নীতি বোধের শিক্ষা একটি বড়ই প্রয়োজনীয় বিষয়। মানুষের নৈতিক বোধ না থাকলে, সমাজের বিভিন্ন নীতি পালনে সে অপারগ হয়ে যায়। তাই আজ থাকছে কিছু নৈতিকতার গল্প তথা কিছু নৈতিক গল্প। এই নৈতিকতার গল্প গুলি আমাদের মূল্যবোধ গঠন করার সাথে সাথে প্রেরণা জোগানোর কাজও করে।
নৈতিকতার গল্প নৈতিক শিক্ষার গল্পঃ-
নৈতিকতার গল্প:- ০১
আমাদের পাড়ার ছেলে সৌরভ। একদিন তার মা রান্না-বান্না নিয়ে ব্যস্ত সৌরভ হাঁতে একটি কাগজ নিয়ে তার মায়ের হাঁতে দিয়ে বলল- “এটা পড়” তার মা দেখল কাগজে বিভিন্ন হিসেব লেখা আছে। যেমন-
“বাগান পরিস্কার করার জন্য ১০০ টাকা, ছাঁদ পরিস্কার করার জন্য ১০০ টাকা, বাজার থেকে জিনিস নিয়ে আসার জন্য ৫০ টাকা, সারাদিন ভাইকে দেখেছি তার বাবদ ৫০ টাকা, জানালার কাঁচ পরিস্কার করার জন্য ৫০ টাকা, উঠোনের ঘাস পরিস্কার করার জন্য ৫০ টাকা, কুয়ো থেকে জল তুলে দেওয়া বাবদ ৫০ টাকা আর ভাইকে খাবার খাওয়ানো বাবদ ৫০ টাকা।“
সব মিলিয়ে ৫০০ টাকা। আমি তোমার কাছে ৫০০ টাকা পাব। এবার আমার কাজের টাকা আমাকে দাও!
সৌরভের মা কিছুক্ষণের জন্য ছেলের দিকে চেয়ে রইল। এরপর সৌরভের হাত থেকে কলমটি নিয়ে কাগজ টির অপর পাশে লিখতে লাগলেন-
“যখন তুমি আমার শরীরে বৃদ্ধি হচ্ছিলে, ১০ মাস পর্যন্ত তোমাকে আমার পেটে রেখেছিলাম, এরপর যখন তোমার ভূমিষ্ট হওয়ার সময় এল তখন প্রসব যন্ত্রণার কথা ভুলে গিয়ে বারংবার ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছিলাম- হে ঈশ্বর আমার আগন্তুক যেন সুস্থ থাকে। আমার এত কিছুর কোনো পাওনা নেই!
এরপর তোমার দেখভাল, এত্ত ছোট থেকে তোমাকে কোলে করে যত্ন করেছি, কতবার নোংরা করেছো আমার কাপড়, আমার কোল। কিন্তু আমি কখনো বিরক্ত হয়নি! আমার সেই অধ্যাবসায়ের কোনো মূল্য নেই!

নিজের জীবনের থেকেও ভালোবেসেছি তোমায়। যখন তোমার কিছু হয়, তখন নিজের অজান্তেই চোখে জল চলে আসে। তুমি হয়ত বেশ ঘুমাচ্ছ, কিন্তু “ছেলেটা কবে ঠিক হবে” এই চিন্তায় আমার রাত্রের ঘুম উড়ে যায়।
প্রতিদিন তোমাদের ঘুম থেকে উঠার আগেই টেবিলে খাবার রেডি থাকে, এমনকি স্নানের জল পর্যন্ত রেডি করে রাখি। সারাদিনের বাড়ির কাজে একটু বিশ্রাম নেওয়ার সময় হয় না। আমি কি কোনো দিনও বলেছি, আমি এত্ত এত্ত কাজ করি আমার কাজের যথার্থ মূল্য দেওয়া হোক।
রান্না আমি করলেও, আমি সবার শেষে খাই যাতে করে তোমাদের কম না হয়। কিন্তু কোনো দিনও কি জিজ্ঞাসা করেছো, আমি ঠিক মত খেয়েছি কি না?
