আজ বড় একটি কমেডি হাসির গল্প থাকছে ছাড়পত্রের পাঠকের জন্য। মোবাইল নিয়ে লেখা এই বড় হাসির গল্পটি আশা করছি পাঠকের পছন্দ হবে।
কমেডি হাসির গল্পঃ-
আমাদের পাড়ার ছেলে বল্টু, তার খুব শখ একটি মোবাইল ফোন কেনার । কিন্তু মোবাইল সম্পর্কে তার জ্ঞান একেবারে শূন্যের কৌটায় । ফলে সে বেশ চিন্তাযুক্ত অবস্থায় দিন যাপন করতে লাগল ।
বল্টুর বাড়ি জলপাইগুড়ি জেলার দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে সিকিম সীমান্তের কাছাকাছি । সেখানে বিদ্যুৎ নেই, বিদ্যাশিক্ষা অর্জনের জন্য কোন ইস্কুলও নেই । শহুরে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল তাদের জীবনযাত্রা । গ্রামের মানুষ সহজ সরল না হাবাগোবা ওই বিতর্কে না গিয়ে আমাদের বল্টুকে হাবাগোবা বলাই সঙ্গত । পিতামাতার তিরোধানে সে তুর্কি সুলতানদের ভাগ্যান্বেষণে ভারতবর্ষে আগমনের মত নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায়।
শিলিগুড়ি শহরে চলে আসে । বল্টুর কপাল ভাল। কিছুদিন ঘোরাঘুরি করেই একটা রেস্টুরেন্টে টেবিল বয়ের কাজ পেয়ে গেল । ধীরে ধীরে কাস্টমারদের সাথে সু-সম্পর্ক তৈরি হল তার । কাস্টমাররা বল্টুকে বেশ পছন্দও করে ।
কাস্টমাররা যখন চা পান করতে করতে মোবাইল ফোনে আলাপ করে, বল্টু তখন তন্ময় হয়ে তাদের কথাবার্তা শুনে । সে লক্ষ্য করে অনেকে চাপাস্বরে কথা বলে, আবার কেউ কেউ কথা বলার সময় চিল্লায় । আবার অনেক লোককে দেখেছে গালাগালি করতে। সে বুঝতে পারে মোবাইল দিয়ে গালাগালিও করা যায়। এইটা একটা বেশ সুবিধা । সে মোবাইল কিনে প্রথমে তাদের গ্রামের চুবলুকে গালাগালি করবে । চুবলু তাকে একবার দিগম্বর করেছিল । সেকথা বল্টু আজও ভুলতে পারে নাই ।
এদিকে রেস্টুরেন্টের মালিকের কাছে বল্টুর তিন মাসের বেতনের টাকা জমা পড়ে আছে । সে মালিককে গিয়ে বলল, স্যার আমার বেতনের টাকাটা লাগবে ।
মালিক জানতে চায়, এত টাকা দিয়ে কি করবি বল্টু ?
সে সলজ্জ উত্তর দেয়, মোবাইল কিনব স্যার ।
পড়ুনঃ- বাস্তব জীবনের হাসির গল্প
মোবাইল কিনবি! মালিক কিঞ্চিত আশ্চর্য হলেন । তারপর বল্টুর সব পাওনা বুঝিয়ে দিলেন । ডিউটি শেষ করে হাবলু মোবাইল ফোন কিনে নিয়ে এল । সে এখন একটি মোবাইল ফোনের গর্বিত মালিক। খুশিতে তার বুক উঁচু হয়ে গেল। সে দ্রুত নিজের খুপরিতে ফিরে আসে। মোবাইল সেট হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে ভাবতে লাগল চুবলুকে গালাগালি করে নিলে ভাল হয় ।
সে সবুজ বোতাম চাপ দিয়ে কানের কাছে ধরল। তৎক্ষনাৎ শুনতে পেল একটি মিষ্টি মেয়েলি কন্ঠ । বলছে, আপনার একাউন্টে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা নেই। আপনার একাউন্ট রিচার্জ করুন ।
বারবার এই কথা শুনতে শুনতে হাবলু বিরক্ত হয়ে ধমক দিল- এই পাগল মেয়ে তুই চুপ কর, আগে চুবলু কে দুইহাত করে নেই, তারপর তোকে দেখছি।
বল্টু অপেক্ষা করতে লাগল। সে বুঝল মেয়েলি কন্ঠ চুপ হয়ে গেছে । সে এবার চুবলুকে গালাগালি শুরু করল । এই চুবলু হারামজাদা, ছাগলের পোলা তুঁই তো বল্টুকে চিনিস না । আমি এখন মোবাইল কিনছি । তোকে ডেইলি গালাগালি করব । এই ছাগলের পোলা কথা বলিস না কেন ?
