আজকের ছোট গল্পটি একটি সমাজ কেন্দ্রিক ছোট গল্প অর্থাৎ একটি শিক্ষণীয় সামাজিক ছোট গল্প। এই শিক্ষণীয় ছোট গল্পটিতে খুঁজে পাবেন একজন সন্তানের জন্য ভালোবাসা কতটা জরুরী।
শিক্ষণীয় সামাজিক ছোট গল্পঃ- “ব্যর্থ অভিভাবক”
দেখো তুমি আমায় নিয়ে কি ভাবো তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। ভাবনাটা হলো মেয়েটাকে নিয়ে, কেমন যেন দিন দিন বদলে যাচ্ছে তাই না!
হ্যাঁ ঠিক কথাই বলেছ , তবে যা হচ্ছে তার জন্য শুধু মাত্র আমি একা নয় আমরা উভয়েই দোষী ।
দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে সঞ্জয় বাবু উত্তর দিলেন , হ্যাঁ আমরা উভয়েই । তবে এই পথ থেকে ফেরাব কি করে মেয়েকে ?
রত্না হলো বাবার মায়ের একমাত্র মেয়ে। এক কথায় রাজকন্যা সমতুল্য। মেয়ের বিষয়ে তারা উভয়েই খুব সচেতন হলেও, দাম্পত্য ঝামেলার কারণে মেয়ের খেয়াল রাখতে তারা অসমর্থ, তাই আজ নিজেদের দোষেই মেয়েটিকে তারা মানুষ করতে ব্যর্থ ।
জন্মের পর থেকেই রত্না এক আয়া দিদির কাছে মানুষ হয়েছে। তার ব্যস্ত মা বাবার কাছে কোনোকালেই তার জন্য সময় ছিল না। দুইজনেই বিখ্যাত উকিল , একে অপরের পরিপূরক কম একে অপরের বিরোধিতা তেই তারা বেশি কেশ লড়েন। আর কোর্ট চত্বরে যে মোকদ্দমার সূত্রপাত হয় সেটা তাদের ব্যক্তিগত জীবনেও নেমে আসে। এইভাবে একে অপরের বিরোধিতা করতে করতে তারা বুঝতেই পারেননি , খেলনা আর ভালো খাবার এর তুলনায় ভালোবাসাটা বেশি প্রয়োজন রত্নার।
রত্নাও এসব অশান্তির মাঝে বড়ো হতে হতে , নিজেকে অন্যদের থেকে পৃথক ভাবতে শুরু করে। তার মনে হয় একটা মানুষ অপর একটা মানুষের সাথে থাকলেই সেখানে অশান্তি ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। তাই সে স্কুল গেলেও বাকি বাচ্চাদের সাথে মেশে না। সবার থেকে দূরে দূরে একা থাকে। এই ব্যাপারে স্কুলের শিক্ষিকারা বারবার তার বাবা মা কে জানালেও তারা এই ব্যাপারে মাথা ঘামানোর সময় টুকুও পান না। এর মধ্যে স্কুলের একটি মেয়ে প্রায় রত্নার কাছে আসে কথা বলার চেষ্টা করে , আর বন্ধুত্বের হাত তার দিকে এগিয়ে দেয় । কিন্তু রত্না কিছুতেই সেই মেয়েটির সাথে মেশে না ।
পড়ুনঃ- দূুটি ছোট মোটিভেশনাল গল্প
এই ঘটনার ঠিক কয়েকদিন পর হঠাৎ স্কুলের ছাদ থেকে একটি মেয়ে নিচে পড়ে যায় আর সেখানেই তার মৃত্যু হয়। স্কুলের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করলে জানতে পারা যায়, একটি মেয়ে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকার সময় পেছন থেকে আরেকটি মেয়ে এসে তাকে ধাক্কা দেয় আর সে সরাসরি নিচে পড়ে গিয়ে মৃত্যু ঘটে।
রত্নার বাবা মা সকাল সকাল খবরের কাগজ খুলতে গিয়ে খবর টা দেখে থমকে জান। আর রত্নাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন , ” তোমার স্কুলে এত কিছু হয়েছে , তাও তুমি আমাদের কেন কিছু জানাও নী ?”
