(breakup howar golpo) কলেজে প্রথম দেখা, এরপর কলেজেই প্রেম শুরু। কিন্তু বেশিদিন টিকে নি প্রেম। আজ রইল আমারই ব্রেকআপ হওয়ার গল্প। আমার দুঃখে ভরা প্রেম কাহিনীটি আজ প্রথমবারের মত সবার সামনে তুলে ধরছি।
ব্রেকআপ হওয়ার গল্প। SAD LOVE STORY OF A FOOD DELIVERY BOY:-
না কিছুতেই আর ভাল লাগছে না, কোনো কাজেই আর তেমন মন বসছে না, কিছুক্ষণ পড় পড়ই মনটা যেন বিষাদে ভড়ে উঠছে। অবশেষে সেই চেনা নদীর তীর। সেখানেই গেলাম, কিন্তু সেখানেও মনটা টিকছে না, বেদনাহত মন নিয়েই পাশে পড়ে থাকা, একটা শুকনো ডাল দিয়ে তার নাম লিখি নদীর বালির উপর। বাড়ি ফেরার পথে মুখ ঘোরাই।
‘কি রে, আমার জলে পাথর ঢিল না মেড়েই যে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিস আজ।‘ পেছন থেকে নদীটি যেন বলে উঠল। ‘একিরে আজ তোকে একা দেখছি যে, আরেকজন কোথায়?’ আমার মুখ থেকে কোনো কথা বেড় হওয়ার আগেই, গর্জন করে নদীর ঢেউ এসে বালির উপর লেখা তার নাম মুছে দিয়ে জবাব দিয়ে গেল, ‘সে আর ফিরবে না’
আমি অরূপ। মাস্টার্সের পড় এবার I.T COURSE-এ ভর্তি হয়েছি একটি বেসরকারি কলেজে। মধ্যবিত্তের পরিবার বুঝতেই পারছ, বাড়ির অবস্থাটা কেমন হতে পাড়ে। বহরমপুরের কাছেই আমার কলেজ। সেখানে এক বন্ধুকে বলে কয়ে food delivery boy এর একটা কাজ জোগাড় হয়ে গেল। অবশ্য বাড়িতে জানে না, যে আমি এই কাজটি করি, কারণ পরিবারে অভাব থাকলেও, মধ্যবিত্ত কক্ষনোই কোনো কাজে ছোট হতে দেয় না। তবে আমার কাছে সব কাজই সমান।

যাকগে, আমার কথা অনেক হল, এবার আসল কথায় আসি। মেয়েটার নাম ছিল, শ্রুতি। নাম ছিল কথাটা বলা ভুল হবে, কারণ তার নাম এখনও শ্রুতিই আছে, কিন্তু সে শুধু নেই আমার পাশে। তার পাশে থেকে আমার নামটা আজ মুছে গেছে, এসে বসেছে অন্য কারও নাম।
আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল, কলেজেই। সেখান থেকেই একে অপরকে ভালো লাগা। একে অপরের প্রেমে পড়া। কেটে যায় ছয়টা মাস।
রবিবার কোনো ক্লাস থাকত না, তাই সেদিনটাই হত আমাদের মূল আড্ডাটা। প্রতিদিন বিকেলে এই নদীর তীরে বসে পাথর ছুঁড়ে দিতে দিতে আমরা একসাথে সূর্যাস্ত দেখতাম। কিন্তু জানতাম না, যে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে কোনদিন আমার সূর্যটাই অস্ত চলে গেল। আকাশের সূর্য ভোরে আবার উদয় হলেও, আমার সূর্য যে একবার অস্ত গেল, সে আর কখনোই উদয় হবে না। হ্যাঁ আমি তাকে সূর্যের মতই ভাবতাম। সূর্য যেমন আমাদের শক্তি প্রদান করে, ঠিক তেমনই সে যখন আমার পাশে থাকে আমার মনে এক অফুরন্ত আনন্দ, এক অফুরন্ত শক্তি জেগে ওঠে।
পড়ুনঃ-18 টি মোটিভেশনাল উক্তি
সেদিন রাতের বেলা, গেছি food delivery দিতে, কিন্তু আমি জানতাম না যে আমি যে বাড়িতে যাচ্ছি সেটি শ্রুতির বাড়ি। সে আমাকে দেখে অবাক হয়ে যায়-
“তুমি এখানে, তাও আবার এরকম একটি বেশে?”
