ক্ষুদ্র এই জীবন পরিসরে সময় আমাদের অনেক কিছুই শিখিয়ে যায়। আজ এমনই দুটি জীবনের ছোট গল্প নিয়ে এসেছি। এই দুটি অনুপ্রেরণার গল্প -এর একটি বিদেশী শিক্ষণীয় গল্প যার মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন বীল গেটস। এবং অন্য গল্পটি হল গৌতম বুদ্ধের গল্প।
জীবনের ছোট গল্প-বিল গেটসের গল্পঃ-
বিল গেটসের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন। হুম হুম অবশ্যই শুনেছেন, পৃথিবীর অন্যতম ধনী মানুষ বলে কথা! বিল গেটস তখন সবেমাত্র পৃথিবীর সবথেকে ধনী ব্যক্তির তকমা পেয়েছেন, এমনি একদিন এক ব্যক্তি বিল গেটসকে জিজ্ঞাসা করলেন- “এই পৃথিবীতে আপনার থেকেও ধনী আর কেউ কি আছে?” বিল গেটস জবাব দিলেন- “হ্যাঁ এই পৃথিবীতে আমার থেকেও কয়েক গুন বেশি ধনী ব্যক্তি আছেন।“
সেই লোকটি উৎসুক হয়ে বললেন- “সে কে?”
বিল গেটস বললেন- “যখন আমি বর্তমানের মত এত প্রসিদ্ধি লাভ করিনি এই ঘটনাটি ওই সময়ের। আমি একদিন কোথাও যাওয়ার জন্য নিউইয়র্ক বিমান বন্দরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি আমার ফ্লাইট মিস করেছিলাম, তাই পড়ের ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আমার আছে কোনো উপায় ছিল না। তাই টাইম পাস করার জন্য আমি ঠিক করি একটি খবরের কাগজ কিনব। কিন্তু সমস্যাটা দাঁড়াল, আমার কাছে খুচরা পয়সা ছিল না। সেই খবরের কাগজ বিক্রি করা ছেলেটাকে আমি নোট দিতে সে বলল তারও কাছে খুচরা পয়সা নেই। এরপর আমি খবরের কাগজটি ফিরত দিয়ে দিতে চাইলে, ছেলেটি বলল- থাক এই খবরের কাগজটি আমি আপনাকে এমনিই দিয়ে দিলাম। টাকা দেওয়ার দরকার নেই।
এই ঘটনার পড় প্রায় তিনমাস কেটে গেছে, আমি আবার সেই বিমান বন্দরে অপেক্ষা করছি। আমি আবারও খবরের কাগজ কিনতে চাইলাম। কিন্তু কাকতালীয় ভাবে আমার কাছে সেদিনও কোনো খুচরা টাকা ছিল না। আবার সেই ছেলেটির সাথে দেখা হল। ছেলেটি বুঝে যায় যে, আমি খবরের কাগজ কিনতে চাইছি। ছেলেটি আবারও আমাকে খবরের কাগজ দিতে চাইল। আমি বললাম- আমি এই খবরের কাগজটি নিতে পাড়ব না। সেই ছেলেটি বলল- আপনি এটি নিতেই পাড়ে, আমি আমার স্বার্থের জন্যই এটি আপানাকে দিচ্ছি। এতে আমার কোনো লোকসান হবে না।
এরপর আমি ছেলেটির কাছ তেহকে খবরের কাগজটি নিয়ে নিই। এই ঘটনার পড় কেটে গেছে প্রায় ১৯ বছর। একদিন হঠাৎ করেই সেই ছেলেটার কথা মনে পড়ে গেল। তখন আমার যথেষ্ট নাম-ডাক হয়েছে। আমি সেই বিমান বন্দরে গিয়ে ছেলেটিকে খোঁজার চেষ্টা করলাম। এত দিনে সে হয়ত অনেক বড় হয়ে গেছে। কিন্তু তাঁকে চিনতে আমার ভুল হবে না। ভেবেছিলাম তাঁকে সেখানেই পাওয়া যাবে। অবশেষে পেয়েও গেলাম।
সেই ছেলেটির কাছে গিয়ে বললাম- তুমি কি আমাকে চেনো? ছেলেটি বলল- “হ্যাঁ, অবশ্যই আমি আপনাকে চিনি। আপনার নাম বিল গেটস।“
এরপর আমি বলি- “তোমার কি মনে আছে যে, তুমি একসময় আমাকে ফ্রিতে খবরের কাগজ দিয়েছিলে?”
