আজ আমরা পৃথিবীর ভয়ানক জায়গা নিয়ে আলোচনা করব। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ভূত বা আত্মাতে বিশ্বাস করেন না। কিন্তু কিছু মানুষের মতে তারা নাকি বাস্তবে ভূত দেখেছেন। সে যাই হোক পৃথিবীতে এমন কিছু জায়গা রয়েছে যেগুলিকে দেখে মনে হয় সেখানে নিশ্চয়ই কোনো আত্মা বা ভূত প্রেতের বসবাস রয়েছে। সেই জায়গাগুলি এতটাই ভয়ানক দেখতে যে, দিনের বেলাতেও মানুষ একা যেতে ভয় পায়। আমাদের মধ্যে অনেকেই বলেন এই সব ভূত প্রেত আসলে কিছুই না এইসবই আসলে মনের ভুল, তবে সেই মনের কথা মনেই থাক, দন্দে না যাওয়াই ভাল হবে।
এতক্ষণে হয়ত আপনি বুঝে গেছেন যে, আজ আমরা কথা বলব পৃথিবীর কিছু ভয়ানক জায়গা নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ানক জায়গাগুলি সম্পর্কে আপনার মতামত কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।
পৃথিবীর ভয়ানক জায়গা
GOOD HOPE CASTLE, THE DARK SOUL OF AN ARMY
১৭০০ শতাব্দীর আশেপাশে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ-টাউনে গুড হোপ নামে একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিল তৎকালীন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। এই দুর্গটি নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য ছিল, পাশের সমুদ্রের মধ্য দিয়ে জাহাজ যাওয়ার সময় যাতে এখানে মাল খালাস করতে পাড়ে, অথবা কিছুটা সময় বিশ্রাম নিতে পাড়ে। দক্ষিণ আফ্রিকায় নির্মিত এই দুর্গটিকে ব্রিটিশদের সবথেকে পুরানো দুর্গ বলা হয়ে থাকে।
স্থানীয়দের মতানুসারে এই দুর্গটিতে ১৯১৫ সালের শেষের দিকে ভূত বা সেইজাতীয় কিছুর দেখা মিলেছিল। স্থানীয়দের মতানুসারে একটি খুবই লম্বা লোক এই গুড হোপ দুর্গটির উঁচু দেওয়ালে ঘোরা-ফেরা করছে। কিন্তু তারা এর কাছে যাওয়ার সাহস করেননি। কয়েকজন সাহসী মানুষ সেই রহস্যময় লম্বা মানুষটিকে দেখার জন্য সেখানে গেলে তারা কিছুই দেখতে পায়না। এভাবে প্রায় বেশ কয়েকদিন নাকি সেই রহস্যময় মানুষটিকে দেখা গিয়েছিল। সেই মানুষটি নাকি টারজেনের মত এই দেওয়াল থেকে ওই দেওয়াল, আবার কখনো দুর্গের এই স্তম্ভ থেকে ও স্তম্ভ আবার কখনো নাকি এক লাফে স্তম্ভগুলি থেকে দেওয়ালে ঝাঁপ দিত । এরপর অনেকদিন নাকি আর সেই মানুষটিকে দেখা যায়নি। কিন্তু বর্তমানেও নাকি অনেকেই এই রহস্যময় মানুষটির দেখা পান।

