আজকের নতুন গোয়েন্দা গল্প টিতে এক আন্ডার ওয়ার্ল্ড বিজনেস এর রহস্য উদঘাটনের বর্ণনা রয়েছে।
নতুন গোয়েন্দা গল্পঃ- অদ্ভুতুড়ে বিজনেস!
“…তো এই হল পুরো ব্যাপারটা। আমি কিছুতেই বুঝছি না, আমার কি করা উচিৎ! একজন বিজ্ঞান পিপাসু মানুষ হওয়ার খাতিরে এই সব ভূত প্রেত বিষয়ে আমার কিছুতেই বিশ্বাস জন্মাচ্ছে না, আর ভবিষ্যতেও জন্মাবে না।“
Mr. Ash দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন- “হুম স্যানাল বাবু বিষয়টা বেশ জটিল। আমার মাথাতেও কিছুই ঢুকছে না। আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট…..” তার কথা শেষ হতে না হতেই সৃজা এসে হাজির।
-আরে আয় আয়, তোর কথাই বলতে যাচ্ছিলাম। কেসটা অনেকটা ভুতুড়ে টাইপের বুঝলি তো!”
-বাঃ রে, বললি কখন যে বুঝব।
-হা হা হা
-আসুন পরিচয় করিয়ে দিই। স্যানাল বাবু, ইনি হলেন আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট মিস সৃজা। আর সৃজা, ইনি হলেন, আশুতোষ স্যানাল।
-নমস্কার আশুতোষ বাবু।
-নমস্কার।
Mr. Ash এবার বলতে শুরু করলেন- “মন দিয়ে শোন সৃজা। স্যানাল বাবু থাকেন, জলপাইগুড়ির ২৪/২১ লেনে। একটি বেসরকারি কোম্পানিতে ইনি কাজ করেন। মাস গেলে বেশ মাইনে পান। ইনি এখনও বিয়ে ঠা, করেন নি, বাড়িতে আছে এনার মা, বিধবা দিদি আর সেই দিদির একমাত্র আদরের মেয়ে মণি, I mean মণিমালা। সমস্যাটা হল এই মনি মালা কে নিয়েই। সে ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ করে চেঁচিয়ে উঠে। আর এরকম চলে প্রায় মাস দেড়েক।
শহরের একমাত্র psychiatrists এর কাছে মণিকে নিয়েও যাওয়া হয়, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। প্রায় দেড় মাস এভাবে চলার পর অদ্ভুত ভাবে মেয়েটার শরীর ফুলতে শুরু করে। আবার যথারীতি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু ডাক্তারের কোন ওষুধই তার উপর কাজ করেনি। সবাই কে অবাক করে দিয়ে দিন পনেরোর মধ্যেই মণির শরীরের ফোলা কমে যেতে থাকে।
সেই যে শরীর শুঁকিয়ে যেতে শুরু করল তা এখনও অব্যাহত। বর্তমানে সে শয্যাশায়ী। তার অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে, তার শরীরের সমস্ত হাড় পুরো দৃশ্যমান। eyeball গুলিও স্পষ্ট দৃশ্যমান। ডাক্তার বসুর ক্লিনিকে তার চিকিৎসা চলছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এই যে দেখ তার ছবি।“
সৃজা Mr. Ash এর হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে ছবিটির দিকে তাকাতেই সঙ্গে সঙ্গে ফিরিয়ে দিল।
-মণির অবস্থা তো খুবই ভয়ানক। ওকে দেখলে যে কেউই ভয় পেয়ে যাবে।
-কারেক্ট। কোন ডাক্তারই এই রোগের ঠিকানা বের করতে পারছেন না। পরশু তুই কাগজে যে বিজ্ঞাপন টা দিয়েছিলি, সেই সুত্রেই স্যানাল বাবু আমাদের কাছে সাহায্য চাইতে এসেছেন।“
সব কিছু ঠিক বললাম তো স্যানাল বাবু!”
