২ টি বাংলা সেরা গল্প থাকছে আজ। এই বেস্ট বাংলা গল্প গুলির প্রথমটিতে খুঁজে পাবেন, প্রেমের আভরণ আর দ্বিতীয়টিতে খুঁজে পাবেন ভূতুড়ে পরিবেশ।
বাংলা সেরা গল্পঃ-
ভালোবাসার গল্প- নতুন আলোঃ-
হঠাৎ কড়া নাড়ার শব্দে দুপুরের ভাত ঘুমটা ভেঙে গেল রূপার। এ বাড়ির একা বাসিন্দা ও। কাজ কর্ম নেই তেমন তাই দুপুরটা ঘুমিয়ে কাটায় ও। ওর মেয়ে ছাড়া, আমিই একমাত্র ওর বন্ধু । তবে কেন গল্প টা পড়লেই বুঝতে পারবেন।
এই বসু পরিবারের বাড়িতে চাবি গোছা ওর হাত তুলে দিয়ে বিছানা নিলো ওর বিধবা শ্বাশুড়ি। কাকু কাকিমা মানে রূপার শুশুর শাশুড়ি ওনাদের একমাত্র সন্তান রাজাকে রেখে পরপর চলে গিয়েছিলেন । তখনও রাজা ব্যবসাটা ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেনি । সেই সময় থেকেই পাড়াতুতো বন্ধুত্বটা আরো পাকাপোক্ত হয়েছিলো আমাদের। আমি হয়ে গিয়েছিলাম ওদের ঘরে লোক।
জীবনের সব ঝড় ঝাপটা সামলে ওদের দুজনের সুখী সংসারে আনন্দ জোয়ার এনে দিয়েছিল, ওদের ফুলের মতো মেয়ে রিমি । রূপার কপালে ঠিক সুখ বোধহয় স্থায়ী হলো না। তখনই ওদের দুজনকে একা ফেলে চলে গেল একটা বাস দূর্ঘটনায়। রিমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ছে।
এ বাড়িটা তখনই রূপা বিক্রি করে দেবে ভেবে ছিলো, ব্যবসায় নাকি অনেক ধারদেনা করে ফেলেছিলো রাজা। কিন্তু ওর দূর সম্পর্কের জামাইবাবুর বুদ্ধিতে বাজারের নামী কাপড়ের চালু দোকানটা বিক্রি করে দিলো। কেননা ওরা তখন বুঝিয়ে ছিলো ও দোকান থেকে আমি বেশি লাভবান হবো।
নিকট আত্মীয়রাইও ওকে ঠকিয়েছে। যেখানেই বিশ্বাস করেছে সেখানেই ওকে ঠকতে হয়েছে। তাই সবার সাথে ও সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। পরে ওর ভুল বুঝতে পেরে, আমার বুদ্ধিতে, দোকান বিক্রি করে যে টাকা পেয়েছিলো, তা ব্যাংকে পোষ্ট অফিসে রেখে মাসিক সুদের আয়ে সংসারটা সামলে নেয়।
তবে রিমিকে পড়াশোনা, নাচ-গান, আঁকা সব কিছু শিখিয়েছে। মেয়ের ভবিষ্যত ভালো হবে, খোঁজ খবর নিয়ে সেখানেই ভর্তি করেছে ও। ও আসলে চাইতো ওর মেয়ে যেনো একটা ছেলের সমকক্ষ হতে পারে।ওর মতো যেনো অসহায় না হতে হয় কোন অবস্থায়।
এ সংসারে এখন রূপা একা। একটা কাজের মাসি রেখেছে। সকালে এসে রান্না আর কাজ করে চলে যায়, আবার বিকেলে আসে।ওর মনে একটাই কষ্ট, নিজের কাছের মানুষ বলতে তো রিমি। ওর জন্য ও সারা জীবনটা একা থেকে গেলো। সব কষ্ট করলো। নিজের পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করলো কিন্তু ছেলেটা ঠিক সুবিধার নয়। মায়ের কথা এখন হয়তো মনেই পড়ে না রিমির । ভালো আছে বোধহয় ওরা। শুনেছি নাকি প্রায় দিন ওরা ওভার নাইট পার্টি নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
ওই ছেলেকে বিয়ে করতে অনেক বারণ করেছে রূপা প্রথম থেকেই । ওর কোন কথা শোনেনি রিমি। আসলে একটা অজানা কারণে ও, ওর মাকে ঘৃণা করে। মাকে ফেলে চলে গ্যাছে একা। জানি না কারণটা আমি কিনা!
