আজকের নতুন আধুনিক ছোট গল্প তে সময়ের সাথে সাথে সুপ্ত প্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন লেখক তার গল্পে।

নতুন আধুনিক ছোট গল্পঃ- “ঘরে ফেরার গল্প”

কলেজের দাপুটে নেতা সন্দীপন আজ ভুলে গেছে অধিকার নিয়ে লড়াই করা। পরিস্থিতির চাপে আজ সে মুম্বাই শহরের একটা পানশালার ওয়েটার। তবে সে বোধহয় বদলে যাওয়া জীবনটা নিয়ে সুখেই আছে। ওর প্রেমিকা অনিতা বার ড্যান্সার, শুধু চেন স্মোকার নয়। মুখে অনবরত খিস্তি লেগে আছে। সন্দীপনের তাই আর রবীন্দ্র সঙ্গীত, মান্না দে, হেমন্ত শোনা হয় না। তবুও আগের চেয়ে ভালোই ‘ও’ আছে। ঠিক যেমনটা দাবি করেন দেশের শাসকরা ” আচ্ছে দিন আগেয়া” আর কি?

কাজের শেষে ফ্লাটে ফেরা, মদ মাংস গাণ্ডে পিণ্ডে গিলে, বান্ধবীর সঙ্গে একটু যৌনতা করে, ঘুমিয়ে পরা। আবার ঘড়ির অ্যালার্ম এর চ্যাঁচানি শুনে ঘুম থেকে ওঠে কাজে যাওয়া। ভালোই আছে সন্দীপন। শুধু হারিয়ে গেছে বন্ধুবান্ধব পাড়ার আড্ডা, লাইব্রেরি, নাটকের রিহার্সাল। হারিয়ে গেছে পরিবার আত্মীয় স্বজনের সাথে উৎসব অনুষ্ঠানে দেখা করা। হারিয়ে গেছে মা বাবার অহেতুক চিন্তা ভাবনা, কথায় কথায় বকা ঝকা।

সন্দীপন এর জীবনটা হঠাৎ করেই বদলে গেলো, কিন্তু সত্যি এটা জন্য ও দায়ী! না দায়ী, আমাদের দেশের এই শাসন ব্যবস্থা। এখানে দেশে নেতা নির্বাচিত হন টাকার জোরে। তাই জিতে প্রথম লক্ষ্য বিনিয়োগ করা টাকা ফিরত পাওয়া। তাই সন্দীপনের নিজের যোগ্যতায় পাওয়া চাকুরিটা পেয়েও পাওয়া হলো না। ও ১০১৫ দিন ধর্নায় বসে ছিল। কোর্টে আইনি লড়াই করেছিলো। কিন্তু পরে হতাশ হয়ে মুম্বাই চলে এলো। কারণ ওর জন্য আর অপেক্ষা করতে পারলো না গীতাঞ্জলি। বিয়ে করে নিলো বাড়ির পছন্দ করা পাত্রকে।

নতুন আধুনিক ছোট গল্প
নতুন আধুনিক ছোট গল্প

তখন ও বুঝতে পেরেছিল পকেট শূন্য পুরুষে দের স্বপ্ন দেখার অধিকার নেই । ওরা কোথাও শান্তি পায় না , সম্মান পায় না, না পায় প্রেমিকা থেকে আরো কয়েকটি দিন সময় । শান্তি পায় না পরিবারের কাছে, মা বাবার কাছে ও না! না সুখ পেয়ে , সম্মান না পেয়ে, সব না পাওয়া নিয়ে জগতে এদের নিঃশব্দহীন হয়ে বাঁচতে হয়। তখন সন্দীপনদের মুখের কথাও সবার কাছে তিক্ত মনে হবে। তাই এ জগতে পকেট ভর্তি টাকাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হয়। তাই মুম্বাই চলে এলো কাজের সন্ধানে।

পড়ুনঃ- প্রথম দেখায় প্রেমের গল্প 

মুম্বাই ওকে হতাশ করে নি। তবু মুম্বাই এর সব কিছু ওর কাছে নকল মনে হয়। ও অভিনয় চলেছে ভালো থাকার। ও ওর প্রেমিকাকে সত্যি ভালো বাসে কিনা জানে না! অনিতা মুম্বাই এসেছিল মডেল হতে, অভিনেত্রী হতে। কিন্তু বার এর ওর শয্যা সঙ্গিনী হয়েও কিছু সুবিধা করতে পারেনি। তারপর এখন বার ড্যান্সার হয়েছে। হিসাবে মতো এমন বাজারি মেয়েদের ঘৃণা করে সন্দীপন। কিন্তু সন্দীপনকে ওর কাছে ভালোবাসার অভিনয় করতেই হয়।