-“হ্যাঁ একদম ঠিক বলেছেন। আমি চাই আপনারা আমার এই ভুতুড়ে কেস টির সমাধান করে দিন। আর আমার মণিকে তার আগের জীবন ফিরিয়ে দিন।“
সৃজা Mr. Ash এর দিকে ইশারা করে বলল- “দেখুন স্যানাল বাবু, ও কতটা বুঝেছে আমি জানি না, কিন্তু এই পুরো বিষয়টা আমার মাথার উপর দিয়ে গেছে। কি এমন হল যে, হঠাৎ করে রাতে চিৎকার শুরু, তারপর শরীর ফুলে যাওয়া আবার কিছুদিন পর শুঁকিয়ে কঙ্কাল হয়ে যাওয়া, বিষয়টা কেমন যেন জট পাকিয়ে যাচ্ছে আমার কাছে।“
-বিষয়টা আমাদের খুব চিন্তায় ফেলেছে। মা সারাদিন ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করছেন, দিদি নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। আবার তাদের মতে নাকি আমিই দোষী।
উৎসাহ ভরে সৃজার প্রশ্ন- “কেন কেন! তারা উল্টে আপনাকে দোষী সাজাচ্ছেন কেন!”
একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্যানাল বাবু বললেন- “তাদের কথা, আমি ঠাকুরের পরিবর্তে বিজ্ঞানের ভক্ত, তাই ঠাকুর নাকি অভিশাপ দিয়েছে।“
এতক্ষণ নিরাবতা কাটিয়ে Mr. Ash বললেন- “এই কেসটা আমরা গ্রহণ করব কি করব না, তা কনফার্ম করার আগে, একবার মণিকে দেখতে চাই, আর সাথে আপনার পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলতে চাই।“
উৎসাহ ভরা চোখ নিয়ে স্যানাল বাবু বললেন- “সত্যি আসবেন আমার বাড়ি! আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করব। কখন আসবেন! আপনি কি খাবেন বলুন, আমি জোগাড় করে রাখব।“
Mr. Ash কিছু বলার আগেই সৃজার জবাব- “ওর সবথেকে প্রিয় হল পার্ক চকোলেট। আমরা বিকেলে আপনার বাড়ি পৌঁছে যাব।“
Mr. Ash সৃজার এরকম জবাব শুনে, কিছু লজ্জিত দৃষ্টিতে হাসতে লাগলেন।
-ওকে ডান, আমি অপেক্ষা করব আপনাদের জন্য। উঠি তাহলে।
-আচ্ছা আসুন।
স্যানাল বাবু চলে গেলেন-
“তোকে কতবার বলব সবার সামনে আমার প্রিয় চকোলেটের কথা বলবি না…” Mr. Ash এখনই সৃজাকে রামায়ন শোনাবে, এটা তার পূর্ব প্রস্তুতি। তাই সৃজা আগে ভাগে কথা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে লাগল-
-বিষয়টা কেমন জানি অদ্ভুতুড়ে, তাই না।
-হুম, আর তার থেকেও অদ্ভুতুড়ে হল তোর এই কথা অন্যদিকে ঘুড়িয়ে দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা টা। হা হা হা। ওকে জোকস অ্যাপার্ট এখন বাড়ি যাবি নাকি, এখানেই থাকবি! এখানে থাকলে কিন্তু রান্না চাপাতে হবে।“
সৃজা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, দুপুর একটা বাজতে চলল, আর তুই এখনও রান্না করিস নি! এত অলস হলে কি ভাবে চলবে সাহাব!”
