামে, তারপর আর সে ফিরে আসেনি। পড়ের দিন, ধান ক্ষেতের খালের জলে, তার গলা কাটা দেহ উদ্ধার হয়। তার মৃত্যুর পর সেই যাত্রীদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। এই নরেশ ড্রাইভারের গাড়িটি ষ্টেশনের ভাঙ্গা গাড়ির গোডাউনে রাখা হয়েছিল। যেহেতু তার কোনো আত্মীয় ছিল না, সেহেতু কেউইই তার অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া সম্পন্ন করেনি। যার ফলস্বরূপ তার আত্মা আজও সেই ভয়ংকর রাতের দৃশ্য গভীর রাতের যাত্রীদের সাথে পুনরাবৃত্তি ঘটায়। সেই আত্মাটি হয়ত, মুক্তি খোঁজে।

আমাদের ফেসবুক গ্রুপ:- গল্প Junction 

ভয়ানক আত্মা ভুতের গল্প
ভয়ানক আত্মা ভুতের গল্প
আমরা এখন WhatsApp এ:- ছাড়পত্র 

এই ভুতের গল্পটি তোমাদের কেমন লাগল তা আমাদের জানাতে ভুলো না যেন। আর তোমরা চাইলে আমাদের FACEBOOK PAGE -এ তোমার লেখা গল্প শেয়ার করতে পারো। তোমার লেখা প্রকাশিত হবে আমাদের পেজ এবং সাইটে। ধন্যবাদ।  

Spread the love

Leave a Reply