হাই, আমি প্রীতম। লাজুক স্বভাবের একটি ছেলে। ইউনিভার্সিটি তে এক মেয়ের সাথে প্রেমে পড়ি। সেই প্রেমের শেষ পরিণতি এত ভয়ংকর হবে, তা ধারনার বাইরে ছিল। এই ইউনিভার্সিটি প্রেমের গল্পটি শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল। আজ মনের দুঃখে, ব্যাথিত হৃদয় নিয়ে লিখতে বসেছি। যদি আমি পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যাই, তাহলে আমার লেখা এই ডাইরিটা যেন কেউ পায়, আর সবাইকে আমার অপরাধের কথা জানিয়ে দেয় এটাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি।

ইউনিভার্সিটি প্রেমের গল্প। BANGLA LOVE STORY.

কেন জানিনা, যখন থেকে আমার বোঝার ক্ষমতা হয়েছে, তখন থেকেই মেয়েদের প্রতি আমার এলার্জি। রাস্তায় অজানা মেয়ে দেখলেই আমার মন চায় অন্য দিক দিয়ে পালিয়ে যাই, দুইবার রাস্তায় মেয়ে আসছে দেখে আমি আগেই সাইট কাটিয়ে পালাতে গিয়েছিলাম।

একবার কুকুরের তাড়া খেঁতে খেতে বেঁচেছিলাম, আরেকবার ড্রেনে পড়তে পড়তে বেঁচেছিলাম। তাই মেয়ে দেখলে আর না পালিয়ে মাথা নিচু করে পাশ কাটিয়ে যেতাম। আমার বন্ধুরা আমাকে মেয়ে বলেও ক্ষেপাত, কিন্তু তাতে আমার কি, যে যা বলে বলুক গা নিজের পথে চলতেই যাও।

সে যাই হোক এতক্ষণে হয়ত বুঝে গিয়েছ, আমি কেমন ধরনের ছেলে। কিন্তু এমন ছেলের জীবনেও প্রেম নামক এক অনুভূতির যে আগমন হবে সেটা জানা ছিল না। কোনো দিন অচেনা মেয়ের মুখের দিকে চোখ তুলে না তাকানো ছেলেটাও যে প্রেমে পড়বে, তা অনেকটা অনাকাঙ্ক্ষিত।

ইউনিভার্সিটি প্রেমের গল্প UNIVERSITY LOVE STORY BANGLA LOVE STORY
ইউনিভার্সিটি প্রেমের গল্প UNIVERSITY LOVE STORY BANGLA LOVE STORY

এবার আসল ঘটনায় আসি। কলেজ পাশ করে সদ্য ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি। আমি একজন ভূগোলের ছাত্র, সবসময় বই-পত্র নিয়েই থাকতে বেশি পছন্দ করি। আমাদের কলেজের ভুগোল ডিপার্টমেন্টের মধ্যে সেবার শুধু আমার নামই মেরিট লিস্টে উঠেছিল।

লজ্জা ভাব নিয়ে ইউনিভার্সিটি লাইফের প্রথম ক্লাস করতে গিয়েছিলাম। আমাদের ভূগোল বিভাগে ছেলে মাত্র ১১ জন বাকিরা সবাই মেয়ে। সর্বনাশ হয়েছে, এখানে আমি টিকে থাকব কিভাবে! সেদিন ক্লাস শেষ হওয়ার পড়, ক্লাস রুম থেকে বাইরে বেড়িয়েছি। হাঁতে আমার এখানকার একমাত্র বন্ধু খাতা আর কলম। গেটের উঁচু জায়গাটিতে পা লেগে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাই, চোখের ভারী চশমার লেন্সটাও কোথায় যে ছিটকে পড়ল, কিছুই বোঝা গেল না, সব কিছুই যেন ঝাপসা দেখছি, আর কানে শুধু ভেসে আসছে আমার সহপাঠীদের হাসির আওয়াজ।

ইসস প্রথম দিনেই কি এরকম হওয়াটা জরুরী ছিল। এরপর একজনকে আমার দিকে আসতে দেখলাম, আমি ঝাপসা দেখছি, তাই প্রথমে তার মুখটা দেখতে চাইলেও বুঝতে পারলাম না। যখন সে আমাকে আমার ছিটকে পড়ে যাওয়া চশমা হাঁতে দিয়ে বলল- “তোমার চশমা” তখনই বুঝেছিলাম, আরে এ তো মেয়ের গলা, হায় ভগবান এইসব কি হচ্ছে?

