অসাধারণ দুটি সুন্দর ছোট্ট গল্প আজ নিয়ে আসা হয়েছে। এই ছোট গল্প গুলি সম্পর্কিত মতামত নীচে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।

সুন্দর ছোট্ট গল্পঃ- ০১

নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থেকে সমর অন্য কাজে মনই দিতে পারে না। সকাল থেকে টুথপেস্ট থেকে বাথরুমের মগটাকে ছাড়ে না। সোহিনীও অফিস বের হবার তাড়ায় সেটা আরো উচ্চৈঃস্বরে আকার নেই। এতটাই ব্যস্ত যে দৈনন্দিনের ভালোবাসা ওই কর্পোরেট দুনিয়ায় উড়ে গেছে। খাবার টেবিলে বসেও স্টক মার্কেট, বিজনেস ডিজাইনের গল্পই আওড়াতে থাকে। “ট্রেনটা আজকে মিস করবো জানো”, সমর বলল।

“কিপটের হদ্দ, কেনো, গাড়ি বুক করে যেতে পারো না?”, সোহিনী বলল। সমর সব শুনে হয়তো নিজের মিতব্যায়ী তকমাকে সমর্থন করে বেরিয়ে গেলো। রাস্তায় কিছুক্ষন হেঁটে বড়োরাস্তার বাস ধরতে হয় তাকে। এর মধ্যে একটা ছোটো মাঠ পড়ে। ওই মাঠেই একটা বাচ্চা মেয়ে বসে থাকে। নাম জানতে সমর এগিয়ে গেলো, ততক্ষণে তার অফিসের ব্যস্ততার মানসিক ছুটি ঘটে গেছে। মেয়েটি এমনিতে এতটা শান্ত যেমন, ঝরনার পাশে থাকা নিশ্চুপ প্রস্তরখন্ড যার গায়ে কত জলের ঝাপটা লাগে অবলীলায় সে তা মনে রাখে না প্রশান্ত চিত্তে সয়ে যায়।

“তোমার নাম কি মা?” সমর খুব নরম ভাবে বলল। তবে মেয়েটির কোনো উত্তর নেই। সমর যখন বার বার একই কথা জিজ্ঞেস করে, তখন মেয়েটি ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে। মনে হয় শ্রাবনের ঘনীভূত মেঘ বাতাসের তীব্র অপমানে কষ্টে ঝরে পড়লো ধরনীর মাঠে ঘাটে। সমরেরও খুব খারাপ লাগলো বিষয়টি, সমরের চোখেও জল এল। মনে করলো, মেয়েটিকে বিরক্ত করা ঠিক হয়নি। এমন সময় হঠাৎ মেয়েটি হাসিমুখে সমরের চোখের জল মুছে দিল। খুব অবাক হয়ে সমর বললো, “তুমি এই তো কাঁদছিলে, আবার আমার চোখ মুছিয়ে দিচ্ছ?”

সুন্দর ছোট্ট গল্প
সুন্দর ছোট গল্প

” আমার কান্না একদম ভালো লাগে না,” মেয়েটি বললো। “তা তুমি কেনো কাঁদো মা,” সমর আবার বলে। মেয়েটি একটু চুপ করে বলল, “ওই বড়োরাস্তার মোড়ে, আমাকে মামা ভিক্ষে করতে পাঠায়, যেদিন ভিক্ষে পাই না সেদিন মামা খুব মারে, খেতে দেয় না। মামা বলে, তোকে বিক্রি করে দেবো।” সমরের খুব কষ্ট লাগে এসব শুনে। সমর বলে, “তা তোমার বাবা মা কোথায়? মেয়েটি কাঁদো কাঁদো চোখে বলে, মারা গেছে এক লরির ধাক্কায়।”

সমরের মোবাইলটা বেজে ওঠে, ফোন ধরতেই সোহিনী বলে, “তুমি টিফিন খেয়েছো?” কিছুটা নীরবভাবে ফোনটা কেটে দেয় সমর। ব্যাগ থেকে টিফিন খুলে দেখে, মুগডাল, একটা সবজি আর ভেটকি পাতুরি আছে। মেয়েটিও খুব আগ্রহ চোখে তাকাচ্ছে। সমর বললো, “এ নাও আজকে পেট ভরে খেও। আর কোনোদিন ভিক্ষে করো না মা।” বলে সমর বাড়ির দিকে রওনা দিলো।

পরের দিন, সোহিনী চিকেন বিরিয়ানি তৈরি করে। এমনিতে ও রান্নাটা ভালোই করে। সমর প্রতিদিনের মতো বেরিয়ে যায় অফিসের দিকে। যেতে গিয়ে আবার সেই মেয়েটিকে চোখে পড়লো তার। সমর দেখলো, মেয়েটি খুব আনন্দিত ভাবে তার দিকে ছুটে আসছে, কিন্তু তার চোখে জল। সমর জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে, তুমি আনন্দে আসছো, কিন্তু তোমার চোখে জল কেনো?”

