যে ভূমি হয়েছে পবিত্র/ শহীদের লহু দিয়ে, অগুনিত রক্তবীজ জন্ম হয়েছে/ সেই লহু দেহে নিয়ে।। নেতা! সে তো একজনই ছিল নাম তাঁর নেতাজি। হিমাচল থেকে কন্যাকুমারী যার পদধূলিতে রাঙ্গানো। যে লিড করতে পারে সেইই হয় লিডার, আর এই ভারতীয় ভূখণ্ডে লিডার ছিল একজনই নাম নেতাজি।

২৩ শে জানুয়ারি বক্তব্যঃ-

আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা । আজকের দিনটি প্রত্যেক ভারতবাসীর কাছে এক অবিস্মরণীয় দিন ।

২০২১ সালে নেতাজির ১২৪ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই দিন টিকে পরাক্রম দিবস বলে ঘোষণা করেন তৎকালীন সরকার।
এই বছর ১২৭ তম জন্মদিনে দাঁড়িয়ে , আমাদের subhasian দের মনে হয়েছে একটু অন্যরকম ভাবে এই দিন টা কে উদ্‌যাপন করার কথা। তাই আজ তার জীবনের অন্য কোনো কথা নয়, শুধু মাত্র রাজনৈতিক জীবন টাকেই তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

সংক্ষেপে তুলে ধরা এই গল্প নানান তথ্যর ওপর ভিত্তি করে, লেখনীর তুলিতে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। ভুল ত্রুটি কিছু হলে ক্ষমা করবেন।

    "১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি , এক মহামানবের হলো জন্ম 
          উড়িষ্যার ওই কটক শহর, হয়েছিল সেদিন ধন্য। 
      প্রভাবতী দেবীর গর্ভে সেদিন জন্মেছিল যে রত্ন, 

পিতা জানকীনাথ বুঝেছিলেন সে হবে সত্যি অনন্য
ছোট থেকে তার প্রখর জ্ঞান আর অতুলনীয় বুদ্ধি,
দেশমাতৃকার প্রতি ভালোবাসা তার, জাগায় মনে আত্মশুদ্ধি।”

২৩ শে জানুয়ারি বক্তব্য
২৩ শে জানুয়ারি বক্তব্য

ভারতব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে যখন অসহযোগ আন্দোলনের প্রভা তখন এই বীর ২৪ বৎসর বয়সে সার্বিক ভাবে রাজনীতিতে যোগদান করেন। এরপর ১৯৩৮ সালের কংগ্রেসের হরিপুরা অধিবেশনে তিনি NC ( National Congress) এর প্রেসিডেন্ট রূপে নির্বাচিত হন । ইতিমধ্যে তার মনোভাব , কর্ম আদর্শ , কংগ্রেসের গান্ধিপন্থি দের কাছে হয়ে উঠে তিতিবিরক্ত।

এমতাবস্থায় পুনরায় ১৯৩৯ সালের ত্রিপুরী কংগ্রেসের গান্ধিপন্থী পট্টভি সিতারামাইয়াকে পরাজিত করে নিজ স্থানে বহাল থাকেন । কিন্তু ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের সহায়তার অভাব ও তার আদর্শের প্রতি দৃষ্টিকটু মনোভাবের ফলে ২৯ এপ্রিল ,১৯৩৯ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে ইস্তফা দেন।

এরপর ৩ মে, তিনি গঠন করেন ফরওয়ার্ড ব্লক। এর কিছুকাল পর ব্রিটিশ সরকার তাকে অ্যারেস্ট করে কারাগারে বন্দী করে রাখে। তবে সেসময় উপযুক্ত খাদ্য ও পরিবেশের অভাবে তার শরীর অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় এরপর তাকে গৃহবন্দি করে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয় ।

পড়ুনঃ- নেতাজি সুভাষ চন্দ্রের বাণী 

” করবে কারে বন্দী তুমি ,
সে যে লাগাম ছাড়া
ছদ্মবেশে করলো শেষে
তোমাদের ভিত্তি হারা।”

১৯৪১ সালের ১৭ জানুয়ারি, সুভাষ চন্দ্র বসু , মহম্মদ জিয়াউদ্দিন ছদ্মনামে তার ভাইপোর সহায়তায় , অ্যালকিন রোড দিয়ে গোমো স্টেশনে পৌঁছে, দিল্লিগামী ট্রেন কাল্কামেলে করে , মহৎ উদ্দেশ্য পূরণে বেরিয়ে পড়লেন ।

