আজকের ভালবাসার দুঃখের ছোট গল্প দুটিতে পাঠক খুঁজে পাবেন পাশে পেয়েও পাশে না পাওয়ার, কাছে পেয়েও হারিয়ে ফেলার বেদনাময় মুহূর্ত।
ভালবাসার দুঃখের ছোট গল্পঃ-
ইশিকার সাথে অরুনের দেখা হয়েছিল কলেজের এক টুর্নামেন্টে। আর সেখান থেকেই অরুণকে ভাল লাগা শুরু হয় ইশিকার। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়াল, সে কিভাবে অরুণকে বলবে যে সে অরুণকে ভালবাসে! একজন মেয়ে হয়ে একজন ছেলেকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়াটা কিছুতেই মানায় না।
একদিন ইশিকা দেখল অরুণ কলেজের ক্যান্টিনে একা বসে আছে। সে অরুণের কাছে গিয়ে নানান বিষয়ে আলোচনা করতে লাগল। আর সব শেষে বলল, “অরুণ তোমার হাসিটা খুব সুন্দর।“ আর উত্তরে অরুণ বলেছিল, “এই হাঁসিটা যার জন্য সেও খুব সুন্দর।“
এখান থেকেই তাদের লাভ জার্নি শুরু। কলেজে এসে এক সাথে সময় কাটানো, কলেজ বন্ধের দিনে নানা অজুহাতে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে দেখা করা, সব কিছুই ঠিক ঠাক চলছিল। দেখতে দেখতে শেষ হয় কলেজ। ইশিকা নার্সিং এ আর অরুণ ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু ইদানীং অরুণ যেন ইশিকার প্রতি কেমন বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে।
আসলে ইশিকা সকালে উঠেই গুড মর্নিং, দুপুরে গুড নুন, বিকেলে গুড আফটার নুন ইত্যাদি এইভাবে প্রতিদিন ম্যাসেজ করা শুরু করে। প্রথম প্রথম প্রেম যেমন মধুর মত মিষ্টি হয় তাদের ক্ষেত্রেও সেটাও হয়েছিল, কিন্তু সময়ের সাথে ইশিকার এই সব গুড মর্নিং আর গুড নাইট উইশ অরুণের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ফোন খুললেন ইশিকার ম্যাসেজ, ‘গুড মর্নিং, কি খেলে?’ ঠিক এই ভাবেই চলত সারাদিন। ইশিকার এই ম্যাসেজ গুলি অরুণের কাছে ন্যাকামি মনে হতে থাকে। সে এই ম্যাসেজের প্রতি এতটাই বিরক্ত হয়ে যায় যে সে ঠিক করে সে ইশিকার কোন ম্যাসেজের আর রিপ্লাই করবে না। কারণ রিপ্লাই পেয়ে ইশিকার বাড়বাড়ন্ত বেড়ে যাচ্ছে।
একদিন রাতে ইশিকা ম্যাসেজ করলেও সে আর ম্যাসেজ টি খুলে দেখল না। সরাসরি ঘুমিয়ে পরল। পরের দিন ঘুম ভাঙল মোবাইলের রিংটোনে। অরুণ দেখে ইশিকার মা ফোন করেছে।
ফোন তুলতেই অরুণের কানে ভেসে এল এক সর্বহারার আর্তনাদ। আর সেই আর্তনাদ ডুকরে ডুকরে কেঁদে বলছে, “গতকাল রাতে কারা যেন ইশিকার দেহ ভোগ করে ড্রেনে ফেলে দিয়ে গেছে।“
এরপর কেটে যায় এক মাস। একদিন অরুণ মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে আবিস্কার করে ইশিকার পাঠানো সেই ম্যাসেজ, যাতে লিখা ছিল- “অরুণ আমি বাজারে বেড়িয়েছিলাম, রাস্তা জ্যাম তাই রাত হয়ে গেছে। কয়েকজন গুন্ডা টাইপের লোক আমাকে অনুসরণ করছে আমার ভয় লাগছে, আমি তোমার বাড়ির পাশের গলিটা দিয়েই হেঁটে যাচ্ছি, প্লিজ তুমি একটু এসো।“
কিন্তু অরুণ ইশিকার সেই ম্যাসেজ দেখে নি, আর যার ফলে সে হারিয়েছে তার ভালবাসা। ম্যাসেজ টি দেখার পর অরুণ দুঃখে ভেঙ্গে পরে। কিন্তু এখন আর দুঃখ করে লাভ কি, যখন কোন কিছু তোমার সাথে থাকবে তখনই যদি তার মুল্য না বোঝো তবে পরবর্তীতে আক্ষেপ আসলে মায়া কান্না ছাড়া কিছুই নয়।
তাই যে মানুষটা সর্বদা তোমাকে কেয়ার করে, তোমার খোঁজ খবর নেয় কখনই তার প্রতি বিরক্ত হয়ে তাকে উপেক্ষা বা ইগনোর করো না। কারণ একদিন হয়ত তুমি বুঝতে পারবে, তারা গুলোকে গুণতে গিয়ে আকাশের চাঁদ টাকেই তুমি হারিয়ে ফেলেছ।
