আজ আমরা বিভিন্ন উপজাতি বা জনগোষ্ঠীর আজব নিয়ম বা আজব সংস্কৃতি। তবে আমরা এই ব্লগে মৃতদেহকে নিয়ে বিভিন্ন আজব নিয়ম জানব। এগুলি সবই আজব তথ্য।
মৃতদেহ সৎকারের আজব নিয়ম:-
মাদাগাস্কারে ফামাদিহানা উৎসবঃ –
মাদাগাস্কারে ফামাদিহানা নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব পালন করা হয়। এই উৎসব হল প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটানোর উৎসব। তবে এখানে প্রিয়জন বলতে জীবিত এবং মৃত উভয়কেই বোঝানো হয়েছে। এই উৎসবটি আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হল, যাতে মাদাগাস্কারের বর্তমান প্রজন্ম তাদের পূর্বপুরুষদের স্মৃতিকে ভুলে না যায় এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তা পৌঁছে দেয়।
সাধারণত এই উৎসবটি আয়োজন করার একবছর আগে, পূর্বপুরুষদের কবরের পাশে, সবাই উপস্থিত হয় এবং আসন্ন ফামাদিহানা উৎসবের ব্যাপারে আলোচনা করে। সেখানেই তারিখ এবং আমন্ত্রিতের লিস্ট বানানো হয়ে থাকে। এই উৎসবটি সাধারণত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে থাকে। এই উৎসবটি দুইদিন থেকে তিনদিন পালন করা হয়।
প্রথম দিন ফিদিরানা নামে পরিচিত। এই দিনটিতে কবরটি খোলা হয়, এরপরের দিনটি ফামোনোসানা নামে পরিচিত, এই দিনটিতে মৃতদেহটিকে ভালভাবে পরিষ্কার করে, কাপড় দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়। এই দিনটিতে উৎসব আয়োজনকারী পরিবার সেই মৃতদেহটির পাশে যায়, এবং সেটিকে নিয়ে নাচতে থাকে। তারা এই মৃতদেহটির উদ্দেশ্যে অনেক উপহার দেয়। আমন্ত্রিতরা মৃতদেহকে শ্রদ্ধার সাথে সাথে, অনেক কিছু জ্ঞাপন করে। এই পূর্বপুরুষটির বীরত্বের কাজগুলি সেই পরিবারটির ছোট সদস্যদের শোনানো হয়, তার নানা কাহিনী আলোচনা করা হয়। তবে এই দিন কিন্তু মৃতদেহ দেখে চোখের জল ফেলা যাবে না।

বছরের পর বছর ধরে তাদের এই রীতি চলে আসছে। মৃতদেহকে সঙ্গে নিয়ে নাচ! ভাবতেই কেমন যেন আতঙ্কিত হয়ে যাচ্ছি। আর হ্যাঁ প্রতি সাত বছর অন্তর অন্তর এই উৎসবটি আয়োজন করা হয়ে থাকে।
ঘানার উপজাতিদের বিশেষ কফিনঃ-
ঘানাতে যদি কোনো ব্যাক্তি মারা যায়, তাহলে সেই ব্যাক্তির কফিনটি তার জীবনের সঙ্গে যুক্ত বিশেষ দিকটিকে নজর রেখে তৈরি করা হয়। যেমন ধরুন কোনো ব্যাক্তি পাইলট ছিলেন, তাহলে তার মৃত্যুর পর, তার কফিনটি প্লেনের আকারে তৈরি করা হবে, আবার ধরুন কোনো ব্যাক্তি জেলে ছিলেন, তাহলে তার কফিনটি মাছের মত, করে তৈরি করা হবে, আবার ধরুন কোনো ব্যাক্তির একটি দামী গাড়ি আছে, তাহলে তার মৃত্যুর পর, তার কফিনটি তৈরি করা হবে, সেই দামী গাড়িটির আদলে, ইন্টারেস্টিং তাই না!

