প্রেমের কোন বয়স নাই অজান্তেই আসা আবার অজান্তেই চলে যাওয়া , এটাই আগন্তুকদের জীবনের মূল বৈশিষ্ট্য। ‘আগন্তুক’ নামটা বেশ সুন্দর তাই না! কিন্তু চরিত্রটা ? সেটা তো সবার অগোচরে ঢাকাই পরে থেকে যায়। উন্মোচন করার চেষ্টা বৃথা হয়ে যায় সেখানে , যেখানে মানুষ নিজেই থাকতে চায় গোপনে।

প্রেমের কোন বয়স নাই:- ‘আগন্তুক’

আজ সকাল থেকে আবহাওয়াটা কেমন যেন ম্যাজ ম্যাজে। বসন্তকাল তার ওপর আবার রুক্ষ ঝড় বইছে। বারেক বার ধুলো উড়িয়ে যেন বাতাস রাস্তার সাথে এক নতুন খেলায় মেতে উঠেছে। গ্রামের শুরু থেকে শেষ অব্দি প্রতিটা পলাশ গাছ তার ফুল দিয়ে বরণ করে নিচ্ছে আগন্তুকদের। সেই আগন্তুকদের ভিড়েই রত্না কাকিমার বাড়িতে এসে উঠেছে ওনার ভাইপো পরিমল। উচ্চশিক্ষিত, রাগী, মেজাজি, চরিত্র সম্পন্ন পরিমলের মধ্যে অহংকারের লেস মাত্র নেই।

রত্না কাকিমার পাশের বাড়িতেই থাকে মৌপিয়া চক্রবর্তী। বেশ জনপ্রিয় মহিলা তিনি। এককালে রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত ছিলেন , সাথে ছিলেন একজন সম্মানীয় প্রধান শিক্ষিকা। তার মাথার চুলে পাক ধরলেও বা হাঁটুর ব্যথা বাড়তে লাগলেও, তার মনের বয়স কিন্তু স্থির। একা হাতে অনাথ শিশুদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজের সংসার। তাদের নিয়েই তার গর্ব। গ্রামের যেকোনো উৎসবে তিনি প্রধান উপদেষ্টা রূপে সব দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে। এই বয়সেও তিনি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট, যা অনেককেই অবাক করে।

পরিমল প্রথম দিন আসার পর থেকেই লক্ষ্য করেছে পাশের বাড়ির বৃদ্ধা মহিলার সমাজ সেবা মূলক কাজ কর্ম। এতে সেও বেশ অনুপ্রাণিত হয়। তাই একদিন নিজে থেকেই মৌ দিদার সাথে দেখা করতে যায়। পৌঁছে তাকে সরাসরি প্রস্তাব দেয় বিয়ে করবেন আমায়?

প্রেমের কোন বয়স নাই
প্রেমের কোন বয়স নাই

শ্মশানের যাত্রী , বয়স্ক মৌ দিদা , থমকে যায় তার কথা শুনে । একটু ক্ষন ভেবে হেসে উত্তর দেয় …” ভাই তুমি আমায় চেনো না বোধহয় , আমার সাথে কেউ কিন্তু মস্করা করার সাহস পায় না ” । চুল গুলোতে একটু পাক ধরলেও , আমি কিন্তু সেই পুরনো মৌ এই আছি।

পরিমল ভারী গলায় বলে উঠলো ” আমি মোটেও মস্করা করিনি , আমি আপনাকে সত্যিই বিয়ে করতে চাই । জোর করবো না , তবে আপনার উত্তরের অপেক্ষায় নিশ্চই থাকবো । কোনো তাড়াহুড়ো নেই বসন্ত উৎসব পর্যন্ত আমি থাকবো , তার আগেই উত্তরটা আমার চাই । এখন আসি… সাবধানে থাকবেন ম্যাডাম ।

মৌ দিদা সম্পূর্ণ ভাবে অবাক হয়ে, ওই কম বয়স্ক যুবকের চলে যাওয়ার পথে হা করে চেয়ে রইলেন।

বেশ অস্থিরতা গ্রাস করেছে মৌ দিদাকে , ঠিক করে খাওয়া দাওয়া করতে পারছেন না । কাউকে কিছু মন খুলে বলতেও পারছেন না। আবার বাড়ির বাইরে বেরোলেই ছেলেটি জানালা থেকে চেয়ে রয়। তাই বাইরে বেরোনো অসহ্যকর ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। নানান প্রশ্ন ঘিরে ধরেছে তাকে …-