কারণ মুম্বাইের মতো শহরে ঘর ভাড়া দিয়ে থাকলে ও কখনোই ওর ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা পয়সা জমাতে পারবে না। তাই একটু অভিনয় করতে হয়, মেয়েটা সব লম্পটগিরি সহ্য করতে হয় নীরবে। কারণ যে গরু দুধ দেয় তার লাথি তো খেতেই হবে।

ড্যান্স বার থেকে বেরোতে আজ দেরি হয়ে গেল। সারা রাস্তায় তেরঙ্গা পতাকা ছড়াছড়ি। গাড়িতে, হাতে, মুখে , দোকানে , ছাদে , ব্যালকনিতে , কোথাও উড়েছে, কোথাও ঝুলছে পতাকা। আজ ২৬ জানুয়ারি, বছরের দুই দিন জন্য আমাদের দেশ প্রেম হুট করে বেড়ে যায়।

আধুনিক ভালোবাসার গল্প
আধুনিক ভালোবাসার গল্প

দরজা খুলতেই সারপ্রাইজ। শাড়ি পড়ছে ও। মাগুর মাছের মত ওর মসৃণ পেট, গভীর নাভি, কিংবা কাপড় আবরণ থেকে বেরিয়ে আসতে চাওয়া ওর সুঠাম বুক, কমলালেবুর মতো রসালো ঠোঁট, কোন কিছুই আজ ওকে আকর্ষণ করলো না। একটা নাটকীয় মোড়ের মতো ও সন্দীপনকে প্রণাম করলো। তারপর শান্ত ভাবে খাঁটি বাংলায় বললো, ” শুভ জন্মদিন। স্নান করে আসুন , আমি খাবার করিয়া আনিছা। তাড়াতাড়ি করো আয়।”

কিছুটা ভুল আর ভাঙ্গা বাংলা। কিন্তু সন্দীপন বুঝতে পারলো। খাবার টেবিলে গিয়ে সে আরো অবাক। পূর্ণিমা চাঁদের মতো সাদা ভাত।  ডাল সন্দীপনের প্রিয় আলু ডিম সেদ্ধ মাখা, চিংড়ি মালাইকারি, আবার রুই মাছের কালিয়া। আর সবচেয়ে বড় পাওয়া গুড়ের পায়েস।

ও অদ্ভুত সুন্দরভাবে আবার ওর ভুল ভাল বাংলায় বললো” রেস্টুরেন্ট থেকে আনিয়াছি ভাববি না। আমি নিজেই রান্না করিয়াছি। ইউটিউব আর আপনার মা সাথে কথা বলিয়া। “

পড়ুনঃ- অনুপ্রেরনা মূলক গল্প 

সন্দীপন চোখে জল এসে গেল , চোখের সামনে এতো বছর পরে সন্দীপনের প্রিয় বাঙালি খাবার দেখে আর ” মা “শব্দটা কানে আসতে। ওকে সন্দীপন জড়িয়ে ধরলো । ওর চোখে জল।

ও সন্দীপনের অজান্তে, মা বাবার সাথে রোজ কথা বলতো। দূরত্ব যত হোক মা বাবার ভালোবাসা একটু কমেনি সন্দীপনের জন্য। সন্দীপনের সাথে ভিডিও কলে কথা হলো সন্দীপনের মা বাবার। ও অনুরোধ করলো ফিরে যেতে সন্দীপনের দেশের বাড়ি। ব্যবসার করার জন্য ও ওর জমানো টাকা দিয়ে দিলো সন্দীপনকে । সন্দীপন নিয়ে নিলো তবে একটাই শর্তে ও ফিরবে দেশে, ওর সাথে সন্দীপন এর বৌ হিসাবে অনিতাকে যেতে হবে ওকে। আর সন্দীপনের মায়ের হয়ে থাকবে সন্দীপনদের ছোট দেশের বাড়িতে।

গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।

সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

মানব মণ্ডল

গল্পের কথনে-
পড়ুনঃ- 
দারুণ দারুণ হাসির গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পড়ুন একটি গভীর ভালোবাসার গল্প 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র () 

নতুন আধুনিক ছোট গল্প। আধুনিক ভালোবাসার গল্প। beautiful modern love story.

Spread the love

Leave a Reply