আবার শোনা যায় যে, ১৭২৮ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পিটার গিসবার্ট নামে এক গভর্নরের রহস্যময় মৃত্যু হয়। শোনা যায় যে, যেদিন তার মৃত্যু হয়েছিল, সেদিন তিনি তার অধীনস্থ সাতজন সৈনিককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। আরও শোনা যায় যে, সেই সৈনিকেরা নাকি গভর্নরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের বীজ বুনছিল। কিন্তু রহস্যজনক ভাবে সেইদিনই নাকি গভর্নরের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। তার মুখে রয়েছে আতঙ্কের ছাপ। সুতরাং এমন কিছু তিনি দেখেছিল, যার জন্য তিনি হার্ট-অ্যাটাক হয়ে মারা যান।
আবার অনেকে নাকি এই দুর্গটিতে একজন মহিলাকে দেখেছেন। সেই মহিলা নাকি মুখ ঢাকা নিয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে। আবার অনেকেই নাকি সেই মহিলাটির চিৎকার শুনেছিলেন। এই ঘটনাটির সত্যতা কিছুদিন আগেই উন্মোচিত হয়েছে। সেখানে খনন কাজের ফলে একটি মহিলার কঙ্কাল উদ্ধার হয়, মনে করা হয় যে, এটি সেই মহিলাটিরই কঙ্কাল। কে বা কারা বা কিভাবে এই মহিলাটির মৃত্যু হল, এবং সবথেকে বড় কথা এখানে এই মহিলাটি কিভাবে এল তার কারণ আজও অজানা।
শোনা যায় যে, যখন এই দুর্গটি নির্মাণ করা হয় তখন, সবাইকে alert থাকার জন্য একটি বড় ঘন্টা লাগানো হয়েছিল এবং সেই ঘণ্টার সাথে বাঁধা একটি দড়ি দিয়ে একজন সৈনিক এই ঘণ্টা বাজানোর কাজটি করতেন। কিন্তু কোনো অজানা কারণে সেই সৈনিকটি ঘণ্টার দড়ির সাথেই ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। মনে করা হয় যে, সেই সৈনিকটির অতৃপ্ত আত্মা আজও সেই ঘণ্টা ঘড়টিতে ঘুরে বেড়ায়। বর্তমানেও নাকি দিনের বেলাতেও মাঝে- মধ্যে ঘণ্টার ধ্বনি ভেসে আসে। আবার অনেকেই একটি কালো কুকুরের ভূত দেখার কথা বলেছেন। সেই কুকুরটি নাকি দুর্গের চূড়ায় ডাকে আর হঠাৎই হাওয়ায় মিশে যায়, কুকুরের দেহটি। তবে কোনটি সত্য আর কোনটি মিথ্যা, সে ব্যাপারে ছাড়পত্রের অ্যাডমিন নিশ্চিত নন। পরন্তু অনেকেই এই রহস্যময় ঘটনাগুলির জন্য সেই গুড হোপ দুর্গটিকে ভূতুড়ে আখ্যা দিয়েছেন।
অওকিগাহারা Aokigahara THE SUICIDE FOREST ভূতুড়ে জায়গা
মানুষকে গাছে, বাড়িতে ফ্যানে আত্মহত্যা করার কথা আপনার নিশ্চয় অজানা নয়, কিন্তু আপনি কি কখনো এমন কোনো জায়গার কথা শুনেছেন, যেখানে গেলেই মানুষ আত্মহত্যা করার জন্য উদ্বুদ্ধ হয়ে পড়ে। হ্যাঁ আমরা কথা বলছি জাপানের অওকিগাহারা ফরেস্ট-কে নিয়ে। এই ফরেস্টটি আত্মহত্যা করার ফরেস্ট বা SUICIDE FOREST নামেই গোটা বিশ্বের কাছে পরিচিত। এখানে নাকি বছরে কয়েকশ মানুষ এসে আত্মহত্যা করে। তবে আত্মহত্যা করে, না আত্মহত্যা করানো হয় সে ব্যাপারে এখনও সঠিক কারণ জানা যায়নি।
এই আত্মহত্যা করার ঘটনা এত বেশি হয় যে, সেখানকার স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনকে মৃতদেহ উদ্ধার করতে অভিযান চালাতে হয়। আবার যেহেতু এর কারণ অজানা সেহেতু অনেকেই ভাবতে পাড়েন এখানে কোনো সন্ত্রাসবাদীর আখড়া রয়েছে, কিন্তু স্থানীয়দের মতে এখানে কোনো সন্ত্রাসবাদী নেই, মানুষেরা নিজে থেকেই এখানে এসে আত্মহত্যা করেন। সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর প্রবাদ যেন না লাগে, সেই জন্য স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন কোন বছরে ঠিক কতজন মানুষ আত্মহত্যা করল, সেই ব্যাপারে বিষদ তথ্য প্রকাশ করে না।
সর্বশেষ ২০০৪ সালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী সেই বছর ১০৮ জন মানুষ এখানে আত্মহত্যা করেছিলেন। এই ১০৮ জনের দেহ সেই জঙ্গল থেকেই উদ্ধার হয়েছে। যদিও বর্তমানে এই ফরেস্টের অনেক জায়গাতেই সাইনবোর্ড লাগানো রয়েছে, এবং মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু স্থানীয়দের মতে সেখানে থাকা আত্মাগুলি আগন্তুক ব্যক্তিকে আত্মহত্যা করতে প্রেরণা যোগায়।

