জীবনে অনেকেই অনেক প্রেম করে। কিন্তু আমার এই ভালোবাসার গল্পটি একটু আলাদা। জীবনে একটাই প্রেম করেছি, স্থায়ী প্রেম। আজ আমি আমার প্রথম প্রেমের গল্প টি তোমাদের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে চলেছি। তার আগে ছোট্ট করে আমার পরিচয়টা জানিয়ে দিই, আমি বর্ণালী। পড়াশোনার সূত্রে কলকাতায় থাকি।

প্রথম প্রেমের গল্প। প্রথম ভালোবাসার গল্প।

জানিনা কার মুখ দেখে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিলাম। রাস্তায় একটিও বাসের দেখা নেই। এদিকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার দুই-ঘণ্টা হতে চলল, একটা বাস তো দূরের কথা বাসের লেজেরও কোনো খোঁজ নেই। আমি আর বাবা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। যাব, বাবার এক বন্ধুর বাড়ি। আমার বাবা ভারতীয় রেলে কর্মরত, আর বাবার বন্ধু ইন্ডিয়ান আর্মিতে। অবশেষে কালো ধুঁয়া উড়াতে উড়াতে একটা বাস এল।

দেখে মনে হচ্ছে, সবাই সবার ঘাড়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের দেখতেই বাসটা দাঁড়িয়ে গেল। আর খালাসী কাকার সেই বহুমূল্য কথা। “উঠে পড়ুন উঠে পড়ুন, ভিতরে একদম ফাঁকা আছে। মানুষগুলো একটু পড়ে নামবে তাই এখানে দাঁড়িয়ে আছে।” কোনো উপায় না পেয়ে অনিচ্ছা সত্যেও উঠতে হল আমাদের। ভাগ্যিস কিছুদূর পড় একটু ফাঁকা হয়ে গেল।

প্রথম প্রেমের গল্প
প্রথম প্রেমের গল্প sundor premer golpo

দুটি সীট পেয়ে বাবা-আর আমি বসে পড়লাম। কিছুদূর পড় এক বাস স্ট্যান্ডে আবার মানুষ উঠা-নামার হিড়িক শুরু হয়ে গেল। আমার নজর এক ছেলের উপর গিয়ে পড়ল। দুই হাঁতে দুই ইয়া বড় ব্যাগ, পিঠটাও ফাঁকা নেই, স্কুল ব্যাগ রয়েছে। একদম একেবাড়েই পিকে সিনেমার আমির খানের সেই দুই হাঁতে দুই ব্যাগ আর ঝোলানো ব্যাগটার কথা মনে পড়ে গেল। ছেলেটা মনে হল আমার বয়সীই।

ছেলেটা আমাদের কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল, এত গুলি ব্যাগ সামলাতে সে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে, এটা দেখে বাবা আমাকে একটু হেল্প করতে বললেন। আমিও কিছু না ভেবে তাকে বলে-কয়ে তার স্কুলের ব্যাগটা নিয়ে নিই। বাপরে কি ভাঁড়ি। বুঝলাম এতে বই আছে। আমার মনে হচ্ছে এই ছেলেটা হয়ত হোস্টেলে যাবে অথবা হোস্টেলে থাকে।

এত ভিড়ে ভাগ্যিস আমরা সীট পেয়েছিলাম, নাহলে তো আমি ভীরের চোটে কান্নাই করে ফেলতাম। অবাক হচ্ছি ছেলেটাকে দেখে। মনে হচ্ছে কোনো অসুবিধাই যেন নেই ওর। একদম দিব্যিসে দাঁড়িয়ে আছে তো আছেই, আমি এতবার তার মুখের দিকে দেখলাম, অথচ সে একবারও আমার মুখের দিকে দেখল না।

সে যাই হোক কিছুক্ষণ পড় আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। ছেলেটা আমার কাছ থেকে ব্যাগটা নিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে গেটের সামনে চলে গেল। তার পিছু পিছু আমরা। হয়ত পড়ের স্টপেজে নামবে। কিন্তু এমা একি, আমরা যেখানে নামছি সেও সেখানে নামল কেন?

