একটি সত্যি প্রেমের গল্প থাকছে আজ, যেখানে পাঠক খুঁজে পাবেন, সন্দেহের বাতাবরণ কাটিয়ে ভালোবাসার নব রবির আত্মপ্রকাশের নমুনা।

একটি সত্যি প্রেমের গল্পঃ- “বিশ্বস্ত হস্ত”

কলেজ পড়ুয়া মেয়ে শ্রেয়ার সাথে সৌরভ এর পরিচয়টা ঘটে অদ্ভুত ভাবে, কলেজের ক্যান্টিন এ। শ্রেয়া তার এক বান্ধবীর সাথে কলজের ক্যান্টিনে যায়, এদিকে সৌরভ আগে থেকেই খাওয়ার নিয়ে একটি টেবিলে বসেছিল, সে জল আনতে উঠে যায়।

এদিকে শ্রেয়া তার বান্ধবী ক্যান্টিনে আসার কিছুক্ষণ পরে আসে, তাদের মধ্যে কথা হয়েছিল যে, সবথেকে শেষের টেবিলে তারা বসবে। কিন্তু সেদিন সেই টেবিলে আগে থেকেই সৌরভ বসেছিল। শ্রেয়া অবশ্য সেটা জানত না। সেই টেবিলে খাবার রাখা আছে দেখে সে ভেবেই নিল, তার বান্ধবী খাবার গুলো রেখে হয়ত জল ভরতে গেছে। শ্রেয়া সেই টেবিলে বসে যায় এবং খাবার খেতে থাকে।

যতক্ষণে সৌরভ এসেছে ততক্ষণে শ্রেয়া পুরো জমিয়ে খাবার খাচ্ছে। এরকম দৃশ্য দেখে সৌরভ বলে- “এটা কি হচ্ছে! আমার খাবার খাচ্ছ কেন!” কথাটা শুনেই অপ্রস্তুতি তে পরে যায় শ্রেয়া। সৌরভ আবার বলে- “আমি খাবার রেখে জল আনতে গেছি, আর…!”

একটি সত্যি প্রেমের গল্প
একটি সত্যি প্রেমের গল্প

এতক্ষণে শ্রেয়ার বান্ধবীর দেখা মিলল, সে শ্রেয়াকে দেখে দূর থেকে ঈশারা করছে যে সে ওই টেবিলে বসেছে। যাই হোক সেদিন এইভাবেই প্রথম দেখা হয়েছিল তাদের।

এরপর তাদের অনেকবার দেখা হয়েছে। আর নিজেদেরই অজান্তে তাদের একে অপরকে ভালোলাগা শুরু হয়। এই ভালোলাগা, ভালোবাসায় রূপান্তরিত হতে বেশি সময় লাগে নি।

সবকিছু বেশ ঠিকঠাক চলছিল। প্রতিটা খাটি সম্পর্কে দুষ্টু মিষ্টি রাগ, অভিমান ঝগড়া যেমন স্বাভাবিক তেমনই তার ব্যতিক্রম ছিল না তাদের সম্পর্কটাও। এরকমই একদিন শ্রেয়া এবং সৌরভের মধ্যে whatsapp এ ঝগড়া হয়।

আর ঝগড়ার কারণ হল, সৌরভের ফোনে অন্য এক মেয়ের ছবি শ্রেয়ার নজরে আসে। সৌরভ বারবার শ্রেয়াকে বোঝাতে থাকে যে ছবিটি তাদের ফ্রেন্ড সার্কেল গ্রুপের, কেউ হয়ত গ্রুপে দিয়েছে তাই গ্যালারিতে সেভ হয়ে আছে। কিন্তু শ্রেয়া কিছুতেই সৌরভের কথা শোনে না, রাগে অভিমানে সে চুপ হয়ে যায়। সৌরভ বারবার চেষ্টা করেও শ্রেয়াকে বোঝাতে পাড়ে না।

পড়ুনঃ-  স্কুল জীবনের ব্যর্থ প্রেমের গল্প 

এদিকে ক্লাসের চঞ্চল মেয়ে শ্রেয়া চুপচাপ করে আছে দেখে তার বেস্ট ফ্রেন্ড তিয়াশা তাকে বারবার এমন চুপচাপ থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করতে থাকে। শেষে শ্রেয়া মুখ খুলে সব ঘটনার বর্ণনা দেয়।