নিউগিনির ডেনি উপজাতিদের মৃতদেহ সৎকারের আজব নিয়ম :–
আমাদের কোনো প্রিয়মানুষের তিরোধান আমাদের অনেক মানসিক যন্ত্রণা দেয়, কিন্তু কেবলমাত্র মানসিক যন্ত্রণা নয়, এই যন্ত্রণাকে শারীরিক যন্ত্রণায় পরিণত করেছে, নিউগিনি পাপুয়ার একটি উপজাতি। সেখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন যে, কিছু মহিলার আঙ্গুলের উপরের অংশ কেটে ফেলা হয়েছে, না কোনো খারাপ কাজের জন্য নয়, কেটে ফেলা হয়েছে, প্রিয়মানুষের মৃত্যুর শোককে স্মৃতিতে ভরে রাখতে। নিউগিনির Dani উপজাতির মধ্যে এই খারাপ প্রথাটি দেখা যায়। যদি কোনো মহিলার স্বামী অথবা কোনো সন্তান মারা যায়, তাহলে তাকে তার আঙ্গুলের উপরিভাগ কেটে ফেলতে হবে।
মানসিক কষ্টের সাথে সাথে প্রিয়জনের জন্য যে তার শারীরিক কষ্টও হচ্ছে, তা বোঝাতেই এই নিস্রংস আয়োজন। কুঠারের আঘাতে, আঙ্গুলটিকে বিচ্ছিন্ন করা হয়, এরপর রক্তক্ষরণ বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেই কাটা আঙ্গুলটির অংশটিকে কোথাও সংরক্ষণ করে রাখা হয়।

তবে, আশার কথা হল বর্তমানে এই প্রথাটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবুও কিছু গোঁড়া ধার্মিকরা এই প্রথা পালন করে।
মৃতদেহ উৎসর্গঃ-
তিব্বত-এর কিছু বৌদ্ধ আছেন যারা, মনে করেন দেহ হল আকাশের মত, তারা মৃতদেহকে কবর না দিয়ে সেই মৃতদেহটিকে প্রথমে টুকরো টুকরো করে কেটে, কোনো উঁচু জায়গায় রেখে দেয়, যাতে অন্য কোনো জন্তু বা পাখি এসে সেই মৃতদেহটিকে এসে খেয়ে যায়। তাদের মতে, মৃতদেহটিকে নষ্ট না করে, সেটিকে দিয়ে কোনো জন্তুর বা পাখির প্রাণ বাঁচানো যেতে পারে, একসময় এদের মধ্যে এই প্রথাটি খুবই প্রচলিত ছিল।

EXPLORE MORE HERE:-
বিশ্বের সেরা 7 টি কাকতালীয় ঘটনা
ভাইকিংদের আজব নিয়ম :-
আমরা ইতিহাসের পাতায় ভাইকিং জাতির কথা নিশ্চয়ই শুনেছি।ভাইকিংরা আসলে জলদস্যু। সমুদ্রের কোনো জাহাজকে লুঠ করাই এদের মূল পেশা। তারা বিশ্বাস করতেন, মৃত্যুর পরেও মানুষের আরেকটি জীবন শুরু হয়। ভাইকিংদের কোনো নেতা যদি মারা যায়, তাহলে তাকে প্রথম দশ দিনের জন্য একটি অস্থায়ী কবরে রাখা হয়। এই দশ দিনে মৃতদেহের জন্য ভালো দামী কাপড় তৈরি করা হয়। এরপর সেই নেতার কোনো পরিচারিকা মেয়েকে পরবর্তী জীবনে সেই নেতাটির সঙ্গে থাকার কথা স্বীকার করানো হয়। এবার সেই মেয়েটিকে প্রচুর পরিমাণে মদ খাইয়ে দেওয়া হয়, মেয়েটি নেশায় বুদ হয়ে যায়, এরপর এই অনুষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত সব পুরুষেরা তার সঙ্গে শুরু করে অকথ্য অত্যাচার (আপনাকে বুঝে নিতে হবে আমি কি বোঝাতে চেয়েছি)।
দশ দিন পর সেই দলনেতাটিকে নতুন কাপড় দিয়ে সাজানো হয়, এবং একটি জাহাজে একটি রুম তৈরি করে, সেই বিছানায় এই মৃতদেহটিকে রেখে দেওয়া হয়। পুরো জাহাজটিকে মদ,নেশার দ্রব্য, বাদ্যযন্ত্র, ফল, মাংস, অস্ত্র ইত্যাদি দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়। এরপর সেই মেয়েটিকে জাহাজে নিয়ে আসা হয় এবং তার বুকে ছুড়ি মেরে দেওয়া হয়।

এরপর তাকে সেই নেতাটির বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হয়। এরপর যা করা হয়, তা আরও ভয়ানক। সেই জাহাজটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, কারণ ভাইকিংরা মনে করেন এভাবেই মৃতের রাজ্যে গিয়ে দলনেতা এবং মেয়েটি আরেকটি নতুন জীবন শুরু করবে। সত্যি খুবই অস্বাভাবিক এবং খারাপ প্রথা। তবে বর্তমানে এই প্রথাটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাদের এই প্রথা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা গিয়েছিল দশম শতাব্দীর আরব মুসলিম লেখক Ahmed Ibn Fadlan এর লেখা থেকে।
সাগাদার প্রাচীন প্রথাঃ-
সাগাদাতে একটি প্রাচীন প্রথা প্রচলিত ছিল, মৃতদেহগুলিকে কফিনে ভড়ে, সেগুলিকে চুনাপাথরের পাহাড়ে ঝুলিয়ে রাখত সাগাদার উপজাতিরা। তারা বিশ্বাস করতেন, এরফলে মৃতদেহটিকে কোনো দানব, জন্তু বা খারাপ শক্তি স্পর্শ করতে পারবে না। যার ফলস্বরূপ মৃতদেহের আত্মার আশীর্বাদ তাদের উপর বর্ষিত হবে।