আরও অবাক হলাম তখনই যখন দেখলাম, আমরা ও সেই ছেলেটা একই বাড়িতে গিয়ে ঢুকছি। আমি বাবাকে বললাম, আমরা মনে হয় ভুল বাড়িতে যাচ্ছি। কিন্তু বাবা বললেন না এই বাড়িটিই সঠিক। ভিতরে যেতেই বাবার বন্ধু আনন্দে বলে ফেললেন- “আরে বাঃ, তিন অতিথি এক সাথেই চলে এল যে।“ আমার মাথায় কিছুই ঢুকছিল না। বাসের এই ছেলেটা কি এই বাড়িতেই থাকে নাকি!

পড়ে বাবা সেই ছেলেটার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে বাবার বন্ধু বললেন- সেই ছেলেটা তার ভাগ্নে। পড়ে আমার ক্লাসেই, পড়াশোনা নিয়ে খুব সিরিয়াস। তাই ব্যাগ বোঝাই করে বই নিয়ে এসেছে। এখন স্কুল ছুটি, তাই মামাবাড়িতে এসেছে।

পড়ুনঃ- স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প

নতুন বাংলা লাভ স্টোরি

বাবার বন্ধু ছেলেটাকে ডেকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তবে আমাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল, মূলত একই ক্লাসে পড়ার জন্য। রাতটা বাবার বন্ধুর বাড়িতে কাটিয়ে পড়ের দিন বাড়ি ফেরার জোগাড় শুরু হয়ে গেল। এই রাতেই বিভিন্ন গল্পের মাধ্যমে ছেলেটার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেল আমার।

এরপরেই আমাদের কথা বলা শুরু। ছেলেটার সাথে কথা বলতেই আমার আর বুঝতে দেড়ি ছিলনা, যে সে অনেক হেল্পফুল। তবে তার মধ্যে একটা বিশেষ দিক, আমি দেখছি। সে কখনো যেচে গিয়ে সাহায্য করবে না। কিন্তু একবার কোন কিছু বুঝিয়ে চাইলে সে এমনভাবে জিনিসটাকে বুঝিয়ে দেবে যে, মাথায় গেঁথে যাবে।

প্রথম দিকে আমাদের যা কথা হত, সব পড়াশোনাকে ঘিরেই। তবে কথা হত কিন্তু মোবাইলেই। কারণ আমাদের মধ্যে দূরত্বটাও কম নয় বৈকি! সে যতই আমাকে সাহায্য করে ততই, যেন তার প্রতি আমার আগ্রহটা আরও বেশি বেশি বেড়ে যায়। এভাবেই আমি ঠিক করে নিই, আর যা হোক একে আমি ছাড়ছি না।

দেখতে দেখতে কেটে গেল দুইটা বছর। একদিন ম্যাসেজে আমার তাকে ভালো লাগার কথা বলেই ফেলি, তারপর অনেক চিন্তায় কেটেছে কয়েকদিন। কারণ তার তরফ থেকে কোনো উত্তর পাই নি। নিজের এই ভুল কাজ টার প্রতি খুব রাগ হচ্ছিল। এমনই বন্ধু ছিলাম, সেটিই ঠিক ছিল। বেকার বেকার এত বাড়াবাড়ি করতে গেলাম।

কিন্তু, সে যেন আমার ছাড়া আর কারও না হয়, সেটার জন্যই আমি এটা করে ফেলেছিলাম। তার পরিণামে সে আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিবে সেটা ভাবতে পাড়িনি। সে অনেক সিরিয়াস, তার সাথে এমনভাবে হঠাৎ করে এত কিছু বলে ফেলাটা আমার ঠিক হয়নি।

এই ঘটনার পড় তিনদিন কেটে গেছে, সে আমার কোনো ম্যাসেজ বা ফোনের রিপ্লাই করে নি। সেদিন স্কুল থেকে ফিরেই, তার ম্যাসেজ দেখি। Yes Yes Yes, হ্যাঁ আমি পেরেছি। সে আমার কথা রেখেছে।

এরপরেই আমাদের পড়াশোনা কেন্দ্রিক আলোচনা, আরেকটু অন্য আলোচনার দিকেও যেতে শুরু করে, একে অপরের পছন্দ, ভালোলাগা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, প্রিয় জিনিস, এই সব কিছুই আলোচনার কেন্দ্র হয়ে উঠে। আগের মাত্র কয়েক মিনিট পর্যন্ত কথা বলার টাইম লিমিটটা অনেকটা বেড়ে যায়।

