প্রথম দেখায় প্রেম বা ‘Love at first sight’ আশা করি কথাটা সবার এই শোনা আবার অনেকের কাছে এটা successful ও তাই না! আচ্ছা কে চায় না বলুন তো যাকে দেখে ভালো লাগে তাকে নিয়ে স্বপ্নের দুনিয়া বানাতে। তবে অনেকের ক্ষেত্রে জানেন এটা খুব ভয়ানক অর্থাৎ খুব এই ভয়ানক হয় , বুঝতে পারছেন তো আমি কি বলতে চাইছি। বুঝলেন না তো ঠিক আছে চলুন তাহলে বোঝাই এবার আমি।
প্রথম দেখায় প্রেম:-
সাধারণত ছেলেদের থেকে আমার একটু বেশি এই এলার্জি, ইয়ে মানে ছোট থেকেই দাদাদের কাছে থেকে থেকে ছেলে সম্বন্ধে শুধু মাত্র দাদা আর ভাই ছাড়া কোনো অনুভূতি জন্মে না ।
কিন্তু না সবার জীবনে যেমন একদিন কেউ না কেউ দমকা হাওয়ার মতো আবির্ভাব হয় ঠিক তেমন আমার জীবনেও কিছু একটা ঘটলো। সেদিন কলেজ ছুটি হওয়ার পর বাস স্ট্যান্ড এ পাঁচ জন পরম সুন্দরী সহচরীর সহিত অপেক্ষা করছি বাসের জন্য । হঠাৎ করে নজর পড়ল পাশের দোকানের দিকে , একটি সাদা জামা , কালো প্যান্ট, বুট জুতো আর হাতে smart watch সাথে সাদা ফ্রেমের চশমা পরিহিত একটি ছেলের দিকে।
প্রথম বার দেখেই মনে হলো এই বুঝি heart attack’ হওয়ার উপক্রম কিন্তু না না এসব আমি কি ভাবছি এসব ভাবনা আমাকে শোভা পায়না। দাদারা বলেছে কলেজ এ উঠেছি বলে যাতে ডানা আমার না বেরোয় নইলে ডানা বেরোলে নাকি বাবা ডানা কাটা পরী বানিয়ে direct ছাদনাতলায় বসিয়ে দেবে । এসব ভেবে প্রায় ১০ মিনিট আর ওদিকে তাকালাম না ।
কিন্তু কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয় ,আমার সাথেও হলো তাই, পেছন ঘুরে বাস টা এলো কিনা দেখতে যাচ্ছি , তখন দেখি ওই ছেলেটা ঠিক আমার পেছনেই দাড়িয়ে। এবার আর রক্ষা নেই , জীবনের প্রথম বার এরম কিছু হচ্ছে , বুঝতেও পারছি না কিছু। এমন ভাবে হাত পা গুলো অবশ লাগছে কেন আর কেনই বা এত জোরে heart beat বাড়ছে। সত্যিই এসব নিয়ে ধারণা নেই তাই গিয়ে এক বান্ধবী কে জিজ্ঞাসা করলাম ” বুঝলি মনে হচ্ছে আমি আর বেশিক্ষন বাঁচবো না ” , একথা শুনে তো ওর heart attack হওয়ার মতো অবস্থা।
রীতিমত চিৎকার করে সব বান্ধবী গুলোকে ডেকে বললো এই দেখ বর্ষার কি শরীর খারাপ লাগছে বর্ষা কি সব বলছে । সবাই মিলে একসাথে জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে তোর ,হসপিটাল যাবি কি ? আমি বললাম না না কিছু বুঝতে পারছি না কিন্তু ওই ছেলেটাকে দেখলেই heart beat বেড়ে যাচ্ছে, অবস লাগছে কেমন যেনো। একথা শুনে সবার সে কি হাসি তুই কি পাগল নাকি , জীবনে কোনোদিনও কোনো ছেলের পাল্লায় তো পড়িস নি তাই এরম বলছিস ।
আমি কৌতুহলের সাথে জিজ্ঞাসা করলাম কেন কেন ? উত্তরে এক বান্ধবী বললো ও গো তোমার নিষ্পাপ মন প্রেমে পড়েছে। শুনে তো মাথায় আগুন জ্বলে গেলো আমার। আমার সাথে এরম ইয়ার্কি করার সাহস কি করে হয় ওদের , যা মুখে এলো তাই বলে অপমান করে দিলাম । কিন্তু না সত্যি ছেলেটির দিকে দেখলেই এরম হচ্ছে তাই আবার ওদের কাছে গেলাম । এবার ওরা বললো তাহলে গিয়ে জিজুর সাথে কথা বলবো কি, এটা শুনে আরো মাথা চড়ে গেলো ,বললাম ” আগের অপমানে কি তোদের পেট ভরেনি”!