দিল্লি পৌঁছে ফ্রন্টিয়ার মেল ধরে উত্তর পশ্চিম সীমান্তের কাবুলে পাড়ি দিলেন । অরলান্দ মাৎসোতো নামে জাল ইতালীয় পাসপোর্ট বানিয়ে , ব্রিটিশ শত্রু জার্মানির হিটলারের কাছে যাবার জন্য অগ্রসর হন , তবে যাত্রা পথে হঠাৎ তার মনে হয় , আগে রাশিয়ায় স্ট্যালিনের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। তাই তিনি বেশ কিছুদিন মস্কো তে থাকেনও, তবে রাশিয়ার কাছে সেরূপ কোনো সাহায্য যে পাওয়া যাবে না, তা বুঝে তিনি ১৯৪১ সালের ২৮ মার্চ , জার্মানির বার্লিনে উপস্থিত হন , সেখানে জার্মানির বিদেশ মন্ত্রী রিবেন ট্রপের ও হিটলারের সাথে সাক্ষাৎ করেন ।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন পালন
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন পালন

হিটলার নেতাজির ব্যক্তিত্বের গুনে অভিভূত হয়ে পড়েন। সে সময় কালে যেহেতু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল তাই ব্রিটিশদের পক্ষ থেকে যে সমস্ত ভারতীয় সেনারা যুদ্ধে জার্মানির হাতে বন্দী হয়েছিল, সেই বন্দী সৈন্য দের নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন ” ইন্ডিয়ান লিজিয়ন ” নামে একটি সেনাবাহিনী ।

এরপর তিনি জার্মানি থেকে ইতালিতে যান। ইতালি থেকে জাপান যেতে চাইলে , সাথি আব্দুল হামিদ হাসানের সাথে , আটলান্টিক মহাসাগরে দক্ষিণ পশ্চিমে চারশো মাইল দূরে জার্মানি সাবমেরিন থেকে নামেন। এরপর টানা সাতানব্বই দিন সমুদ্র অভিযানের পর ১৯৪৩ সালের ১৩ মে , টোকিও তে পৌঁছান।

রাসবিহারী বসুর আহ্বানে সুভাষ চন্দ্র বসু সিঙ্গাপুরে ১৯৪৩ সালের ২৫ আগস্ট আজাদ হিন্দ ফৌজ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক পদ গ্রহণ করেন।

সর্বাধিনায়ক – সুভাষ চন্দ্র বসু
ঝাঁসির রানি বাহিনী – লক্ষ্মী স্বামীনাথন
প্রধান উপদেষ্টা – রাসবিহারী বসু
তিনজন সেনাধ্যক্ষ – শাহনওয়াজ খান , জি. এস . ধিলন , ও পি. কে . সায়গল, প্রমুখ ব্যক্তির উদ্যোগে ও সহায়তায় এই বাহিনী হয়ে ওঠে ভারত স্বাধীনের উপযুক্ত বাহিনী ।

এই বাহিনীর মূল স্লোগান ছিল
” দিল্লি চলো , …….. জয় হিন্দ “

১৯৪৩ সালের ২১ অক্টোবর নেতাজি সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করলে ৯ টি দেশ তাকে স্বীকৃতি দেয়। জাপানের সরকার হিদেকি তোজো, নেতাজিকে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ দিয়ে দিলে তিনি তার নাম রাখেন শহীদ ও স্বরাজ দ্বীপপুঞ্জ।

পড়ুনঃ- স্বামী বিবেকানন্দের যে বাণী গুলি জীবন বদলাবে  

এরপর ১৯৪৩ সালের ২৩ অক্টোবর , রেঙ্গুনে প্রধান কার্যালয় গড়ে তোলার মধ্যে দিয়ে আজাদ হিন্দ বাহিনী দুর্গম অঞ্চল পেরিয়ে, ৪০০ মাইল পথ অতিক্রম করে, বক্সবাজার থেকে ৫০ মাইল দূরে মৌডক নামক ইংরেজদের সামরিক ঘাঁটিতে সুরোজমলের নেতৃত্বে বোমা নিক্ষেপ করে।

ব্রিটিশ বিরোধী এই বাহিনী পরপর আক্রমণ চালাতে থাকে। এই সময় সুভাষ চন্দ্র বসুর মহান উক্তি – “তোমরা আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব”! ধ্বনিত হয়ে উঠলে সেনাদল নতুন উদ্যমে সমস্ত বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে যুদ্ধ পরিচালনার শক্তি পায়।

পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে, আমেরিকা জাপানের ওপর পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করলে জাপান যুদ্ধে আত্মসমর্পণ করে ফলে আজাদ হিন্দ সেনারা গ্রেপ্তার হতে শুরু হয় ।