এই গল্প দুটি হয়ত আপনি পড়তে ভুলে গেছেন- বাসে প্রেমের গল্প- সে কি আমার প্রেমিকা হবে! ইউনিভার্সিটি লাভ স্টোরি
না পাওয়া প্রেমের গল্পঃ-
প্রায় সাত বছর আগে তুলিকার সাথে পরিচয় হয় অয়ন এর। ওদের পরিচয় টা হয় একটি বিয়েতে। এই সাত বছরের প্রেমে ওদের উপর দিয়ে কম ঝড় ঝঞ্জা যায়নি! এক বার তো তুলিকার বাবা বাস ভর্তি লোকের সামনে অয়ন কে যাচ্ছেতাই অপমান করেছিল। কিন্তু অয়ন বেচারা এর কোন উত্তর দেয় নি।
আর আজ এত বছর পর অবশেষে তুলিকা তার পরিবার কে রাজী করাতে পেরেছে। আগামী মাসেই ওদের চার হাত এক হবে।
কিন্তু অয়ন হঠাৎ করেই তুলিকার মধ্যে এক অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করে। তুলিকা কেমন যে খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। যেন মনে হচ্ছে ইগনোর করছে অয়ন কে। সামনের মাসেই তো তাদের বিবাহ, কিন্তু তুলিকার এরকম আচরণে অয়ন রীতিমত বিচলিত হয়ে যায়।
একদিন সন্ধ্যে বেলা পার্কে অয়ন কে ডাকে তুলিকা। অয়ন সেখানে যায়। তুলিকা অয়ন কে বলে- “আমি তোমাকে বিবাহ করতে রাজী আছি, যদি তুমি আমার দেওয়া একটি টাস্ক করতে পারো।“
-কিন্তু এতবছর পরে তুমি এমন কথা বলছ কেন, আর কয়েকদিন বাদেই আমাদের বিবাহ।
-আমি কিছু শুনতে চাই না। আমার দেওয়া টাস্ক তোমাকে করে দেখাতেই হবে।
-আচ্ছা বল কি করতে হবে!
-২৪ ঘণ্টা তুমি আমাকে কোন ম্যাসেজ করবে না, কোন কল ও করবে না। মানে আমি বলতে চাইছি আগামী ২৪ ঘণ্টা তুমি আমার সাথে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে। ইন্টারনেটে আসবে না। আর পরের দিন আমার সাথে সকালে এই পার্কেই দেখা করবে।
অয়ন বলল- ঠিক আছে, তুমি যদি এটাই চাও। আমি তাইই করতে রাজী আছি।
পড়ুনঃ- স্কুল লাইফের প্রেম
এরপর অয়ন সেদিন রাত থেকে তুলিকার সঙ্গে যাবতীয় যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ২৪ ঘণ্টা পর অয়ন খুশি খুশি সেই পার্কে যায় কিন্তু, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরও তুলিকা আর আসে না। শেষে অয়ন যখন মোবাইলের ইন্টারনেট চালু করল, তুলিকার একটা লম্বা ম্যাসেজ তার WhatsApp –এ এসে ঢুকল। আর সেই ম্যাসেজের সার মর্ম হল-
‘আমি জানি তুমি আমার জন্য যে কোনো টাস্ক করতে পারবে। এই যে তুমি ২৪ ঘণ্টা মানে একদিন আমার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলে এভাবেই তোমাকে এবার বাকি জীবন টা কাঁটাতে হবে।’
অয়নের মাথায় যেন বাজ ভেঙ্গে পরে। সে দ্রুত তুলিকার নাম্বারে ফোন করে, আর ওপারে যে ফোন তুলল সে জানাল- “তুলিকা ভোর ৩ টা ৫০ এ ইহলোক ত্যাগ করেছে।“
এরপর অয়ন তড়িঘড়ি তুলিকার বাড়ি যায় আর জানতে পারে- তুলিকা এক দুরারোগ্য রোগে ভুগছিল। সে বুঝে গিয়েছিল যে সে আর বেশিদিন বাঁচবে না। তাই সে অয়ন কে নানা ভাবে ইগনোর করতে থাকে। যাতে তুলিকার প্রতি অয়নের একটি বিরক্তি জন্মায়। কিন্তু অয়ন বিরক্ত হয়নি। তাই শেষে তুলিকা এই উপায় বেছে নিয়েছে।
অয়ন আজও অবিবাহিত থেকে গেছে। তুলিকার জন্ম দিন সে প্রতি বছর পালন করে। তবে বাড়িতে কেক কেটে নয়, মৃত প্রেমিকার কবরের উপর তার পছন্দের নানান ফুল সাজিয়ে।।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
পড়ুনঃ- হার্ট টাচিং লাভ স্টোরি শিক্ষণীয় গল্প- স্মার্ট ফোন
সব পোস্ট আপনি পেতে পারেন যেখানে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
ভালবাসার দুঃখের ছোট গল্প। না পাওয়া প্রেমের গল্প। bengali short emotional love story
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।