আজকের বাংলা ভূতের গল্পটিতে আয়নায় দৃশ্যমান এক মায়াবী নারীকে কেন্দ্র করে ঘনীভূত হয়েছে, এবং আবর্তিত হয়েছে।
বাংলা ভূতের গল্পঃ- “নিভা”
কয়েক পা আগাতেই মনে হলো , আয়নাটা যেন সরতে সরতে একেবারে মুখের সামনে এসে গেছে হঠাৎ করে আবার লাইট গুলো দ্বীপ দ্বীপ করতে করতে নিভে গেলো , ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে আয়নার দিকে চাইতেই , মনে হলো বুকের রক্ত নিমেষে শুকিয়ে জল হয়ে গেছে । তারপর আর কিছু মনে নেই না না না আমার আর কিছু মনে নেই , কিছু না। কিন্তু নিভা! ও ও ও সেদিন ওই আয়নার ভেতর কি করছিলো ?
সৈকত হলো বাঁকুড়া জেলার পুয়া বাগানের এক্কেবারে স্থায়ী বাসিন্দা। সেই ছোট বেলার কিন্ডার গার্ডেন থেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া অব্দি এই স্থানেই ওর বেড়ে ওঠা। এখন সে ব্লকের একজন অফিসার। বয়স ও বোধয় চল্লিশ ছুঁই ছুঁই। তার সংসারে মা বাবা ছাড়া রয়েছে তার স্ত্রী আর তার দুই মাসের এক ফুটফুটে মেয়ে। সবকিছু ঠিকঠাক চললেও হঠাৎ করেই সৈকতের জীবনে পরিবর্তন আসে আর সেই পরিবর্তন এর জেরেই ও আজ পাগলা গারদে ঠাই পেয়েছে।
আপনারা হয়তো ভাবছেন হঠাৎ এমন কি হলো , যার জন্য সৈকতকে এক্কেবারে পাগলা গারদে ঠাই নিতে হলো?
সালটা ছিল ২০০৬, বাঁকুড়ার খ্রিস্টান কলেজে কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের সুখ্যাত ছাত্র ছিল সৈকত। আগা গোড়া প্রথম থেকেই ভালো ছাত্রর শিরোপা ওর মাথায় বিরাজমান ছিল। কলেজের সেকেন্ড ইয়ার এ পড়ার সময় , দূরে টিউশন হওয়ার জেরে বাড়ি ফিরতে রাত ন’টা – দশ’ টা বেজে যেত ওর । তবে প্রতিদিন বাস স্ট্যান্ড এ এসে অবাক হতো ,ওই অন্ধকারে একটি মেয়ে , হাতে কয়েকটা বই নিয়ে অপেক্ষা করতো কারুর জন্য। সৈকত মেয়েটিকে দেখে অনুমান করেছিলো তারা সমবয়সী এই হবে।
এভাবে প্রায় দিন পনেরো দেখার পর একদিন সৈকত আগে থেকেই মেয়েটির সাথে পরিচয় করতে চায়। প্রথম কয়েকদিন মেয়েটি সৈকতকে পাত্তা না দিলে , সৈকতের আগ্রহ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এরপর ধীরে ধীরে তাদের পরিচয় বন্ধুত্বের রূপ নেয়। সৈকত জানতে পারে মেয়েটির নাম নিভা। আর প্রতিদিন তার বাবা তাকে নিতে আসে তাই সে অপেক্ষা করে।
সৈকত ধীরে ধীরে নিভাকে নিয়ে বেশ কৌতূহলী হয়ে ওঠে। বারেবারে সে নিভার কাছে তার বাড়ি কোথায়, কি নিয়ে পড়াশোনা করে ,এসব নানান প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতেই থাকে । তবে কোনোদিনও কোনো সদুত্তর মেলে না । তাই একবার করে সৈকতের তার প্রতি বিরক্তি বোধ জন্মালেও , কথা বলতে ইচ্ছে না করলেও , যেই মুখোমুখি হতো সেই যেন কিসের এক আকর্ষণে সে নীভার আরো কাছে পৌঁছাতে চেষ্টা করতো । সৈকত নিভার চোখের দিকে তাকালে যেন হিপনোটাইস হয়ে যেত।