-তুই আসবি, তাই তোকে দিয়েই রান্না করাব ভেবেছিলাম, হে হে হে।
একটা উচিংরের মত হাসি দিয়ে সৃজা রান্না ঘরের দিকে পা বাড়াল।
পড়ুনঃ- মজার গোয়েন্দা গল্প- বিস্কুট রহস্য
বিকেল তখন, প্রায় পৌনে চারটা। সৃজার স্কুটি, স্যানাল বাবুর বাড়ির সামনে কষে ব্রেক করল। স্যানাল বাবু, বাইরেই দাড়িয়ে ছিলেন। তাদের তিনি স্বাগত জানিয়ে ভিতরে আসতে বললেন।
সৃজা রা যে বাড়িটিতে গিয়ে ঢুকলেন, তা বেশ পুরানো। স্থানে স্থানে পলেস্তারা খসে পরেছে। আর বাঁশ ঝাঁর গুলির জন্য বাড়িটিকে আরও ভুতুড়ে লাগছে।
-আসুন এদিকে, এটি হল মণির ঘর। ওই যে মণি।
সৃজারা দেখল, একটি বয়স ১৮ এর মেয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। শরীর এতটাই শুঁকিয়ে গেছে যে, বিছানা আর শরীর প্রায় সমান সমান হয়ে গেছে। মেয়েটার কঙ্কাল সার দেহ টা দেখলে গা শিউড়ে উঠে। উঠে বসার শক্তি টুকুও অবশিষ্ট নেই আর।
তাদের পিছু পিছু একজন মহিলা ঘরে ঢুকলেন। ইনিই হয়ত মণির মা। সৃজা Mr. Ash এর দিকে তাকিয়ে দেখল, Mr. Ash তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। সে ধীরে ধীরে মেয়েটার কাছে গিয়ে বসল। মেয়েটার হাত তুলে নিয়ে নার্ভ গুলি হালকা ভাবে টিপতে লাগল।
-শ্রী ম্যাগ্নিফাইং গ্লাস
-ব্যাগ থেকে ম্যাগ্নিফাইং গ্লাসটা বের করে সৃজা Mr. Ash এর হাতে দিতেই, তিনি সেটা নিয়ে মেয়েটার বাম চোখ টা ভালো ভাবে দেখতে লাগলেন। দেখছেন, কিছুক্ষণের জন্য থেমে কি যেন চিন্তা করছেন, আবার দেখছেন। এবার তিনি মেয়েটার মাথার চুলের ডগা ছিঁড়ে নিয়ে সৃজার হাতে দিয়ে বললেন- “খামে ভরে নে।“
সৃজাও কোন বাক্য ব্যয় না করে, প্লাস্টিকের খামে চুলটি ভরে নিল।
-হুম, আমার দেখা শেষ। এবার একটু সবার সঙ্গে আলাপ করতে চাই।
স্যানাল বাবুর জবাব- হ্যা অবশ্যই। দিদি মা কোথায়, মা কে ডাকো। আসুন Mr. Ash, বসার ঘরটা এদিকে।
একজন বয়স ৭০ এর বৃদ্ধা, বসার ঘরে প্রবেশ করলেন। তাকে দেখে বেশ শক্ত-পোক্ত মনে হল।
-আসুন আসুন, বসুন এদিকে। নমস্কার, আমি Ash. এসেছি আপনাদের মণিকে দেখতে।
বৃদ্ধা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, Mr. Ash এর দিকে তাকিয়ে বললেন- “আমার নাতনী… আমার নাতনী বাঁচবে তো বাবা। ওকে তুমি বাঁচাও।“ কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে বৃদ্ধা অঝোরে কান্না করতে লাগলেন।
সৃজা উঠে গিয়ে বৃদ্ধার পাশে গিয়ে বসে তাকে সান্তনা দিতে লাগল- “কাঁদছেন কেন মাসিমা, আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আমরা প্রয়াস করব…নিন একটু জল খান…বা বেশ…।
-আচ্ছা স্যানাল বাবু আপনার দিদি কোথায় গেলেন, তাকেও ডাকুন।
স্যানাল বাবুর দিদি চা নিয়ে এসে সবার হাতে দিয়ে মায়ের কাছে বসলেন।
-আপনাদের সবাইকে কিছু প্রশ্ন করব। ভেবে চিন্তে উত্তর দেবেন। পারলে কিছুক্ষণ সময় ও নিতে পারেন।
