হৃদয়বিদারক প্রেমের গল্পঃ-
হাই আমি শ্রীময়ী। আজ ফেসবুকের একটি হৃদয়বিদারক প্রেমের গল্প তোমাদের সাথে শেয়ার করছি। ঘটনাটা আজ থেকে প্রায় 2 বছর আগের। রিয়া নামে আমার এক বান্ধবীর সাথে ফেসবুক সুত্রেই পরিচয় হয়েছিল, রাজ নামের একটি ছেলের। যদিও ছেলেটির আসল নাম কি ছিল সেটি আমার জানা নেই। প্রথম থেকেই তাদের এই প্রেমের গল্পটা বলি।
২০১৮ সাল আমরা সবেই উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছি। আমার কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবীর হাঁতে নতুন মোবাইল আসলেও, বাবা আমাকে মোবাইল কিনে দেয় নি। অনেকটা নিরাশ হয়েছিলাম। আমার বন্ধুদের মধ্যেই একজন ছিল রিয়া। হাঁতে নতুন মোবাইল পেয়েছে, মেয়েটা সারাদিন ফেসবুকে ডুব মেরে থাকে।
আমাদের সাথে টাইম কাটানোর সময় গল্প না করে শুধু ফেসবুকের লাইক কাউন্ট করাটাই ওর নেশা পেয়ে বসেছিল। একদিন সে তার প্রোফাইল ফটোতে নিজের একটি সুন্দর ছবি আপলোড দেয়, কিছুক্ষণ পড়ে, একটা ছেলে রিয়ার ফটো নিয়ে সুন্দর করে ইডিটিং করে, কমেন্টে ফটোটা দিয়ে দেয়। রিয়া ফটোটাকে দেখে খুবই অভিভুত হয় এবং ছেলেটাকে ধন্যবাদ জানায়। এরপরেই আসল ঘটনা শুরু হয়।
ছেলেটার সঙ্গে রিয়া মেসেঞ্জারে কথা বলা শুরু করে দেয়। প্রোফাইলের জন্য সমস্ত ছবি রিয়া সেই ছেলেটাকে দিয়েই ইডিট করাতো। মেয়েদের মন কখন কি করে বসে বলা বড় দায়। ধীরে ধীরে রিয়া সেই অজ্ঞাত পরিচয় ছেলেটার প্রেমে পড়তে থাকে। রিয়া নাকি তার কাছ থেকে অনেক কিছু ডেকোরেটিভ আইডিয়া নিয়েছিল, কিভাবে রুম সাজাতে হয়, কিভাবে ফটো ইডিট করতে হয় ইত্যাদি ইত্যাদি।
এবার রিয়া ছেলেটাকে তার ভালোলাগার কথা বলে দেয়। ছেলেটাও রিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে ফেলে। মাঝে মধ্যে রিয়া আমাদের ছেলেটার ব্যপারে অনেক কিছুই বলত। আমি একদিন ওকে বলেছিলাম, অজানা অচেনা ছেলেটার সাথে এভাবে নিজের ছবি শেয়ার করাটা ঠিক নয়। সে আমাকে শাসিয়ে বলেছিল- ছেলেটার মত আইডিয়া নাকি আমাদের কারোর মধ্যেই নেই।এরপর আর আমরা কেউ কিছু বলিনি তাকে।
একটা সময় পড় ফেসবুকের অনলাইন প্রেমের সাগরে দুইজনে হাবুডুবু খেতে থাকে। এবার ছেলেটা রিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চায়। রিয়াও রাজি হয়ে যায়। একদিন তারা দেখা করে, ছেলেটা রিয়াকে একটি সুন্দর গিফট দেয়। রিয়া তার রুমে সেটিকে সাজিয়ে রাখে। আমাদের কাছে রিয়া যখন সময় কাটাত, তার বেশিরভাগ সময় সে কেবল ছেলেটারই গুণগান করতে থাকত। আমরা বিরক্ত হয়ে যেতাম ঠিকই কিন্তু মুখে কিছু বলতাম না।
সেই ছেলেটা এবং রিয়া আরও বেশ কয়েকবার দেখা করে। আর প্রত্যেক বারই সে রিয়াকে ভালো ভালো কিছু উপহার দিয়েছিল। উপহার গুলি পেয়ে মেয়েটা দারুন খুশি। এদিকে রিয়া ও সেই অচেনা ছেলেটির সম্পর্কে আসার প্রায় ৮ মাস হয়ে গিয়েছিল।
