আজকের ব্লগে আমরা ইতিহাসের পাতায় ঘটে যাওয়া কিছু সেরা কাকতালীয় ঘটনা জানতে চলেছি। এই অবিশ্বাস্য ঘটনা গুলি কোনো গল্প নয়। আগেই বলা হয়েছে এগুলি কাকতালীয় ঘটনা অর্থাৎ যেটা ধারণা করা যায় না সেটাই হয়েছে।
পৃথিবীর সেরা কাকতালীয় ঘটনা (WORLDS TOP COINCIDENCE):-
প্রতিশোধঃ-
প্রেম করতে সবাই চায়, কিন্তু প্রেমের জগতে আসার কিছুদিন পরেই, অনেকেই ছাড়াছাড়ি হয়ে যান। কেউ এই বিচ্ছেদকে মেনে নিতে পারে, আবার কেউ মেনে নিতে পারে না। এমনই হয়েছিল হেনরি জিগল্যান্ড নামের এক ব্যাক্তির প্রেমিকার কাছে। জিগল্যান্ড তার প্রেমিকার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ ঘটান। এই বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি তার প্রেমিকা। মানসিক চাপে ভারাক্রান্ত হয়ে তার প্রেমিকা আত্মহত্যা করে ফেলেন। এদিকে বোনের আত্মহত্যার প্রতিশোধ নিতে তার ভাই জিগল্যান্ড-কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। জিগল্যান্ডকে বাগানে ঘুরতে দেখে প্রেমিকার ভাই জিগল্যান্ড-কে উদ্দেশ্য করে গুলি, ছুড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু গুলি জিগল্যান্ডকে না লেগে তার গা ঘেঁষে গিয়ে লাগে বাগানের একটি গাছে, এবং গুলি গাছের ভিতর ঢুকে যায়।
এদিকে প্রেমিকার ভাই ভেবে নেয় যে, জিগল্যান্ডকে সে মেরেছে, একজন মানুষকে মারার পর, তার মনে অপরাধ বোধ হতে থাকে এবং সে নিজেই নিজেকে গুলি মেরে আত্মহত্যা করে ফেলে।
এই ঘটনাটির প্রায় ২০ বছর পর, জিগল্যান্ড সেই গাছটিকে, যেটিতে গুলিটি ঢুকে গিয়েছিল, কাটার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এই বিশাল গাছটি কিভাবে কাটবে, কিছুতেই সে বুঝে উঠতে পারছিল না। এরপর সে, ডিনামাইট দিয়ে সে গাছটিকে উড়িয়ে দেওয়ার সিধান্ত নেয়। যেই ভাবা সেই কাজ, যখন ডিনামাইটটি ফেটে যায় তখন ডিনামাইটের প্রচণ্ড চাপে, এবং হঠাৎ ঝটকাতে গাছ থেকে ২০ বছর আগে ঢুকে যাওয়া গুলিটি সজোরে বেড়িয়ে যায়, এবং দূরে দাঁড়িয়ে থাকা জিগল্যান্ডের কপালে গিয়ে লাগে, আর সে তৎক্ষণাৎ মারা যায়। এভাবেই ২০ বছর পর প্রেমিকার ভাইয়ের বদলা সম্পূর্ণ হয়েছিল।
যমজ ভাইয়ের রহস্যময় মৃত্যুঃ-
এবারের ঘটনাটি ১৯৭৫ সালের, এই ঘটনাটি দুইজন যমজ ভাইকে নিয়ে। বারমুডার দুই যমজ ভাইয়ের একজন, একটি ট্যাক্সির ধাক্কায় মারা যান, কিন্তু এই ঘটনাটির এক বছর পর, আরেক ভাইয়ের মৃত্যু ঠিক একই ভাবে হয়েছিল। শুধুমাত্র এটিই নয় স্থান-কাল-পাত্র সবই একই ছিল। ঠিক ওই গাড়িটিই, একদম ওই স্থানটিতেই, যেখানে তার ভাইয়ের ধাক্কা লেগেছিল। এমনকি গাড়িটির ড্রাইভার পর্যন্ত একই ছিল। এটি সত্যি একটি কাকতালীয় ঘটনা।
হ্যালির ধূমকেতু ও মার্ক তুএনঃ-
মার্ক তুএন –এর জন্ম ১৮৩৫ সালে, তার জন্ম হয় যেদিন হ্যালির ধুমকেতু পৃথিবীর নিকট দিয়ে যাচ্ছিল, পৃথিবী থেকে এই ধূমকেতুকে খালি চোখেই সেদিন দেখা যাচ্ছিল। এই ধূমকেতুর সঙ্গে মার্ক তুএন এর জন্ম- মৃত্যুর একটি কাকতালীয় ঘটনা রয়েছে। এরপর ১৯১০ সালে, ৭৫ বছর পর, ধূমকেতুটি আবার দেখা যায়, আর আশ্চর্যের ব্যাপার হল মার্ক তুএন সেদিনই মারা যান। এই ঘটনাটির এক বছর আগে তুএন বলেছিলেন-“ আমি হ্যালির ধূমকেতুর সাথেই এই পৃথিবীতে এসেছিলাম, আর মাত্র এক বছর পরেই এই ধূমকেতুটি আবার আসছে, আমার মনে হয়, আমি এই ধূমকেতুটির সাথেই আবার পৃথিবী থেকে চলে যাব।“ আর এক বছর পর তার করা ভবিষ্যৎবাণী সত্যি হয়ে গেল।
লেঙ্কন এবং কেনেডিঃ-
এবার আমরা আমেরিকার দুই রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম লেঙ্কন এবং জন এফ কেনেডির সঙ্গে যুক্ত কাকতালীয় ঘটনা জানব। তাদের সঙ্গে যুক্ত এই কাক্গতালীয় ঘটনা গুলি আমেরিকাতে বহুল প্রচলিত। আর অবিশ্বাস্য ঘটনা গুলির উপরে অনেক টিভি শো করা হয়েছে।
