প্রাচীন কালের একটি কল্পিত কাহিনী তে একজন সাধারণ ছেলের সফলতার কাহিনী রয়েছে। জাঁকজমকপূর্ণ এই গল্পটি আশা করছি আপনাদের পছন্দ হবে।

কল্পিত কাহিনী:- ‘হুইলার’

সময়টা ছিল আজ থেকে বহু যুগ পূর্বের , হরপ্পা সভ্যতার মধ্যম পর্ব । উন্নতমানের জনজীবন , শস্যাগার, স্নানাগার সবদিক থেকেই তারা ছিল উন্নত। শহরের উঁচু অংশ শিটাডেল নামে পরিচিতি ছিল যেখানে থাকতো সমাজের উচ্চবর্গের মানুষেরা। তারা নিম্নবর্গের মানুষদের ঠিক সুনজরে দেখতো না । তৎকালীন সময়ে উচ্চবর্গের প্রধান তেমিং হঠাৎ করে একদিন সবাইকে সভায় আমন্ত্রণ জানালেন। সভায় উপস্থিত ব্যক্তিবর্গকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন আমি যদি মারা যাই এই শিটাডেল এর দায়িত্ব কে নেবে? বেশিরভাগ ব্যক্তিই এই ধরনের প্রস্তাব কখনো আশা করেনি তাই এসব শুনে বেশ স্তম্ভিত হলো। তবে তার মধ্যে থেকেও কয়েকজন ইচ্ছে প্রকাশ করলো, “আমি হবো ” বলে ।

যারা ইচ্ছে প্রকাশ করলো তাদের নিজেদের মধ্যেই বচসা বেঁধে গেলো, এসব দেখে তেমিং বেশ দুশ্চিন্তায় পড়লেন। তখন মাঝ থেকে কে যেন চিৎকার করে বলে উঠলো , ” আচ্ছা প্রধান মশাই একটা প্রশ্নের উত্তর দিন তো আগে , হঠাৎ করে আপনিই বা মরতে যাবেন কেন ? আর আমাদের মধ্যে এসব দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছেন কেন ? আপনার যাকে যোগ্য মনে হবে তাকেই না হয় করে দেবেন প্রধান।” প্রশ্নটির সাথে প্রস্তাবটি শুনে তিনি বেশ খুশি হলেন, তাই সেই ব্যক্তিটিকেই নিজের কাছে ডাকলেন ।

সবার সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ,তাকে দেখে অনেকে অনেক কটূক্তি করলো । প্রধান কে প্রণাম জানিয়ে ব্যক্তিটি ( হুইলার) সভায় উপস্থিত ব্যক্তিবর্গদের প্রণাম জানালো। কয়েকটি প্রশ্ন – উত্তর এর পর্ব শেষ হবার পর , প্রধান মশাই হুইলারকেই যোগ্য বলে ঘোষণা করে , আগামি দিনের প্রধান হিসেবে নির্বাচন করলেন ।

কল্পিত কাহিনী
কল্পিত কাহিনী

যদিও এতে সভায় উপস্থিত কোনো ব্যক্তি এই খুশি হয়নি । কিন্তু প্রধান এর বাক্য তাদের কাছে গুরু আজ্ঞা সম। তাই সবাই সভা শেষে নিজ নিজ বাড়ি ফিরে গেলো । পরের দিন সকালে রব উঠলো প্রধান মশাই কে কেউ রাত্রের অন্ধকারে বিষ খাইয়ে হত্যা করেছে । সব দোষ গিয়ে পড়লো হুইলার এর ঘাড়ে।

শিটাডেল বাসীরা নিজেরাই সভার আয়োজন করে প্রমাণ ছাড়াই হুইলার কে মৃত্যুদণ্ডের বিধান দিলো। এদিকে প্রধান মারা গেছে রব তো উঠলো কিন্তু কই তার মৃত দেহ তো পাওয়া যায়নি , সে কথা কোনো ব্যক্তির মাথায় এলো না। সিধান্ত গৃহীত হল, হুইলারকে নিয়ে যাওয়া হলো নদীর তীরে , সেখানেই তাকে গলায় দড়ি দিয়ে মেরে , তার শব দেহ টাকে একটা খুঁটি তে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে যাতে চিল, শকুন ভক্ষণ করতে পারে । নিষ্পাপ হুইলার প্রাণভিক্ষা চাইলেও কেউ তার কথার মান্যতা দিলো না ।