ছেলেটি- “হ্যাঁ একদম পরিষ্কার মনে আছে, আমি আপনাকে দুইবার ফ্রিতে খবরের কাগজ দিয়েছিলাম।“ আমি বললাম- “আমি তোমার সেই ফ্রিতে দেওয়া খবরের কাগজ গুলির মূল্য আজ দিয়ে দিতে চাই। বলো তুমি কি চাও? আমি তোমার সব চাওয়া-পাওয়া পূরণ করে দেব।“
আমার এই কথাটি শুনে ছেলেটি বলল- “শ্রীমান, আপনার কি মনে হয়, যে আপনি আমার চাওয়া-পাওয়া পূরণ করেই সেই খবরের কাগজটির মূল্য শোধ করতে পাড়বেন?”
এই কথাটি শুনে আমি অবাক হয়ে যাই। আমি বলি- “কেন কেন, কি এমন বিশেষত্ব আছে তোমার সেই খবরের কাগজে?”
ছেলেটি বলল- “উঁহু না, বিশেষত্বটা খবরের কাগজে নয়, বিশেষত্ব আছে অতীত এবং বর্তমান অবস্থার মধ্যে। আমি যখন আপনাকে সাহায্য করেছিলাম তখন আমি খুবই গরীব ঘড়ের এক ছেলে ছিলাম, পরিবারের দায়ে আমি খবরের কাগজ বিক্রি শুরু করি। আমি তখন গরীব ও অসহায় ছিলাম। কিন্তু আপনি পৃথিবীর ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় নিজের নাম তোমাল পড়, আজ এত্ত বছর পড়ে, আমাকে সাহায্য করতে এসেছেন। তাহলে আপনি কিভাবে আমার সেই সাহায্যের আর্জি পূরণ করবেন?”
বিল গেটসের নজরে সেই ছেলেটিই সবথেকে বেশি ধনী ব্যক্তি। কারণ কারও সাহায্য করার জন্য সে ধনী হওয়ার অপেক্ষা করেনি।
প্রিয় বন্ধুরা, তাহলে বুঝলেই তো, কাউকে সাহায্য করার জন্য ধনী হওয়ার প্রয়োজন নেই। নিজের যা আছে তাইই দিয়ে অপরের কাজে লাগানো যায়। অনেক মানুষ ভেবে বসে থাকেন- “আমি যখন ধনী হব তখন গরীবদের সাহায্য করব” কিন্তু আপনি ধনী হতে হতে তাদের সেই দারিদ্রতা তারা ইতিমধ্যে কাঁটিয়ে উঠে যাবে। কাউকে সাহায্য করার জন্য ধনী হওয়ার প্রয়োজন নেই, ধনীর ধন-সম্পদের মত বিশাল একটা মন থাকলেই যথেষ্ট।
রাজনৈতিক নেতাদের মুখে প্রায়ই শুনে থাকবেন- “আমাকে ভোট দিলে আমি অমুখ করব, তমুখ করব।“ এখানে আমার কথা হল, যদি মানুষের সাহায্য করার ইচ্ছাই থেকে থাকে, তাহলে এখনই কর না বাপু! ভোটে জেতার আশায় মানুষকে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার দরকারটা কি?
