একটি নতুন রহস্যময় গল্প নিয়ে আজ আবারও চলে আসা। গল্পের প্রেক্ষাপট একটি কাপড়ের দোকান। বেশি কিছু বলে আর স্পয়লার দিতে চাই না, বিস্তারিত গল্পে-
নতুন রহস্যময় গল্পঃ- ‘ডিজাইন’
বিরাট টেলারিং শপ “যূথিকা”। অনেক ছেলেমেয়ে কাজ করে সেখানে। ছোট্ট বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়স অবধি সমস্ত রকম স্টাইলের পোষাক তৈরি ও সেলাই হয়।
‘যূথিকা’ র প্রধান দীপালী। সে সকলকে আদর্শ ডিজাইন ও বাকি কাজের বেস্ট সাজেশন দেয়, পরামর্শ দেয়।
দীপালী কাজের মধ্যে ডুবে থাকলেও তার মনের মধ্যে যেন সবসময় কি একটা আতঙ্ক কাজ করে, কাউকে যেন খুব ভয় পায় অনবরত। বোঝাতে চেয়েও কাউকে মনের অবস্থাটা বোঝাতে পারে না। কেমন যেন একটা অপরাধবোধ, কেমন যেন একটা নির্লিপ্ত অমানুষতা মনে মনে চারা দেয় দীপালীর মনে।
ব্যবসা খুব তুঙ্গে। দারুণ চাহিদা তাদের দোকানের কাজের। সকলের প্রথম পছন্দ ‘যূথিকা’। দিন যায় দিনের মতো। হঠাৎ একদিন অনেক কিছুর মধ্যে, অনেক কর্মচারীর মধ্যে একটি নতুন মেয়ে জয়েন করে ‘যূথিকা’য়। মেয়েটা ‘লেডি ব্রাবোর্ন’ ডিপ্লোমা প্রাপ্ত, নাম তার রেণুকা।

কিন্তু আসা থেকেই এই মেয়েটি দীপালীর কাজকে ছাপিয়ে অনেক উপরে চলে যাচ্ছে দিনদিন।
নিত্যনতুন তার স্কেচে আসছে চোখ ধাঁধানো নতুন নতুন ডিজাইন । সেলাইতেও চিত্তাকর্ষক দক্ষতা। বুটিক, ফেব্রিক, সার্টিং, ফ্রেঞ্চ নট ইত্যাদি সব কিছুই এই মেয়েটার হাতে কোটি কোটি গুণ গুণমুগ্ধ রূপ পাচ্ছে।
দীপালী সবই খেয়াল করে প্রথম থেকে এবং প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে সে পাল্টা অস্ত্র ছুঁড়ে আরো ভালো ভালো ডিজাইন বার করে। এটা দোকানের সকলের অবগত হয়।
প্রচার হয়, দীপালী বনাম রেণুকা।
কিন্তু চাহিদা যেন রেণুকার কাজের। একেকটা ডিজাইনের স্কেচ তার এতোটাই অনন্য সাধারণ, যে তাক লেগে যায়।
এই নিত্যনৈমিত্তিক কাজের মধ্যে হঠাৎ করে মারা যায় দোকানের এক কর্মচারী রাজেশ। কেউ কিছু বুঝতে পারে না মৃত্যুর কারণ। খুব অস্বাভাবিক ও আকস্মিক ভাবেই ঘটে গেছিল রাজেশের মৃত্যুটা।
‘যূথিকা’ যতটা সম্ভব রাজেশের পরিবারের পাশে দাঁড়ায়, সমবেদনা জানায়। কিন্তু মনে সবার খটকা, রাজেশের মৃত্যু নিয়ে। যাই হোক আস্তে আস্তে এই নিয়ে ভাবনা ফিকে হয়ে গেল। কিন্তু ফিকে হতে না হতেই আরেকটা মৃত্যু, এবার পলা নামের একটি মেয়ে।
এটাও সেই অস্বাভাবিক আর আকস্মিক মৃত্যু। কোনো কারণ ছাড়াই যেন হঠাৎ হঠাৎ করে মারা গেল দু’জন কর্মচারী। দীপালী ব্যাপারটা তলিয়ে ভাবে। আর রেণুকা কে খুব অদ্ভুত লাগে দীপালীর। দুটো মৃত্য হলো অথচ রেণুকার ডিজাইনের যেন কিছুতেই খামতি নেই, ঘাটতি নেই, কোনো প্রতিক্রিয়া নেই তার। উফ! না না রেণুকা কে হিংসে করে বলেই হয়ত এই সমস্ত ভুলভাল চিন্তা আসছে দীপালীর রেণুকাকে নিয়ে। নিজেকে সামলে নেয় দীপালী।
পড়ুনঃ- দুই বোনের উধাও রহস্য
এইসব ভাবছে হঠাৎ দীপালী দেখে রেণুকার সাথে উৎপলের কিছু একটা বচসা লেগেছে। দীপালী এগিয়ে যেতে উৎপল বলে ওঠে, দেখো দীপালীদি, এই রেণুকার খুব ডাঁট সুন্দর ডিজাইন আঁকে বলে। আরে ও আসার আগে তো আমিই আঁকতাম তখন কি দোকান চলত না নাকি লোকজন কিছু কিনত না দোকান থেকে নাকি অভিযোগ করত? সবসময় সব ডিজাইন নিয়ে রেণুকা একা দখলদারি দেখাবে, আমার ভালো লাগছে না, তুমি কিছু একটা ব্যবস্থা করো।
দীপালী রেণুকার দিকে তাকায়। রেণুকার কেমন যেন একটা অদ্ভুত চাহনি। দেখলেই যেন নেশা লেগে যায় আর দীপালীর সেই অজানা অপরাধবোধ টা রেণুকা কে হিংসে করলে বা ওকে দেখলেই কেমন যেন তীব্র হয়ে ওঠে। দীপালী বলে, রেণুকা তুমি এরকম কেন করছ, সব ডিজাইন এর দায়িত্ব কি আমি তোমায় দিয়েছি?
