আজকের গল্পটি একটি স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প। একজন রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে, যে কোনো দিনও ভাবতে পাড়েনি, সে সম্পর্কে জড়াবে, কিভাবে ধীরে ধীরে সে সম্পর্কে জড়ালো, কিভাবেই বা তার সম্পর্ক পরিপূর্ণতা পেল, তা নিয়েই আজকের গল্পটি। যদিও গল্প প্রেরক তার নাম ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক, আমাদের কাছে তার নাম রাখী আক্তার নামেই লিপিবদ্ধ হয়েছে।
স্কুল জীবনের প্রেমের গল্পঃ-
প্রতি বছর ২৬ জানুয়ারি আমাদের স্কুল থেকে শহরের বিখ্যাত একটি স্টেডিয়ামে, নিয়ে যেত। অনেক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, ছবি আঁকা প্রতিযোগিতাও হত। এর আগে অনেকবার স্কুল থেকে সেখানে নিয়ে গেলেও আমি যাইনি, তবে সেবছর আমিও গিয়েছিলাম। জুনিয়র সিনিয়র ও শিক্ষক শিক্ষিকা সহ প্রায় ৮০ জন দুটি বাসে উঠে পড়লাম।
মন আনন্দে চেঁচিয়ে উঠতে চাইছে, কিন্তু বাসে রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকারা আবার দাদা-দিদিরাও রয়েছে। চেঁচিয়ে উঠলে তারা যদি পাগল ভেবে বাস থেকে নামিয়ে দেয়, সেই ভয়ে চিল্লানোটা আর হল না। বিশেষ করে সবার সাথে এটাই আমার প্রথম কোথাও যাওয়া তাই উৎসাহটা নিছক কম নয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাই আমাদের গন্তব্যস্থলে। জীবনে প্রথম কোনো স্টেডিয়ামে ঢুকছি। অসাধারন গাঠনিক কৌশল।
সে যাই হোক আমাদের ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়, এরপর কিজানি কখন যে সময় শেষ হয়ে যায় কিছুই বুঝতে পাড়িনি। মাথা উঠিয়ে দেখি সবাই আঁকা জমা দিচ্ছে আর টিফিন নিচ্ছে। হুম এবার টিফিন খাবার পালা। টিফিন সেরে হুরমুরিয়ে বাসে উঠে পড়লাম সবাই। এদিকে বেলা গড়িয়ে বিকেল হতে চলল।
আমার আবার বান্ধবী সুমনাকে ছাড়া চলে না, একসাথেই বসেছিলাম আমরা। কিন্তু ম্যাম তাকে ডাকলে সে ম্যামের পাশের সিটে বসেছে। আমার পাশের সীট ফাঁকা পড়ে আছে, কোনো এক আগন্তুকের অপেক্ষায়। আমি বাইরের বাগানটার সৌন্দর্য উপভোগ করছি, আমার ঘোর কাটল তখনই যখন শুনলাম কেউ আমাকে ডাকছে। মাথা ঘুড়িয়ে দেখি, এক সিনিয়র দাদা আমাকে বলছে, সে বসার জায়গা পায়নি। আমার পাশের সীট-তো ফাকাই আছে, আমার যদি কোনো আপত্তি না থাকে, তাহলে সে সেখানে বসতে চায়।
আমি বললাম না না, আপত্তি থাকবে কেন?