বল্টু বুঝতে পারে চুবলু ঘাবড়াই গেছে এ কারণে চুপ করে থাকছে । সে মনে মনে স্বস্থি পায় । সে তার এক বন্ধুর কাছে ফোন করার জন্য মোবাইল সেট আবার কানের কাছে ধরল এবং পূর্বের নারীকন্ঠ আবার শুনতে পেল । সে খুব চিন্তিত হয়ে ভাবতে লাগল কেন মেয়েটি বারবার একই কথা বলে যাচ্ছে । অগত্যা সে মালিকের শরণাপন্ন হলে মালিক জানায় মোবাইলে টাকা ভরতে হবে; না হয় কথা বলা যাবে না ।
মোবাইল কিনতেই বল্টুর সব টাকা শেষ হয়ে গেছে । তার পকেট একেবারে খালি । সে মালিকের কাছ থেকে বিশটাকা আগাম নিয়ে ফ্লেক্সিলোডের দোকানে চলে এল । দোকানিকে বলল, ভাই বিশ টাকা ফোনে ভরেন ।
কত নম্বর ? দোকানি জিজ্ঞেস করে ।
বল্টু আমতা আমতা করে । সে ইংরেজি বাংলা মিশিয়ে নম্বরটি বলে ।
দোকানি বলে , ঠিক আছে আপনি চলে যান, আপনার কাজ হয়ে গেছে ।
হাবলু সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল দোকানির দিকে । কারণ সে দেখেছে দোকানি বিশটাকা ক্যাশ বাক্সে ভরেছে, মোবাইলে ভরে নাই । বুঝতে পারল সে ঠকবাজের পাল্লায় পড়েছে । সে রাগান্বিত হয়ে বলে, ভাই আপনি তো টাকা ক্যাশ বাক্সে ভরেছেন মোবাইলে ভরেন নাই ।
দোকানি অবাক হয়ে তাকাল বল্টুর দিকে। ভাবল নিশ্চয় ছেলেটির স্ক্রু ঢিলা । তিনি বললেন, এই টাকা ক্যাশ বাক্স থেকে আপনার মোবাইলে চলে যাবে । চিন্তার কারণ নেই ।
পড়ুনঃ- ২০৮৭ সালের একটি হাসির গল্প পড়ুন
বল্টু ভাবে এখন তো দূর থেকে টেলিভিশন চালানো যায় । এটাও ঐরকম কোন কেরামতি হবে। সে দাঁড়িয়ে থাকলে দোকানি জিজ্ঞেস করে, আর কিছু বলবেন ?
বল্টু বলে, আমার নম্বরটা কাগজে লিখে দিবেন ?
দোকানি কাগজ কলম নিয়ে জিজ্ঞেস করে, আপনার নাম কী ?
