কাছে না পেয়েও দূর থেকে পছন্দের মানুষটার প্রতি ভালোবাসা, ‘সে আর ফিরবে না’ জেনেও তার ফেরার পথে চেয়ে থাকা…! এই অসম্পূর্ণ ভালোবাসার গল্প টিতে সেই স্বাদই অনুভব করবেন পাঠকরা।।

অসম্পূর্ণ ভালোবাসার গল্পঃ- ‘প্রেমিক’

সারা দিনের কর্মব্যস্ততায় ক্লান্ত হয়ে মাম রাস্তার ধারে ফুটপাতে বসে পড়লো। একটু স্থির হওয়ার পর আবার বাসস্ট্যান্ডের দিকে পাড়ি দিতে গেলে শেষ বাস টা ওর চোখের সামনে দিয়ে ওকে ক্রস করে পেরিয়ে গেলো । এবার বাড়ি ফিরবে কি করে! এই ভেবে মাথায় হাত পড়ার আগেই গৌরব এসে ওর সামনে গাড়িটা দাড় করিয়ে বলল- ” কতবার বলেছি একা একা এতো রাত্রে বাড়ি না ফিরতে, কোনোদিনও কি আমার কথা শুনবে না নাকি ?

মামের ক্লান্ত চিন্তিত মুখটায় ফুটে উঠল একটা কোমল হাসি। মৃদু স্বরে জবাব দিল “তোমার কথা না শুনলে কার শুনব শুনি”?

গৌরব, মামের হাত টা ধরে গাড়িতে চাপিয়ে , সিট বেল্টটা লাগিয়ে একটা চিপস্ এর প্যাকেট হাতে দিয়ে বলল ” কাল থেকে কাজে আসা বন্ধ “। মাম আবার মৃদু হাসি মুখে গৌরবের চেহারাটা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো ।

মাম হলো তার বাবার মায়ের একমাত্র কন্যা আর তার সাথে সাথে এই গৌরব স্যানালের আদরের প্রেমিকা। সদ্য হোটেল ম্যানেজমেন্ট শেষ করে একটা হোটেলে join করেছে মাম । নিজের স্বপ্ন একটা রেস্টুরেন্ট খোলা । সেই উদেশ্যে ওর এত কষ্ট করে শহর পেরিয়ে এই পাহাড়ের হোটেলে এসে কাজ করা। গৌরব প্রথম থেকেই এত দূরে মামকে কাজ করতে আসতে দিতে রাজি না হলেও , অন্ধপ্রেমিকা ভক্ত হওয়ায় একটু কথাতেই গলে জল হয়ে রাজি হয়েছে।

অসম্পূর্ণ ভালোবাসার গল্প
অসম্পূর্ণ ভালোবাসার গল্প

গৌরব নিজেও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, মাইনে ভালো , তবে নিজের গ্রাম ছেড়ে বহুকাল আগেই ও এই শহরে পাড়ি দিয়েছে পড়াশোনার তাগিদে। সেই ক্লাস টেন থেকে ওদের সম্পর্ক । তবে ‘মিয়া-বিবি’ রাজি হলেও দুই বাড়ির মধ্যে জাতিগত বিবাদ থাকায় বিয়ে অব্দি গড়ায়নি ওদের সম্পর্কটা।

গাড়িটা স্টার্ট করে বেশ আস্তে আস্তে চালাচ্ছে গৌরব , মাম জানালা দিয়ে মুখটা বের করে ঠান্ডা বাতাস টা খুব শান্তির সাথে উপভোগ করছে । গৌরব মামের হাত টা শক্ত করে ধরে জিজ্ঞাসা করলো ” মাম কবে তোমার পরিবার আমায় মেনে নেবে!”

“গৌরব আমিও তো তোমায় একি প্রশ্ন করে চলেছি বিগত দুই বছর ধরে ! তোমার পরিবারের জন্য এতকিছু করার পরেও তারা কেন আমায় মেনে নেয়না?”