” এই কম বয়স্ক , সুদর্শন চেহারার , উচ্চশিক্ষিত , ছেলেটি পৃথিবীর এত সুন্দরী মেয়েদের উপেক্ষা করে , কেন আমার মত বুড়ির পেছনে পড়েছে ?
” ছেলেটির কোনো খারাপ উদেশ্য নেই তো ?”
“ছেলেটি কোনোভাবে মস্করা করছেনা তো ?”

অন্যরকম লাভ স্টোরি
অন্যরকম লাভ স্টোরি

আরো নানান দুশ্চিন্তা গ্রাস করেছে তাকে । এই বয়সে এত চিন্তা স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকারক জেনেও , দিদার চিন্তার অবসান নেই । তাই প্রেসারের ওষুধ খেতে ভুলে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে বাড়িতে পড়ে গিয়েছিলেন । পরিমল জানালা থেকে তাকে দেখতে না পেয়ে দৌড়ে বেরিয়ে এসে তার প্রাণ রক্ষা করে । এরপর কয়েকদিন মৌ দিদা বিছানাগত থাকলে পরিমল খুব যত্ন করে তাকে সুস্থ করে তোলে।

নাতির বয়স্ক ছেলেকে প্রেমিকের চোখে যে কোনোভাবেই দেখা যায় না , তা মৌ দিদা পরিমলকে বারবার বুঝিয়েছে। কিন্তু পরিমল নাছোড় বান্দা , ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছে। এতেই মৌ দিদা শিক্ষা পেয়েছে ” বাবারো বাবা হয় “।

পরিমল নানা ভাবে মৌ দিদার জীবন খুশিতে আনন্দতে ভরিয়ে তোলে। মৌ দিদাকে নিয়ে নানান জায়গা ঘুরতে যাওয়া , খাবার খাওয়া , তার পছন্দের জিনিস কিনে উপহার দেওয়া । সব বিষয় গুলো যেন তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় তার অতীতের দিনে , হুমম তার কলেজের দিনে ।

বেশ কয়েকদিন এভাবেই একসাথে কাটানোর পর। বসন্ত উৎসবের আগের দিন বিকেলে , পরিমল একটা বাসন্তি রাঙা শাড়ি মৌ দিদার হাতে তুলে দিয়ে বলে … ” এটা পরে কাল সকালে ওই রাধাগোবিন্দ মন্দিরের সামনে এসো, ওখানেই আমার প্রস্তাবের উত্তরটা দিও ।”

একটু ইতস্তত বোধ করলেও , মৌ দিদা কাপড় টা হাতে তুলে নেয়। আর পরের দিন সকালে সুন্দর করে পলাশ ফুলে খোঁপা এঁটে , বাসন্তী রাঙা শাড়িটা পরে , পরিমলের দেওয়া নূপুর টা পরে মন্দিরের দিকে রওনা দেয়।

মুগ্ধ দৃষ্টিতে পরিমল তাকিয়ে থাকে মৌ দিদার দিকে। ধীরে ধীরে পা বাড়িয়ে , মৌ দিদার সামনে গিয়ে চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞাসা করে-
” মৌ আমায় বিয়ে করবে ?”

পড়ুনঃ- হার্ট টাচিং লাভ স্টোরি  

ওই মায়াবী চোখে মৌ দিদা যেন হারিয়ে যেতে থাকে , চোখ থেকে তার বেরিয়ে আসে , বিন্দু বিন্দু জলকণা । ভগ্ন স্বরে বলে ওঠে ” ওর নাম ও পরিমল ছিল জানো, আমি ওকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসতাম, তাই ও ছেড়ে চলে যাওয়ার পর, আর কোনোদিনও কাউকে নিজের জীবনে জায়গাই দিতে পারিনি । একা করে নিয়েছিলাম নিজেকে । যার জন্য পরিবারকে ছেড়েছিলাম , সেই আমায় ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তাই আর পরিবারের কাছেও ফিরতে পারিনি । আমি বড্ডো একা পরিমল , বড্ডো একা…

পরিমল মৌ দিদার চোখের জল মুছে দিয়ে বলে ..” তুমি জানো আমি কে?”