না তা নয় কিন্তু উৎপলদার ডিজাইনটা অতটা প্রফেশনাল নয়।
উৎপল রেগে গিয়ে এক চড় কষে দেয় রেণুকার গালে। আর বলে, অসভ্য মেয়ে, যার ব্যবহার, আচরণ ই খারাপ তার কাজ আবার কি ভালো হবে? খুব অহংকার না তোর, কর সব তুই একা একা বলে রেগে মেগে চলে যায় সে। দীপালী ও বাকি সকলে তাকে থামায় কিন্তু উৎপল অপমানের ক্ষোভে চলে যায় সেখান থেকে।
অনেকক্ষণ সময় কেটে গেছে। হঠাৎ করে খবর আসে উৎপলের অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। প্রচন্ড রকমের চমকে ওঠে দীপালী এবার। পরপর তিনটি মৃত্যু! খতিয়ে দেখতে গিয়ে কিছুই চোখে পড়ছে না।
চোখে পড়ছে তবে রেণুকার ডিজাইনের আকস্মিক সৌন্দর্য! কিছু বোঝা যাচ্ছে না। মেয়েটা কে প্রথম দিন থেকেই কেমন যেন একটা সন্দেহ জনক লাগে দীপালীর।
রেশ যেন কিছুতেই কাটছে না মৃত্যুর।
গভীর রাত। দীপালীর ঘুম ভেঙে যায় হঠাৎ করে আর দূরে একটা কে দাঁড়িয়ে। লাইট জ্বালাতেই অদৃশ্য হয়ে গেল। এক ঘটনা পরপর তিনদিন। খুব ভয় হতে থাকে এবার দীপালীর। সে বের করে পুরোনো ডাইরিটা। এই কি তবে সেই রূপমা, যাকে দীপালী ও বাকি বান্ধবীরা মিলে…!
অজানা অপরাধবোধ নিজের মনকে এতদিন অজানা বলে জোর করে বোঝাতেও আসলে তো সে ও তার মন দুজনেই জানে যে দীপালী কতবড় অন্যায় করেছে!




মনে পড়ে গেল সেই দিনের কথা, যেদিন লেডি ব্রাবোর্ণ বিভাগের কমবয়সী যুবতী দীপালী, রূপমা ও আরো অনেক মেয়েরা ঘুরতে গেছিল পাহাড়ি এলাকায়। রূপমা সবার চেয়ে খুব ভালো ডিজাইন ও সেলাই করতে পারত। তার সুখ্যাতি ছিল খুব। তবে প্রচন্ড অহংকারী ছিল মেয়েটা। নিজের ক্লাসমেট দের কাউকে মানুষ বলে মনে করত না। নিজেই সব একার দায়িত্বে করত। দীপালী অনেক বোঝালে তাকে খুব অপমান করে রূপমা। সবাই খুব রেগে যায় কিন্তু কিছু কিছু বলে না, শুধু সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।
এরপর এলো সেই ঘুরতে যাওয়ার দিন আর তারপর পাহাড়ে ওঠা। সবাই হৈ হৈ করছে আর রূপমা একা দাঁড়িয়ে নিজ গর্বে অন্ধ। দীপালী ও আরো তিনজন রূপমা কে ছলে বলে কৌশলে ফেলে দেয় পাহাড় থেকে খাদে।
ঘটনা টা সবার অলক্ষ্যে ঘটলেও সন্দেহের তালিকায় তিনজন ছিল। তবে পরে এসব থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে তারা। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তার ঘাড়ে একটা সূঁচের ছোঁয়া পায়। ব্যথা অনুভব হয়। পেছন ফিরে তাকাতেই একটা বিভৎস মূর্তি। খাদে পড়ে যাওয়া ছিন্ন ভিন্ন মৃতদেহের মতো। ভয়ে চিৎকার করে জ্ঞান হারায় দীপালী।
পড়ুন ঃ- ভূতের গল্প- মাথা লাশ
এরপর সে নিজেকে বাড়িতে নয়, সরাসরি হাসপাতালে আবিষ্কার করে। প্রচন্ড রকমের জ্বর তার। অনেক দিন ধরে অসুখের সাথে টানা লড়াই চলে তার। তবে রোজ রাতে আসে একজন তার শরীরে বিভিন্ন অঙ্গে ডিজাইন এঁকে সেলাই করতে। সেই ক্ষত কেউ দেখতে পায় না শুধু পায় দীপালী, শুধু যন্ত্রণায় কাতরায় দীপালী। আশ্চর্য ব্যাপার এটাই, যন্ত্রণায় তার আর্ত চিৎকার কারোর কানে যায় না।