এটা শুনে সবাই চুপ করলো । তবে সত্যি প্রত্যেক বন্ধুর মধ্যে এটা কমন যেই কোনো ছেলে বা মেয়ে কে কোনো বন্ধুর সাথে দেখলো সেই তাকে বৌদি বা জিজু বানিয়ে দিতে ওদের ১ মিনিট ও লাগে না। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরেও আমাদের লাইন এর বাস আসছে না দেখে পাশের দোকানের কাকুকে জিজ্ঞাসা করতে গেলাম , কাকুর বদলে সেই ছেলেটি উত্তর দিলো আসলে মেন ব্রিজ এ একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে তাই কোনো গাড়ি এই আসতে পারছে না । আগের থেকে কথা বলছে আমার সাথে এটা ভেবে bp হাই হওয়ার উপক্রম ।
পড়ুনঃ- জীবন নিয়ে দুটি শিক্ষণীয় গল্প
গলার আওয়াজ শুনে হা করে তাকিয়ে শুনছি তখন হঠাৎ করেই সেই ছেলেটি জিজ্ঞাসা করলো তুমি কি সামনের এই কলেজ টাতে পড় নাকি? উত্তরে হ্যাঁ মানে না মানে হ্যাঁ মানে হ্যাঁ হ্যাঁ ওখানেই। ছেলেটি জিজ্ঞাসা করলো তোমার কি শরীর খারাপ ? একটু আগেও যখন ওখানে ছিলাম শুনতে পেলাম । আমি বেশ লজ্জায় পড়ে গেছি ভাবলাম হয়তো সব কিছু শুনতে পেয়ে গেছে । কিন্তু না সে নিজেই বললো আমি তোমাদের গল্পতে অসুবিধা হবে বলে এদিকে চলে এলাম। আমি মাথা নিচু করে বললাম না না একদম থিগ মানে ঠিক আছি আমি ।
একের পর এক প্রশ্ন করতে শুরু করলো তখন আর মাথায় দাদাদের বলা কথা গুলো আসছিল না , ওর সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলাম। বান্ধবী গুলো দেখে তো কমেন্ট এর শেষ নেই । যাই হোক ওদের ইগনোর করে আমি আজ রাস্তায় কি করে অ্যাকসিডেন্ট টা হয়েছে তার বিবরণ ছেলেটির মুখ থেকে মন দিয়ে শুনছিলাম। প্রথম বার জীবনে এভাবে সামনে থেকে কোনো অচেনা ছেলের সাথে গল্প করছি ভেবেই গা শিউরে উঠছিল। ছেলেটির ভাগ্য ভালো না নিজের সেটাই বুঝতে পারছিলাম না ।
আমার সম্বন্ধে অনেক কিছুই জিজ্ঞাসা করে জানার পর জিজ্ঞাসা করলো আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করবে না ? আমি বললাম না মানে হ্যাঁ মানে হ্যাঁ বলছি আপনার নামটা । সে বললো তুমি দিয়ে বলতে পারো আপনি বলে বয়স্ক করে দিচ্ছ কেন? কোনরকমে হাসিটা চেপে বললাম হ্যাঁ তুমি দিয়েই বলাটা ঠিক ,বলছি তোমার নাম ? কি যেন একটা বললো পুষ্কর বা কিছু ঠিক মত মনে পড়ছে না তবে যাই হোক আর কিছু জিজ্ঞাসা করার মতো সাহস পেলাম না।
ইতিমধ্যে একটি গাড়ি এসে বাস স্ট্যান্ড এর সামনে থামলো। একটি ছোট বাচ্চা প্রায় ২ বছর হবে, বাবা বাবা করতে করতে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে এলো ছেলেটির দিকে । ছেলেটি ওই বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিলো । এরপর গাড়ি থেকে এক লাল শাড়ি পরিহিত সুন্দরী মেয়ে নেমে বললো ” আর বলো না গো কি ঝামেলা তোমাকে তো ফোন এ সব কিছুই বললাম , অ্যাকসিডেন্ট এর জন্য পুরো জ্যাম ছিল , তারপর সব ক্লিয়ার হবার পর তাড়াতাড়ি ড্রাইভ করে এলাম , অনেকক্ষণ wait করতে হলো বলো!
