আজকের গল্পটির প্লটে রয়েছে, একটি অসমাপ্ত প্রেমের শেষ চিঠি, যেটি পাঠিয়েছে প্রেমিকা তার প্রাক্তন কে।
অসমাপ্ত প্রেমের শেষ চিঠিঃ- ‘আত্মসম্মান’
সবকিছু নিয়েই লিখি কিন্তু জানিস তোকে নিয়ে লেখার সাহস কোনোদিনও হয়ে ওঠে না। তাই আজ সবটা জুড়ে শুধু তুইই থাকবি শুধু তুই । চোখের জল ফেলতে ফেলতে আরু পুরোটা এক নিমেষে লিখে , অনেকটা সাহস যুগিয়ে পোস্ট অফিসে গিয়ে চিঠিটা পোস্ট করে দিয়ে এলো । পরমুহূর্তেই , সোজা বাস ধরে, বিদায় নিল।
আমি আরু, ইয়ে মানে আরোহী বিশ্বাস । আর আমি নিজেই হলাম এই গল্পের মূল চরিত্র।
উমমম কি যে বলি,
শুধু মৈনাক ; হ্যাঁ ওটাই মানানসই…
এই তো সবে মাত্র এক বছর ও হয়নি , এমন একটা মহামারীর হাত থেকে আমরা রেহাই পেলাম । হ্যাঁ ঠিক বুঝেছেন , আমি করোনা দেবীর এই কথা বলছি। উচ্চমাধ্যমিক অব্দি শান্তি তে পেরোলেও, কলেজ মানে নলেজ লাইফ এর দুটো বছর , আমাদের করোনা দেবীর আবির্ভাব আর রঙ্গ তামাশা দেখতেই কেটে গেলো । এরপর কলেজ খুললেও , খুব একটা কলেজ যাওয়া হয়ে উঠে না । তবে পুরোনো বন্ধুরাই যখন কলেজের ক্লাসমেট হয় সেখানে অসুবিধার কিছুই থাকে না ।

সেই ছেলে বেলা থেকেই মাত্র দুজন ছেলে বন্ধু ছাড়া তেমন কোনো বন্ধু জোটাই নি। আমাদের ছোট্ট মতো একটা গার্লস গ্রুপ , সেই স্কুল থেকেই টিকে আছে। প্রথম প্রথম কলেজে ভর্তি হওয়ার পরেই WhatsApp, টেলিগ্রাম এর মাধ্যমে স্যাররা গ্রুপ তৈরি করে পড়াশোনা শুরু করলেন। বেশ উৎসুক হয়েই শুরু করলাম অনলাইন ক্লাস । তবে হ্যাঁ আঠারো টা সিটের মধ্যে ১৬ টি মেয়ে বাকি ২ জন ছেলে হওয়ায় , মেয়েদের পাল্লাই ভারী সবসময়। হঠাৎ একদিন সন্ধ্যে বেলায় ক্লাস শেষ করার পর একটা unknown নম্বর থেকে msg এলো-
” Hi, আমি মৈনাক বলছি । কেমন আছিস ? আমি তোর সাথে একই ডিপার্টমেন্ট এ পড়ি। প্রশ্নটা হলো কি কি বই কিনলি?”
আমি আননোন নাম্বার দেখে, দাদার কথা মত উত্তর না দিয়ে ব্লক করে দিলাম । দেখতে দেখতে ৬ টা মাস কেটে গেলো। প্রথম তারপর দ্বিতীয় সেমিস্টার শেষ । এর মধ্যেই স্যারদের খুব প্রিয় হয়ে উঠেছে মৈনাক, যেন ওর কাছে আছে কোনো জ্ঞানের ভান্ডার ,সব বিষয়ে পারদর্শী ছেলেটা । তাই রেজাল্ট এর সময়, ওর নাম্বার জানার জন্য পাগল হয়ে উঠলাম। বাকিদের জিজ্ঞাসা করলে জানতে পারলাম , ও নাকি কারুর সাথে চ্যাট করে না । বলতে পারেন অন্তর্মুখী অর্থাৎ আপনাদের ভাষায় যাকে বলে introvert । তাও অনেকটা সাহস যুগিয়ে আনব্লক করে msg করলাম,
” Hi… আমি আরু বলছি- প্রশ্নটা হলো নাম্বার কতো পেলি?” রিপ্লাই এর আসায় ভোর হতে চললেও রিপ্লাই এলো না ।
পরের দিন সকালে উঠে দেখলাম “177/200” ।
আমার জায়গাটা যে অন্য কেউ নিতে পারেনি ভেবে খুব খুশি হলেও , অহংকার দেখে রাগে মাথা জ্বলে গেলো। যে কিনা কিছু মাস আগে নিজে থেকে msg করেছিল, আজ কিনা সেই এতটুকু রিপ্লাই করে ছেড়ে দিল ।