যে হুইলার কে কেন্দ্র করে এত কিছু, আগে তার পরিচয় জেনে নিন-
নিম্নবর্গের এক দরিদ্র কুমোরের বাড়িতে জন্ম হুইলারের। পিতার নাম সুয়াং ও মাতার নাম ছিল তুতুইং। ছেলেটি ছোট থেকেই অলস, বোকা ও আনমনা স্বভাবের। সে ছোট থেকে খাবার পোশাক আসাক এসব নিয়ে খুব মনোরোগে ভুগতো , কারণ সে বাজারে দেখেছিল শিটাডেল এর বাচ্চারা ভালো ভালো পোশাক পরে আবার বাজার এলে দামী দামী ফল ও কেনে । তাই তার নিজের মায়ের বাবার প্রতি চরম অনুরাগ কেন তাকেও সেসব পোশাক আশাক , ভোজনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়না ?

পড়ুনঃ- এক ভয়ানক নিশি রাতের গল্প 

বুদ্ধিমন্দা,অলস যতই হোক তাও হুইলার তো তাদেরই সন্তান তাই তারা বলতেন ‘শোনো বাবা যেদিন তুমি বড়ো হবে সেদিন নিজে না হয় সিটাডেল এর বাসিন্দা হওয়ার চেষ্টা করবে।’ হুইলার জিজ্ঞাসা করতো ” আমি কি করলে ওখানের বাসিন্দা হতে পারবো ?” তার বাবা মা বলতো, ‘সে অনেক কিছু, তুমি পারবে বলে তো মনে হয় না। তবে শুনে রাখো ধনসম্পত্তি থাকলেই শিটাডেলের বাসিন্দা হওয়া যায় । একথা শুনে হুইলার চরম আগ্রহের সাথে বলতো আমি সিটাডেলের বাসিন্দা হয়েই দেখাবো।

এর পর থেকেই সে ছিচকে চুরি করা শুরু করলো কিন্তু বুদ্ধিমন্দ সেই ছেলে প্রত্যেক বারেই ফেঁসে যেত। শাস্তি পেতে পেতেও সে থামেনি। তবে যাদুবিদ্যার প্রতি তার ছোট থেকেই ভীষণ ঝোঁক ছিল , তাই সেটিতে একাগ্র মনে পারদর্শীতা অর্জন করেছিল ।

সে নিজের লক্ষ্যে স্থির , তাই একটি ডাকাত দলের সাথে যোগ দিল, এই মর্মে যে সেই দল তাকে সিটাডেলের বাসিন্দা বানাবে পরিবর্তে তাকে তাদের জন্য একটি কাজ করতে হবে। সর্দার তাকে একটি ছোট বড়ি দিয়ে বললেন এটি যত্ন করে রাখবি , আর আমার আদেশ পেলেই যার খাবারে মেশাতে বলবো তার খাবারে মেশাবি।

এভাবে ডাকাতের সাহায্যে বোকা হুইলারও কিছুটা চালাক হয়ে উঠলো , অনেককেই এই ওষুধ খাইয়ে খুন করে তারা ধনসম্পত্তি লুঠ করতে লাগলো। তার কিছুদিন পরেই খবর এলো প্রধান নাকি সভার আয়োজন করেছে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য । তাই সর্দার তখন ফন্দি করে সুমেরীয় এক বনিকের ছদ্মবেশে হুইলার কে সভাতে পাঠালো । তারপরের ঘটনা তো উপরেই বলা হয়েছে ।

কল্প কাহিনী
কল্প কাহিনী

হুইলার কে তো নদীর ধারে নিয়ে আসা হলো কিন্তু যার দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে মারার কথা সে আসছে না । ক্ষণে ক্ষণে হুইলারের বুকের রক্ত হিম হয়ে উঠছে , এই ভেবে ” বুঝি এই দড়ি এনে গলাতে ঝুলিয়ে শেষ করে দিলো” । ইতিমধ্যে যেন হঠাৎ করে কোথা থেকে এক তুফান এল, সব যেন লন্ড ভন্ড করে দেবে , নদীর বালি যেন হুংকার দিচ্ছে এক্ষুনি ফিরে যা সবাই নইলে এই বালি নিজের সাথেই সবাইকে মিলিয়ে নিয়ে আবার সমতলে লুটিয়ে পড়বে। কিছুক্ষন পর পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হলো ধীরে ধীরে। কিন্তু একি! সবাই এদিক ওদিক এ ছিটকে পড়লেও হুইলার কই , তবে সে কি নদীর জলে ঝাঁপ দিয়ে মরেছে ?