এইসব শুনে তিয়াশা নানা বুলি আওরাতে থাকে- আমার প্রথম থেকেই ওই ছেলেটাকে ঠিক মনে হতো না আজ শুধু মেয়ের ছবি দেখেছিস, কাল দেখবি কোন মেয়ের সাথে সেলফি নিয়েছে। ছেলেটাকে দেখেই বোঝা যায় ছেলেটা ভালো না, তুই যে কিভাবে এমন একটা ছেলের পাল্লায় পরলি! তোকে আমি কতবার বোঝাতে চেয়েছি যে, ছেলেটা খারাপ। কিন্তু আমার কথা আর শোনে কে…!”

শ্রেয়া কোন জবাব না দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। কলেজ শেষে সৌরভ আর শ্রেয়ার মুখোমুখি দেখা। দুইজনে চলে যায় কলেজের ছাদে, সেখানে শ্রেয়া তার রাগ বর্ষে দেয় সৌরভের উপরে- “আমি থাকতে অন্য মেয়ের ছবি তোমার ফোনে থাকবে কেন! তুমি আমাকে আর আগের মতো ভালোবাসো না। আমার ফোনে যদি কোন ছেলের ছবি দেখতে তোমার কেমন লাগতো! তোমরা প্রতিটা ছেলেই একই ধাঁচের সবাই মেয়েদের মন নিয়ে খেলা করো। জানিনা কেন বিশ্বাস করেছিলাম তোমার উপর। ঘৃণা হয় আজ নিজের উপর…” শ্রেয়া বলতে থাকে। কিন্তু সৌরভ চুপচাপ সব শুনতে থাকে।

শ্রেয়া কাঁদতে থাকলে, সৌরভ শ্রেয়াকে বলে- “তুমি তো জানোই সেই গ্রুপের ম্যাসেজ আমি সিন করি না। কেউ গ্রুপে দিয়েছে সেই মেয়ের ছবিটা, সেখান থেকে নিজে থেকেই আমার ফোনের গ্যালারীতে সেভ হয়েছে। আর গ্যালারী আমি কেমন ঘাটি সেটা তুমি ভালোমতই জানো। যাই হোক আমি এবার থেকে খেয়াল রাখব।“

বর্তমান প্রেমের গল্প
বর্তমান প্রেমের গল্প

এরপর সৌরভ শ্রেয়ার চোখের জল মুছে দেয়, কপালে একটা চুমু দিয়ে বুকে টেনে নেয়।

এইভাবেই তাদের ঝামেলা মিটে যায়। এই ঘটনার এক বছর পর, শ্রেয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড তিয়াশা বলে- “আচ্ছা তুই সৌরভের loyality যাচাই করে দেখেছিস কখনো! উত্তরে শ্রেয়া বলে- “মানুষটা যেখানে খাটি সেখানে এইসব করার কথা তো দূর ভাবনাও আনা পাপ।“

কিন্তু তিয়াশা নানান কথায় শ্রেয়াকে ভুলাতে থাকে, নানান মনগড়া উদাহরণ দিতে থাকে- “আমাদের পাড়ায় এরকম একটা মেয়ে কত্ত বিশ্বাস করত ছেলেটাকে। একদিন মেয়েটা একটা অন্য মেয়ের নামে ফেক ফেসবুক প্রোফাইল খোলে আর ছেলেটাকে ম্যাসেজ করে। বাবারে বাবা কি অসভ্য ছেলেরে! কথা বলার দুইদিন পরেই প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে দিল! আজ সেই মেয়েটা ছেলেটার থেকে দূরে সরে গেছে অনেক শান্তিতে আছে।“

আমাদের মস্তিস্ক এর স্বভাব একটু অন্য ধরনের, যখন কেউ বারবার একই জিনিস বলতে থাকে, মস্তিস্ক সেটা না করে শান্তি পায় না। শ্রেয়া সেদিন বাড়ি ফিরেই তার বেস্ট ফ্রেন্ড তিয়াশার কথা মতো একজন অন্য মেয়ের নামে ফেক ফেসবুক প্রোফাইল খোলে, আর সৌরভ কে ম্যাসেজ করে। কিন্তু এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও সৌরভ ম্যাসেজের রিপ্লাই করা তো দূরের কথা ম্যাসেজ সিন পর্যন্ত করে নি।