কোনো জ্ঞানী ব্যক্তির উক্তি “যে বেশি তোমায় avoid করবে তার পেছনেই তুমি ততবেশি ছুটবে” ।
আমারও হলো একই অবস্থা। আমাকে কেউ avoid করবে সেটা মেনে নেওয়া আমার পক্ষে দুঃসাধ্য ব্যাপার। আগের থেকেই MSG করলাম কিছুদিন, কথা হতে হতে একটা সময় পর আমাদের অভ্যাসে পরিণত হলো । পড়ার সময় এর থেকে সময় বের করে, একে অপরকে সময় দেওয়া । পড়াশোনা নিয়ে আলোচনা করতে খুব ভালোবাসে ছেলেটা, আর ওর এই অভ্যেস টাকে আমি ও খুব পছন্দ করতাম।
এভাবেই করোনা দেবীর কৃপায় কলেজ যাওয়া হয়ে উঠেনা, তাই একদিন সামনের স্বাস্থ্য কেন্দ্রতেই দেখা করাটা সেফ হবে ভেবে ,দুজনেই গেলাম । প্রথম দেখাতেই যেন মুগ্ধ করেছিল ওর কথা বার্তা আর ব্যবহার । মিনিট ১০ কথা বলে দুজনেই নিজে নিজের বাড়ি ফিরে এসে , একে অপরকে কেমন লাগলো সেই নিয়ে তুমুল আলোচনা চললো । এভাবেই বন্ধুত্বটা একটু একটু করে বেড়ে চলেছিল ।
অবশেষে ফোর্থ সেমেস্টার শেষ এর পর শেষমেশ কলেজ খুললো । একসাথে কলেজ যাওয়া আসা থেকে শুরু করে, টিফিন শেয়ার, পড়া, সবমিলিয়ে বেশ ভালো চলছিল । বাকি ফ্রেন্ড দের সাথে একেবারেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে মৈনাকের সাথে থাকতে শুরু করলে, গোটা ডিপার্টমেন্ট, কলেজ গ্রুপ , এমনকি স্যার দের সামনেও আমাদের নিয়ে নানান তর্যা শুরু হলো । সবার মুখে শুধু আরু & মৈনাক ছাড়া টপিক নেই । আর এদিকে এতটাই দুজন নিজেদের নিয়ে মেতে উঠলাম যে নিজেদের স্বপ্ন গুলোই ভুলতে বসলাম ।
পড়াশোনার ক্ষতি টা উপলব্ধি করার পর , ওর ভবিষ্যতের কথাটা আগে মাথায় এলো । বাবা মায়ের একমাত্র ভরসাবান ছেলেটার যে কতটা ক্ষতি হচ্ছে সেটা বুঝতে সক্ষম হলাম । নিজের অজান্তে নিজের ক্ষতির পরিমাপ টাও বুঝলাম ।
চিরকাল মেজাজি আর ভদ্র বলে পরিচিত , “আমি ” টা সবার কাছে যেন ধীরে ধীরে হাসির পাত্রে পরিণত হচ্ছিলাম । আর এসব সহ্য করতে না পেরে, শুরু হলো আমার মৈনাকের প্রতি খারাপ ব্যবহার। Avoid করতে শুরু করলাম ওকে। এতটা avoid, ও বোধহয় মেনে নিতে পারেনি । তাই হঠাৎ করেই ও যেন কপ্পুরের মতে কোথাও উবে গেলো। আমিও আর খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করিনি। কিন্তু আমার জন্মদিনের দিন আবার ওই একি নম্বর থেকে একটা MSG এলো রাত ১২ টা সময় । আমি রিপ্লাই করে জানিয়ে দিলাম যদি আর পাঁচটা বন্ধুর মত মিশিস তাহলে MSG করবি নইলে করিস না ।
হয়তো ও দুরত্ব বাড়িয়েছিল আরো কাছে আসার জন্য কিন্তু আমি ইতিমধ্যেই অনেকটা দূরত্ব বাড়িয়ে, নিজের জীবন থেকে একেবারে বিদায় দিয়ে দিয়েছিলাম ওকে।




মুখোমুখি দেখা হলেও এখন আর কথা বলতে ইচ্ছে করেনা , একবারও ফিরে তাকাতেও মন যায়না । আত্মসম্মান বোধ না অকৃতজ্ঞর ঘৃনা কোনটা ঠিক জানিনা । তবে নিজের আত্মসম্মান আর মর্যাদার আগে তোকে জায়গা না দিতে পারার জন্য চিরকালীন ক্ষমা প্রার্থী হয়ে রইবো । এক্সাম শেষ , শুনলাম তুই দেশের বাড়ি ফিরে গেছিস তাই ওই ঠিকানাতেই চিঠিটা পাঠাচ্ছি ফোন নম্বর টা বদলে নিয়েছিস বলেই আমার এই সিদ্ধান্ত। আজ আমিও নিজের ভবিষ্যত গড়তে অনেক দূরে চলে যাচ্ছি , তাই ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছিলাম না, পারলে কোনোদিনও ক্ষমা করিস না , তোর স্বার্থপর বন্ধু আরুকে…
-ইতি তোর শুভাকাঙ্ক্ষী,
আরু।।
আরুর লেখা চিঠি টা আদৌ শেষ পর্যন্ত মৈনাকের কাছে পৌঁছেছিল কিনা জানা নেই, তবে ভালোবাসার চেয়েও যে আত্মসম্মানটা বেশি দামী তার প্রমাণ আরু দিয়েছিল।
গল্পের প্রতিচ্ছবি রচনায়-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
এই গল্প গুলি হয়ত আপনি পড়েন নি- ইমোশনাল লাভ স্টোরি- শেষ কথা অভিমানী ভালোবাসার গল্প- সমাপ্তি হারানো ভালোবাসা ফিরে পাওয়ার গল্প
অসমাপ্ত প্রেমের শেষ চিঠি। স্যাড লাভ লেটার last love letter.




কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।