এবার বল, তোমাদের প্রতি আমার এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কি কোনো মূল্য নেই!
যখন সৌরভ তার মায়ের লেখাটি পড়ল, তার চোখ দিয়ে অশ্রু ফোঁটা গড়িয়ে পড়ল। সত্যি তো মা সারাদিন কত কিছু করে, কিন্তু তিনি কখনোই তার কাজের জন্য কোনো পারিশ্রমিক চান না।
এরপর সৌরভ দৌড়ে রান্না ঘড়ে যায়, আর তার মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। তার মা তার কানে কানে বলল- “এই যে তোমাদের দেখে আমি মনে মনে শান্তি পাই, এটাই আমার পারিশ্রমিক।“
শিক্ষণীয় কথা-
আমাদের মা হল ব্যাংকের মত, যেখানে আমরা আমাদের সুখ, দুঃখ সব জমা করে রাখতে পাড়ি। নিজেদের আবদার বাবাকে বলতে না পারলেও, মায়ের কাছে বলতে কোনো দ্বিধা নেই! সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মা ফাইফরমাশ খেঁটেই যান। কিন্তু কখনো মাকে বলি না যে, “মা আজ তোমার সব কাজ আমি করব।“ জিজ্ঞাসা করে দেখবেন এমনটা বললেও তিনি আপনাকে কাজ করতে দিবেন না। আর এর কারণ একটাই- প্রেম, স্নেহ, মায়ার বন্ধন।
আচ্ছা, আমরা কয় জন মাকে জিজ্ঞাসা করি যে- “মা তুমি কেমন আছ?” জিজ্ঞাসা করেছেন কখনো? মা ভালো না থাকলেও বলবেন “ভালো আছি”
জিজ্ঞাসা করুন সেই ছেলেটিকে অথবা সেই মেয়েটিকে যে ছোট বেলা থেকেই মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, জিজ্ঞাসা করুন সেই ছেলেটিকে, যে ছেলেটি জন্মের সময়ই তার মাকে সর্বশেষ দেখেছে, তাদের জিজ্ঞাসা করুন, মায়ের মমতার অভাব কাকে বলে।
আমাদের যা আছে আমরা তার কদর করি না, যা নেই তা নিয়েই অযথা সময় নষ্ট করি। আমাদের কাছে মা আছেন, আর মা আমাদের কাছে বড় সম্পদ। এই সম্পদের কোনো মূল্য হয় না। তাই দয়া করে, মাকে এমন কিছু বলবেন না, যাতে করে তিনি মনে আঘাত পান। কারণ হারিয়ে ফেলা টাকা, আপনি কাল পুনরায় ইনকাম করতে পাড়বেন কিন্তু জীবন দাত্রী মাকে হারালে ফিরে পাবেন না।
তাই মা যেমন আমাদের যত্ন নেন, আমাদের উচিত মায়ের যত্ন নেওয়া।
পড়ুনঃ- মায়ের ভালোবাসা। মা যখন অসুস্থ
নৈতিক শিক্ষার গল্পঃ- ০২
শ্রেণীকক্ষে একজন শিক্ষক কিছু বিষয়ে পাঠ দান করছিলেন। কিন্তু ছাত্ররা, কেউই পাঠে মনযোগী নয়, তা তিনি দেখেই বুঝে গেছেন। তিনি বললেন- “এবার আমি তোমাদের একটি গল্প বলব” গল্পের নাম শুনেই সব ছাত্ররা যেন উৎসাহিত হয়ে পড়ল।
শিক্ষক ছাত্রদের কাছ থেকে একটি পেন্সিল নিয়ে বললেন- “তোমরা জানো এই সাধারণ পেন্সিলটি থেকে কত কিছু শিক্ষা গ্রহণ করা যায়?” ছাত্ররা সবাই মাথা নাড়ল।