সবাই সায় দিলে Mr. Ash শুরু করলেন-
“একটু ঠিকমত মনে করে দেখুন তো, যেদিন থেকে মণি রাতে চিৎকার করতে শুরু করল সেই দিনের কয়েকদিন আগে, সে কি এমন কোন জায়গায় গিয়েছিল, যেটির প্রভাবে এরকম হতে পারে বলে আপনাদের মনে হয়।“
কিছুক্ষণ ভাবার পর, বৃদ্ধা জবাব দিল, “উহু না তো, মণি সবসময় বাড়িতেই থাকে।“
-যে কোন স্থান হতে পারে, স্কুল, কলেজ, শপিং মল ইত্যাদি ইত্যাদি।
সবাই একসাথে নেতি বাচক প্রস্তাব দিলেন।
Mr. Ash চুপচাপ আছেন, কি যেন ভাবছেন। সৃজা মণির মা কে বলল- “আচ্ছা আপনার মুখে একটু গোটা ঘটনা টা শুনতে চাই।“
মণির মা শুরু করলেন- “মঙ্গলবার ছিল, সেদিন আমার কাজ হয়নি। বাড়ি ফেরার পথে হনুমান মন্দিরে পূজো দিয়ে মণির জন্য চরণামৃত আর প্রসাদ নিয়ে আমি বাড়ি ফিরে আসি। সেই দিন রাতে ওর প্রিয় খাবারও রান্না করেছিলাম। সেই দিন রাত থেকেই ও ওরকম ভাবে চিৎকার শুরু করে…”
তাকে থামিয়ে দিয়ে Mr. Ash বললেন- “ওয়েট ওয়েট ওয়েট, কি বললেন চরণামৃত আর প্রসাদ এনেছিলেন!” তার চোখ চকচক করে উঠল।
-আজ্ঞে হ্যাঁ।
-থাক আর বলতে হবে না, স্যানাল বাবু আপনার ভুতুড়ে কেস টি আমরা গ্রহণ করলাম। সৃজা, দিদির কাছে থেকে সেই মন্দির টির ঠিকানা টা লিখে নিয়ে চলে আয়।“
পড়ুনঃ- ব্লাডি মেরীর আসল ঘটনা
Mr. Ash সামনে আর তার পিছু পিছু বাকিরা- “স্যানাল বাবু, আপনার এই রহস্যটার ৩/৪ শতাংশ সমাধান হয়ে গেছে আর একটু বাকি আছে। আমাকে কয়েকদিন সময় দিন।“
স্যানাল বাবুর মুখে তৃপ্তির হাসি দেখা গেল। এরপর তারা সেখান থেকে বেড়িয়ে পরলেন।
সৃজা জিজ্ঞাসা করল- “আমার মাথায় কিন্তু এখনও কিছুই ঢোকেনি boss, আর তুমি বলছ ৩/৪ শতাংশ নাকি সমাধান করে ফেলেছ।“
-ধীরে সৃজা, ধীরে একটু অপেক্ষা কর, তুমিও সব বুঝবে মিস। আচ্ছা অনেক দিন মন্দিরে যাওয়া হয় না, কাল যাব সেই হনুমান মন্দিরে পূজা দিতে। যা কিছু লাগে নিয়ে আসিস। আমাকে নামিয়ে দে,… যেতে পারবি তো বাড়ি একা! “
-সবে তো সন্ধ্যে। আর এখনই ভয় পেলে, কিসের রহস্য পিপাসু আমি! আচ্ছা রেডি থাকিস এগারো টায় পৌঁছে যাব, তোর এখানে।
পরের দিন প্রায় ১২.৩০ টা নাগাদ তারা পৌঁছে গেল মণির মায়ের দেওয়া মন্দিরটির ঠিকানায়। মন্দিরটি অনেকটা জনশূন্য এলাকায় অবস্থিত। জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত এই মন্দিরটিতে লোকের ভিড় নেই। কেবল বাইরে একজন বেশ তাগড়া পূজারী বসে কি যেন করছেন।
সৃজারা মন্দিরের ভিতর যেতেই পূজারী সৃজার হাত থেকে ফুল গুলি নিয়ে মূর্তিটির পায়ের কাছে রেখে দিল। আর চরণামৃত নিয়ে এসে তাদের দিতে গেলে Mr. Ash বললেন- “এই পাত্রটিতে চরণামৃত টি ভরে দিন। আমরা কিছুক্ষণ পর খাব।“ সৃজা এতক্ষণে বুঝে গেছে, তাদের এখানে আসার উদ্দেশ্য ভিন্ন।