তুমি….. আমার…… পরিমল। যে আমার শেষ জীবনটাকে নতুন করে রঙিন করে তুলেছে …. যে আমার জীবনে আবার বসন্ত ফিরিয়ে এনেছে। যে আমায় আবার ভালোবাসতে শিখিয়েছে ।”

পরিমল শান্ত গলায় উত্তর দেয় …. মৌ , তোমার যে পরিমলকে, তুমি দীর্ঘ ৫৫ বছর আগে হারিয়েছিলে , আমি তার নিজের নাতি। আমি ছোট থেকে দেখেছি দাদু সাথে দিদার কোনোদিনও মনের মিল ছিল না। প্রায় সময় ঝগড়া হতো তাদের , কারণ জানতে চাইলে দাদু চুপ করে যেতো।

কিন্তু ছয় মাস আগে , হটাৎ করে দাদুর হার্ট অ্যাটাক হয় । হাসপাতালে শুয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার আগে, দাদু তার সব মনের কথা আমায় উজাড় করে বলে । তখন আমি দাদুর কাছেই তোমার কথা জানতে পারি। দাদু তোমায় বারেবারে বাসন্তী নামে ডাকছিল । আর বলছিল ” দাদু তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে কিন্ত দাদু তার ভালোবাসার দাম দিতে পারেনি ।”

আমি দাদুকে কথা দিয়েছিলাম , আমি তার দেওয়া প্রতিটা কথা রাখবো। দাদু তোমায় যা যা কথা দিয়েছিল , সেগুলো সব আমি পূরণ করবো। কিন্তু মৌ , কথা রাখার থেকেও … কবে , কখন , কিভাবে , তুমি আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলে আমি জানি না । সত্যি ! দাদু কেন তোমায় এতটা ভালোবাসতো , তা বোধয় তোমায় না জানলে , বুঝলে , নিজে বুঝতে পারতাম না । ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়।

জানি , তুমি বলবে বয়সের তারতম্য জন্য আমাদের সম্পর্ক সম্ভব নয় । কিন্তু তোমার চেয়ে বেশি, আমার কাছে কিছুই গুরুত্বপূর্ণ নয়। একবার সুযোগ দাও…

মৌ দিদা জড়িয়ে ধরে পরিমলকে ।

এক মুঠো লাল রঙে পরিমল রাঙিয়ে দেয় মৌ দিদার ভাগ্য । বয়সের তারতম্য ভুলে পূর্ণতা পায় চাহিদাহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন-কারী ভালোবাসা। আগন্তুক হয়ে উঠে জীবন সঙ্গী।

একটি ভালোবাসার গল্প
bengali love story
<

সমাজের বাধা অতিক্রম করে ওরা বেশ আনন্দে জীবন শুরু করে । তবে কয়েকমাস পর পরিমলের জীবনে নেমে আসে অমাবস্যার অন্ধকার । পরিমলের অজান্তেই, এক রাত্রে মৌ দিদা সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে গমন করে । পরিমলের জন্য রেখে যায়, তাদের একসাথে কাটানো সুন্দর মুহূর্তের স্মৃতি গুলোকে।

পরিমল মানসিক ভাবে না হলেও শারীরিক ভাবে বেঁচে থাকে, তার জীবনে আসা আগন্তুকের স্মৃতি গুলো আঁকড়ে ধরে। ওখানেই থমকে যায় ওর চির বসন্ত ।

বয়স তো সংখ্যা মাত্র । ১৮ বছরেও অনেকের মনের বয়স ৮০ তে পরিণত হয় । আবার অনেকের ৮০ বছরেও মনের বয়স ১৮ তেই রয়ে যায়। তাই নিস্বার্থ ভালোবাসার হয়তো কোনো বয়স থাকে না। তা হয় পবিত্র , নিষ্পাপ মনোভাবের মেল বন্ধন মাত্র । যার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মৌ-পরিমল

আলোরানি মিশ্র

নির্মল ভাবনায়-
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
পড়ুনঃ- 
আসল শিক্ষা 

সেরা বন্ধুত্বের গল্প-  
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

প্রেমের কোন বয়স নাই। একটি অন্যরকম লাভ স্টোরি। 1 new bengali love story

Spread the love

Leave a Reply