টোরাজো উপজাতিদের অদ্ভুত নিয়মঃ-
ইন্দোনেশিয়ার পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করে টোরাজা উপজাতির মানুষেরা। তারা মৃতদেহকে মমিতে পরিণত করে, এবং নিজেদের কাছেই রেখে দেয়, হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন, নিজেদের কাছেই রেখে দেয়। তারা বিশ্বাস করেন মৃত্যুর পরেও, সেই মৃত মানুষের আত্মা সেই বাড়িটিতেই বসবাস করে, তাই তারা সেই মৃত দেহটিকে নানান ভাবে সেবা-যত্ন করে থাকেন।
মৃতদেহের চামড়া এবং শরীরের মাংস সংরক্ষণ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়, মৃত্যু হওয়ার দিন থেকেই। মৃতদেহগুলিকে সংরক্ষণ করার জন্য তারা ফর্মালডিহাইড এবং জল ব্যবহার করেন। এই উপজাতিদের কাছে, মৃতরা তাদের পরিবারেরই একটি অংশ, শুধুমাত্র তাদের শক্তি হারিয়ে গেছে, তাই তারা কথা বলতে বা নড়তে পারে না। পরিবারগুলির কাছে এই মৃতদেহগুলিকে খুবই পবিত্র। তাদের ছোট থেকেই শেখানো হয় যে, এই মৃত দেহগুলির সাথে কিভাবে বাস করতে হয়, কিভাবে তাদের সেবা করতে হয়।

কিন্তু একটা সময় পর, এগুলিকে আর সংরক্ষণ করে রাখা যায় না, এরপর সেগুলিকে সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়। সেদিন মহাআড়ম্বরে উৎসব পালন করা হয় এবং সেখানে মৃতদেহের উদ্দেশ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে দেওয়া হয়।
তিঙ্গুয়েন উপজাতির অদ্ভুত নিয়মঃ-
ফিলিপিনে বসবাস করে তিঙ্গুয়েন উপজাতির মানুষেরা। এরা মৃত্যু মানেই জীবন শেষ, এই নীতিতে বিশ্বাসী নন। মৃত্যুর পর তারা মৃত দেহকে ভালোভাবে স্নান করিয়ে দেয়, তাদের মতে এরফলে মৃতের আত্মা পরিষ্কার হবে। তারা মৃতদেহকে সুন্দরভাবে জামাকাপড় পড়িয়ে দেয়, এবং তাদের একটি বাঁশের চেয়ারে বসিয়ে রেখে দেয়, এরপর একটি সিগারেট তার ঠোঁটে দিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর কিছুদিন নানান অনুষ্ঠান চলতে থাকে, লোকেরা একত্রিত হয়ে মৃতদেহের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। এরপরের দিন সকালে সেই মৃত লোকটির বিধবা স্ত্রীকে অবশ্যই নিকটবর্তী নদীতে যেতে হবে, এবং তার মাথার চুল বাধার ফিতে নদীতে ফেলে দিতে হবে। যখন সে নদীতে থাকবে, তখন একজন বৃদ্ধ মানুষ তারদিকে জ্বলন্ত ধানের খড় ছুড়ে মারবে, তাদের মতে এরফলে সেই বিধবাটির প্রিয়জন হারানোর সমস্ত দুঃখ, কষ্ট নদীর জলের সাথে ভেসে যাবে এবং আগুনের ছোয়া তার চিন্তা ভাবনা পরিষ্কার করে দেবে।

এই ছিল কিছু জনগোষ্ঠীর মৃতদেহ নিয়ে কিছু আজব নিয়ম। এদের মধ্যে কোন নিয়মটি আপনাকে খুবই খারাপ লেগেছে, বা ভালো লেগেছে, তা আমাদের জানাতে ভুলবেন না যেন।
আর হ্যাঁ আপনি চাইলেই আমাদের সঙ্গে ফেসবুকে যুক্ত হতে পারেন, সেখানে প্রতিদিনই নতুন কিছু আপডেট দেওয়া হয়ে থাকে।

কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।