এদিকে বাসও ছেড়ে দিয়েছে। জানতে পাড়লাম দাদাটির নাম সমীর। এরপর পুরো রাস্তা নানান আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে কেটে যায়। এর আগে কোনো সিনিয়রের সাথে এরকম কথা বলিনি, কথা বলিনি বলতে কি , আসলে আমি সিনিয়রদের একটু ভয় পেতাম আরকি! কখনো ভাবিনী যে, একজন সিনিয়রের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়ে যাবে। এরপর রাস্তায় অনেকবার দেখা হয়েছে। কথাও হয়েছে।
এই যে, এত কথা বলছি অথচ সে কিসে পড়ে, আর আমিই বা কিসে পড়ি সেটি বলছি না, সমীর সে সময় পড়ত ক্লাস ১১-এ আর আমি নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী। যতই দিন যায় আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা যেন আরও বেশি মজবুত হতে থাকে। কেউ দেখলে হয়ত বুঝতেই পাড়ত না যে, আমরা জুনিয়র-সিনিয়র।
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড হই। এরপর কিজানি আমার অজান্তেই কখন যে, আমার মনের দরজায় প্রেম এসে কড়া নাড়ছিল কিছুই বুঝি নি, মনের দরজা খুলে দেখি, প্রেম ইতিমধ্যে আমার মনের ঘরে প্রবেশ করে ফেলেছে।
তবে সহজে প্রেম আসেনি আমার জীবনে, এসেছিল অনেকটা পথ ঘুরে। কারণ সমীর আমাকে অনেকবার বিভিন্ন ভাবে প্রেমের প্রস্তাব দিলেও আমি নানান অজুহাত দেখিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছি। কয়েকবারতো সে তার কয়েকজন বন্ধুকেও পাঠিয়েছিল। কিন্তু আমি আবার এই প্রেম-প্রীতিতে একটু কম বিশ্বাসী। কিন্তু কিজানি কিভাবে কখন জীবনে মোড় চলে এল, আমি যতই তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিই, সে ততই আমার পেছনে পড়ে থাকে। যেন আমাকে পাওয়াটাই ওর কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
এদিকে এরকম করেই দেখতে দেখতে আরেকটা বছর কেটে যায়, আমার সামনে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক এসে হাজির হয়, আর অন্যদিকে সমীরের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা উচ্চমাধ্যমিক এসে হাজির হয়। তাই পড়ার চাপটাও অনেকটাই বেড়ে গেল দুইজনের। তাই আগের মত স্কুল যাওয়াটাও হয়ে উঠে না, কারণ আমার সারাদিন টিউশন পড়তেই চলে যেত।
সপ্তাহে মাত্র তিন দিন স্কুল যেতাম, এদিকে দেখি সমীরও সেই দিনগুলিতেই স্কুলে আসছে। হয়ত সে আমার উত্তরের অপেক্ষায় আছে। আমার অজান্তেই কেন জানিনা, তাকেও আমার ভালোলাগতে শুরু করে, কিন্তু কিভাবে প্রকাশ করব, সবাই যে জেনে যাবে! বিশেষ করে, যদি বাবার কানে এই কথাটি যায়, আমাকে আর আস্ত রাখবেন না তিনি।
এরপর টেস্ট পরীক্ষা, তারপর স্কুল যাওয়া বন্ধ। কারণ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এভাবেই কেটে যায় তিনটে মাস। তিন মাস পড় আবার আমাদের দেখা হয়। এতদিনে আমাদের সব পরীক্ষার ঝামেলা শেষ। সেও কলেজে ভর্তি হবে, আমি ক্লাস ১১-এ।
তবে সেদিনও সে হয়ত আমার তরফ থেকে কিছু শোনার আশায় ছিল, আমি অবাক হচ্ছিলাম এটি ভেবে যে, কিভাবে প্রায় দুইটা বছর ধরে সে আমার পিছনে লেগে আছে। কিন্তু তার নিত্যনতুন প্রয়াস আমাকে মুগ্ধ করতে শুরু করে। এভাবেই একসময় বাবাকে ‘এই সব সম্পর্কে কোনো দিনও জড়াবেনা’ বলে কথা দেওয়া মেয়েটাও প্রেমে পড়ে যায়।