আবার একটি পৌরাণিক কথা মতে, একসময় এই জায়গাটিতে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, খাবারের সন্ধানে মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালাতে থাকে, আশেপাশের গ্রাম থেকে অনেক মানুষ এই জঙ্গলে চলে আসেন, কিন্তু এখানেও সেরকম কোনো খাবার তারা পাননি। তারা ভেবেছিলেন, ফরেস্টে গিয়ে গাছের ফল খেয়ে বেঁচে থাকবেন, কিন্তু এত মানুষের ভীড়ে নিমেষে শেষ হয়ে যায় জঙ্গলের সব ফল। যার ফলে ক্ষুধার্ত অবস্থাতেই মারা যান, মানুষেরা। তাদেরই অতৃপ্ত আত্মা নাকি এখনও এই ফরেস্টে আগত ব্যক্তিদের আত্মহত্যা করতে প্রেরণা দেয়। তবে এই পৌরাণিক কথাটি সত্য নাকি মিথ্যা, আর কেনইবা মানুষ এখানে এসেই আত্মহত্যা করে, সেই ব্যাপারে আমাদের বিজ্ঞানের কাছে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যই নেই।
পৃথিবীর রহস্যময় জায়গা DOLL ISLAND পুতুল দ্বীপ
গাছের উপড়ে নীচে, যেদিকেই তাকান-না কেন, ঝুলে রয়েছে, পুতুল আর পুতুল। আর এই পুতুল গুলি দেখলে অ্যানাবেলা নামক অভিশপ্ত পুতুলের কথা আপনার মনে পড়বেনা, এমনটি হওয়া কিন্তু অস্বাভাবিক। চারিদিকে ফাঁকা, বিশেষ কোনো পশুপাখির দেখা নেই, যা রয়েছে তা শুধু পুতুল। আপনার মনে হবে যেন, কোনো পুতুলের রাজ্যে চলে এসেছেন।
এই পুতুলদ্বীপটি রয়েছে, মেক্সিকো থেকে প্রায় ২০০ কিমি দূরে। মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য এই জায়গাটি বিশেষ পরিচিত ছিল একসময়, কিন্তু বর্তমানে এত বিপুল পরিমাণে পুতুল দেখে আতঙ্কিত না হয়ে থাকবেন, এরকম সাহস খুব কম সংখ্যক মানুষের কাছেই রয়েছে। একবার শুধু কল্পনা করুন যে, চারিদিকে গাছের উপড়ে নীচে, ডালে ঝুলে রয়েছে কিছু পুতুল আর আপনি একা। আমার-তো ভাবতেই ভয় লাগছে। সে যাই হোক, বর্তমানেও এটী একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র, কিন্তু মানুষ এখনও এখানে যেতে ভয় পান। আর এর একমাত্র কারণ হল, গাছে ঝুলে থাকা অদ্ভুত ভাব-ভঙ্গিমা যুক্ত পুতুল। অনেকেই নাকি এখানে ঘোরার সময়, ভয়ংকর আওয়াজ শুনেছেন।

হূম আপনি হয়ত ভাবছেন, এত পুতুল এখানে এল কি ভাবে? এর পিছনে একটি কাহিনী রয়েছে, আজ থেকে কিছু বছর আগে জূলীয়ান নামের এক ব্যক্তি এবং তার স্ত্রী এই নির্জন এই দ্বীপটিতে এসে বসবাস শুরু করেন, একদিন তারা পাশের ছোট্ট নালা থেকে একটি বাচ্চার মৃতদেহ উদ্ধার করেন। তারা সেই শিশুটির মৃতদেহ দ্বীপটিতেই কবর দিয়ে দেন। এই ঘটনার কিছুদিন পর, জূলীয়ানের মনে হতে থাকে, সেই বাচ্চাটির আত্মা তার উপর প্রভাব বিস্তার করছে, এরপর তিনি সেই বাচ্চাটির আত্মাকে খুশি করতে কিছু পুতুল নিয়ে আসেন, এবং তার বাড়ির আশেপাশের গাছগুলিতে লাগিয়ে দেন, এরপর থেকে আমৃত্যু তিনি এই কাজ করে গিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনঃ-
ভূত আছে কি নেই! ভূত কি? আত্মা কি?
শিমলা টানেল এবং ব্রিজ হাভেলির রহস্যজনক ঘটনা
ডাউন হিল এবং শিমলা হিলের ভূতুড়ে জায়গা
জূলীয়ান আজ থেকে প্রায় ১৭ বছর আগে মারা যান, কিন্তু তিনি যে পরিমাণ পুতুল গাছগুলির ডালে এবং নীচে ঝুলিয়ে রেখে গিয়েছেন, তা বর্তমান দিনে খুবই আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টী করেছে।

এরকম পৃথিবীর ভয়ানক জায়গা নিয়ে পরবর্তীতে আবার আরেকটি ব্লগে দেখা হবে। আর হ্যাঁ উপরোক্ত পৃথিবীর ভয়ানক জায়গা (haunted places in world) সম্বন্ধীয় তথ্যগুলির সত্যতা ঠিকমত এখনও অজানা। আপনি চাইলে আমাদের ফেসবুক পেজ অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন হতে পাড়েন। আর হ্যাঁ আমাদের আপনি আপনার লেখা গল্প পাঠাতে পাড়েন-charpatrablog@gmail.com এই ঠিকানাতে। আপনার লেখা যদি রুচি সম্মত হয়, তাহলে আপনার লেখা অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে।
HAUNTED PLACES IN WORLD/ পৃথিবীর ভয়ানক জায়গা/ ভূতুড়ে জায়গা

কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।