তবে ঘণ্টার পড় ঘণ্টা কথা বলা সে পছন্দ করে না। না, আমিও না। এভাবেই যতই আমাদের দিন গড়ায় আমাদের ভালোলাগা, খারাপ লাগা একই সাথে মিলিয়ে যেতে থাকে।

আমাদের প্রেমের তরী যখন সবে মাত্র দূরগামী যাত্রার জন্য প্রস্তুত, সেই সময়ই, চলে আসে আরেকটি ঝড়। বাবার বদলি হয়ে যায়, তাও আবার এখান থেকে প্রায় ৫০০ কিমি দূরে কলকাতায়। অনেক ছোট ছোট আশা নিয়ে গড়ে উঠতে থাকা মনটা, মুহূর্তে ভেঙ্গে লীন হয়ে যায়।

মিষ্টি প্রেমের গল্প sad girl প্রথম প্রেমের গল্পমিষ্টি প্রেমের গল্প,premer golpo,sundor premer golpo,ভালোবাসার গল্প
মিষ্টি প্রেমের গল্প sad girl প্রথম প্রেমের গল্প image

আমাদের শেষ দেখায়, আমি তার হাত ধরে খুব কেঁদেছিলাম। এত ইমোশনাল, আমি হয়ত আর কখনো হইনি। আমাকে প্রিয়জন থেকে দূরে সরে থাকার ভয় জাঁকিয়ে বসে। যদিও আমাদের এমনিতেও খুব কম দেখা হত, কারণ তার আর আমার বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৫০ কিমি। কিন্তু এবার সেই দূরত্ব গড়িয়ে ৫০০ কিমিতে পৌঁছাবে।

প্রিয়জন থেকে দূরে সরে থাকার দুঃখ সহজে মানিয়ে নিতে পাড়িনি। ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে গেছে। ফোনে কথা বলার সময় অনেকবার কেঁদে ফেলেছি। সে আমাকে অনেক শান্তনা দিয়েছে। আর এভাবেই দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে যায় আমার কলকাতায়।

তবে আমি কলকাতায় যাবার আগে, আমার স্কুলের বন্ধুদের সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে যাই।

তো পাঠক, তোমার কি মনে হয়, দূরত্বের হস্তক্ষেপে আমাদের সম্পর্কে ভাঁটা পড়বে? উঁহু, না একেবারেই না।

এক বছর পড় আমাদের দেখা হয়। দুর্গা পুজোর সময়।

শুনেছিলাম, ছেলেদের নাকি ধৈর্য থাকে না, কিন্তু, না আমাদের এই ধারণা সব ছেলেদের ক্ষেত্রে সঠিক নয়। এমনও কিছু ছেলে আছে, যারা শুধুমাত্র একজনের জন্যই অপেক্ষায় থাকতে পাড়ে।

একে অপরকে সাহায্য করাটা আমাদের প্যাশনে পরিণত হয়েছে। দামি রেস্টুরেন্টে নয়, সাধারণ পাঁচ-টাকার ছোলা খেয়েই আমি খুশি। কারণ রেস্টুরেন্টের সেই দামি, খাবারের থেকেও আমি যার হাত ধরে রাস্তায় হাঁঠছি, সেইই অনেক অনেক অনেক দামি। তার মূল্য গণনা করাই বৃথা।

COUPLE HAND প্রথম প্রেমের গল্পমিষ্টি প্রেমের গল্প,premer golpo,sundor premer golpo,ভালোবাসার গল্প
ভালোবাসার গল্প COUPLE HAND image
<

তবে, আশার কথা হল, আর মাত্র কয়েকটা বছর পড়েই পরিবার নিয়ে বাবা পুরানো বাস্তু-ভিটেতে আবার ফিরে যাবে।   

আজ আমাদের সম্পর্কে আসার দীর্ঘ সাতটা বসন্ত পেড়োতে চলল, আমাদের সম্পর্ক আগের মতই অনেক মজবুতই রয়ে গেছে।

প্রথম প্রেমের গল্পমিষ্টি প্রেমের গল্প,premer golpo,sundor premer golpo,ভালোবাসার গল্প 

Spread the love

Leave a Reply