তাদের সঙ্গে যুক্ত কাকতালীয় ঘটনা অনেক রয়েছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
দুইজন রাষ্ট্রপতিকেই, মাথায় গুলি করে মারা হয়েছিল।
দুইজন রাষ্ট্রপতিকেই যেদিন গুলি মারা হয়েছিল, সেইদিনটি ছিল শুক্রবার।
লিঙ্কন-কে ফোড এর একটি থিয়েটারে গুলি মারা হয়েছিল, আর এদিকে কেনেডিকে একটি ফোড গাড়িতে গুলি মারা হয়েছিল।
ইংরেজিতে Lincoln এবং Kennedy এই দুইজনেরই নামে সাতটি বর্ণ আছে, অন্যদিকে এদের হত্যাকারীরা যথাক্রমে, John Wilkes Booth এবং Lee Harvey Oswald দুইজনেরই নামের মোট বর্ণ সংখ্যা পনেরো।
ভাগ্যবতী পরিচারিকাঃ-
এবার ভায়োলেট কন্সটেণ্ট জোসেফ –এর ভাগ্যের ব্যাপারে জানুন। তিনি ছিলেন একজন আইরিশ- আর্জেন্টিনা জাহাজ লাইনের একজন পরিচারিকা এবং নার্স। ১৯১২ সালে রাত প্রায় ১১.৪০ নাগাদ বিখ্যাত জাহাজ টাইটানিক হিমশৈলে ধাক্কা লেগে ডুবে যায়, এদিকে জোসেফ তখন সেই জাহাজেই ছিলেন, এই জাহাজে প্রায় ২৩০০ জন যাত্রী ছিল এবং মাত্র ৭১০ জন মানুষ বেঁচে ফিরতে পেরেছিলেন। এই ৭১০ জন মানুষের মধ্যে একজন ছিলেন জোসেফ।
ঠিক একইরকম ঘটনার সাক্ষী তিনি আবার হন ১৯১৬ সালের ২১ নভেম্বর। তিনি তখন HMHS BRITANICA জাহাজে পরিচারিকার কাজে নিয়োজিত ছিল। এই জাহাজটি একটি মাইনের আঘাতে খতিগ্রস্থ হয় এবং ৫৫ মিনিটের মধ্যে ডুবে যায়, এখানে ৫০ জন মানুষ প্রাণ হারান। কিন্তু এবারও জোসেফ বেঁচে যান। দুইবার মৃত্যুকে দেখেও মৃত্যু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছেন, জোসেফ। এরকম ভাগ্য কয়জনের হয় বলুন।
পড়ুনঃ- টাইটানিকের রহস্য এক নয় একাধিক কারণে ডুবেছিল টাইটানিক
পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত প্রাণী।। পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণী আজব প্রাণী
বয়স্ক যমজ রহস্যঃ-
২০০২ সালে ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কি থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে দুটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে যায়। এক বৃদ্ধ, রাস্তা পারাপার করছিলেন, তখন হঠাৎ একটি ট্রাক এসে তাকে ধাক্কা মারে, এবং সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এই ঘটনাটির প্রায় দুই ঘণ্টা পড়ে এবং পূর্বের ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১.৫ কিলোমিটার দূরে ঠিক একইরকম আরেকটি ঘটনা ঘটে যায়। সেখানেও একজন বৃদ্ধ রাস্তা পারাপারের সময় ট্রাকে ধাক্কা লেগে মারা যান। পরবর্তীতে জানা যায় যে, এই দুইজন বৃদ্ধের বয়স ৭০ এবং সবথেকে বড় কথা এই দুইজনই যমজ ভাই ছিল। দুই ভাইয়ের একই দিনে একই ভাবে মৃত্যুর ঘটনা সত্যি কাকতালীয় এবং অদ্ভুত।
ভাগ্যবানের নামঃ-
ঘটনাটা ১৬৬০ সালের ৫ ডিসেম্বরের। গ্রেট ব্রিটেনের ডোবারে একটি জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটে যায়। কোনো মতে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান উইলিয়ামসন নামের এক মানুষ। এই ঘটনাটির ঠিক সাত বছর পর ১৬৬৭ ঠিক একই স্থানে ১২৮ জন যাত্রী নিয়ে আরেকটি জাহাজ ডুবে যায়, এদের মধ্যে ১২৭ জন যাত্রী মারা যান, বেঁচে যান মাত্র একজন। এই ব্যাক্তির নামও ছিল উইলিয়ামসন। কিন্তু না এখানেই ঘটনার শেষ নয়।
১৮২০, ৮ আগস্ট, লন্ডনের বিখ্যাত টেমস নদীতে ডুবে যায় একটি জাহাজ, এবার বেঁচে যান মাত্র একজন, এবার বেঁচে যাওয়া লোকটির নাম ছিল উইলিয়ামসন। এরপর ১৯৪০ সালের ১০ জুলাই একটি ব্রিটিশ ট্রেলার আরামেই তার যাত্রা পথে যাচ্ছিল। হঠাৎ একটি গোলা কোথা থেকে উড়ে আসে এবং ট্রেলারে লেগে যায়। ট্রেলার ডুবে যায়, বেঁচে যায় মাত্র দুই জন। হুম এবার ঠিক একই নাম উইলিয়ামসন।
কি ভাগ্যবান নাম রে বাবা!!
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।