সে যাই হোক আমার মত সংরক্ষণশীল, মেয়ের প্রতি এলারজি থাকা ছেলেটারও সেই মেয়েটির সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে গেল। বলাবাহুল্য সেই মেয়েটিই ইউনিভার্সিটি লাইফের আমার প্রথম বন্ধু। এরপর সময়ের সাথে সাথে আমাদের বন্ধুত্ব আরও মজবুত হয়ে যায়।

কি জানি কখন যে এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক প্রেমের সম্পর্কে পরিণত হয়েছে তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পাড়ি নি। তবে, আমি তাকে বলার আগেই সে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ফেলে। এরপর জীবনে শুরু হয় নতুন আরেক মোড়।

ইউনিভার্সিটি প্রেমের গল্প। সত্যি প্রেমের গল্প।
ইউনিভার্সিটি প্রেমের গল্প। সত্যি প্রেমের গল্প।

সবসময় বই নিয়ে ব্যস্ত থাকা ছেলেটাও ধীরে ধীরে সেই মেয়েটির অনুরক্ত হয়ে উঠে। দেখতে দেখতে দুই বছর কেটে যায়, ইউনিভার্সিটি ফাইনাল পরীক্ষা এসে হাজির হয়। এরই মধ্যে আমরা একে অপরের বাগদত্তা হই।

এরপর কেন জানিনা হঠাৎ, আমার মন বলে উঠে, এই সব প্রেম-ভালোবাসা সবই মোহ। মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ক্যারিয়ার। আজ যে আমাকে সারাজীবন পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, যদি ভালো কাজ না পাই সে কি রাখবে তার কথা? মোটেই না। তাই এরপর ধীরে ধীরে এগুলি থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করি। কিন্তু যতই তার থেকে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করি, ততই যেন তার সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলি চোখের সামনে এসে পড়ে। তাকে ভুলতে গেলেও ভুলতে পারিনা।

এরপর তাকে ছেড়ে যাওয়ার একটি সুযোগ আমার কাছে চলে আসে, আমি রিমোট সেন্সিং নিয়ে পড়ার জন্য মুম্বাই যাওয়ার পরিকল্পনা করি। আর সে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। অবশেষে তাকে বিদায় জানিয়ে চলে যাই মুম্বাই। সেখানকার ব্যস্ত জীবনে, ধীরে ধীরে আমাদের প্রেমের সম্পর্ক ফিকে হতে থাকে। একসময় ফোন করাটাও ম্যাসেজ করায় পরিণত হয়।

মুম্বাইয়ে কিভাবে তিনটা বছর কাটিয়ে দিলাম বুঝতেও পারলাম না। এই তিনবছরের মধ্যে তাকে মাত্র হাঁতে গোণা কয়েকবার ফোন করেছি। এমনি কথা হত ঠিকই তবে সামান্য তাও আবার ম্যাসেজের মাধ্যমে। আমার কাছে আমার ক্যারিয়ারই মূল লক্ষ্য। আমি মনে করি, ভালো ক্যারিয়ার মানেই ভালো উপার্জন।

ওইসব প্রেম ভালোবাসা, সবই সাময়িক সময়ের উত্তেজনা মাত্র। যখন বয়স বাড়বে তখন প্রেম কি পাড়বে দুবেলা মুখে খাবার জোটাতে। মুম্বাইয়ে আমার কোর্স শেষ হতে না হতেই ইজরায়েলে একটি ভালো চাকরি পেয়ে যাই। যাক এত দিনে আমার স্বপ্ন পূর্ণ হল।

পড়ুনঃ- দুঃখে ভরা প্রেম কাহিনী

এরই মধ্যে সে আমাকে একদিন ফোন করে বলেছিল, যে তার জন্য বাড়ি থেকে ছেলে দেখছে, আমি শুধু বলেছিলাম, ভালো ছেলে হলে বিয়ে করে নাও। হয়ত সে আমার কাছ থেকে এরকম উত্তর মোটেও আশা করেনি, ফোন কেটে দিয়েছিল।

