চলুন আজ আবার কিছু বাংলা অনুপ্রেরণামূলক গল্প পড়া যাক। জীবনের এই চড়াই-উতরাই রাস্তায় চলতে চলতে আমরা ক্লান্ত, তাই দরকার একটু মোটিভেশন। এই মোটিভেশনাল গল্প গুলি শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন, আর হ্যাঁ আমাদের নতুন টেলিগ্রাম চ্যানেলে যুক্ত হয়ে প্রতিদিন আপডেট পেতে টেলিগ্রামে গিয়ে সার্চ করুন- ছাড়পত্র অথবা charpatrablog

বাংলা অনুপ্রেরণামূলক গল্প নীতি কথা গল্প

আশা নামক আলোটি (বাংলা মোটিভেশনাল গল্প)

রাতের সময় ছিল, চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। কেবলমাত্র একটি কক্ষ থেকে আলো দেখা যাচ্ছে। সেই কক্ষটিতে চারটি মোমবাতি জ্বলজ্বল করছিল।

চারিদিকে চুপচাপ দেখে, মোমবাতিগুলি এবার নিজেদের মধ্যে কথা বলা শুরু করল। প্রথম মোমবাতিটি বলল-“ আমি শান্তি, আমি যখনই এই পৃথিবীর দিকে তাকাই, তখনই আমার প্রচুর দুঃখ হয়। চারিদিকে মারামারি, খুন-হিংসা, হানাহানিতে ভর্তি।এখানে আমার টিকে থাকাই দায়। আমার মন আর কিছুতেই আর এখানে টিকে থাকতে চাইছে না।“ এই কথাটি বলার পড় মোমবাতিটি নিভে গেল।

এরপর দ্বিতীয় মোমবাতিটিও তার মনের কথা বলা শুরু করল- “আমি বিশ্বাস, আমার মনে হয় মিথ্যা, অবহেলা, ধোকা, বেইমানী, অবাস্তবতা আমার অস্তিত্ব মিটিয়ে দিতে চলেছে। এই জায়গাটি আর আমার জন্য উপযুক্ত নয়। তাই আমিও চলে যাচ্ছি” এটি বলার পড়ে দ্বিতীয় মোমবাতিটিও নিভে গেল।

এবার তৃতীয় মোমবাতিটি বলে উঠল- “ আমি প্রেম, আমি সবার জন্য জীবনও দিয়ে দিতে পাড়ি। কিন্তু এখন আর কারও কাছে সময় নেই, সবাই ব্যস্ত। স্বার্থপরতা, ঘৃণা আমার জায়গা দখল করে নিচ্ছে। মানুষের মন থেকে প্রেম ভাবনার সূর্য অস্তমিত প্রায়। আমার নিজের এই অবক্ষয় হওয়ার আগেই আমার উচিত এই স্থান ত্যাগ করা। সুতরাং, আমিও চলে যাচ্ছি” এটি বলার পড় তৃতীয় মোমবাতিটিও নিভে গেল।

বাংলা অনুপ্রেরণামূলক গল্প  আশা নামক আলোটি
বাংলা অনুপ্রেরণামূলক গল্প আশা নামক আলোটি

তৃতীয় মোমবাতিটি নিভে যাওয়ার সাথে সাথেই একটি ছোট ছেলে, সেই ঘড়টিতে প্রবেশ করল। সে দেখল যে কেবলমাত্র একটি মোমবাতিই জ্বলছে, বাকি গুলি সব নিভে গেছে, কিন্তু তাদের অবশিষ্ট এখনও অনেকটা বাকি রয়েছে। এটি দেখার পড় ছেলেটি মনে মনে খুবই দুঃখ পেল, কারণ এই মোমবাতি গুলি নিভে গেছে, এগুলিকে জ্বালানো আর সম্ভব নয়, কারণ তার কাছে দেশলাই নেই। আর চতুর্থ মোমবাতিটিও কখন নিভে যাবে, তার কোনো ঠিক নেই, এই কথা ভাবতে ভাবতে সেই ছেলেটি চতুর্থ মোমবাতিটিকে নেভাতে উদ্যত হল।

এবার চতুর্থ মোমবাতিটি বলে উঠল- “দাড়াও আমাকে নিভিও না, আমাকে নিভালে এই পুরো জায়গাটি অন্ধকার হয়ে যাবে” এবার ছেলেটি বলল- “তুমি কে?” এবার মোমবাতিটি বলল- “আমি আশা” আমি সবসময় তোমার সাথে আছি। তোমার কাছে দেশলাই নেই তো কি হয়েছে, তুমি আমার আলো দিয়ে বাকি মোমবাতি গুলি জ্বালাতে পারো এবং এই পুরো ঘড়টিতে আলোর ঝর্না ধারা বইয়ে দিতে পাড়।