পড়ুনঃ- মায়ের ভালোবাসা। মোটিভেশনাল ছোট গল্প
গৌতম বুদ্ধের গল্প- অনুপ্রেরণার গল্পঃ-
অনেক কাল আগের কথা। গৌতম বুদ্ধ একটি গ্রামে ছিলেন। গ্রামের মানুষজন তাদের নানান সমস্যা নিয়ে গৌতম বুদ্ধের কাছে নানান পরামর্শ নিতে আসেন। মনমরা ভাব নিয়ে গেলেও সবাই হাঁসিমুখে ফিরতেন।
একদিন এক ব্যক্তি দেখলেন- একজন অত্যন্ত দুঃখী মানুষ, ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বুদ্ধের কাছে গেলন। কিন্তু আশ্চর্য তিনিও হাঁসি মুখে ফিরলেন। এটি দেখে সেই লোকটি ভাবলেন- “গৌতম বুদ্ধের কাছ যাওয়ার আগে সবাই মনমরা ভাব নিয়ে গেলেও, ফিরার সময় কিভাবে হাঁসি মুখে ফিরছে তারা? নিশ্চয়ই তিনি কোনো জাদু জানেন, জাদু বলে সবাইকে সুখী করে তুলছেন। আমিও তার সাথে গিয়ে আমার দুঃখের কথা বলি। আমারও অবস্থা ভালো নয়। আমার বাবা গরীব ছিলেন। আমিও গরীব। শুনেছি আমার বাবার বাবাও গরীব ছিলেন। যাই একটু শুনে আসি আমাদের অবস্থার কি কোনো পরিবর্তন হবে না! আমরা কি বংশপরম্পরায় এভাবে গরীব হয়েই কাটাব? আমরা কি কোনো দোষ করেছি ঈশ্বরের কাছে?
এরপর তিনিও গৌতম বুদ্ধের আস্তানার কাছে ভয়ে ভয়ে পা-বাড়াতে লাগলেন। গৌতম বুদ্ধের সঙ্গে দেখা করার জন্য বিশাল লম্বা লাইন, তাই তাকেও লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে। তিনি দেখলেন, মানুষ তাদের সমস্যা গৌতম বুদ্ধের কাছে অঝোরে বলেই যাচ্ছে। কিন্তু গৌতম বুদ্ধ একদম শান্ত ভাবে তাদের সবার সমস্যা শুনেই যাচ্ছেন। এবং শান্ত ভাবে উত্তর দিচ্ছেন।
দেখতে দেখতে সেই ব্যক্তিটিরও পালা চলে এল। তিনি বুদ্ধদেবের কাছে গিয়ে বললেন- “প্রভু আমিই শুধু গরীব কেন? সবার অবস্থার উন্নতি হয়, কিন্তু আমার অবস্থার উন্নতি হয়না কেন? আমাকে কি সারাজীবন গরীব হয়েই কাঁটাতে হবে?” এটি শুনে বুদ্ধদেব বললেন- “তুমি কখনো কাউকে কিছু দান করেছো?”
এটি শুনে লোকটি হেঁসে বললেন- “হাসালেন ঠাকুর, আমার কাছে কিছুই নেই, মানুষকে আমি কি দিব? আমি নিজেই খুব কষ্টে দিনযাপন করি। কোনো দিনতো আবার এমনও আসে যে, খাবার টুকুও জোগাড় হয়না।“
গৌতম বুদ্ধ শান্ত স্বরে বললেন- “কে বলল তোমার কাছে কিছু নেই? তোমার কাছে সুন্দর একটি মুখমণ্ডল আছে এর মাধ্যমে তুমি সুন্দর হাঁসি হাঁসতে পাড়। তোমার মুখ দিয়ে তুমি অন্যের প্রশংসা করতে পাড়। ঈশ্বর তোমাকে দুটি হাত দিয়েছেন, এই হাত দিয়ে তুমি অন্যকে সাহায্য করতে পাড়।“
বুঝলেন তো! যার কাছে এই তিনটি জিনিস আছে, সে কিভাবে গরীব হতে পাড়ে? কেবলমাত্র অর্থ মানেই ধনী নয়, অর্থ মানুষের চিন্তা বাড়ায়। অর্থ মানুষের অনিশ্চয়তা বাড়ায়। আপনি যার অপরের যতটা কাজে আসবেন, আপনিও তততাই সুখী হবেন, আর এটাই সৃষ্টির নিয়ম।
নিয়মিত আপডেটের জন্য- ফেসবুক-গল্প আর গল্প
টেলিগ্রামঃ- CharpatraOFFICIAL
“জীবনের ছোট গল্প। বিদেশী শিক্ষনীয় গল্প। অনুপ্রেরণার গল্প। 2 BEST MOTIVATIONAL STORY”
RECOMMENDED BY ছাড়পত্রঃ-
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।