এরপরেই আসল কাণ্ড শুরু হয়। আমি রিয়ার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলাম, রাত প্রায় ১ টা হোস্টেলে রাত জেগে পরীক্ষার পড়া পড়ছি। হঠাৎ আমার কি-প্যাড মোবাইলটা বেজে উঠল। নাম্বার অচেনা। ফোন তুলতেই ওপার থেকে একটি পুরুষের গলা ভেসে এল, বলল- তুমি কি রিয়ার ভাল চাও। আমি বললাম অবশ্যই। সে জানায় কাল সকালে উঠে দেখবে তোমার গেটের সামনে একটি খাম পড়ে আছে, সেটিকে নিয়ে নিও। এরপরেই লাইন কেটে যায়।
তাড়াতাড়ি আমার গেট খুলে দেখলাম না কোনো খাম পড়ে নেই। পরেরদিন সকালে সেই অচেনা নাম্বারটির কথা মিলে গেল দেখি আমারা দরজার সামনে একটি খাম পড়ে আছে। আমি খামটা হাঁতে নিয়েই বুঝে যাই, ভিতরে কিছু ছবি আছে, খাম খুলে ভেতরের ছবি বেড় করতেই আমার চক্ষু চড়কগাছ। রিয়া কি করে এই সব কাজ করতে পারে, সব ছবি রিয়ার এবং ছবি গুলি সবই অশ্লীলতায় পরিপূর্ণ।
আমি নিজের বান্ধবীর এরকম ছবি দেখতে মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আমি সব ছবি গুলি দেখতে পারি নি। রিয়া এসব কাজ করবে আমার কিছুই ধারণা ছিল না। কাঁপা হাঁতে সেই অচেনা নাম্বারে ফোন করলাম, কিন্তু মোবাইল অফ বলল।
রিয়ার সাথে সেদিন দেখা হয়েছিল, কিন্তু তাকে কিছুই জানাই নি। সেদিন রাতের কথা, আবার সেই অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে, আমাকে বলা হয়, যদি তুমি চাও তোমার বান্ধবীর বদনাম না হোক তাহলে তাকে এই নাম্বারেই ১০,০০০ টাকা ফোন পে করে দিতে, আর হ্যাঁ কোনো রকম পুলিশ বা চালাকি করতে গেলে সব ছবি ফেসবুক সহ অন্যান্য মাধ্যমেও পোস্ট করে দেওয়া হবে।
কলেজ যাওয়ার সময় প্রতিদিন রিয়া আমাকে ডাকত, পরেরদিন সে আমাকে ডাকতেই আমি তার হাত ধরে জোর করে আমার রুমে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দিই। সে অনেক ঘাবড়ে গেছে। সে বলে আরে তুই কি করছিস, চল তাড়াতাড়ি কলেজে দেড়ি হয়ে যাচ্ছে। আমি বলি দাড়া কলেজের থেকেও দরকারি একটা জিনিস তোকে বলার আছে। কিন্তু সে অনেক চঞ্চল সে বার বার দরজা খুলতে যাচ্ছিল। আমি আবার রিয়ার হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে ঠাটিয়ে চড় মেরে দিই।
সে কোনো দিনও আমার এরকম রূপ দেখেনি, সেও অনেক ঘাবড়ে গিয়েছিল। চুপচাপ সে বসে থাকে। টেবিলের উপর রাখা সেই ছবি গুলি তার দিকে ছুড়ে দিয়ে বলি, তোর মাথা ঠিক আছে তো? তুই কাকে কি সব ছবি পাঠিয়েছিস? সেই ছবি গুলি দেখেই কাঁপা গলায় কাঁদতে কাঁদতে রিয়া বলে তোকে এইসব ছবি কে দিল।
রিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলে আমি আমার মায়ের দিব্যি খেয়ে বলছি, আমি এইসব ছবি কোনোদিনও তুলিনি। আমি তাকে সেই নাম্বারটির কথা বলি। তার মুখের দিকে দেখে বোঝাই যাচ্ছিল সে অনেক আতঙ্কিত। আমি বলি- তুই যদি এইসব ছবি না তুলিস তাহলে সেই অচেনা লোকটা পেল কোথা থেকে? আমার প্রশ্নের উত্তর সে দেয়নি, কেবল আমার হাত ধরে অঝোরে কেঁদেই যাচ্ছিল সে। রিয়া বলে আমার আক্যাউন্টে ৩০,০০০ টাকা আছে ১০,০০০ ফোন পে করে দিচ্ছি। আমি বলি না করবি না, পুলিশে খবর দিই। কিন্তু সে এইসব বিষয় জানাজানি হওয়ার ভয় করে।