পড়ুনঃ- অ-পরিপূর্ণ ফেসবুকের প্রেম 

“জানি না মাম…সত্যি জানিনা …মায়ের অসুস্থতার সময় নিজের বাড়িতে মিথ্যে বলে আমার বাড়িতে নার্স সেজে মায়ের এতো করে যত্ন নিলে । মা কে সুস্থ করে তুললে… “

“হ্যাঁ আর তারপর তোমার মা আমায় যেদিন ধরে ফেললো সেদিন ঘাড় ধরে বাড়ি থেকে বের করে দিল । এতটুকুও কৃতজ্ঞতা বোধ জন্মায়নি সেদিন ওনার। তোমার বাবাও সবার সামনে যা না তাই বলে অপমান করেছিল । এমনকি তোমার ছোট বোন ও আমার চরিত্র নিয়ে আঙ্গুল তুলেছিল সেদিন । এগুলো কি আমার প্রাপ্য ছিল গৌরব?”

“না ছিল না মাম। কখনোই ছিল না। যে যাই বলুক মাম কিন্তু আমি তো তোমায় নিস্বার্থ ভাবে ভালোবেসে গেছি সেটার কি কোনো মূল্য নেই?”

“আছে তো নিশ্চই আছে। তাই তো এত কিছু হবার পরেও আমি তোমাকেই চাই ‘গোবু’।
আবার…..! ওই নামে ডাকতে বারণ করেছি না তোমায় তাও ওই নামেই ডাকবে বলো?
আরে বাবা না না …..তুমি তো গৌরব স্যানাল মানে আমার ‘গবু’।

এই লেখা গুলি আপনি হয়ত মিস করেছেন- 

স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প 

একটি কষ্টের প্রেমের গল্প 

বাচ্চাদের মত কথা কাটাকাটি করতে করতে ওরা প্রায় মাম এর বাড়ির কাছের গলিটায় পৌঁছে গেলো । অবসন্ন গলায় গৌরব গাড়িটা থামিয়ে জিজ্ঞাসা করলো “মাম তুমি ভালো আছো তো?”

“ধুর বোকা এটা আবার কি রকমের প্রশ্ন!” এই বলে মাম গৌরবের কাঁধে মাথাটা রেখে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে হাসতে শুরু করলো ।
গৌরব মামের প্রতিটা বলা না বলা, সব কথার মানে অদ্ভুত ভাবেই যেন বুঝে যায়। তাই মাম এর এই হাসিটা মানে বুঝতে পেরে জিজ্ঞাসা করলো “বলছি…..পালিয়ে যাবে আমার সাথে ? চলনা অনেক দূরে কোথাও চলে যাই দুজনে। আমাদের স্বপ্নের সংসার গড়ে তুলবো সেখানে ।”

SAD LOVE STORY IN BENGALI

মাম কথাটা শুনে গাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি নামতে গেলে গৌরব লক্ষ করল ওর হাতের লাল দাগটা।
“এটা কি করে লাগলো মাম?”
“গৌরব ,একটা সময় আমরা সময়কে অতিক্রম করেছিলাম……আর এখন সময় আমাদের অতিক্রম করছে …. আবার দেখা হবে গো । বাচ্চাটা না খেয়ে আছে বোধ হয়……আমি যাই।” এই বলে মাম চোখের জল আড়াল করে দৌড়ে সামনের বিল্ডিংটার সিড়িতে উঠে গেলো ।

গৌরবের মুখটা ম্লান হয়ে গেলো । মামের চলে যাওয়া টা এক মনে দেখতে দেখতে কি যেন ভাবতে শুরু করলো ।
এই এক বছর আগে মাম শুধু আমার ছিল কিন্তু এখন………এখন সে অন্য কারোর সম্পত্তি । যখন আমার বাড়ি থেকে অপমান করে মাম কে তাড়িয়ে দিয়েছিল তখন মাম কাঁদতে কাঁদতে নিজেকে শেষ করতে গেলে ওর ছোট বেলার বন্ধু শুভম ওকে বাঁচিয়েছিল। সেই খারাপ সময় আমি ওর পাশে থাকতে পারিনি কিন্তু শুভম ওর ভরসা হয়ে উঠেছিল। ওর বাড়ির লোকও শুভম কে খুব পছন্দ করত তাই এক কথায় জোর করেই কোন এক মন্দিরে গিয়ে মাম এর বাবা-মা , মামের সাথে শুভম এর বিয়ে দিয়ে দেয়।