শিক্ষক বললেন- “এই পেন্সিলটি আমাদের শেখায়-
এই পেন্সিলটি কোনো মহান সৃষ্টি তখনই করতে পাড়বে যখন এই পেন্সিলটি অপরকে হাঁতে নেওয়ার অনুমতি দিবে। অন্যথায় নয়।




কিছু সময় পড় পড়ই এই পেন্সিলটি অনেক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। যখন এই পেন্সিলটি ভোঁতা হয়ে যায় আমরা কাঁটার দিয়ে এটি তীক্ষ্ণ করি, এটাই তার কাছে যন্ত্রণা। কিন্তু লেখা সুন্দর করার জন্য তাকে এই যন্ত্রণা সহ্য করতেই হয়। আর এই যন্ত্রণাই তাকে ভুল গুলি থেকে শিক্ষা দেয়।
যে পৃষ্ঠাতে এই পেন্সিলটিকে ব্যবহার করা হয়, সেই পৃষ্ঠার সাথে সাথে পড়ের পৃষ্ঠাতেও এই পেন্সিলটি নিজের ছাপ রেখে যায়। এই পেন্সিলটি কখনো সে নিজে কোন পরিস্থিতিতে আছে তা বিবেচনা করে না। সে সর্বদা নিজের কাজে তৎপর।
এবার বল এই পেন্সিলটি থেকে তোমরা নিজেরা কি কি শিক্ষা গ্রহণ করলে। ছাত্ররা সবাই মাথা নাড়ল। অর্থাৎ কেউই কিছু বোঝে নি। শিক্ষক আবার বলতে শুরু করলেন-
“এই ক্লাসে উপস্থিত প্রত্যেক ছাত্র বিভিন্ন মহান কাজ করতে পাড়বে। কিন্তু তোমরা সেই মহান কাজ কেবল মাত্র তখনই করতে পাড়বে যখন, ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রেখে অর্থাৎ ঈশ্বরের হাঁতে নিজেদের সপে দিয়ে কর্ম যজ্ঞে লিপ্ত হবে।
সময়ের সাথে সাথে তোমাদের জীবনে বিভিন্ন বাঁধা আসবে। বিভিন্ন সমস্যা তোমাদের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে। আর সেই কাঁটার মধ্যে দিয়ে চলার সময় তোমাদের অনেক বেদনা অনুভূত হবে। কিন্তু এই বেদনাই একদিন তোমাদের মহান বানাতে সাহায্য করবে। একদিন এমন একটা সময় আসবে যে, বেদনা সহ্য করতে করতে বেদনা তোমাদের কাছে তুচ্ছ মনে হবে। আর প্রতিটি বিষম পরিস্থিতি তোমাদের আরও মজবুত বানাবে।
যেই রাস্তা দিয়ে তোমরা হেঁটে যাবে, সেই রাস্তায় নিজেদের চিহ্ন বা ছাপ ফেলে যাবে। পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, তা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। সর্বদা মনে রাখতে হবে- তুমি কে, কি উদ্দেশ্যে তুমি যাত্রা শুরু করেছ। তাহলেই তোমরা মহান হবে।
এই পেন্সিলটিকে তীক্ষ্ণ না করলে এর লেখা যেমন ভালো হবে না, ঠিক তেমনই এই তীক্ষ্ণ হওয়ার জন্য যে বেদনা তা সইতে শিখতে হবে। মনে রাখবে তোমাদের প্রত্যেকের মধ্যে এক অনবদ্য শক্তি লুকিয়ে রয়েছে। সর্বদা স্মরণ কর, তোমার জন্ম কিসের জন্য, তোমার লক্ষ্য কি!