“আমি স্কুলে ভর্তি হয়েছি, কলকাতায়, একজনের বাড়িতে থাকবো, আর সেখান থেকে স্কুলে যাবো, কিন্তু তোমার সঙ্গে দেখা হবে না, তাই চোখে জল চলে এলো। তবে আমি পুজোর সময় আসবো, তুমি থেকো।” সমরের চোখের বাঁধ যেন আর মানলো না। মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরলো সমর, ছোটো মেয়েটির হাত চোখ মুছিয়ে দিলো সমরের। বাড়ি থেকে আনা চিকেন বিরিয়ানিটা মেয়েটির মুখে তুলে দেয় সমর। মেয়েটি বলল, “এই ভাতটা খুব ভালো খেতে।” সমর বললো, “তা তোমার নাম কি মা?” মেয়েটি বললো, “আমার নাম পিয়াসা।”

পড়ুনঃ- 
শিক্ষামূলক ছোট ঘটনা 

একটি সুন্দর প্রেমের গল্প 

সুন্দর ছোট্ট গল্পঃ- ০২

২৫ বছর বয়স হয়ে গেলো, এখনো সিগারেটের ধোঁয়ায় কাশি হয়, টানা তো দুরস্ত। গাড়ির টায়ার পাংচার হয় জানি কিন্তু, আমার তো জীবনের টিউবেই হাওয়া নেই। রিয়া আমার গার্লফ্রেন্ড, কিন্তু ও তার বাড়িতে ডেকে উদম খিস্তি দিয়ে তার বাবা-মা সহ সপরিবারে অপমান করলো, আর বই এর প্রথম পৃষ্ঠার মতো আমি মুখবন্ধ। আরে দাদা, সিগারেট খাবেন, একটু দূরে গিয়ে খান না! বলছি তো আমি খাই না। ধোঁয়ায় কেমন কাশি আসছে। আমি তেমন কেউ নই, একটা লোফার ছেলে, আর নামটার কোনো কাজ নেই, তার বলার প্রয়োজন মনে করছি না।

আমি বেসিক্যালি একাই থাকি দূর্গাপুরের একটা মেস বাড়িতে। তবে আমার একটা বাজে রোগ আছে, আমি হুটহাট করে প্রেমে পড়ে যাই। আবার সাঁতরে পাড়ে আসি, আবার নতুন করে পুকুর খুঁজি ডুব দেওয়ার জন্য। তবে, এটা আমার বেশ অভ্যেসে দাঁড়িয়েছে। কীভাবে এখান থেকে উঠবো বুঝতে পারছি না। হাইওয়ের পাশে একটা ধাবাতে খাবার পরিবেশন করি। দোকানের মালিক নই, সারাদিন গাধার মতো খাটি, আর রাতে এই মেয়ে ওই মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলি, চ্যাট করি।

বাংলা ছোট গল্প new
বাংলা ছোট গল্প new

এভাবেই চলছিল, মাঝে রিয়া অপমান করলো। তবুও কোনো ব্যাপার না। কিছুদিন পর আবার প্রেম এলো জীবনে, মেয়েটি আমাদের ধাবাতেই প্রথম খেতে এসেছিল। দেখেছিলাম, দুটো রুটি,আর এক প্লেট কষা চিকেন মেটে অর্ডার দিয়েছিল, আর যখন খাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল, কত দিন পরে একটুকরো রুটি, সে খেতে পেলো।

আমি একটু এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “তুমি আর কিছু নেবে? মেয়েটি একটু কাঁদো কাঁদো চোখে বলে, “আমার কাছে তেমন টাকা নেই, তবে খুব খিদে পেয়েছে, এই দুটো রুটিতে কিছু হবে না”। ঠিক আছে, তুমি খাও পেটভরে, টাকা লাগবে না। মেয়েটি খুব হাসছিল, আমার আজও তার সহাস্য মুখটি মনে পড়ে। মেয়েটিকে পরে কিছু রুটি, আর তড়কা দিলাম, মেয়েটি বেশ ক্ষুদার্তভাবে হামলে খাবার খাচ্ছে। মনে খুব শান্তি পেলাম।

এর কিছুদিন পর কলকাতায় আমি চলে আসি, আমার মামারবাড়ি। সেখানেই খুব অদ্ভুতভাবে সেই মেয়েটি দেখতে পাই। তবে তার মাথায় সিঁদুর দেখলাম। খুব ভালো লাগলো দেখে, সুখে থাক সে। আসলে ভগবান হয়তো সবার দুঃখ সম্পূর্ণ দূর করতে পারে না। তাই দেখলাম, মেয়েটি একটি জায়গায় পা ভাঙার মতো অভিনয় করে ভিক্ষা চাইছে, আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম, “এসব কি করছো?” মেয়েটি বললো, “আমাকে একজন বিয়ে করে এখানে বিক্রি করে দিলো, তাই…..” , বলতে বলতে সে আকাশের দিকে তাকালো। সত্যি, ভাগ্যের নিদারুন বিচার। আমি কি করবো বুঝতে না পেরে ওকে ওখানে ছেড়ে আসতে বাধ্য হলাম। দূর থেকে দেখলাম ওকে কয়েকজন খুচরো ভিক্ষা দিচ্ছে।

এর কয়েকদিন পর মোবাইলে একটি ভিডিও পেলাম, যেখানে বলা হয়েছে, কলকাতার শহরে যত নারী ও শিশু ভিক্ষাবৃত্তিতে যুক্ত ছিল, তাদের সরকারী হোমে আর অনাথ আশ্রমে আরো নানা এন.জিও তে পাঠানো হয়েছে। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম, “তুমি দেখো ওকে, ও ভালো থাকুক, খুব ভালো থাকুক”।

সৌগত প্রামাণিক

গল্পের চিত্রকলায়-
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

সুন্দর ছোট্ট গল্প। বাংলা ছোট গল্প। awesome bengali short story

Spread the love

Leave a Reply