পড়াশোনা-টিউশন-স্কুল এই তিনটিই ছিল আমার একান্ত আপন, কিন্ত সেই আপনের দলে নাম লেখাল আরেক আগন্তুক।
আমার এখনও দিনটা মনে আছে, ৫ অক্টোবর ২০১৬, বুধবার আমি তার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিই, যে আমাকেও তার ভালো লাগে। জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল। এদিকে সদ্য প্রেম শুরু হতে না হতেই চলে এল পুজোর ছুটি। দীর্ঘ একমাস ছুটি, তার নাম্বার আমার কাছে ছিল ঠিকই কিন্তু ছিল না, আমার নিজস্ব একটি মোবাইল। লুকিয়ে লুকিয়ে বাবার ফোন দিয়ে ম্যাসেজ, করে ডিলিট করে দেওয়া এই ছিল, প্রতিদিনের রুটিন।
অবশেষে একমাস পড় স্কুল খুলল, স্কুল খোলার পড় আমাদের প্রথম দেখা হবে, ভাবতেই আনন্দে মনটা লাফিয়ে উঠছিল, নিজের অজান্তেই “কতদিন পড়ে সখি দেখিব তোমারে” গানটার সুর ঠোঁটে চলে আসছিল। আমাদের রক্ষণশীল পরিবার। তাই স্কুলের সময় ছাড়া আর অন্যসময় আমি বাইরে বিশেষ কাঁটাতে পাড়িনা। আর আজ সে স্কুলের সামনে আসবে। সেখানেই দেখা হবে।
কিন্তু দেখা আর হল কই ‘সখীর সনে’ স্কুল গিয়ে শুনি, ছুটি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলাম, সকালে সমীরের সাথে দেখা হবে, ভেবে যতটা আনন্দ হচ্ছিল, এবার ঠিক ততটাই নিরাশ হয়ে গেছি।
এরপর ম্যাসেজের পাশাপাশি লুকিয়ে লুকিয়ে ফোন করাও শুরু হয়, তবে ঘণ্টার পড় ঘণ্টা নয়, হাঁতে গোণা কয়েক মিনিট। হ্যাঁ এতেই শান্তি, অন্তত প্রিয়জনের গলার আওয়াজটা শুনে কিছুটা হলেও স্বস্তি মেলে। আবার কোনো কোনো দিন এমনও হয়েছে, যে একবারও কথা হয়নি। কি ভেবেছেন সে মুখ-গোমড়া করবে, উঁহু সে, রাগ করার পাত্র নয়। যে আমার জন্য অতগুলি দিন আমার পেছনে ঘুরেছে, সে আমার উপড়ে এই সামান্য বিষয়ে রাগ করবে, তা কি কখনো হয়?
আজ আমাদের সম্পর্কে আসার পাঁচটা বছর সম্পূর্ণ হল, আর সেই কথাটিকে মাথায় রেখেই আজ আমার প্রেমের গল্প তোমাদের সাথে শেয়ার করা। তবে এই পাঁচটা বছরে আমাদের জীবনে যে একদম কোনো ঝঞ্ঝাট আসেনি তেমনটি নয়, অনেক অভিমান, ছোট ছোট ঝগড়া, অনেক হয়েছে। কিন্তু মানিয়ে নেওয়াটাই তো সম্পর্কের মূল। আর এইসবই তো একটি সম্পর্কের অলংকার। এই সবই স্বাভাবিক। কয়েকদিন মুখ গোমড়া করে থাকা, তারপর sorry বলে সবকিছু মিটিয়ে নেওয়া, এটাই তো সম্পর্কের নিয়ম।
সামান্য অভিমানই যদি কাঁটাতে না পাড়ি, তাহলে সারাটা জীবন কাটাব কিভাবে? তাই সম্পর্কে জড়ানোর আগে মানিয়ে নিতে শেখাটাও অত্যন্ত জরুরী।
আরও পড়ুনঃ- সফল প্রেমের গল্প
আমাদের টেলিগ্রামে আড্ডা দেওয়ার গ্রুপ :- https://t.me/charpatraOfficial
এই স্কুল জীবনের প্রেমের গল্পটি পাঠিয়েছে রাখী আক্তার [নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক (ছন্দনাম)]। চাইলে তুমিও আমাদের সাথে তোমার সুন্দর প্রেমের গল্প শেয়ার করতে পারো। যদি গল্প লিখতে না পারো, আমাদের শুধুমাত্র মূল ঘটনা গুলি বলে ফেলো, আমরা তোমার গল্প সাজিয়ে তুলব, নানান অলংকারে। গল্প পাঠানোর জন্য আমাদের বার্তা পাঠাতে পারো, ফেসবুকে অথবা আমাদের মেল কর- charpatrablog@gmail.com– এ অথবা নীচের লেখা প্রকাশ করার বোতামে ক্লিক করতে পারো।
স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প। স্কুল লাইফের প্রেম. SCHOOL LIFE LOVE STORY BENGALI
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।