পড়ুনঃ- সাহসিকতার গল্প-ধৈর্য শক্তি মহাশক্তি
নৈতিক গল্পঃ- ০৩ঃ-
একবার এক শিক্ষক স্কুলে ছাত্রদের পড়া ধরছিলেন। কিন্তু তিনি লক্ষ্য করছিলেন ছাত্ররা নিজেদের মধ্যে বেশ প্রতিযোগিতা করছে। কে আগে প্রশ্নের উত্তর দিতে পাড়ে, তা নিয়েই যেন তাদের মধ্যে লড়াই চলছে।
দেখতে দেখতে স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষা চলে এল। দিন কয়েক পড়ে রেজাল্টও বেড়িয়ে গেল। যে প্রথম হয়েছে সে খুবই খুশি। কিন্তু যে দ্বিতীয় বা তৃতীয় হয়েছে তাদের মুখ বেশ ভাঁড়।
শিক্ষক বুঝলেন এরা সবাই প্রথম হতে চায়। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। এভাবেই কেটে যায় আরেকটা বছর। আবার পরীক্ষা চলে আসে। আগের বছর যে প্রথম হয়েছিল তার মুখে কিছুটা ভয়ের ছাপ দেখা দিচ্ছে। দিন কয়েক পড়ে রেজাল্টও বেড়িয়ে আসে।
পূর্বের বছরে প্রথম হওয়া ছেলেটি এক ধাক্কায় চতুর্থ পজিশনে ছিটকে গেছে। আর প্রথম হয়েছে নবম স্থানে থাকা একজন। শিক্ষক ছাত্রদের অন্তরের মধ্যে পরস্পরের প্রতি যে ঈর্ষা চলছে সেটি ভালো মতই বুঝতে পাড়ছিলেন।




রেজাল্ট প্রকাশিত হওয়ার কিছুদিন পড়ে, তিনি সব ছাত্রদের একটি কক্ষে বসালেন। তাদের জিজ্ঞাসা করলেন- “এই দুটি বছরে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে তোমরা কি পেলে আর কি হারালে?”
ছাত্ররা কেউই এর যথাযথ উত্তর দিতে পাড়ল না। এবার শিক্ষক বলতে শুরু করলেন- “আমাদের প্রতেকের লক্ষ্য জীবনে প্রথম হওয়া। কিন্তু এটাই আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল গুলির মধ্যে অন্যতম।
যে পূর্বের বছরে প্রথম হয়েছিল, সে আজ চতুর্থ স্থানে চলে গেছে। যে এই বছর প্রথম হয়েছিল, হতেও পাড়ে সে পরের বছর পিছিয়ে গেল।
এই যে প্রথম হওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমাদের মধ্যে প্রবল এটাই আমাদের এগিয়ে না যাওয়ার মূল কারণ। মনে রাখবে তুমি আজ প্রথম হলে, কাল যে কেউ তোমাকে পাশ কাঁটিয়ে চলে যাবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা আছে কি?
জীবনে কিছু করতে হলে তোমাকে প্রথম নয়, বেস্ট হতে হবে। প্রথম হলে অপর জন তোমাকে পাশ কাঁটিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। কিন্তু তুমি যদি বেস্ট হও কারও সাধ্য নেই যে, তোমাকে পাশ কাঁটিয়ে যায়। কারণ তোমার ফিল্ডে তুমিই সেরা। আর সেরাকে পাশ কাঁটিয়ে যাবার মত ক্ষমতা কারও মধ্যে নেই।
তাই জীবনে কিছু করতে হলে, প্রথম নয়, বেস্ট হতে হবে। তবেই নিজেদের পরিচয় তোমরা রেখে যেতে পাড়বে।
You may miss-
গল্প থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন
সেরা শিক্ষণীয় গল্প
© সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্রের অধীনে। অনুমতি ব্যতিত যে-কোনো গল্পের পুনঃব্যবহার করলে, ছাড়পত্র উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।
আমাদের সাথে যুক্ত হলে আমরা খুশি হব। যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক-ছাড়পত্র
ফেসবুক গ্রুপ -গল্প Junction
WhatsApp group- ছাড়পত্র ২
টেলিগ্রাম- ছাড়পত্র
“নৈতিকতার গল্প। নৈতিক শিক্ষার গল্প। নৈতিক গল্প। moral stories”




কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।
Pingback: 14 টি সফল হওয়ার উপায় HOW TO SUCCESS IN LIFE TOP 14 KEY OF SUCCESS TIPS জীবনের সফলতার সূত্র - ছাড়পত্র