হ্যাঁ, মানে ইয়ে…
“তুমি এই থার্ড ক্লাস কাজ করো?”
সবকিছুর জন্য তো আর বাড়ির কাছে হাত পাততে পাড়ি না, তাই চেষ্টা করছি নিজের খরচটা যদি নিজে জোগাড় করতে পাড়ি।
ঘড়ের ভেতর থেকে ডাক আসে- “কার সাথে কথা বলছিস শ্রুতি?”
এরপর “তোমার সঙ্গে কাল কথা হবে” বলে শ্রুতি জোড়ে দরজাটা বন্ধ করে চলে যায়।
পরের দিন বিকেলে নদীর তীরে তার সাথে আমার দেখা হয়। আমার কাছে আসতেই, আমার গালে একটা জোড়ে চড় কষিয়ে দেয়-
“তুমি এরকম একটা নিচু কাজ করো, জানলে আমি কিছুতেই তোমার সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতাম না।“
আমি গালে হাত ঘষতে ঘষতে বলি -তুমি ভুল বুঝছ শ্রুতি, কোনো কাজই ছোট বড় হয় না। আমি শুধুমাত্র নিজের খরচা জোগাড় করার জন্যই এই কাজটা করি, তার মানে এই নয় যে, এই কাজটাই আমি ভবিষ্যতে চালিয়ে যাব।
“আমার ভাবতেই লজ্জা হচ্ছে যে, কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করে, তোর বয়ফ্রেন্ড কি করে, আমার তো সেখানেই নাকটা কাটা যাবে।“
-“কেন যারা এই food delivery কাজ করে, তারা কি মানুষ নয় নাকি?”
“তুমি বুঝছ না অরূপ, ব্যাস অনেক হয়েছে, একজন food delivery boy এর সাথে আমি আর কিছুতেই সময় কাঁটাতে পাড়ব না।তোমার কোনো যোগ্যতাই নেই আমার সাথে প্রেম করার“
এই বলে তার হাঁতে থাকা আমার দেওয়া মোবাইলের ব্যাক কভারটা আমার দিকে ছুড়ে মেরে সেখান থেকে রাগে গজ গজ করতে করতে সে চলে যায়। এখানেই আমাদের আট মাসের সম্পর্কের ইতি।
আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকছিল না, যে একজন food delivery boy –এর নিয়ে যাওয়া খাবার আরাম করে খাওয়া যায়, আর তাকে মেনে নেওয়া যায় না! হাজার হলেও সেও তো মানুষ, সেও তো তার মা-বাবার গল্পের রাজপুত্র, সেও তো তার বোনের গল্পের একজন নায়ক। সেও তো তার দিদির অত্যন্ত কাছের একজন।
মাত্র একটা বছর যে, সাথে থাকতে পাড়ল না, বাঁচার তাগিদে আমার গ্রহণ করা এই কাজটাকে মেনে নিতে পাড়ল না, সে কিভাবে জীবন যুদ্ধে আমার সঙ্গে থাকবে, কিভাবে আমার পাশে থেকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সাহায্য করবে!