আজ সেই ঘটনার ২ বছর পাড় হয়ে গেছে, এরমধ্যে সে আমাকে আর ম্যাসেজ করেনি, আমিও ম্যাসেজ বা ফোন কিছুই করিনি। হয়ত সে এখন তার স্বামী-সন্তানকে নিয়ে ব্যস্ত। এদিকে বাড়ি থেকে আমারও বিয়ে ঠিক করে। মেয়ে ইজরায়েলেরই, আমি যেখানে চাকরি করি সেও সেখানে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। মেয়েটার নাম অ্যানা।

বিয়ের কার্ড ছাপাও হয়ে যায়, এদিকে ইজরায়েলে আমি ভালোই আছি, মাস গেলেই ভারতীয় টাকায় প্রায় ৩-৪ লক্ষ টাকা ইনকাম করছি, আমার হবু বউ অ্যানা, তারও স্যালারি প্রায় ১-২ লক্ষ। ভাবলাম আমার আগের প্রেমিকাকেও আমার বিয়েতে নিমন্ত্রণ করি। বেচারি অনেক রাগ করে আছে আমার উপর। তাই দেশের বাড়িতে ফিরে যাই।  

আমার প্রাক্তন প্রেমিকার বাড়িতে গিয়ে, দেখি অনেক মানুষের ভিড়। ভিতরে গিয়ে শুনি, আমার প্রাক্তনের বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। এরপর আমি আমার প্রাক্তনকে খুঁজতে থাকি, স্থানীয় একজনকে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, দুই বছর আগেই আমার প্রাক্তন আত্মহত্যা করেছে। একমাত্র মেয়ের মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি বাবা, সেদিনই হার্ট অ্যাটাক করেছিলেন, এরপর চিরতরে কোমায় চলে যান। আজ তিনি মারা গেলেন।

সত্যি প্রেমের গল্প UNIVERSITY LOVE STORY BANGLA
সত্যি প্রেমের গল্প UNIVERSITY LOVE STORY BANGLA হার্ট টাচিং লাভ স্টোরি
<

আমার মাথায় যেন বাজ ভেঙ্গে পড়ল। আত্মহত্যা করেছে! মানেটা কি? কিসের জন্য? এরপর স্থানীয় একজন আমাকে জানায়- “মেয়েটা খুবই ভালো ছিল জানোতো বাবা, অনেক দরদী ছিল, পাড়ার কারও কোনো কষ্ট দেখলেই সে ঝাঁপিয়ে পড়ত। শুনেছি একজন ছেলে তাকে ভালোবেসেছিল। মেয়েটার ইচ্ছে ছিল সেই ছেলেকেই বিয়ে করবে, কিন্তু ছেলে নাকি বিদেশে অনেক ভালো চাকরি করে, মেয়েকে পাত্তা দেয়নি। ইউনিভার্সিটি থেকেই তাদের প্রেম চলত।

জান বাবা, শুনেছি, সেই অহম্মক ছেলেটা ধীরে ধীরে মেয়েটাকে অবহেলা করতে শুরু করে দেয়। প্রিয়জনের এরূপ আচরণ, এবং বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেনি, নিষ্পাপ মেয়েটা। শুনেছি যেদিন সে আত্মহত্যা করেছিল, সেদিন সে ছেলেটাকে ফোনও করেছিল, কিন্তু মেয়েটা আত্মহত্যা করার আগে, সেই ছেলেটা যেন ফেসে না যায় তার জন্য মোবাইল থেকে সিম কার্ড বেড় করে নষ্ট করে দিয়েছিল। শুধুমাত্র ভালোবাসার খাতিরে।

লায়লা-মজনুকে তো আমি দেখিনি বাবা, কিন্তু এই মেয়ের মধ্যেই আমি লায়লা কে দেখতে পেয়েছি, আর সেই ছেলেটা, যদি একবার আমার সামনে আসে, তাকে আমি চিনিয়ে দিতাম ভালোবাসা কাকে বলে, কিন্তু তারে আর পাব কই, ব্যাটা যে এখন বিদেশে বেশ ফুর্তিতে আছে।“

হায় ঈশ্বর, আমার জন্য এত কিছু হয়ে গেছে, আমি সেই মানুষটিকে বুঝতে দিই নি, যে সেই ছেলেটিই আমি।