কোথাও গেলে মেয়েদের যেটা কাজ হয় আর কি! সৃজাও সেটার ব্যতিক্রম করল না। সে তো মন্দিরের পূজারী কেও ছাড়ল না, তার সঙ্গেও কয়েকটা ফটো নিয়ে নিল।
-চল তাড়াতাড়ি বাড়ি চল। অনেক কাজ আছে। তুই পিছনে বস। আমি স্কুটি চালাচ্ছি।
এরপর প্রচণ্ড গতিতে ছুটল তাদের স্কুটি। দেড় ঘণ্টার রাস্তা মাত্র ৪৫ মিনিটেই শেষ।
-শ্রী তুই স্যানাল বাবুকে ফোন করে জেনে নে, যে ডাক্তার বসুর খোঁজ তাড়া কিভাবে পেয়েছিল! তুই এখন বাড়ি যেতে পারিস। আর হ্যাঁ চরণামৃত টা আমাকে দে। চুপিচুপি যে প্রসাদ টা নিয়েছিলি সেটাও দে। আর বাড়ি গিয়ে আগে ফ্রেশ হবি। এরপর খবরটা নিয়ে আমাকে কল দিবি।
সৃজা- বাঃ রে, তুই কিভাবে দেখলি, আমি চুপিচুপি প্রসাদ উঠিয়ে নিয়েছি।
-হা হা হা, পরে বলব।
সৃজা জানে যে, Mr. Ash এর এই পরে বলব, কথাটার অর্থ হল, সে বলবে না। সে বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গেলে, Mr. Ash ফ্রেশ হয়ে তার ল্যাবে ঢুকলেন। কি টুকিটাকি কাজ করছেন কে জানে। কখনো কম্পিউটারে কি যেন সার্চ করছেন। আবার দৌড়ে এসে মাইক্রোস্কোপে কি যেন দেখছেন। বইয়ের তাক থেকে মোটা মোটা বই বের করে কি যেন খুঁজছেন। আবার হঠাৎ করে দৌড়ে চলে গেলেন স্টোর রুমে। প্রায় এক ঘণ্টা পর একটা পুরনো খবরের কাগজ নিয়ে চলে এলেন।
আবার কম্পিউটারে …. এভাবেই কখন যে রাত একটা হয়ে গেছে তিনি নিজেও জানেন না। অবশেষে তৃপ্তির হাসি হেসে মোবাইল হাতে নিয়েই চমকে গেলেন। সৃজা ৬০ বার ফোন করেছে। সে ফোন তুলেনি দেখে, লম্বা লম্বা ম্যাসেজ পাঁঠিয়েছে।
Mr. Ash এর ঠোঁটের কোনায় এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল।
সৃজাকে বলে দিলেন, সে যেন আগামীকাল যত তাড়াতাড়ি পারে চলে আসে।
পড়ুনঃ- কি ভয়ানক ছিল সেই রাত!
পরের দিন সৃজা সকাল নয়টায় হাজির।
Mr. Ash- আচ্ছা শ্রী, তুই যে কাল ওই পূজারীর কাছে সেলফি গুলি নিলি সেগুলি দেখা তো।
-এই যে,
-আমার সাথে ল্যাবে আয়।
এরপর Mr. Ash কম্পিউটারে ছবি গুলি নিয়ে সুদক্ষ হস্তে ইডিট করতে লাগলেন।
-দেখতো এনাকে চিনিস নাকি!
-আরে, এটা তো চিকিচিকি বুম বুম নামে সেই হত্যাকারী। যে বাচ্চা দের তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করত কৌশলে।
-হুম, ঠিক ধরেছিস।
-কিন্তু এর তো ফাসির সাজা হয়েছিল।
-হুম ফাসির সাজা হয়েছিল ঠিকই কিন্তু ফাঁসি দেওয়া হয়নি। আমাদের আইন রক্ষক যারা, তাদের হাতেই ইনি রেহাই পেয়েছেন।
-এবার এই খবরের কাগজ টা দেখ।
-আরে এই খবর টা তে তো, মণির মত অবস্থা আরও বেশ কয়েকটা বাচ্চার হয়েছিল বলে দেখা যাচ্ছে।
-শুধু হয়েছিল নয়, এখনও আছে। পুরো ব্যাপারটা এবার তোর সাথে খোলসা করি।
Mr. Ash বলতে শুরু করলেন- মণির চোখ দেখেই বুঝেছিলাম, এটা কোন অসুখ নয়। বা এটা কোন ভূতে ধরাও নয়। ড্রাগ বুঝলি তো ড্রাগ!
-ড্রাগ!