পড়ুনঃ- সফল প্রেমের গল্প 

শ্রেয়া, তিয়াশার মাথায় চাটা মেরে বলে- “দেখলি তো আমার ও লয়াল এই তার কোন প্রমাণ এর দরকার হয় না।“

তিয়াশা হাসতে থাকে- “ সে হয়ত ব্যস্ত ছিল এই সপ্তাহে তাই রিপ্লাই করে নি। তুই এক কাজ কর, আজ সন্ধায় আমাদের বাড়ি আয়, আমার ফোন নাম্বার তো সৌরভ জানে না, আমার ফোন থেকে আমি ওকে ফোন করবো, কথা বলব দেখবি কেমন সুন্দর ভাবে কথা বলবে।“

তিয়াশার কথা মত, সেদিন শ্রেয়া ওদের বাড়ি যায়, তিয়াসা তার ফোন দিয়ে সৌরভের নাম্বারে ফোন করে- “হ্যালো, সৌরভ বলছ!

-হ্যাঁ বলুন।

-আমি অনেকদিন ধরে তোমাকে ফলো করছি, তুমি কি আমাকে সময় দিতে পারবে একটু।

-হ্যাঁ বলুন, কি বলতে চান।

এরপরেই তিয়াশা ফোনটা কেটে দেয়। আর বলে- “দেখলি তো, তোর সেই লয়াল ব্যক্তি কিভাবে অন্য মেয়েকে সময় দিতে চাইছে।“

real love story in bengali
real love story in bengali
<

সৌরভের সেই কথা বারবার শ্রেয়ার কানে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে- ‘হ্যাঁ বলুন, কি বলতে চান।‘ সে রাগে অভিমানে গজগজ করে বাড়ির দিকে রওনা হয়। সে ঠিক করে সৌরভের কাছে কাল সে এর একটা বিহিত করেই ছাড়বে।

রাতে সৌরভের ম্যাসেজ আসে। সেখানে লিখা আছে- “আজ কোন এক মেয়ে ফোন করে, কিসব বলছিল। আমি কল রেকর্ডিং টা দিচ্ছি, আর নাম্বারটাও।“

সৌরভের এই ম্যাসেজটা দেখা মাত্রই, শ্রেয়ার এত এত রাগ এত এত অভিমান সব নিমেষে উড়ে গেল। সে মনে মনে ভাবতে থাকে- কত্ত সুন্দর সে সবকিছু তার সাথে ভাগ করে নিচ্ছে, এমন মানুষ সে আর দুটি পাবে না, এমন মানুষকে যাচাই করে দেখার কোন মানেই হয় না, শুধু শুধু সে তার বেস্ট ফ্রেন্ড তিয়াসার কথা মতো তার এই সুন্দর মানুষটাকে সন্দেহ করছিল! এই মানুষটাই যে তার একমাত্র বিশ্বস্ত হস্ত।

পড়ুনঃ- প্রথম প্রেমের গল্প 

শ্রেয়া ভাবতে থাকে, এটা কি সত্যি বেস্ট ফ্রেন্ড! একজন বেস্ট ফ্রেন্ড সর্বদা ভালো চাইবে, কিন্তু এই বেস্ট ফ্রেন্ড যেন তাদের সম্পর্ককে শকুনের চোখে দেখছে, এই বেস্ট ফ্রেন্ড তাদের আলাদা করতে চাইছে। এই বেস্ট ফ্রেন্ড ‘বেস্ট’ নয়। ‘বেস্ট’ এর ট্যাগ লাগিয়ে সবসময় নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি কারী worst friend এটা।

এরপর শ্রেয়া তার মাথা থেকে তার মনের মানুষকে নিয়ে যাবতীয় ভুল ভাবনা সব ঝেড়ে ফেলে, আর সেই so called ‘best friend’ এর ট্যাগ লাগিয়ে প্রতিটি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা তিয়াশাকে জীবন থেকে সরিয়ে দেয়।।   

গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 

সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 
অসাধারণ রহস্যময় গল্প 

হারিয়ে যাওয়া প্রেম 

দুঃখের গল্প- ব্যস্ততা 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র () 

একটি সত্যি প্রেমের গল্প। বর্তমান প্রেমের গল্প amazing real love story in bengali

Spread the love

Leave a Reply