অসাধারণ এই হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গল্প টিতে পাঠক একদিকে যেমন খুঁজে পাবেন কিছুটা জেদ, কিছুটা প্রেম আবার তেমনি তার পাশাপাশি কিছুটা মাতৃ মনের কোমল স্পর্শতা।

হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গল্পঃ- “এক পশলা বৃষ্টি”

গল্প টি ঠিক কোথা থেকে শুরু করবো বুঝতে পারছি না। এই জীবন থেকে নীলাঞ্জনা চলে যাওয়ার পর, একটা জেদ চেপে বসেছিল আমার ভিতর। শুধু শহর নয় ,দেশে ছাড়লাম। টাকা পয়সা আয় করাটাও একটা নেশার মতো জানেন তো! পরিবারের লোকজনের সাথেও সময় দেওয়া হতো না। নয় মাসে ছয় মাসে বাড়ি ফিরে, বন্ধু বান্ধব দের সাথে পার্টি করে আবার কাজে ফিরে আসা।

বাবা,মা, ভাই বোনকে অনেক উপহার ,আর না বলতেই কারি কারি টাকা পাঠিয়ে আমার কর্তব্য শেষ। কিন্তু সেই দিন বাবা খুব অসুস্থ হয়ে পড়লো। মা কাঁদছিল।

আমি বললাম ,” চিকিৎসার জন্য যত টাকা লাগবে আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি , চিন্তা করতে হবে না।”
মা বললো ” ভুলে যাস না তোর বাবা কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী ছিলেন,তুই টাকা না পাঠালেও , তাঁর চিকিৎসা হয়ে যাবে। শরীর অসুস্থ হয়েছে ঠিক হয়ে যাবে ওষুধ খেলে। কিন্তু মনের অসুখটা সারবে কি করে? “

হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গল্প
হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গল্প

অনেক কথা হলো। আমি ফিরে এলাম বাড়িতে। মা বাবার আমার টাকা-পয়সা প্রতি কোন আসক্তি নেই। তাঁরা আমার সফলতার দেখেই খুশি। মা বাবা এমনকি ভাই আমার পাঠানো টাকা পয়সা থেকে কিছু খরচ করে নি। জমিয়ে রেখে দিয়েছে। ওরা জানে আমি বেহিসাবি খরচ করি আজকাল, তাই সঞ্চয় হিসাবে আমার থেকে ওরা টাকা পয়সা গুলো নিতো। ওরা আমার কাছে একটা দাবি করলো , আমি যেনো একটা বিয়ে করে সংসার করি। বাবার ডাক্তার রিপোর্ট অনুযায়ী আর এক বছর সময় আছে। সে আমার সন্তানের মুখ দেখতে চায়।

আমি বিয়ে করি নি একটা অন্য কারণে। আমি সঠিক কারণ জানি না নীলাঞ্জনা কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। অনেকে বলতো আমার ভালো চাকরি ছিলো না বলে। কেউ বলেছিলো, ওর ধারণা ছিলো আমার অনেক মহিলার সাথে সম্পর্ক আছে তাই। আমি সিঙ্গেল থাকলাম এতো বছর এই আশায় , ও ওর ভুল বুঝতে পেরে আমার কাছে ঠিক ফিরে আসবে কারণ এখন আমি অনেক টাকা-পয়সারও মালিক হয়েছি।

 পড়ুনঃ- সুপ্ত প্রেমের বেদনাময় কাহিনী 

তবে জানেন টাকা পয়সা শুধু মানুষকে ক্রয় ক্ষমতা দেয়। টাকা অনেক আরাম এনে দেয় কিন্তু একাকীত্ব দূর করতে পারে না। তবে একাকী জীবন সময় কাটাতে অন্য অনেক বিকল্প হয়তো আছে, টাকা পয়সা থাকলে…। থাক ও সব কথা , আসলে কাজ আর টাকা রোজগার ছাড়া কিছুই দেখা হয়নি এই কয়েকটি বছর। তাই হঠাৎ করে বিয়ে পাত্রী সন্ধান করতে গিয়ে দেখি , পাত্রী পাওয়া যাবে না আর আমার জন্য কারণ, আমার জন্য তো বয়সটা থেমে নেই!

মনে মনে আসলে এখনো আমার একটা ইগো কাজ করছে, নীলাঞ্জনার চেয়ে কম বয়সী আর ওর চেয়ে যোগ্যতা সম্পন্ন পাত্রী আমার চাই। কিন্তু সেটা সম্ভব নয় বুঝতে পেরে, বাবা মা কে শর্ত দিলাম, আমি বিয়েটা করবো গোপনে, আত্মীয় স্বজন , কাক পক্ষী তে ও জেনো টের না পায়, যতক্ষন না আমার সন্তান হচ্ছে! আমি অজুহাত দিলাম, এ বয়সে পুরুষত্বহীনতা হতে পারে আমার। তাই অন্য উপায়ে সন্তান নিতে হতে পারে। সব কথা জানা জানি হলে, আমার মান সম্মান থাকবে না।

hridoy chuye jaoa golpo
hridoy chuye jaoa golpo

ওরা রাজী হয়ে গেলো। কিন্তু আমার মাথায় অন্য বুদ্ধি খেলছিল তখন চুক্তি ভিত্তিক বিয়ে করতে চাই ছিলাম আমি। যে আমার সন্তানের মা হবে এবং পরে কিছু একটা অজুহাতে ডির্ভোস নিয়ে চলে যাবে, তবে সন্তানের দাবি সে করবে না। বিনিময়ে অনেক টাকা খোরপোষ পাবে সে।