কিছু পুরোনো দিনের কথা মাঝে মাঝেই দুঃখ করে রূপা আমাকে বলে। রিমি ওকে ছেড়ে একা কোথাও যেতনা, এমনি স্কুল থেকে কতবার ফিরে এসেছে। ভয় পেতো রাজার মতো রূপাকেও যদি না পাওয়া যায়। ঘুমের মধ্যেও রূপাকে জড়িয়ে ধরে থাকতো। সেই মেয়ের এতো পরিবর্তন। একটা ছোট ভুল বোঝাবুঝির। কিছু মানুষের কথা। রূপা ভেবেছিল বাকি জীবনটা মেয়েকে নিয়ে কাটাবে, কোথাও যেতে দেবেনা। সুজয়কে বিয়ে করলে তো এক পাড়াতে থাকতো ওরা।
আজ রূপার মুখ হাসিতে ভরে আছে, চোখে খুশির ঝিলিক। এ সময়টা এ বাড়ির দরজা খোলা থাকে আমার জন্য। রিমি এসেছে জানতাম না। রিয়া আমায় খুব ঘৃণা করে। জানি না কেন? অথচ একটা সময় আমাকে খুব ভালোবাসতো। ওর বাবা আমাকে কিছু টাকা ধার দিয়েছিলো অসময়ে। আসলটা আমি ওর বাবাকে শোধ দিয়ে দিয়েছিলাম। তবু ওদের পরিবারটা যাতে ভেসে না যায় তাই প্রতি মাসে কিছু করে টাকা দিয়ে আসি। রিমিকে দেখে আমি বললাম ” এ মাসের টাকা দিতে এলাম…”
রিমি হঠাৎ করে বললো ” কাকু দাঁড়াও। কত টাকা পেতো বাবা তোমার কাছে? ”
আমি আমতা আমতা করতে থাকলাম। ও বললো “কাকু তুমি ঠিক বলেছিলে রূপম- এর বাবা-মা আমাদের বিয়েটা মেনে নিয়েছিলো কারণ ওরা জানতো বাবা প্রতিটা কানা কড়ি হিসাবে রেখে দিয়েছে। বাবার ব্যবসা গুলোতো ওরাই কিনেছিলেন। তাই ওদের কাছে থেকে আমি সব হিসাব দেখেছি কার কাছে কতো টাকা পেতো বাবা। এতোদিন ধরে আমাদের পাশে থাকার জন্য সত্যি তোমাকে ধন্যবাদ । আমি জানি আজ বাবা কিংবা দাদু কোথায় কতো জমি কিনে রেখেছিলো। যে গুলোর মালিক হতেই ওরা আমাকে ওদের বৌ করতে চেয়েছিল। রূপমের এক ভাবনা ছিলো সেটা বুঝতে পারি নি কখনো। আসলে আমি এসেছি তোমাদের জন্য। তুমি মাকে নিয়ে কয়েক দিন বৃন্দাবন থেকে ঘুরে আসো। আমি এ বাড়ি পাহারা দেবো।”
পড়ুনঃ- অবহেলা থেকে ভালোবাসার গল্প
আমি চোখে পড়লো হঠাৎ একটা বড়ো ট্রলি ব্যাগ নিয়ে এসেছে রিমি। আজকাল সম্পর্ক গুলো খুব তারাতারি ভেঙে যাচ্ছে। ভয় পেয়ে গেলাম। তাই কৌতুহল নিবারণ না করতে পেরে জিজ্ঞেস করে ফেললাম, “অনেক দিনের জন্য এসেছো বোধহয়।”
রিমি বললো ” আমার কথা তোমরা পরে ভাববে আমার জীবনতো শুরুই হলো না। তোমরা ঘুরে এসে না বৃন্দাবন। আমি এদিকটা একটু সামলাই।”
রূপা বলে ওঠলো ” উঃ আমি অতো বুড়ো হয়ে গেছি নাকি পাকা বুড়ি। তুই যাবি আমাদের সাথে। মন্দামনি যাবি নিয়ে আমায় তোরা। আমি তো কোন দিন সমুদ্র দেখি নি… “
আমি বললাম ” সুজয়কে কি তাহলে সাথে নেবো। ও আবার নতুন গাড়ি কিনেছে।”
রিমি হেসে বললো ” রূপম ব্যাঙ্কে গেছে , আমি মন্দামনি গেলে ক্ষতি কি। সুজয়কে নেবার কি দরকার আছে, একা কি জীবনটা ভোগ করা যায় না!”