আমি কিছু না বলেই চোখের জল চেপে রেখে বাড়ি ফিরে আসি। ভালোবাসাটাকে এত সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছে মেয়েটা, আমার জন্য দুটি প্রাণ বেজায় চলে গেল, আমি নিজেকে আর কোনোদিনও ক্ষমা করতে পাড়ব না। মানুষকে খুন করা মহাপাপ, কিন্তু আমিও যে খুনি, আমি যে সাইলেন্ট কিলার। সারাজীবন নিজের ক্যারিয়ার, আর টাকার পেছনে লোভ ছিল আমার। কিন্তু আজ থেকে কুড়ি বছর পড়ে, যখন চুলে পাক ধরবে, যখন কর্মক্ষমতা শেষ হয়ে যাবে, আমার কাছে থাকবে অজস্ত্র টাকা, কিন্তু আমাকে কেয়ার করার মত কেউ একান্ত প্রিয়জন কেউ কি থাকবে তখন?

পড়ুনঃ- স্কুল জীবনের প্রেম

বৃদ্ধ বয়সে কার সাথে, সময় কাটাব, এত রাশি রাশি টাকা আর ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স দিয়ে কি সুখ কেনা যাবে? শুধু বিলাসিতাই হবে। চোখের ভারী চশমার লেন্সটাও আর কাজ করবে না, একসময় চোখ ঝাপসা হয়ে যাবে। আমি নরম বিছানায় ঘুমাতে যাব ঠিকই, কিন্তু ঘুম আসবে না। হাঁতে দামী ব্রান্ডের মোবাইল থাকবে ঠিকই কিন্তু দূরে কোথাও ঘুরতে গেলে, সেলফি তোলার মত পাশে কেউ থাকবে না, এসি লাগানো রুমে থাকব ঠিকই কিন্তু, শান্তি আমি পাবনা। আর যাকে আমি বিয়ে করতে চাইছি, অ্যানা, সে তো বিদেশী, তাদের কি কোনো ঠিক-ঠিকানা আছে, আজ এই স্বামী তো কাল সেই স্বামী।  

আমি নিজেকে কোনোদিনও ক্ষমা করতে পাড়ব না। না আমি আর ইজরায়েলে ফিরে যাব না, বিয়েও করব না, বাকি জীবনটা সেই আমার ইউনিভার্সিটি প্রেমিকার স্মৃতি নিয়েই কাটিয়ে দিব। এক জীবন্ত লাশের মতোই আমার জীবন হতে থাকে। হাঁ ঈশ্বর আমার জন্য নরকেও যে কোনো স্থান নেই।

হার্ট টাচিং লাভ স্টোরি BANGLA LOVE STORY
হার্ট টাচিং লাভ স্টোরি BANGLA LOVE STORY ছবি

বুঝলে বন্ধুরা, যখন সময় থাকে তখন আমরা ইগ্নোর করতেই বেশি ভালোবাসি, কিন্তু যখন সময় চলে যায় তখন আর কিছুই করার থাকে না। ভালো থেকো বন্ধু। ।

আমাদের টেলিগ্রামে আড্ডা দেওয়ার গ্রুপ :- https://t.me/charpatraOfficial

***এখানে প্রকাশিত সমস্ত লেখার কপিরাইট ছাড়পত্রের অ্যাডমিন দ্বারা সংরক্ষিত। কোনো পূর্ব-অনুমতি ব্যাতিত প্রকাশিত লেখা ব্যবহার করলে, বা কোনোরূপ অদল-বদল করে পুনঃ প্রকাশিত করলে, কপিরাইট আইনের অধীনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তুমিও কি গল্প লিখতে ভালোবাসো? তাহলে আর দেড়ি কিসের তোমার লেখা গল্প প্রকাশিত হোক আমাদের সাইটে। লেখা পাঠানোর জন্য এই পেজের একটু নীচে দেওয়া বোতামে ক্লিক করতে পারো, অথবা যোগাযোগ করতে পারো আমাদের পেজের মেসেঞ্জারে। অথবা মেল করতে পারো-  charpatrablog@gmail.com –এ।   

ইউনিভার্সিটি প্রেমের গল্প UNIVERSITY LOVE STORY BANGLA LOVE STORY হার্ট টাচিং লাভ স্টোরি

Spread the love

Leave a Reply