মামের ও আমার উপর হয়তো ভরসা উঠে গেছিলো তাই ও নিজেও বিয়েতে খুব একটা আপত্তি দেখায়নি। কিন্তু কিছুমাস পর যখন আমাকে নিয়ে , শুভম মামের ওপর মিথ্যে সন্দেহ করে নির্যাতন শুরু করলো, তখন মাম আবার নিজের বাড়ি ফিরে আমার সাথে যোগাযোগ করলো। তখন জানতে পারলাম ও গর্ভবতী। তবুও মামকে বললাম শুভম কে ডিভোর্স দিয়ে আমার সাথে নতুন করে সংসার পাততে। কিন্তু বাবা মায়ের বাধ্য মেয়ে মাম , তাদের অনুমতি ছাড়া কিছুতেই আমার কথাতে সায় দিলো না ।

অসম্পূর্ণ প্রেমের গল্প
অসম্পূর্ণ প্রেমের গল্প
<

আবার পুনরায় আমাদের পরিবার অস্বীকার করলো আমাদের সম্পর্ককে। নিজেদের সন্মান রক্ষা করতে মামের বাবা-মা, মাম কে শশুর বাড়ি পাঠিয়ে দিল। জেদের বসে মেয়েটা আর ফিরলো না নিজের বাড়িতে এমনকি আমার কাছেও । জানেন ওর মৃদু হাসিটা প্রমাণ দেয় ও ভালো নেই, ওর হাতের দাগও প্রমাণ করে দেয়, যে ওর উপর অনেক নির্যাতন করা হয়। তাও ফেরেনি ও , আর ফিরবেও না। আমি প্রেমিক হয়েই না হয় দুর থেকে ওর খেয়াল রাখবো। তবে আমি ওর জন্য অপেক্ষা করবো, হ্যাঁ এভাবেই করবো আমরণ কাল অব্দি …..মাম এর প্রেমিক হয়ে ….শুধু মাত্র প্রেমিক হয়েই।

প্রেম করার সময় বাবার মায়ের সম্মতির প্রয়োজন হয়না যাদের, তাদেরই আবার বিয়ের সময় বাবা মায়ের সম্মতির অভাবে একা ফেলে চলে যেতে হয় কাউকে , সেই একা থেকে যাওয়া ‘কেউ’ মানুষটার নামই প্রেমিক …।।

আলোরানি মিশ্র

গল্পের ভাবনায়-
লেখাটির সম্পূর্ণ কপিরাইট লেখিকার পক্ষে ছাড়পত্রের অ্যাডমিন দ্বারা সংরক্ষিত। লেখাটির অন্যত্র প্রকাশে (ভিডিও/অডিও/টেক্সট ইত্যাদি) ছাড়পত্র উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবে। এতে আপনার আর্থিক ক্ষতিও হতে পারে।
আলোরানির আরও কিছু গল্প- 

ব্যর্থ প্রেমের গল্প 

একটি মিষ্টি প্রেমের গল্প 

ছোট হাসির গল্প 
এক ক্লিকেই ছাড়পত্রের সঙ্গে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial (লিংক কাজ না করলে টেলিগ্রামে সার্চ করুন- CHARPATRAOFFICIAL) 

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

আমরা আপনার অপেক্ষায়। আপনি আসছেন তো!! 

অসম্পূর্ণ ভালোবাসার গল্প। অসম্পূর্ণ প্রেমের গল্প। 1 NEW HEART TOUCHING SAD LOVE STORY IN BENGALI.

Spread the love

Leave a Reply