তখন আমাদের প্রেমের বয়স মোটে তিন মাস। এই নদীর ধারেই পড়ন্ত বিকেলে পাশাপাশি বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম-
শ্রুতি- “আমি কোনোভাবেই তোমাকে হারাতে চাই না অরূপ।“
-আমিও চাই এভাবেই আমরা যেন সারাজীবন থেকে যাই।
শ্রুতি-“তুমি আমাকে কথা দাও যে, তুমি শুধু আমাকেই চাইবে, রাস্তায় অন্য কোনো মেয়ে তোমাকে প্রপোজ করলে, তাকে ফিরিয়ে দেবে, অন্য কারও সাথে সম্পর্কে জড়াবে না কথা দাও।“
আমিও উন্মাদের মত কথা দিয়ে দিয়েছিলাম। জবাবে সে বলেছিল- সে সারাজীবন আমার পাশে থেকে আমার সাথ দেবে।
পড়ুনঃ- এক তরফা প্রেমের গল্প
কিন্তু বেশি দিন অপেক্ষা করতে হল না, মাত্র কয়েক মাসেই ছোট্ট একটা কারণ দেখিয়েই সে চলে গেল। কিছুদিন আগে যখন কলেজ থেকে ফিরছি, তখন দেখি, শ্রুতি অন্য একটি ছেলের বাইকে বসে ঘুরছ, বাঃ কয়েকদিনেই আবার নতুন আরেকজন। সত্যি তো কোথায় সেই দামি বাইক নিয়ে ঘুরতে থাকা ছেলেটা আর কোথায় আমি এক সাইকেল চালক food delivery boy, তাও আবার সাইকেলটাও ভাঙ্গা। শ্রুতি আমাকে কথা দিয়েছিল সে নাকি সারাজীবন আমার পাশে থাকবে, কিন্তু মাত্র কয়েক মাসেই সেই কথা কর্পূরের মত উবে গেল।
আমি ভেবেছিলাম সে হয়ত ফিরে আসবে। কিন্তু সে যে আর ফিরবার নয়। সে সবসময় থাকবে তার লেভেল এর মানুষের সাথে, আমার মত মধ্যবিত্তের কি সাধ্য আছে তার সঙ্গে থাকার! সে আমার কথা না রাখলেও আমি তার কথা রাখার চেষ্টা করব, সারাজীবন। কারণ আমরা মধ্যবিত্ত বস, কথা দিলে কথা রাখতে জানি, ধনীদের মত সময়ে সময়ে রূপ বদলানো আমাদের মানায় না। মধ্যবিত্ত বলে কথা, সম্মানটা বুকে এসে লাগে।

আজ আবার এই নদীর তীরে এসেছি, কারণ বহরমপুরে আজকেই আমার শেষ দিন, দুই বছরের কোর্স শেষেই এবার বাড়ি ফেরার পালা। তবে বাড়ি আমি ফিরছি না, কারণ ঈশ্বরের আশীর্বাদ, আর বাবা-মায়ের দেখানো পথ, বোনের অফুরন্ত ভালোবাসা সব কিছুকে সঙ্গে করেই, আজ নতুন এক দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়াতে চলেছি। কারণ, আমি সোজা মুম্বাইয়ে যাচ্ছি, সেখানে এক ভালো কোম্পানিতে accountant এর কাজ পেয়েছি।
এই শহর ছেড়ে চলে গেলেও মনে থাকবে, এই শহরের বুকে একজন প্রেমিক তার প্রেমিকাকে হারিয়েছিল। মনে থাকবে এই নদীর পাড়েই একজন প্রেমিকা তার প্রেমিকের গালে থাপ্পড় মেড়েছিল। আর শ্রুতির সাথে কাটানো বিচ্ছিন্ন কিছু মুহূর্ত হয়ত মনে পড়ে যাবে।
এতদিনে শ্রুতি হয়ত আমাকে ভুলেই গেছে। কিন্তু আমি তাকে এখনও ভুলতে পারিনি। কি আর করা যাবে, ভুলে গেছি বললেই কি আর ভুলে থাক যায়!
ঈশ্বরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ যে, তিনি আমাকে মানুষ চিনিয়ে দিয়েছেন। কথা দিলেও সবাই যে কথা রাখতে পাড়ে না, তা তিনি প্রমান করিয়ে দেখিয়েছেন।
আমাদের সঙ্গে টেলিগ্রামে যুক্ত হওয়ার জন্য ক্লিক করো ছাড়পত্র অফিশিয়াল
ব্রেকআপ হওয়ার গল্প। দুঃখের প্রেম কাহিনী। breakup howar golpo

কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।
গল্পটা ছোট হলেও অসাধারণ মর্মস্পর্শী।