প্রিয় পাঠক, আজ আমরা ব্লাডি মেরির সত্য ঘটনাটি কি সেটি বিশ্লেষণ করব। আপনি হয়ত কোনো না কোনো সময় ব্লাডি মেরি নামটি অবশ্যই শুনেছেন। হয়ত কোনো ফিল্মে বা কোথাও দেখেছেন যে, তিনবার নাকি ব্লাডি মেরি নামটা বললেই এই ভয়ানক ডাইনি এসে হাজির হয়ে যায়। চলুন আজ এরই পেছনের ভূতুড়ে কাহিনীটি জেনে আসি।
ব্লাডি মেরির সত্য ঘটনা। bloody mary real story in bengali
আমরা ব্লাডি মেরি নামে যাকে জানি সে আসলে ইংল্যান্ডের একজন রাণী ছিল। তিনি ছিলেন রাজা অষ্টম হেনরি এবং ক্যাথরিনের একমাত্র কন্যা। অষ্টম হেনরির দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে পঞ্চম এডওয়ার্ড। রাজা হেনরির মৃত্যুর পড় এডওয়ার্ড ইংল্যন্ডের সিংহাসনে বসেন। কিন্তু তিনি এক বিরল রোগে মারা যান। মারা যাবার আগে তার পিসিকে ইংল্যান্ডের উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান।
এই ঘটনায় মেরি খুব রেগে যান। কারণ হিসেব মতে তার ভাইয়ের মৃত্যুর পড় ইংল্যান্ডের সিংহাসন তারই প্রাপ্য। এরপর তিনি একটি সৈন্যদল গঠন করেন এবং তার পিসি লেডি জেন গ্রে-কে পরাস্ত করেন। এরপর মেরি ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসেন। সিংহাসনে বসেই তিনি তার পিসির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন। এরপর মেরি স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ-কে বিবাহ করেন। সুতরাং একই সাথে তিনি স্পেনেরও রাণী হয়ে যান।
সে যাই হোক ইংল্যান্ডের রাণী হওয়ার পড় তিনি খ্রিস্ট ধর্মের প্রতিবাদী সম্প্রদায়কে দমন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি প্রতিবাদী সম্প্রদায়ের সদস্যদের হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। এরপর তিনি একে একে তাদের হত্যা করতে থাকেন। তিনি এক রাষ্ট্র এক দেশ –এই আদর্শে সমগ্র দেশকে পরিচালিত করতে চেয়েছিলেন।

একজন মহিলার এই আগ্রাসী মনোভাবের জন্য দেশের সবাই মেরিকে নীচ চোখে দেখতে শুরু করে, কিন্তু কেউই প্রতিবাদ করার সাহস পেত না। কারণ প্রতিবাদ করলেই মৃত্যু নিশ্চিত। আবার অনেকের মধ্যে একটি কথা প্রচলিত আছে,- মেরি নাকি যখন স্নান করতেন, তখন তিনি নাকি জলের পরিবর্তে রক্ত দিয়ে স্নান করতেন। তবে সে যাই হোক আমরা আসল আলোচনায় আসি।
মেরির কোনো সন্তান ছিল না। একদিন হঠাৎ করেই মেরির ভাবনায় আসে, তার মৃত্যুর পড় ইংল্যান্ডের সিংহাসনে যাতে তারই উত্তরাধিকারী বসতে পাড়ে সেই ব্যবস্থা কি ভাবে করা যায়! এরপর মেরি মা হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তবে এবার মেরির আগ্রাসী মনোভাব পাল্টে গিয়ে মানবদরদী মূর্তি দেখা দিতে শুরু করে।
যখন মেরির সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় হয়ে এল, কাকতালীয় ভাবে মেরির গর্ভ থেকে সন্তান জন্ম হল না, এই ঘটনায় সবাই আশ্চর্য হয়ে যান। এই ঘটনার কিছুদিন পড়, মেরির পেট আবার আগের মতই সমান হয়ে যায় (আমরা জানি যে, মা যখন গর্ভবতী থাকেন তখন তার পেট আকারে বেড়ে যায়)। এরপর বৈদ্য-কে ডাকা হলে সে জানায় মেরির পেটে বাচ্চা নয়, বরং খারাপ কোনো জিনিসের বা আত্মার বসবাস ছিল। এই কথাটি শোনার পড় মেরি হতবাক হয়ে যান।
পড়ুনঃ- অ্যানাবেলা অভিশপ্ত পুতুল
এরপর মেরি আরেকবার গর্ভবতী হন, কিন্তু এবারও ঠিক আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল। কিন্তু এবার মেরির স্বাস্থ্য পুরো ভেঙ্গে গেল, কিছুদিন পড় মেরি মারা যান।
পরপর দুইবার এরকম ঘটনা তার সাথে ঘটে যাওয়ায় রাষ্ট্রের মানুষেরা মেরিকে খারাপ চোখে দেখতে শুরু করল। মেরির ক্রূর মনোভাব এবং নিজের স্বার্থের জন্য অসংখ্য মানুষের হত্যা করার জন্যই এমনটি হয়েছে বলে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে যায়। যেহেতু মেরি রক্ত নিয়ে খেলা করতে বেশি ভালবাসত এবং অনেক নিষ্পাপ প্রাণকে হত্যা করেছিল, সেহেতু রাষ্ট্রের মানুষ তাকে “ব্লাডি মেরি” নাম দেয়।