চলো না একবার নিজেকে ভালোবাসা তুমি এবার…
গল্পের লেখক- মানব মণ্ডল
বেস্ট বাংলা গল্প- ভালোবাসার গল্প
পড়ুনঃ- শিক্ষণীয় গল্প- বাজ হয়ে উঠার লড়াইটা সহজ নয়
ভুতের গল্প- রক্তের রাতঃ-
জলের তোড়ে ভেসে গেছে সব। আসলে হু হু করে যেমন বাতাস বয় তেমন জলও ঢুকছে ক্রমাগত। আমি তেমন বুঝিনি, চক্রবর্তী বাড়ির ওপর থেকে খুব চেঁচামেচি সন্ধ্যে থেকেই শুনছি।
রাত যত বাড়ছে ভয় আরো জাপটে ধরছে। ঠক ঠক করে বারান্দার দরজায় কেউ যেন আওয়াজ করছে, কি করবো বুঝতে পারছি না। অনাথ শিশুদের মতো বড়ো হয়েছি, মা-বাবা তো নেই। এক শহুরে দিদি আমায় বড়ো করেছে ছোটো থেকে, ভাগ্যের পরিহাসে সে দিদিরও অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল, যখন আমি কলেজে পড়ি। নিজের বলতে সেই ছিল, আবার আওয়াজটা এলো কি করবো, কে জানে। দরজাটা খুলে কাউকে দেখতে পেলাম না কিন্তু দরজায় কে ছিলো? বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখলাম জলটা পায়ের পাতা ছাড়িয়ে অনেকটা উঠছে। কি করবো বুকটা কেমন ধড়াস ধড়াস করছে।
ছাদে উঠে দেখলাম একটা কুকুর কার বাড়ির দরজার দিকে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। মনে এমন ভয় কখনো আসেনি, দিদি মারা যাওয়ার পর এই বাড়িতেই চলে আসি, দিদি অনেকদিন ছিল এ বাড়িতে। আমি বই পড়ার সময়, আমার মাথার সামনে বসে থাকতো, আজ খুব মনে পড়ছে। আবার সজোরে একটা আওয়াজ শুনতে পেলাম দরজায়। কাঁসর ঘন্টার শব্দটা কোথা থেকে এলো? কেউ হয়তো বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করছে। এমন পরিস্থিতিতে কোনোদিন পরব ভাবতে পারিনি।
পেন্ডুলামের ঘড়িটা ন বার শব্দ করে জানান দিলো সময়টা, বৃষ্টি একটু বাড়ছে বোধ হলো।
দরজায় আবার জোরে শব্দ হলো, পারলাম না দরজার কাছে যেতে, শরীরে তেমন জোর নেই চোখ বুজে আসছে। চোখটা খুললো অসহ্য যন্ত্রণায়। দুজন অঘোরী আমার দুহাত চেপে ধরে আছে আর ঘাড়ের একটু নীচের দিকে একজন ডাইনিসম মহিলা কাঁটাতার দিয়ে আমার পিঠ চিড়ে তাজা রক্ত পান করতে ব্যস্ত, আর পিপাসুর মত সে আমার রক্ত পান করেই যাচ্ছে।
আমার নিজের যতটুকু বল ছিল জানিনা তা দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছি আপ্রাণভাবে, সেই বীভৎস হাসি অনেকক্ষন ধরে শুনছি, যন্ত্রনায় ফেটে যাচ্ছি। সেই আর্ত চিৎকার কিন্তু রাতের বিদিশায় তা ফিরে আসছে বারংবার। হঠাৎ একটা ঘোর থেকে উঠলাম দেখলাম বিছানায় রক্ত ভেসে যাচ্ছে কিন্তু শরীরে কোনো ব্যাথা নেই, বাইরে বৃষ্টিটা একটু ধরেছে। আমার কি হয়েছিল এটা ভাবতে ভাবতে ভোর হয়ে গেল, কারন কিছু পাখির ডাক কানে গেল অত্যন্ত ক্ষীণ ভাবে।