হসপিটালের সবাইকে দেখে খুব স্বাভাবিক মনে হয়। আর তার কথা কেউ বিশ্বাস করতে চায় না আর এদিকে তার গোটা শরীরে রোজ রাতে কেউ সূঁচ দিয়ে ক্ষত করে সেই রক্তের ডিজাইন এঁকে চলেছে। সারা শরীরে সবার অলক্ষ্যে ঘা শুরু হয়ে যায় তার দেহে। দেহ পচতে শুরু করে। সে অনেক কাতর হয়ে চেষ্টা করে সবাইকে সবকিছু জানিয়ে দিতে , সবকিছু বিশ্বাস করাতে। কিন্তু তার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। সবাই দীপালীর অন্যরকম চিকিৎসা করে চলে আর দীপালী…!
কি দীপালী, মনে আছে, আমাকে তোমরা খাদে ফেলে দিয়েছিলে?
প্রায় মৃত দীপালী আধবোজা চোখে চেয়ে দেখে সামনে রেণুকা দাঁড়িয়ে, মুখে তার অদ্ভুত হিংস্র হাসি।
দীপালীর কথা বলার শক্তি নেই।




মনে পড়ে রাজেশ, পলা আর উৎপল আমার সাথে ডিজাইন আঁকা নিয়ে বচসা করেছিল তাই ওদের আমি মেরে ফেলেছি। আমিই সবথেকে ভালো ডিজাইনার বুঝেছ দীপালী। আমি বেঁচে থাকলে তোমরা কেউ এত বড় জায়গায় আসতে পারতে না, তৈরি হতো না ঐ ‘যূথিকা’! আমাকে তোমরা যারা যারা খুন করেছ তাদের মধ্যে ধরে ধরে আমি সবকটাকে মেরে ফেলেছি তারপর যখন জানতে পারলাম তুমি এখানে এতবড় একটা ব্যাবসা সামলাও, ব্যস আমাকে আর কে পায়! এবার তোমারও শেষ দিন চলে এসেছে। যে রূপমা সেই রেণুকা!
দীপালীর মৃত্যুর পর রেণুকা কে ‘যূথিকা’র কোনো কর্মচারী খুঁজে পায়নি। চলেছিল পুলিশের তদন্ত। কিন্তু কোনো কিছু খুঁজে পায়নি কেউ। একটা অভিশপ্ত ডিজাইনের জন্য প্রাণ গেল সবার।
‘যূথিকা’র নতুন মালিক প্রলয় খেয়াল করে দূরে থাকা নবাগতা কর্মচারীনি দ্বিতিপ্রিয়ার আঁকা অদ্ভুত ডিজাইনটা নিয়ে বচসা চলছে আরেক কর্মচারী রমেশ এর সাথে।।
সুস্মিতা গোস্বামী
গল্পের গভীর ভাবনায়-
© copyright, লেখিকার পক্ষে charpatra.com কর্তৃক সংরক্ষিত। গল্পটিকে অন্যত্র কোনোভাবে প্রকাশ করলে (এমনকি ভিডিও বানিয়ে প্রকাশ করলেও) ছাড়পত্র উপযুক্ত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।
সুস্মিতার লেখা অনন্য কিছু গল্প- দারিদ্রতার গল্প- সমাজবিরোধী ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক- প্রকৃত শিক্ষক মেয়েদের জীবনের গল্প- স্পর্শ স্কুল জীবনের গল্প- গন্ধ চক্রান্ত
এক ক্লিকেই আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- ফেসবুক Group - গল্প Junction ফেসবুক- ছাড়পত্র টেলিগ্রাম- charpatraOfficial [ If the link doesn't work search- charpatraofficial in telegram] WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২) [only for Authors & Readers]




কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।