রত্না তাদের কোনো উত্তর না দিয়ে সরাসরি নিজের রুমে চলে যায়। এরপর স্কুল থেকে রত্নার বাবার ফোনে কল আসে , তারা উভয়েই সত্বর ছুটে জান স্কুলের উদ্দেশ্যে । গিয়ে জানতে পারেন , যে মেয়েটি মারা গেছে তার ডাইরি থেকে রত্নার লেখা একটি চিঠি পাওয়া গেছে। যেখানে সে স্পষ্ট জানিয়েছে , তুমি আমাকে বিরক্ত করবে না , আমি জানি তুমি আমাকে হিংসা করো।
পৃথিবীতে সবাই সবাইকে শুধু হিংসা করে , ক্ষতি করতে চায়, ঠিক আমার মা বাবার মতো । তাই তুমি যদি আমায় আর কখনো বিরক্ত করো , আমি কিন্তু তোমাকে মেরে ফেলবো।
এরপর তাদের সামনে সিসিটিভির ফুটেজ দেখানো হয় যেখানে ওই মেয়েটিকে দেখতে সবাই গেলেও রত্না সেখানে ছিল না। এমনকি সে সেদিন ক্লাস টিচারকে না জানিয়েই স্কুল ছুটি হওয়ার আগে বাড়ি ফিরেছিল। সব মিলিয়ে স্কুলের প্রিন্সিপাল রত্নার মা বাবাকে বলে আপনার মেয়ের ওপর আমরা ইনভেস্টিগেশন করতে চাই।
রত্নার মা বাবা নিরুত্তর হয়ে বাড়ি ফেরার পর মেয়েকে নানান প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন । কিন্তু রত্না আগের মতই নিশ্চুপ হয়ে তাদের উপেক্ষা করে ।
পড়ুনঃ- গল্পের মাধ্যমে জীবনে মোড় নিয়ে আসুন
উভয়েই তারা তাদের ভুল বুঝতে পারেন। আর মেয়েকে এই পথ থেকে ফেরানোর উপায় খুঁজতে থাকেন। কিন্তু তাদের সব উপায় ব্যর্থ হয় আদালতে। রত্না নিজে স্বীকার করে , সেই ওই মেয়েটিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে মেরেছে। কারণ সে বারবার বারণ করার পরেও মেয়েটি তাকে বিরক্ত করেই যাচ্ছিল তাই সে এমন করেছে। আদালত তাকে হোমে পাঠানোর আদেশ দেয়।
এভাবেই বাবা মায়ের ব্যস্ততা আর অজুহাতের শিকার হয় একটি নিষ্পাপ প্রাণ। যে জন্ম থেকে কোনোদিন দেখেই নী ভালোবাসা কি , স্নেহ কি, এমনকি জীবনের মূল্য কি !
এরপর অবশ্য হোমে প্রতিদিন রত্নার মা বাবা তার সাথে দেখা করতে আসতেন। কিন্তু রত্না কোনোভাবেই তাদের সাথে দেখা করার জন্য রাজি হতো না । সে নিজেকে অনাথ বলেই পরিচয় দিত।
কি জানি এই বিশ্বে এমন কত রত্না আছে , যার অপরাধ আমরা বিচার করে তাকে শাস্তি দিলেও তার ওপর ঘটে যাওয়া অপরাধের বিচার করতে আমরাব অসমর্থ ।
লিখনে-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
নিচে দেওয়া WhatsApp গ্রুপ টি শুধু মাত্র অ্যাক্টিভ মেম্বারদের জন্য। যাদের মনে হবে ব্যস্ত জীবনের অল্প সময় ও এখানে ব্যয় করতে পারবেন আড্ডা আলোচনার মধ্যে তাদের জন্য।
বি.দ্র. - ইউটিউবার দাদা দিদিরা যারা কনটেন্ট খুঁজতে গ্রুপ এ আসেন তারা এখানে অহেতুক ভিড় জমিয়ে নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনবেন না।
WHATSAPP GROUP LINK- ছাড়পত্রিয়ানস (CHARPATRIANS) 👈🏻 ক্লিক করুন
পড়ুনঃ- ভালোবাসার গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন অবাক করা তথ্য পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
একটি শিক্ষণীয় সামাজিক ছোট গল্প। বাংলা শিক্ষণীয় ছোট গল্প Bengali motivational short story.
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।