সৈকত একদিন হঠাৎ করে নিভার হাত ধরার চেষ্টা করলে , মনে হয় যেন হাওয়ার মধ্যে তার হাত হাতড়ে বেড়াচ্ছে কিছু । ভয় পেয়ে আতকে উঠলে বুঝতে পারে , সে যা দেখছিল তা পুরোটাই স্বপ্ন। এরপর নিভা বাস স্ট্যান্ড এলে সৈকত নিভাকে তার মনের কথা বলে , তাকে ধরার চেষ্টা করে। কিন্তু নিভা সম্পর্কটা স্বীকার করলেও ,সৈকত কে ধরা দেয়না।
পড়ুনঃ- গোয়েন্দা গল্প- তান্ত্রিকের প্যাঁচ
এভাবে দেখতে দেখতে দুই বছর পেরিয়ে যায়। এর মধ্যে ওদের হাত ধরে সাথে হাঁটা থেকে শুরু করে একে অপরকে কথা দেওয়া , অনেক কিছুই ঘটে যায়। সেদিন ছিল সৈকতের লাস্ট টিউশন এরপর ওর গ্র্যাজুয়েশন এর ফাইন্যাল এক্সাম। সেদিন বাস স্ট্যান্ড এ এসে জানতে পারলো নিভা অনেকক্ষণ থেকেই ওর জন্য অপেক্ষা করছে।
নিভা চোখের জল ফেলতে ফেলতে , সৈকত কে জিজ্ঞাসা করলো ” তুমি আমায় ভুলে যাবে না তো ?”
সৈকত হেসে উত্তর দিলো ” ধুর পাগলী সেটা কি কখনো সম্ভব? একটু অপেক্ষা করবে শুধু , এক্সাম এর শেষ দিন আমি আবার এই বাস স্ট্যান্ড এ আসবো , সেদিন আমাদের সম্পর্কের পূর্ণতা দেবো। তোমার বাবার সাথে সেদিন এই আমি কথা বলবো “
এরপর এক্সাম এর শেষ দিন সৈকত বাস স্ট্যান্ড গিয়ে গভীর রাত্রি অব্দি অপেক্ষা করেছিল , তাও সে নিভার দেখা পায়নি ।
বিগত সতেরো বছর ধরে সৈকত মাসে অন্তত পাঁচ থেকে ছয় দিন ওই বাস স্ট্যান্ড এই রাত কাটিয়েছে তাও তার নিভাকে আর ফিরে পায়নি। শেষমেশ বয়স এর ভাটা না পড়ার অজুহাতে বাড়ির লোকের চাপে ওকে বিয়ে করতেই হয়েছে। আর তার একটা ফুটফুটে মেয়েও হয়েছে। সৈকত তার নাম রেখেছে নিভা । আর সেই মেয়ে জন্মানোর পর থেকেই সৈকতের জীবনে নানান পরিবর্তন এসেছে।
প্রথম প্রথম মেয়েটার কান্নার আওয়াজ শুনলেই , শেষ যেদিন নিভার্ সাথে দেখা হয়েছিল সেই তার বেদনা মিশ্রিত কান্নার মিল খুঁজে পেতে সৈকত। এরপর থেকে আয়না সামনে দাড়ালেই নিভার চেহারাটা বারেবারে ভেসে আসত ওই আয়নার কাঁচে। মেয়েটার কাছে গেলেই ওর চোখের মধ্যে নিভার ওই মোহময়ী চোখের চাহনির মিল খুঁজে পেতো। সৈকত কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারছিলো না বিষয় গুলোকে। কেমন যেন পাগল পাগল মনে হতে লাগলো ওর নিজেকে।
পড়ুনঃ- হোস্টেলের শেষ রাতের গল্প