-হুম, ড্রাগ। যখন মণির মা বলল, সে চরণামৃত এনে মণিকে দিয়েছে, তখনই একটু খটকা লাগল, কারণ একমাত্র এই চরণামৃত টাই বাইরে থেকে আমদানি হয়েছে। আর ওই চুল টা পরীক্ষা করে জানা গেল, চুলের মধ্যে এক অদ্ভুত ভাইরাস বাসা বাঁধছে। আর এর পিছনে রয়েছে সেই ড্রাগ, এই ভাইরাস শরীর থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে, মানুষকে দুর্বল বানিয়ে দেয়।
সন্দেহ দূর করতে গেলাম ওই মন্দির টাতে, নিয়ে এলাম চরণামৃত। পরীক্ষা করে জানলাম এটা চরণামৃত নয়, এটা হল নিরাজিগাসিমাস নামক এক সাংঘাতিক ড্রাগ। চরণামৃতের সঙ্গে ড্রাগ মেশানো হয়েছে। এই ড্রাগ এক বার যার শরীরে যায় সে প্রথমে অদ্ভুত অদ্ভুত স্বপ্ন দেখতে থাকে, এরপর ভয়ে সে চিৎকার করতে থাকে।
এরপর হঠাৎ করেই তার শরীরের পরিবর্তন শুরু হয়। আর এর শেষ পরিণতি হল মমিফাইড হয়ে মৃত্যু। এই বিষয়টা নিয়ে আরও জানতে চাইলে, ওই হলুদ রঙের মলাট দেওয়া বইটা পড়তে পারিস।“
-কিন্তু এতে ওই পূজারীর লাভ কি!
-কমিশন।
-কমিশন!
-হুম, কমিশন।
-তার মানে ওই ডাক্তার আর পূজারী…!
-হুম, ঠিক ধরেছিস। তার একই ঘাঁটের পশু। তুই বললি, স্যানাল বাবুর এক বন্ধু তাকে ডাক্তার বোস এর খবর দিয়েছিল। এই পুরো খেলাটাই আসলে একটা চেস বোর্ড। আর এই চেস বোর্ডের প্রধান খিলাড়ি হলেন ওই ডাক্তার বোস। তার ক্যাবিন চলছে না দেখে, তিনি সাইকোলজি ডাক্তারের রূপ নিলেন। খুঁজে বার করলেন, চিকিচিকি বুম বুম কে। এরপর একটি ডিল করলেন। ড্রাগের সাপ্লাই আসত ডাক্তার বোসের হাত ধরে।
এরপর নানা উপায়ে ড্রাগ দেওয়া রোগীকে বোসের চেম্বারেই পাঠানোর ব্যবস্থা করা হত। পুরো কাজটাই হত তিনটি ধাপে। আর এর প্রথম ধাপ হল, ড্রাগ দেওয়া। এরপর ড্রাগ দেওয়া ব্যক্তিদের উপর নজর রাখা আর শেষে সেই রোগীকে চেম্বারে পাঠানোর ব্যবস্থা করা। আর ধীরে ধীরে সবার অজান্তেই রোগীর বডি অরগ্যান সরিয়ে ফেলা। আর এতে কিছুদিন পর রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত।“
-তার মানে, স্যানাল বাবুর সেই বন্ধুও এর সঙ্গে জড়িত। সেও কি তাহলে কমিশন…!
-হুম, আলবৎ কমিশন পাবে। এক জঘন্য খেলা খেলছে এরা। তুই স্যানাল বাবুর বাড়িতে গিয়ে আমি যা কিছু বললাম সব বুঝিয়ে দে, আমি একটু পুলিশ ষ্টেশনে গিয়ে দেখা করে আসি।
-ওকে boss.
-দাড়া দাড়া, যাচ্ছিস কোথায়। আসার সময় পার্ক আনতে বলেছিলাম, নিয়েও এসেছিস। সেগুলি প্রথমে দে।
-তুই কিভাবে বুঝলি, আমি পার্ক এনেছি!
-পরে বলব। আপাতত যা বলেছি তা কর।
এরপর দুইজন দুই দিকে রওনা দিল, একজন পুলিশ ষ্টেশনে আরেকজন স্যানাল বাবুর বাড়িতে।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- দুই বোনের উধাও রহস্য
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
নতুন গোয়েন্দা গল্প। রহস্যময় গোয়েন্দা গল্প detective story in bengali
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।