একটি ভিন্ন স্বাদের কলেজের প্রেম কাহিনী নিয়ে আজকের আয়োজন। এক সিনিয়র দাদাকে ভালোলাগা। তারপর সরাসরি বিবাহের প্রস্তাব। কিছু দিন পড় একে অপরকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া। সব মিলিয়েই আজকের এই প্রেমের গল্পটি।

সিনিয়রের সাথে প্রেম। বিচ্ছেদ প্রেমের গল্প কলেজ লাভ স্টোরি কলেজের প্রেম কাহিনী dukher premer golpo

কলেজের প্রেম কাহিনী। সিনিয়রের সাথে প্রেম। প্রেমের গল্প।

স্কুল জীবন শেষ করে এবার কলেজ জীবনের পালা। কত স্বপ্ন একে রেখেছি এই কলেজ জীবনকে নিয়ে। নতুন বন্ধু, নতুন শিক্ষক, নতুন জায়গা রয়েছে ভয়, আনন্দ আগ্রহের মিশ্রণ। তবে আমার বাড়িটাও কিন্তু কলেজ থেকে নেহাত কাছে নয়। ২০ কিমি রাস্তা, পেড়িয়ে তবেই কলেজের মুখ দেখা।

শুনেছি কলেজে নাকি র‍্যাগিং এর ব্যাপার থাকে। কিন্তু কলেজে গিয়ে আমার তেমনটা মনে হল না। সিনিয়র দাদা-দিদিরা খুবই হেল্পফুল। কিন্তু তবুও তাদের সাথে কথা বলার সময় বুক কাঁপত। তবে প্রথমদিন থেকেই শুভ্রনীল দাদাকে আমার দারুন লেগেছে। তার কথা বলার ভঙ্গি, তার সবকিছু বুঝিয়ে দেওয়ার ধরণ সব কিছুই অনবদ্য।

আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে তো প্রায়ই দাদার কাছে এটা-ওটা বুঝিয়ে নিতাম। এবার দেখছি আমার ভয়টা উড়ে গেছে। একদম বন্ধুর মতনই সিনিয়র দাদার সাথে কথা বলছি। এরপর এভাবেই কেটে গেছে কিছুদিন, কখন যে নিজের অজান্তেই দাদাকে ভালোলাগা শুরু হয়ে গেছে, বুঝতেও পারিনি। ভালো লাগার কথাই বটে, কেউ যদি এত সুন্দর ভাবে কোনো কিছু মজ্জাগস্ত করে দেয়, তাহলে তাকে আর ভালোলাগবে নাই বা কেন!

সাধারণ বিষয় নিয়েও দাদার কাছে যাওয়া শুরু হল, উঁহু এবার সাথে কোনো বান্ধবী নেই, আমি একা। যদিও সেই বিষয়টি আমার আয়ত্তের মধ্যেই কিন্তু দাদার কাছে সব বিষয় বুঝতে আমার হেব্বি লাগে। যেদিন দাদার ক্লাস থাকত না, দাদা কলেজে আসত না, নিজের অজান্তেই বুকটা কেঁপে উঠত, চোখ যেন কাউকে খুঁজত।

কলেজের প্রেম কাহিনী। সিনিয়রের সাথে  প্রেম।
কলেজের প্রেম কাহিনী। সিনিয়রের সাথে প্রেম। dukher premer golpo

এরপর একদিন-

-দাদা, তোমার মোবাইল নাম্বারটা দাও না প্লিজ।

-কেন রে, কি করবি?

-জানো তো, বই পড়তে পড়তে কোথাও আঁটকে যাই, তখন তো আর তোমাকে পাব না, তাই তোমাকে ফোন করে, বা ম্যাসেজ করে উত্তরটা জেনে নিব।

ব্যাস এরপরেই জোগাড় হয়ে গেল মোবাইল নম্বর। ধীরে ধীরে পড়াশোনার বাইরেও অন্য কিছু নিয়েও আমাদের আলোচনা শুরু হয়। তবে দাদা সেই সব বিষয়ে মোটেই আগ্রহ দেখায় না। কখন যে নিজের অজান্তেই দাদার প্রেমে পড়ে গেছি কিছুই মনে নেই। প্রেমের ঝোকে বশবর্তী হয়ে একদিন বলেই ফেলেছি যে দাদাকে আমি ভালোবাসি।

বলার পড় অনেকক্ষণ অপেক্ষাও করেছিলাম, কিন্তু দাদা ম্যাসেজ সিন করলেও কোনো উত্তর দেয়নি। এরপর কিছুক্ষণ পড় দেখি দাদার ম্যাসেজ এসেছে। আগ্রহ ভরা চোখ নিয়েই ম্যাসেজ দেখতেই দেখি সেখানে লেখা আছে- “মাথায় এই সব ভূত আসে কোথা থেকে? এখন পড়াশোনার সময়, এর বাইরে নিজেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করিস না। এই বয়সে টেস্টোস্টেরন হরমোন বেশি ক্ষরণ হয়, তাই এই বয়সে একে ভালো লাগা ওকে ভালোলাগা সবই স্বাভাবিক। মনে রাখবি ১৮-২৬ এই বয়সটিতে আমরা যতজন মানুষের দেখা পাই, তাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলি, তার বেশীরভাগই অস্থায়ী।“