তাই এসব থেকে নিস্তার পেতে , সে তার স্ত্রী সমেত মেয়েকে, তার শশুরবাড়ি পাঠিয়ে দিল। মেয়েটি এই বাড়ি থেকে যাওয়ার পর আবার সৈকত সস্তি বোধ করল। ধীরে ধীরে সবকিছু আবার স্বাভাবিক হতে লাগলো । তবে সৈকত কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলো না নিভার নিরুদ্দেশ হওয়া আর তার মেয়ের মধ্যে নিভার এত মিল হওয়ার পেছনে আসল কারণ টা কি ? নিভা কোনোদিনও তার পরিবার , বাড়ি কোথায় সেসব কিছুই জানায়নি সৈকত কে তাই সৈকত চাইলেও অপেক্ষা করে গেছে কিন্তু খুঁজে বের করতে পারেনি।
এরপর সৈকত জীবনে শান্তি ফিরে পেতে তার স্ত্রী কে কল করে জানালো , যদি বাড়ি ফিরতে চাও তবে ওই মেয়েকে কোনো আশ্রমে দিয়ে এসো , নইলে আর এখানে ফেরার প্রয়োজন নেই। আমি সময় সময় টাকা পাঠিয়ে দেবো। তার স্ত্রী তাকে বারেবারে বোঝানোর চেষ্টা করলেও সে কিছুতেই মানলো না। মুখের ওপর কল টা কেটে ফোন অফ করে দিলো।
রাত তখন প্রায় ২ টা , হঠাৎ সৈকতের ফোন বেজে উঠলো। ঘুম ভাঙ্গা অলস চোখে দেখতে পেলো তার স্ত্রী কল করেছে। ফোন তুলতেই ভেসে এলো তার স্ত্রীর চিৎকার ” বাঁচাও আমায় , তুমি বাঁচাও ” আমার শেষ করে দিলো।
সৈকত কিছু বলার আগেই ফোনটা কেটে গেলো। কিছু বুঝে ওঠার আগে একবারও ওর মাথায় এলো না , অফ করা ফোন টা অন হলো কিভাবে? দৌড়ে সৈকত গাড়ির চাবি টা নিয়ে বেরোতে গেলে, দেখলে পেলো আয়নার ভেতরে নিভা দাড়িয়ে। সে চিৎকার করে বলছে ” তুমি কথা দিয়ে কেন কথা রাখনি ?” এরপর সৈকত ওই বিভৎস চেহারা দেখে অজ্ঞান হয়ে যায়। পরের দিন কান্নার আওয়াজে তার জ্ঞান ফেরে। আবছা দৃষ্টিতে দেখতে পায় সামনে তার স্ত্রীর মৃত দেহ। আর একপাশে তার মেয়ে একটা দোলনায় শুয়ে বিভৎস ভাবে খিল খিল করে হেসে যাচ্ছে।
কল্পনা বাস্তবের মধ্যে গুলিয়ে ফেলে সৈকত। সব কিছু তার কাছে আবছা। তাই শেষমেশ বাড়ির লোক তাকে পাগলা গারদে দিয়ে আসতে বাধ্য হয়। কিন্তু নিভার সেই কথা বারেবারে তার কানে বেজে উঠলেই সে হিংস্র জন্তুর মত আচরণ শুরু করে ” তুমি কথা দিয়ে কেন কথা রাখনি?”
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- অদ্ভুত ও অমীমাংসিত কিছু ঘটনা অসাধারণ সব রহস্যে ঘেরা গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন অসাধারণ সব শিক্ষণীয় গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- ফেসবুক Group - গল্প Junction ফেসবুক- ছাড়পত্র টেলিগ্রাম- charpatraOfficial WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
বাংলা ভূতের গল্প। নতুন ভূতের গল্প। 1 new bengali horror story
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।