সেদিন আর আমরা কলেজ যাইনি, এরপর আরও তিন বার সেই নাম্বার রিয়ার কাছ থেকে ৫,০০০ ও ১০,০০০ টাকা নিয়ে নেয়, টাকা না দিলে সব ছবি ফাস করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এই পুরো বিষয়টি আমি বাকি দের জানাতে চাইলেও রিয়া জানাতে দেয় নি। এরপর এমন একটা পর্যায়ে পৌছায় রিয়ার সব টাকা শেষ হয়ে যায়, এমনকি রিয়ার জন্য আমার অ্যাকাউন্টেরও টাকা প্রায় অর্ধেকে চলে আসে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়।
এদিকে রিয়ার সেই অচেনা বয়ফ্রেন্ড রিয়ার কাছে ব্রেক-আপ করে নেয়। একদিকে ব্ল্যাকমেল অন্যদিকে ব্রেকআপ এই দুইয়ের কষ্ট যখন রিয়াকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল, তখন আমার সান্তনা তার কাছে সিন্ধুতে বিন্দুর মতনই মনে হচ্ছিল।
এভাবে প্রায় ১ মাস কেটে যায়। রিয়ার বয়ফ্রেন্ডের কোনো খবর আমি নিতে পারিনি। তার ফোন বন্ধ। একদিন অনেকটা সময় হওয়ার পরেও রিয়া তার রুম থেকে বেড় হচ্ছে না দেখে, আমাদের সন্দেহ হয়, দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে রিয়ার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।
এরপর আমি পুলিশকে সব কিছু বিস্তারিত জানাই। পুলিশ সেই নাম্বারটির কল ডিটেলস এবং একাউন্ট ডিটেলস বেড় করে অবশেষে রিয়ার বয়ফ্রেন্ডকে গ্রেপ্তার করে। এই মূল ষড়যন্ত্র রিয়ার বয়ফ্রেন্ডের। আমার প্রথম থেকেই ছেলেটাকে ভাল লাগে নি। পুলিসের জিজ্ঞাসা বাদের পড় সে জানায় যে, রিয়া তাকে ছবি গুলি পাঠায়নি। ছবিগুলি গোপন ক্যামেরায় নেওয়া হয়েছিল। ছেলেটির কথা মত, রিয়ার বাথরুমে একটি রুম ফ্রেশনার পাওয়া যায়, এটি ছেলেটি রিয়াকে গিফট করেছিল, সেই রুম ফ্রেশনারের কুলুপে লাগানো ছিল hidden cam. সেখান থেকে সবকিছু লাইভ চলে যাচ্ছিল, ছেলেটির কম্পিউটারে।
ছেলেটি আরও জানায় তাদের এরকম ৮ জনের টিম রয়েছে। তারা এভাবেই মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব করে এবং মেয়েদের ব্ল্যাকমেল করে। কিছুদিন পর বাকি ৭ জনও গ্রেফতার হয়, আগে তারা এভাবে নাকি ২৫ জন মেয়েকে ব্ল্যাকমেল করেছিল, কিন্তু ধরা পড়েনি।
আজ হঠাৎ রিয়ার কথা মনে পরছে কারণ, আজ রিয়ার মামলায় জড়িত অপরাধীদের আজীবন কারাবাসের হুকুম দিয়েছে আদালত।
তাই যদি রিয়ার মত ব্ল্যাকমেলের শিকার হতে না চাও, তোমাদের কাছে অনুরোধ অচেনা-অজানা কারও সাথে ফেসবুক বা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে বন্ধুত্ব করতে যেও না, আর কয়েকটা লাইক-এর জন্য নিজের এবং সমস্ত পরিবারের ছবি, আপলোড করে নিজেদের বিপদ ডেকে আনার চেষ্টা করবে না। এটা সোশ্যাল মিডিয়া বস। এখানে আপনার মত ভাল লোক যেমন আছে তেমনই মুখোশধারী লোকেরও অভাব নেই। এরকম অনেক ঘটনা আছে, সেগুলো না হয় অন্যদিন বলব,
আর হ্যাঁ এই হৃদয়বিদারক প্রেমের গল্প -টি তোমার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবে না, কারণ আপনিই পারেন আপনার বন্ধুকে সচেতন করতে।
READ MORE:-
বিদ্র- এখানে ব্যবহৃত সমস্ত নাম এবং চরিত্র কাল্পনিক হলেও ঘটনাটির সঙ্গে বাস্তবের মিল রয়েছে। হৃদয়বিদারক প্রেমের গল্প কষ্টের প্রেম কাহিনী
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।