নীতিকথাঃ– মানুষের জীবন গতিশীল। কখনো সুখ, কখনো দুঃখ আমাদের জীবনে এসে উপস্থিত হয়। যখন আমাদের জীবনে অন্ধকার নেমে আসে, মন অশান্ত হয়ে যায়, বিশ্বাস উঠে যায়, প্রেম নষ্ট হয়ে যায় তখন কেবল মাত্র আশা-ই পাড়ে আমাদের জীবন আলোকিত করতে। কিন্তু জীবনে প্রেম,বিশ্বাস, শান্তি সবটুকু শেষ হলেও, আশার আলোটুকু যেন সর্বদা জ্বলতে থাকে, এই আলো দিয়েই বাকি অন্ধকার গুলিকে দূর করা যেতে পাড়ে। তাই আশা এবং ধৈর্য কখনোই ছাড়বেন না।

আরও পড়ুনঃ- নীতিকথার গল্প

সমস্যা সমাধানের দ্বিতীয় রাস্তা খুঁজুন (onuprerona mulok golpo)

Work From Home-এ ব্যস্ত এক পিতা। তার ১০ বছরের ছোট্ট, বাচ্চাটি বাড়বার এসে, তাকে কিছু প্রশ্ন করছে, আবার চলে যাচ্ছে, আবার আসছে আবার চলে যাচ্ছে, এভাবে বেশ কয়েকবার সেই বাচ্চাটি কোনো না কোনো প্রশ্ন নিয়ে আসছে। যার ফলে পিতার কাজ করতে খুবই বিরক্তিবোধ হচ্ছিল। এই সমস্যা সমাধানের জন্য, পিতা ভাবলেন এবার তার সন্তান এলে, তাকে এমন কিছু কাজ দিয়ে দিবেন, যাতে তার সেটি সমাধান করতে অনেক্ষন লেগে যায়, এবং পিতা তার কাজ আরামে করতে পাড়েন।

কিছুক্ষণ পড় সেই বাচ্চাটি আরেকটি প্রশ্ন নিয়ে তার বাবার কাছে, এলে তার বাবা, তার হাঁতে কিছু কাগজের টুকরো ধরিয়ে দিলেন, এটিতে একটি পৃথিবীর ম্যাপের ছবি ছিল। তিনি তার সন্তানকে বললেন- এখানে পৃথিবীর  ম্যাপের ছবি আছে, যাও আঠা দিয়ে এগুলিকে জুড়ে নিয়ে এসো। শিশুটি সেই কাগজের টুকরো গুলি নিয়ে চলে গেল।

বাংলা মোটিভেশনাল গল্প সমস্যা সমাধানের দ্বিতীয় রাস্তা খুঁজুন
বাংলা মোটিভেশনাল গল্প সমস্যা সমাধানের দ্বিতীয় রাস্তা খুঁজুন

পিতা ভাবলেন, তার সন্তানতো পৃথিবীর ম্যাপের ছবি ঠিক মত জানেই না, বই থেকে খুঁজে বেড় করতে, এবং মিলিয়ে নিয়ে, আঠা লাগাতে অনেক সময় লেগে যাবে। তাই আরামেই সে তার কাজ করতে পাড়বে।

কিন্তু প্রায় ২ মিনিট পড় সেই শিশুটি সেই কাগজের টুকরোগুলি জোড়া লাগিয়ে চলে এল। এত কম সময়ের মধ্যে পৃথিবীর ম্যাপের ছেঁড়া কাজগগুলি ঠিকমত জোড়া লাগানো দেখে, পিতা অবাক হয়ে গেলেন। তিনি তার সন্তানকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কিভাবে এত তাড়াতাড়ি এগুলিকে জোড়া লাগালে? তার সন্তান বলল- এই কাগজটির এক পাশে পৃথিবীর ম্যাপ আছে কিন্তু এর পেছেনের অংশে  টম অ্যান্ড জেরির কার্টুন আছে। আমি কার্টুন দেখে জোড়া লাগিয়েছি। আর ম্যাপটিও আপনা থেকেই হয়ে গেল।

নীতিকথাঃ- আমরা কোনো বড় সমস্যা দেখে ঘাবড়ে যাই। সমস্যাটির আকার দেখেই আমরা ভেবে বসে থাকি যে, সমস্যাটির সমাধান হয়ত আমাদের দ্বারা হবে না। কিন্তু সমস্যাটিকে দেখে ভয় না পেয়ে যদি, সেই সমস্যাটিকে নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করি, তাহলে হয়ত সেই সমস্যাটির একটি নতুন সহজ পথের খোঁজ আমরা পেতে পাড়ি। কিন্তু তা না করে সমস্যা দেখেই আমরা ভয়ে পালিয়ে যাই। কোনো সমস্যা দেখতে বড় হলেও, তার সমাধান কিন্তু অনেক ছোট হয়ে থাকে। তাই জীবনে যে সমস্যাই আসুক না কেন, প্রথমে তাকে নিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, অযথা ভয় পেলে চলবে না, দেখতে হবে সমস্যাটি সমাধানের আরেকটি রাস্তা আছে কিনা!