এরকম পরিস্থিতিতে সুভাষ চন্দ্র বসু কে সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য বারবার বলা হলে তিনি বার্মা থেকে ভিয়েতনামের সাইগণ ( হোচিমিন সিটি) চলে আসেন । সাইগন থেকে রাশিয়ার পথে যাওয়ার সময় বর্তমানের তাইওয়ানের নিকটে ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট তার বিমান দুর্ঘটনা ঘটে । এরপর কেউ তাকে মৃত আবার কেউ তাকে জীবিত বলে নানান ঐতিহাসিক তত্ত্ব আবিষ্কারের চেষ্টায় মত্ত হয়ে ওঠে ।

নেতাজী জন্ম জয়ন্তী রচনা
নেতাজী জন্ম জয়ন্তী রচনা
<

তবে এই অমর মহামানবের নিরুদ্দেশ হওয়ায়, দেশ হারায় এক জাতির উন্নতির সোপানকে। দেশ হারায় এক মহান সেনানিকে , যিনি থাকলে হয়ত আন্তর্জাতিক অমীমাংসিত বিষয় গুলিই আর থাকতো না । সেই নিয়ে দ্বন্দ্ব বিদ্বেষ পোষণ করতেও হতো না । কমিউনিস্ট ভাবাদর্শে বিশ্বাসী নেতাজি বলেছিলেন –

” অত্যাচার দেখেও যে ব্যক্তি নিবারণ করার চেষ্টা করে না, সে নিজের মনুষ্যত্বের অপমান করে এবং অত্যাচারিত ব্যক্তির মনুষ্যত্বের ও অপমান করে ।”

এমন মহামানব যিনি নিজের জীবন পরোয়া না করে দেশের জন্য ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে নানান বিদেশের দোরগোড়ায় ঘুরেছেন তার মতো অতুলনীয় দেশপ্রেমির চরণে জানাই শতকোটি প্রণাম । উনি শুধু মাত্র একজন মনীষী নন উনি আমাদের Subhasian দের কাছে ইমোশন , ভালোবাসা , রোল মডেল , সবকিছু, যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভবপর নয়।

সব বিস্তারে বলতে গেলে হয়ত লেখার শেষ হবে না । প্রতিটা কালির বিন্দুতে জড়িয়ে আছে তার প্রতি ভালোবাসার আর শ্রদ্ধার অনুভূতি । এমন মহামানবের মতাদর্শ যেন , বারেবারে তরুণ সমাজকে জানান দেয় ” FREEDOM IS NOT GIVEN , IT IS TAKEN”

শেষে এটুকুই বলবো –

        "বিপ্লবী তুমি স্বাধীনতার প্রতীক 

অভিপ্রায় তোমার তরুণের গতিক,
লোহার শৃঙ্খল তুচ্ছ সেথায়
সুভাষ যেখানে ঊর্ধ্ব শিরে তাকায়।
তুমি ভারতমাতার অপরাজিত সুর,
তাই তো পরাধীনতার গ্লানি করেছিলে দুর।

তোমার আত্মসংযমী মনোভাবের বাতি
তরুণের প্রাণে আনে জোয়ারের গতি
রক্তে তোমার দেশপ্রেমের মান , তাই তো তুমি
আমাদের কাছে ভগবানের সমান।
স্বাধীনতা চায় রক্ত
সুভাষ কে বোঝা শক্ত ।।”

আলোরানি মিশ্র

সুভাষিয়ান-দের পক্ষে প্রতিধ্বনিতে
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- 

রিলেশনশিপ নিয়ে কিছু কথা

অনুপ্রেরণামূলক গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নিচে দেওয়া wp গ্রুপ টি শুধু মাত্র অ্যাক্টিভ মেম্বারদের জন্য। যাদের মনে হবে ব্যস্ত জীবনের অল্প সময় ও এখানে ব্যয় করতে পারবেন আড্ডা আলোচনার মধ্যে তাদের জন্য।  
বি.দ্র. - ইউটিউবার দাদা দিদিরা যারা কনটেন্ট খুঁজতে গ্রুপ এ আসেন তারা এখানে ভিড় জমাবেন না অহেতুক নিজেদের ক্ষতিসাধনে।

WHATSAPP GROUP LINK- ছাড়পত্রিয়ানস (CHARPATRIANS) 👈🏻 ক্লিক করুন
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial


২৩ শে জানুয়ারি বক্তব্য। 23 শে জানুয়ারি পালন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন পালন। নেতাজী জন্ম জয়ন্তী রচনা. celebrating netaji jayanti. awesome speech on netaji

Spread the love

Leave a Reply