বল্টু।
দোকানি কাগজে বল্টুর নামটি লিখে ও এর নিচে মোবাইল নম্বর লিখে বল্টুর হাতে দিল। বল্টু খুশি মনে খুপরিতে ফিরে আসে । সে বালিশের তলা থেকে অনেক গুলো কার্ড বের করে আনে । এসব কার্ডে তার পরিচিত কাস্টমারদের নম্বর আছে । সে চিন্তা করল সবাইকে মোবাইল ক্রয়ের সংবাদটা জানানো উচিৎ । কিন্তু এতজনকে কল করতে গেলে তার সব টাকা শেষ হয়ে যাবে । সে আগেই জেনেছিল মিস কল দিলে টাকা কাঁটা যায় না ।
সে ভাবে মিস কলই দেবে ।
হাবলু প্রথমে বেছে বেছে সুমি বৌদির নম্বরটি বের করল । সুমির নম্বরে রিং বাজছে । সুমি রিসিভ করে বলল, হ্যালো ।
বল্টু বলে, সুমি বৌদি আমি বল্টু । আমি মোবাইল কিনেছি । ভাবলাম আপনাকে একটা মিস কল দিই । এইটা মিস কল দিলাম । পরে আপনার সাথে কথা বলব। এখন রাখি বৌদি ।
সুমি অনেক কষ্ট করে হাসি চেপে রেখে বলল, হে বল্টু খুব ভাল করেছিস মিস কল দিয়ে । তুঁই এভাবে মাঝে মাঝে মিস কল দিস । কেমন ।
আইচ্ছা বৌদি । তাহলে এখন রাখি ।
বল্টু লাইন কেটে দিল । সে সজলের নম্বরটি খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেল । সজল কল রিসিভ করতেই হাবলু বলল, হ্যালো সজল ভাই আমি বল্টু । শুনেন আমি একটা নতুন মোবাইল কিনেছি । ভাবলাম আপনাকে মিস কল দিয়ে খবরটা জানাই । এইটা আপনাকে মিস কল দিলাম ।
সজল হাসতে হাসতে বলল, তুঁই নাকি সুমিকেও মিস কল দিয়েছিস ?
সুমি বৌদি আপনাকে বলেছে ?
হে । সে তো একটু আগে আমাকে ফোন করে জানাল । আর কাকে মিস কল দিয়েছিস ?
এখনও আর কাউকে দিই নাই ।
ঠিক আছে তুঁই সবাইকে মিস কল দিতে থাক । আমি এখন রাখলাম ।
বল্টু এবার বিরজু আংকেলের নম্বরে মিস কল দেয় । আরও কয়েকজনকে মিস কল দেয়ার পর সে ভাবল অনি বৌদিকেও মিস কল দিয়ে খবরটা জানিয়ে দিলে ভাল হয় । কিন্তু অনি বৌদিকে মিস কল দিতে গিয়ে বল্টু আবারও সে নারী কন্ঠস্বর শুনতে পেল । বলছে, আপনার একাউন্টে যথেষ্ট পরিমাণে টাকা নেই । অনুগ্রহপূর্বক আপনার একাউন্ট রিচার্জ করুন ।
বল্টু খুব অবাক হল । সে তো একটু আগে বিশ টেকা ভরেছে । তাহলে টাকাটা গেল কোথায় ? সে তো মিস কলই দিয়েছে । এখনও পর্যন্ত একটা ভাল কল করে নাই । বল্টু বুঝতে পারল এই মেয়েটি ঠকবাজ । খালি টাকা ছাড়া আর কিছু চিনেনা । সে আবার চেষ্টা করল মিস কল দেয়ার জন্য । আবারও পূর্বের কন্ঠস্বর শুনতে পেল । বল্টু বলল, ধুর এই এই এই মেয়ে তুই শুধু একবার বল বল্টু আমি তোমাকে ভালোবাসি । তাহলে আমি আবারও বিশ টাকা ভরতে রাজী ।
পড়ুনঃ- হাসির গল্প-বউ যখন গোয়েন্দা
পরদিন অনি এলো রেস্টুরেন্টে । হাবলু কাপ প্লেট পরিষ্কার করে চা এনে দিল । অনি বলল, হাবলু তুঁই তো আমাকে মিস কল দিলি না ।
বল্টু মুখভার করে জবাব দিল, বৌদি মিস কল দিতেও যে টাকা লাগে এইটা জানতাম না ।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- অজানা এবং অবাক করা সব তথ্য জানতে এখানে ক্লিক করুন জীবন নিয়ে লেখা গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- ফেসবুক Group - গল্প Junction ফেসবুক- ছাড়পত্র টেলিগ্রাম- charpatraOfficial WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
কমেডি হাসির গল্প। বড় হাসির গল্প। 1 awesome funny story in bengali.
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।