বাংলা অনুপ্রেরণামূলক গল্প
বাংলা অনুপ্রেরণামূলক গল্প
<

আরও পড়ুনঃজীবন নিয়ে উক্তি

যাহাই চাইবে, তাইই পাইবে (bangla motivational golpo)

কোথা থেকে, এক সাধু এসে পাশের পাহাড়ের জঙ্গল কিছুটা পরিষ্কার করে আস্তানা গড়ে তোলে, চারিদিকে ধুপকাঠির সুগন্ধে ভরিয়ে তুলত সে। সে প্রতিদিন পাহাড়ের চূড়ায় যেত, এবং মাঝে মধ্যেই চেঁচিয়ে বলত- “যাহাই চাইবে, তাইই পাইবে” তার এই চিৎকার শুনে, সেই পাহাড়ি রাস্তার গা ঘেঁষে যাওয়া লোকেরা ভাবত, এই সাধুটি হয়ত পাগল। কোনোদিনও কি যা চাওয়া হয়, তাই পাওয়া যায়! রাস্তার লোকগুলি সাধুর কথা শুনে হাসা-হাঁসি করে চলে যেতেন।

একদিন এক বেকার যুবক, সেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন, তিনি সাধুর কথা শোনার পড়, সাধুর কাছে গেলেন এবং বললেন- “সাধু বাবা এটাও কি সম্ভব যে, আমি যাই চাইব, তাইই পাইব”, সাধু- হ্যাঁ পুত্র সম্ভব।

কিন্তু তার আগে তুমি আমাকে তোমার ইচ্ছের কথা শোনাও। যুবকটি বলতে লাগল- তারা খুবই গরীব, তার ইচ্ছে সে যেন একজন নামী হিরের ব্যবসায়ী হয়ে উঠতে পাড়ে, কিন্তু সে কিভাবে শুরু করবে তা কিছুই সে বুঝতে পারছেনা, কারণ তার কাছে অর্থ কিছুই নেই।

এবার সাধুটি বললেন- আমি তোমাকে একটি হীরা এবং একটি মুক্তো দিব, তুমি এই দুটি ব্যবহার করে, তোমার নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পাড়বে। সাধুর কথা শোনার পড় যুবকের চোখে স্বপ্ন পূরণের আকাঙ্কা জ্বলজ্বল করে উঠল। সাধু বললেন- তোমার হাত বাড়াও বৎস।

onuprerona mulok golpo নীতি কথা গল্প
onuprerona mulok golpo নীতি কথা গল্প Image by Sambeet D from Pixabay

যুবকটি হাত বাড়ালে, তার হাত মুঠো করে, যুবকের হাঁতে দিয়ে বললেন- এই নাও আমি তোমাকে সময় এবং ধৈর্য নামে দুটি হীরে ও মুক্তো দিলাম। তুমি এগুলি ব্যবহার করো। প্রথমে মূলধনের চিন্তা না করে, তুমি যে কাজ করতে চাও সেই কাজ ভাল ভাবে শিখে নাও, তারপর ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা কর।

সাধুটির কথা মনযোগ দিয়ে শোনার পড়, যুবকটি সাধুকে ধন্যবাদ এবং প্রনাম জানিয়ে সেখান থেকে চলে গেল। এরপর সে একটি হীরের খনিতে কাজ নেয়, এরপর সে ধীরে ধীরে ব্যবসার কৌশল সেখে এবং সময়ের সাথে সাথে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের মাধ্যমে সে একজন বড় হীরের ব্যবসায়ী হয়ে উঠে।

নীতিকথাঃ- সুতরাং, নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সময় এবং ধৈর্য এই দুটি জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে সময় নিয়ে  অভিজ্ঞতা অর্জন করুন। তারপর ধৈর্য সহকারে সুযোগের অপেক্ষা করুন। আপনার স্বপ্ন পূরণে কেউই আপনাকে বাঁধা দিতে পারবেনা।

আরও পড়ুনঃ- পৃথিবীর অদ্ভুত জিনিস

এই বাংলা অনুপ্রেরণামূলক গল্প গুলি আপনাদের কেমন লাগল তা আমাদের জানাতে ভুলবেন না। আমাদের নতুন টেলিগ্রাম চ্যানেলে যুক্ত হয়ে প্রতিদিন অজানা তথ্য এবং মোটিভেশনের আপডেট পেতে টেলিগ্রামে গিয়ে সার্চ করুন- ছাড়পত্র অথবা charpatrablog ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ।

Spread the love

Leave a Reply