পড়ুনঃ- ট্রেনে প্রেমের গল্প

দাদার কাছ থেকে এরকম উত্তরই আশা করছিলাম। যে ছেলে সারাক্ষণ পড়াশোনা নিয়ে থাকে, তার বাইরে কিছু বোঝে না, তার কাছ থেকে এরকম বিজ্ঞের মত উত্তর আশা করাটাই স্বাভাবিক।

এরপরেই শুভ্রনীল দাদা কলেজ পাশ আউট করে, আমেরিকার একটি ইউনিভার্সিটিতে চান্স পায়। তবে দূরত্ব বাড়লেও দাদার পিছু যে আমি ছারব না। দাদার কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া, নতুন কিছু জানতে চাওয়া সবই আমার কাছে নেশার মত মনে হত। শুধুমাত্র ম্যাসেজেই নয়, ফোনালাপের মাধ্যমেও এমনকি ভিডিও কলের মাধ্যমেও দাদা আমার সঙ্গে কথা বলত। এভাবেই কেটে যায়, চারটা বছর। আমিও ইউনিভার্সিটি শেষ করে বসে থাকি বাড়িতে একটি জবের আশায়। ওদিকে দাদাও ফিরে আসে।

ফিরে এসে সরাসরি ইউনিভার্সিটিতে চাকরি। আমি তো দেখেই অবাক। এটাই আশা করেছিলাম যে, দাদা একদিন ঠিকই তার রাস্তায় পৌঁছে যাবে। এবার আমার আবার আরেকটু ভয় হতে শুরু হল। কারণ দাদা যেহেতু বিদেশে গেছে, সেখানে যদি দাদা অন্য কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে ? তাহলে? কিন্তু দাদা তো ওরকম নয়!

বাংলা দুঃখের প্রেমের গল্প বিচ্ছেদ প্রেমের গল্প
বাংলা দুঃখের প্রেমের গল্প বিচ্ছেদ প্রেমের গল্প image dukher premer golpo

একদিন দেখি মোবাইলের সাদা বাতিটা জলছে আর নিভছে। লক খুলতেই দেখি, দাদা ভয়েস ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। শুনলাম, আমাকে ইউনিভার্সিটিতে যেতে বলছে। ভয়ে ভয়ে গেলাম সেখানে। কত দিন সামনা সামনি দেখি না দাদাকে।

দাদার সঙ্গে দেখা হতেই আমার কথা বলা বন্ধ হয়ে গেল। দাদা- “যে মেয়েটা ম্যাসেজে এত বকর বকর করে, সেই মেয়েটাকে শান্ত দেখে খুব ভালই লাগছে। হাঁ হাঁ হাঁ।“

আমিও কিছু না বুঝেই মৃদু হাসলাম। তবে এরপরের কথাটি আমাকে স্তম্ভিত করে দেয়-

“বিয়ে করবি? তোর জন্য আমি একটি ছেলে দেখেছি।“

আমি অবাক হয়ে যাই, দাদা আমার জন্য ছেলে দেখেছে, কিন্তু আমার যে দাদাকেই চাই।

পরক্ষনেই আবার আনন্দিত হই, কারণ সে বলে- “সেই ছেলেটা তোর সামনে দাঁড়িয়ে”

ব্যাস এরপরেই পরিবারের সম্মতি নিয়েই আমাদের বিবাহ হয়ে যায়। যাকে মন থেকে চেয়েছিলাম তাকে পাশে পেয়ে সত্যি খুবই ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। সুখে-আনন্দে কেটে যায় ১৫ টা বছর। কিন্তু এই সুখের আড়ালেই যে, অপেক্ষা করছিল এক অন্ধকার জগত।

শীতের সময় ছিল, আমরা ঠিক করি, দার্জিলিং ঘুরতে যাব। কিন্তু রাস্তায় এক বীভৎস অ্যাকসিডেন্ট হয়ে যায় আমাদের গাড়ির। রাস্তা মেরামত হচ্ছিল, কিন্তু হঠাৎ করেই একটি আলকাতরা বোঝাই ট্রাক এসে আমাদের ধাক্কা মারে, শুভ্রনীলের মাথা পড়ে থাকা রডে গিয়ে লাগে। আর আলকাতরার গাড়িটি উল্টে যায়, আলকাতরার ছিটে এসে আমার শরীরে পড়ে। পুড়ে যায় আমার শরীর। আমি দেখি শুভ্রনীল দূরে ছিটকে পড়েছে। এরপর আর কিছুই মনে নেই, যখন জ্ঞান ফিরে আসে, তখন দেখি আমি হসপিটালের বিছানায় আর আমার সমগ্র শরীরে ব্যান্ডেজ বাঁধা আছে, শরীর খুব জ্বালা করছে, আর মা-বাবা বাড়ির সবাই দাঁড়িয়ে।