সোস্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন call girl profile কে এই শর্ত দিয়ে মেসেজ করলাম, একটি মেয়ে রাজী হয়ে গেলো, যদিও বিধর্মী, কিন্তু তাতে কি! আমার তো একটা শুধু শরীর চাই যে আমার সন্তানের মা হয়ে, আমার বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণ করবে। মেয়েটার নামটা শুধুমাত্র বদলে অভয়া রাখলাম।

যাইহোক বাবা মা , অভয়া কে নিয়ে বৃন্দাবনে সেটেল হলাম, একটা ধর্মশালা হোটেল খুললাম ওখানে। চোখের নিমিষে কেটে গেল দিন। আমাদের একটা মেয়ে সন্তান হলো। শুভ খবর এটা, বাবা অসুস্থ হয়েছিল সেটা বাবা মায়ের অভিনয় বা ষড়যন্ত্র ছিলো। তাঁরা উল্লাসে ফেটে পড়ে ঘোষণা করলেন, নাতনীর বিয়ে না দেখে তাঁরা মরবেন না।

পড়ুনঃ- এক তরফা প্রেম...! 

সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলো । নতুন পরিবেশে, নতুন পরিচয়। তবুও একটা কিন্তু কিন্তু কাজ করছিলো। কারণ কথা হয়েছিল আমাদের সন্তান যখন মা ছাড়া থাকতে শিখে যাবে তখন অভয়া আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। আমার মেয়ে ইসিকা এখন আমার বাবা মায়ের কাছে থাকে। অভয়া আমার প্রতি কোন আগ্রহ না দেখালেও অবহেলা করে না। সবকিছু ঠিকঠাক। কিন্তু আমার ভয় হলো অভয়া কেমন যেনো আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাচ্ছিলো।

ছোট খাটো প্রয়োজনে আমি ওর উপর নির্ভর হয়ে পরেছিলাম। আমার স্বাধীনতা যেনো হারিয়ে যাচ্ছিলো , সব কিছুতেই ওকে একটা জবাব দিতে হবে বলে অলিখিত চুক্তি হয়ে গেলো। মনে মনে একটা বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পরেছিলাম। তাই হঠাৎ কালরাতে ওকে মুম্বাই এর ফ্লাইটের টিকিট আর একটা ফাঁকা চেক বুক সই করে ওকে দিয়ে দিলাম। আর বললাম ” এবার আপনি আসতে পারেন, ইসিকাকে আমি একা মানুষ করে নিতে পারবো‌ “

ও কিছু বললো না শুধু বললো ” ঠিক আছে “

আজ বেলা হয়ে গেলো ঘুম থেকে উঠতে। আসলে আমার ঘুম ভাঙে ইসিকার করা হইচই এ। আজ বাড়িটা খুব শান্ত। আমি বাবা মায়ের ঘরে ঢুকে দেখলাম, বাবা কি একটা বই পড়ছে। মা ঠাকুর ঘরে পূজা নিয়ে ব্যাস্ত।

ভালবাসার ছোট গল্প
ভালবাসার ছোট গল্প Image by bess.hamiti@gmail.com from Pixabay
<

আমি বললাম ” ইসিকা, মা তুমি কোথায়? “
বাবা আমার দিকে না তাকিয়ে বলল ” ও ফাতেমার সাথে চলে গেছে”
আমি চিৎকার করে উঠলাম “মানে !”
মা শান্ত ভাবে বলে উঠলো ” চিৎকার করে কোন লাভ নাই। একটা মেয়ে তার শরীর বিক্রি করতে পারে কিন্তু মাতৃত্ব নয়।”

আমি চুপ করে গেলাম। বাইরে বোধহয়, এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে আজ। বৃন্দাবন অঞ্চলে এ সময় বৃষ্টি হয় না। রোদটা আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমি যেনো সব কিছু ঝাপ্সা দেখছি, আর ঝাপ্সা চোখেই দৃষ্টি গেল, টেবিলে রাখা একটি চেকের দিকে, হাতে নিয়ে দেখলাম এটি অভয়া কে দেওয়া আমার সেই চেকটিই।

মানব মণ্ডল

গল্পের সদর্থক ভাবনায়-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 
বিচ্ছেদের গল্প- বনানী

একটি অসম্পূর্ণ প্রেমের গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গল্প। ভালবাসার ছোট গল্প। বাংলা hridoy chuye jaoa golpo

Spread the love

Leave a Reply