আলোটা একটু পরিস্কার হতে দেখলাম বাড়ির ভেতরের জল একটু নেমেছে, সামনে ভৈরবীর খাল আছে তো তাই। এমন সময় এক জটাধারী মহিলা বাড়িতে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ঢুকলো, বলল বেটা তুই মরবি, তোর মরার দিন ডাক দিলো বুঝি। আমাকে পাড়ার লোকে ভালোবাসতো বেশ। তাই চক্রবর্তী বাড়ি থেকে সুমিত এসে ওনাকে শান্ত করার চেষ্টা চালালো কিন্তু যখন দেখলাম গতি ভালো নয় তখন নিচে নামতে বাধ্য হলাম। “আপনি কে মা? এই অনাথকে শাপ দিয়ে কি হবে আপনার”? বিনয়ভাবে বললাম।
আর কিছু না বলে সে প্রস্থান করলো। প্রায় রাতে ভয়ংকর স্বপ্ন দেখি। এমনকি কখনো মনে হয় রাতের গহন অন্ধকারে কে যেন ডাকে, আর ঘুম ভেঙে দেখি আমি যেখানে শুয়ে আছি তার চারপাশে রক্ত নরমুণ্ড থরে থরে সাজানো।ব্যাপারটা আমি লক্ষ্য করলাম প্রতি অমাবস্যার রাতে এমন ঘটনাই ঘটে, সে রাতগুলো বিভীষিকার মতো কাটে। আমি ইতিহাসে Ph.D. করছি তাই লাইব্রেরিতে কিছু বই খুঁজতে গিয়ে একটি তন্ত্রের-সাধনার বই পেলাম।
বই এ যা পেলাম তা হল আজ থেকে ৫০০ বছর আগে আমাদের গ্রামে ১০১টি নরবলি হয়েছিল, কারন সে দিন কোনো বিশেষ অমাবস্যা তিথি ছিল যাতে এই নরমেধ কর্মে সাধনার প্রাপ্তি ঘটে, দেবী কঙ্কালেশ্বরী মার পা সেদিন তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল কিন্তু গ্রামের লোকেরা চুপ করে এ অমানবিক কাজ সহ্য করলো না, তারা অনেকজন মিলে কাপালিকগুলোকে চারিদিক থেকে ঘিরে শুকনো কাঠের মতো জ্বালিয়ে দিলো।
যেমন ভাবে তাদের নরমেধে সেই মানুষদের আর্তনাদ শোনা গেছিল তেমনভাবে দগ্ধ কাপালিকদের আর্তনাদ আকাশে বাতাসে ভেসে ভয়ংকর রূপ দান করেছিল। বইটা পুরোটা না পড়েই রেখে দিলাম লাইব্রেরিতে। প্রায় বুঝে উঠতে পারলাম যে প্রতি অমাবস্যায় নরমুন্ডের রহস্যটা, আজও তারা অতৃপ্ত, রক্তের রক্তিম পিপাসা মেটেনি, কলাবিহীন চন্দ্রের তিথিতে তারা তন্ত্রের নামে মৃত্যুমিছিল করে যার সন্ধানে আজও তারা ক্ষুধার্ত ।
লেখক- সৌগত প্রামানিক
বাংলা সেরা গল্প- ভুতের গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- ফেসবুক-ছাড়পত্র টেলিগ্রাম- ছাড়পত্র WhatsApp Group- ছাড়পত্র(২)
“best bangla golpo বেস্ট বাংলা গল্প। বাংলা সেরা গল্প। ভুতের গল্প। ভালোবাসার গল্প”
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।