এরপর দীর্ঘ একমাস পড় আমি বাড়িতে ফিরে আসি। শুভ্রনীল তার দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছে। আর আমি হারিয়েছি আমার সৌন্দর্য। গোটা শরীর পুড়ে গিয়ে চর্ম রোগীর মত হয়ে গেছে। যেন মনে হচ্ছে কেউ আমার উপড়ে অ্যাসিড ছুঁড়ে দিয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে আমার প্রায় বছর খানেক লেগে গেল, কিন্তু শুভ্রনীলের অবস্থার কোনো উন্নতিই হয় নি। কিন্তু অ্যাকসিডেন্ট আমাদের ভালোবাসা কমাতে পাড়েনি বরং আমরা আরও কাছাকাছি চলে এসেছি। সারাদিন শুভ্রর দেখভাল করতেই আমার দিন কেটে যায় এখন। শুভ্রর মুখ থেকে দেশ বিদেশের গল্প শোনা আমার কাছে অভ্যেসে পরিণত হয়েছে।

পড়ুন-

গরীবের প্রেমের গল্প

-যদি এটী মিস করে থাকেন

শুভ্র ভাবছে আমি ঠিকই আছি, কিন্তু শুভ্রর যদি দৃষ্টি ঠিক থাকত, সে অনেক ভেঙ্গে পড়ত, কারণ আমার চেহারা আগে যতটাই সুন্দর ছিল, এবার ঠিক তার চেয়েও বেশি কুৎসিত হয়ে গেছে। কিন্তু সৌন্দর্যে আর কি আসে যায়, ভালোবাসি বলে কথা।

এরপর কেটে যায় আরও কয়েকটা বছর। শুভ্রনীলের স্ত্রীর চামড়ার ক্ষত ধীরে ধীরে ক্যান্সারে রুপান্তরিত হয়। শেষ চেষ্টা টুকু করেও আর তাকে বাঁচানো গেল না। শুভ্রনীলের মুখ দিয়ে কোনো শব্দও উচ্চারিত হচ্ছিল না। যে মেয়েটি সারাক্ষণ ম্যাসেজে বকবক করতেই থাকত, সে আজ শান্ত হয়ে গেছে। যে দাদার একটা ম্যাসেজের জন্য অপেক্ষা করত, সেই মেয়েটি আজ সেই দাদা রূপী স্বামীকে অপেক্ষায় ফেলে রেখে চলে গেছে। সারাক্ষণ গুণগুণ করে গান করতে থাকা মেয়েটা, আজ চুপচাপ শুয়ে আছে।

ছয়মাস পড়, শুভ্র ঠিক করে, সে এই সংসারের মায়া ত্যাগ করে, তীর্থ সাধানায় নিজের জীবন উৎকীর্ণ করবে। কিন্তু তার এক বন্ধু তাকে জানায়- “ভাই তুই চোখে দেখিস না, তুই কিভাবে এই কঠিন কাজটা হাসিল করবি?”

-“কে বলল আমি চোখে দেখি না?” এই বলে শুভ্র তার চোখ থেকে ভাঁড়ি কালো চশমাটা সরিয়ে ফেলে, “এই যে আমি পরিষ্কার দেখতে পাড়ছি, তুই লাল শার্ট পড়ে আছিস, ওই যে গরুটা মাঠে ঘাস খাচ্ছে।“

“তার মানে তোর চোখ ঠিকই আছে বন্ধু। তাহলে এতদিন এইভাবে আছিস কেন?”

“সাধেই কি আর এই রূপ গ্রহণ করেছি বন্ধু? যদি তৃষা (শুভ্রর স্ত্রী) জানতে পাড়ত, যে আমার চোখ ঠিক আছে, তাহলে সে কিছুতেই শান্তিতে থাকতে পাড়ত না, কারণ সে সবসময় তার রূপ চলে গেছে এটাই চিন্তা করত। তাই মানসিক যন্ত্রণায় সে অনেক আগেই কাহিল হয়ে পড়ত। তাছাড়াও, এই কয়েকটা বছরে আমরা খুব কাছাকাছি চলে এসেছিলাম। ওকে আমি আরও ভালভাবে চিনে ফেলেছিলাম। একজন পতিব্রতা মেয়ের সব লক্ষণ ছিল তার মধ্যে।“

এই বলে শুভ্র এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এরপর এক শীতের ভোরে শুভ্র বাড়ি ছেড়ে অচেনা দিগন্তের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়। ধীরে ধীরে কুয়াশার মধ্যে সে হারিয়ে যায়।

গল্পের লেখিকা- SABINA YASMIN

CLICK HERE FOR TELEGRAM UPDATE- Charpatra-OFFICIAL

JOIN WITH US ON FACEBOOK:- গল্প আর গল্প

কলেজের প্রেম কাহিনী। সিনিয়রের সাথে প্রেম। বিচ্ছেদ প্রেমের গল্প। কলেজ লাভ স্টোরি

Spread the love

Leave a Reply