পড়ুনঃ- ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে গল্প
ছেলেটি হেসে হেসে জবাব দিলো না গো আমার কোনো অসুবিধা হয়নি এই যে এই মেয়েটির সাথে পরিচয় হলো , বেশ ভালো পড়াশোনায় , ভালো লাগলো গল্প করে ওর সাথে। মেয়েটি নমস্কার করলো , আমি তখন ভেবলাকান্তর মত ফ্যাল ফ্যাল করে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে , সৌজন্য বোধ টুকু দেখাবার মতো অবস্থাতেও ছিলাম না। ছেলেটা যাওয়ার আগে ফোন নম্বর টা চাইলো বললো কন্টাক্ট রাখা যাবে দিতে পারো। উত্তরে বললাম না দাদা কিছু মনে করো না, তবে এতো অল্প সময়ের পরিচয় এ আমি নম্বর দিতে পারবো না , আসলে আমার দাদারা এসব জিনিস মোটেও পছন্দ করে না ।
ছেলেটি আচ্ছা ঠিক আছে বলে হাসি মুখে বউ ছেলেকে নিয়ে বিদায় নিলো । তখনও এসব এর ঘোর কাটেনি আমার , এক বান্ধবী এসে বললো কি রে তোর ” তেরি মেরি কাহানি ” যে ” হামারি অধুরি কাহানি” তে পরিণত হলো। কাউকে কিছু বলার মত মুড এ ছিলাম না তখন আর। তাই বাসের অপেক্ষা করছিলাম। বাস আসতেই উঠে পড়লাম সামনের সিটে বসে কানে হেড ফোন টা নিয়ে অরিজিৎ সিং এর গান শুনতে শুনতে স্থির করলাম এটাই জীবনের প্রথম আর শেষ শিক্ষা । আর পাঁচজনের মত নিজেকে উচ্ছনে নিয়ে যাবো না ।
তাহলে বুঝলেন তো কেন বলেছিলাম ভয়ানক কথাটা। সত্যিই কতটা ভয়ানক বলুন তো। তবে উচিত শিক্ষাটা উচিৎ সময় এ পেয়ে যাওয়াই ভালো নইলে অনেক বড় ভুল করে ফেলছিলাম সেদিন । যাক বাবা দুগ্গা দুগ্গা বলে আপদ বিদায় মন থেকে দিয়ে আবার আগের ফর্ম এ ফিরে এলাম।
গল্পের তুলিতে-
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- শিক্ষামূলক অজানা তথ্য বাংলা রহস্যময়য় গল্প বাস্তব জীবনের শিক্ষণীয় গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবেঃ- WhatsApp গ্রুপ- ছাড়পত্র (২) ফেসবুক গ্রুপ- গল্প junction ফেসবুক- ছাড়পত্র টেলিগ্রাম- ছাড়পত্র
প্রথম দেখায় প্রেম। প্রথম দেখায় ভালোবাসা। love at first sight story in bengali.
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।