মানুষের মধ্যে প্রচলিত আছে যে ডেভিল আওয়ার (রাত তিনটে মানা হয়ে থাকে) শুরু হওয়ার পড় থেকে যদি কোনো অন্ধকার ঘড়ে মোমবাতি জালিয়ে তিনবার ব্লাডি মেরি বলা যায় তাহলে নাকি সেখানে ব্লাডি মেরির আত্মা উপস্থিত হয়ে যায় ও নানান ভূতুড়ে কার্যকলাপ ঘটতে থাকে।
প্রচলিত বিভিন্ন ঘটনাঃ-
শোনা যায় যে, একদিন ইংল্যান্ডেরই একজন লোক তার বাথরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তিনবার ব্লাডি মেরির নাম নেয়, এর কিছুক্ষণ পড় নাকি সেখানে মেরির আত্মা চলে আসে। এরপর যখন সে আয়নায় নিজের মুখ দেখতে চায়, তখন নাকি এক মেয়ের মুখ ভেসে উঠে আর মেয়েটির দুটি চোখ দিয়েই রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। এই ঘটনাটি দেখে সেই ব্যক্তিটি আতঙ্কিত হয়ে যান। এরপর আয়না থেকে সেই ডাইনি মেয়েটি বেড়িয়ে এসে নাকি সেই লোকটির চোখ উপড়ে নেয়। তবে ভাগ্য ক্রমে লোকটি বেঁচে যায়।
এরকম অনেক ঘটনার উদাহরণ রয়েছে এই পৃথিবীতে। ব্লাডি মেরির নাম ধরে ডাকার পড় মেরি আসুক চাই না আসুক তবে ব্লাডি মেরির যে ঘটনাটি আগে বলা হল সেটি সম্পূর্ণ সত্যি। তবে এই সত্যকে যাচাই করার জন্য মেরিকে স্মরণ করতে যাবেন না যেন।




NOTE:-এই ব্লগে আলোচিত কোনো কিছুই নিজে বাড়িতে চেষ্টা করতে যাবেন না। আমরা বর্তমান দিনে অনেক আধুনিক হয়েছি। অনেকে ভূতের কথা বললে হেঁসেই উড়িয়ে দেয়। কিন্তু এরকম তো কোনো শক্তি নিশ্চয়ই আছে, পৃথিবীতে যার দ্বারা অনেক অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা ঘটে যায়। উপরন্তু বিজ্ঞানী আইনস্টাইন স্বয়ং বলেছেন- “শক্তি কোনো দিনও ধ্বংস হয়না। তা কেবলমাত্র এক রূপ থেকে অন্য রুপে স্থানান্তরিত হয় মাত্র।“ তবে সে যাই হোক, ভূত বা আত্মা কি আদতেও হয়ে থাকে, সেই ব্যাপারে আমরা ইতিমধ্যেই বিস্তারিত আলোচনা করে ফেলেছি। চাইলে নীচে দেওয়া লিঙ্ক থেকে সেই পোষ্টটি পড়ে আসতে পাড়েন।
পড়ুনঃ- ভূত আছে কি নেই! ভূত কি? আত্মা কি? ভূত কি সত্যি আছে?




কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।