হুইলার কে খোঁজ করেও কেউ কোত্থাও খুঁজে পায়না। দূরের ওই রাস্তা ধরে কে যেন দৌড়াতে দৌড়াতে চিৎকার করে বলতে বলতে আসছে ” ওকে মেরোনা ” ছেড়ে দাও ওকে। ব্যক্তিটি কাছে আসার পর বোঝা গেলো সেই হলো প্রধান মশাই।

প্রধান মশায় নিজেই স্বীকার করলেন , তার মৃত্যুর খবর তিনি নিজে ছড়িয়েছিলেন , যাতে হুইলারের যোগ্যতা যাচাই করতে পারেন। কিন্তু হুইলার এতে ব্যর্থ হয়েছে। সে সাহসিকতার পরিচয় না দিয়ে ভিরুর মতো মৃত্যুদণ্ড মেনে নিয়েছে। এমনকি সে একজন সুমেরীয় বণিক , তার ওপর নগরের দায়িত্ব তুলে দেওয়াটাও বিশ্বাস যোগ্য নয় বলেই তার মনে হয়েছে। তাই প্রধান হিসেবে তাকে নির্বাচন করাটা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। সবাই প্রধানের কথা শুনে খুব আনন্দিত হলো। যে যার বাড়ি ফিরে গেলো ।

পরের দিন প্রধানের স্বপ্ন তে একটি কঙ্কাল এসে তাণ্ডব নৃত্য করতে শুরু করলো । সেই নদীর প্রান্তে যেন একটি কঙ্কাল নৃত্য করছে আর তার কাছে প্রধান নিজে মাথা নত করে বসে আছে। প্রথম প্রথম সামান্য স্বপ্ন ভাবলেও , দিনদিন এর প্রকোপ বাড়তে থাকলে তিনি হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে পঙ্গু হয়ে গেলেন । আর তার এই অবস্থার ফলে নগরীর ওপর নেমে এলো চরম বিপর্যয়। যার সুযোগ নিয়ে , একদল লুঠেরা আক্রমণ করলো । শর্ত রাখলো তাদের দলের এক সদস্য কে প্রধান বানাতে হবে নয়তো সব লুঠ করে তারা নিয়ে চলে যাবে।

প্রাচীন কালের গল্প
প্রাচীন কালের গল্প
<

সাধারণ জনগন প্রথম শর্ত মেনে নিলো। ঘটা করে সভার আয়োজন করে মহা সমারোহে প্রধান কে অভিষেক করার ব্যবস্থা করা হলো । অধীর আগ্রহে যখন প্রত্যেকে প্রধান কে দেখার জন্য আকুল দৃষ্টিতে চেয়ে আছে , তখন তাদের সামনে এসে উপস্থিত হলো হুইলার । অনেকে বিতৃষ্ণার সুরে বলে উঠলো ” তারমানে সেদিন ব্যাটা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মরেনি, ফন্দি এঁটে নগর দখলের পরিকল্পনা করছিলো”। অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রত্যেকে মেনে নিলো হুইলারকে প্রধান রূপে। দূর থেকে তার বাবা মা অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো হুইলারের দিকে।

হুইলার তার প্রতি করা অপমানের প্রতিশোধ , এভাবেই নিলো। অলস , বুদ্ধিমন্দ নামে পরিচিত হুইলার , সিটাডেলের বাসিন্দা নয় সরাসরি প্রধান রূপে প্রতিষ্ঠিত হলো । সেই সময়েই সে প্রমাণ করেছিল ” মন থেকে কিছু চাইলে , ভাগ্য একসময় ঠিক সাথ দেয়” । তবে এত বড় সাফল্যের পেছনে মূল কারণ ছিল তার জাদুবিদ্যা নইলে হয়তো প্রধান তেমিং কে পঙ্গু করা সম্ভব ছিলনা।

আলোরানি মিশ্র

প্লট রচনায়-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 
আধুনিক ছোট গল্প- ন্যায়

কল্প বিজ্ঞানের কাহিনী- কুমিকম্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

কল্পিত কাহিনী। কল্প কাহিনী। প্রাচীন কালের গল্প। bengali fictional story

Spread the love

Leave a Reply