Spread the love

চলো আজ দুটি সেরা প্রেমের গল্প শোনা যাক। একটা সময় আমাদের জীবনে প্রেম অবশ্যই আসে কিন্তু অনেকসময় সেই প্রেম অপরিপূর্ণ থেকেই যায়। আজকের এই হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া প্রেমের গল্প দুটি পাঠিয়েছে- Anuradha Sarkar(Siliguri, West Bengal, India) এই ছোট প্রেমের গল্প গুলি সম্পর্কে তোমার মতামত জানাতে ভূলো না যেন! ব্রেকআপ হওয়ার গল্প হার্ট টাচিং লাভ স্টোরি সেরা প্রেমের গল্প

সেরা প্রেমের গল্প। মন ছুঁয়ে যাওয়া প্রেমের গল্পঃ

গল্প-১ প্রেমিক যখন বন্ধু

সময়টা ছিল শরৎকাল। আমার এক দাদার বিয়েতে গিয়েছিলাম। দাদার বিয়েতে প্রিয়াঙ্কা নামের একটি মেয়েকে প্রথম দেখাতেই ক্রাশ খেয়েছিলাম। মেয়েটা দেখতে অনেক হাঁসি-খুশি। সেখানেই আমাদের বন্ধুত্ব হয়ে যায়। সেদিন প্রিয়াঙ্কার জন্যই বিয়েবাড়িতে দারুন মজা হয়েছিল। প্রথম আলাপেই ভালোলাগা শুরু। মানে love at first sight যাকে বলে আরকি! এরপর যোগাযোগ শুরু হয়ে যায় আমাদের। তার সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে সময় গড়িয়ে যেত, তা কিছুই বুঝতে পারতাম না। এত কথা হলেও আমি কখনোই তাকে জিজ্ঞাসা করিনি যে সে আমাকে ভালোবাসে কিনা?

আমি ভেবে নিয়েছিলাম যে, সে যখন আমার সাথে এত কথা শেয়ার করে, তারমানে সে নিশ্চয় আমাকে ভালোবাসে। একদিন সে আমাকে তার বাড়িতে একটি বিশেষ কাজের জন্য ডাকে। আমি ভেবেছিলাম, যে সে হয়ত তার বাবা-মা র সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেবে। আমি বেজায় খুশি হয়েই তার বাড়িতে যাই। কিন্তু তার বাড়িতে এত আয়োজন দেখে আমি ভেবেছিলাম যে, কোনো অনুষ্ঠান আছে হয়ত। ভেতরে গিয়েই আমি থমকে দাড়াই। আজ প্রিয়াঙ্কার আশীর্বাদ। আমি কাছে যেতেই সে তার হবু বরের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল। “ এ হল আমার এক বন্ধু রূপক।“

“বন্ধু!” আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। যাকে নিয়ে এত স্বপ্ন দেখা, এত স্বপ্ন গড়া, সব স্বপ্নজাল মুহূর্তের মধ্যে ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে গেল। আমার নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে জল বেড়িয়ে এল। প্রিয়াঙ্কা জিজ্ঞাস করল- “এই রূপক তোমার চোখে জল কেন?” উত্তরে আমি বলি- “আমার বন্ধুর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, আর হয়ত বন্ধুর সাথে কথা হবে না, সেই দুঃখে চোখে জল চলে এল।” প্রিয়াঙ্কা- “না রে কথা তো হবেই।”

হাঁ ঈশ্বর কি ভেবেছিলাম, আর কি দেখছি। আমি যাকে আমার ভবিষ্যৎ ভাবতাম, সে আমাকে বন্ধুর থেকে বেশি ভাবে না। ভাঙ্গা হৃদয় নিয়ে সেদিন বাড়ি ফিরেছলাম। মনে মনে বলে এসেছিলাম- সুখে থাকিস। আর বন্ধু যখন ভেবেছিস, তখন বন্ধু হয়েই থাকব।

সেরা প্রেমের গল্প। মন ছুঁয়ে যাওয়া প্রেমের গল্প প্রেমিক যখন বন্ধু premer kahini
সেরা প্রেমের গল্প। মন ছুঁয়ে যাওয়া প্রেমের গল্প প্রেমিক যখন বন্ধু premer kahini

প্রিয়াঙ্কার বিয়ের পর এখনও সে আমাকে ফোন করে, কিন্তু সেই আগের কথা বলার যে ইচ্ছেটা ছিল সেটি আর নেই। হয়ত হারিয়ে গেছে কোনো মরুভূমির প্রান্তরে। অথবা তলিয়ে গেছে কোনো গভীর সমুদ্রে।  

পড়ুনঃ- সুন্দর প্রেমের গল্প

সুপ্ত প্রেমের বেদনাময় কাহিনী

গল্প-২ সময় থাকতে ভালোবাসার মূল্য দিতে শেখো

আমার ছোট বেলার বন্ধু নিকিতা। হয়েছিল কি, সে আর অনিক নামের একটি ছেলে সম্পর্কে জড়িয়েছিল। এই ঘটনাটি আজ থেকে প্রায় ৪ বছর আগের। দুইজনেই পরস্পরকে খুব ভালবাসত। কিন্তু একদিন তাদের মধ্যে কিছু কারণে ঝগড়া বেঁধে যায়! এরপর যা হওয়ার তাই হল, সামান্য কথা কাটাকাটিতেই নিকিতা দেড় বছরের সম্পর্কে ব্রেক-আপ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। কিন্তু অনিক হয়ত নিকিতাকে একটু বেশি ভালবাসত, তাই সে, আলাদা হওয়ার পক্ষপাতী ছিল না।

সে যাই হোক, এরপর নিকিতা অনিকের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। দেখতে দেখতে একমাস হয়ে যায়, নিকিতা অনিকের সাথে কোনো কথাই বলেনি। প্রায় ছয় মাস পর, তারা আবার দেখা করে, নিকিতাও হয়ত অনিককে খুব মিস করত। সেদিন তারা অনেক্ষন কথা বলেছিল। কিন্তু না, নিকিতা তার অনুভূতি প্রকাশ না করেই সেখান থেকে চলে গিয়েছিল সেদিন। সে তার আগেকার জেদ ধরে রেখেছে।

হার্ট টাচিং লাভ স্টোরি ব্রেকআপ হওয়ার গল্প
হার্ট টাচিং লাভ স্টোরি ব্রেকআপ হওয়ার গল্প

এরপর আবার কিছুদিন পর নিকিতা ও অনিকেতের ফোনে অনেকক্ষণ কথা হয়, নিকিতা কিছুতেই অনিককে বুঝতে দেয়নি, যে সেও এখনও অনিককে ভালোবাসে। একদিন নিকিতা আর তার অনুভূতি লুকিয়ে রাখতে না পেরে অনিক যেখানে ভাড়া থাকত, সেখানে চলে যায়, এবং সেখানে তারা আবার পুনরায় সম্পর্কে ফিরে আসে। তারা স্বীকার করে নেয় যে, উভয়ের অনুপস্থিতি তাদের দুইজনকেই যন্ত্রণা দেয়।

<

কিন্তু তাদের এই পুনরায় সম্পর্কে প্রত্যাবর্তন বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। তাদের মধ্যে আবার ঝগড়া বেঁধে যায়। সেই আবার আগের মতই তারা কথা বলা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু অনিক বেচারি অনেক চেষ্টা করেছিল, নিকিতার সাথে কথা বলার কিন্তু নিকিতা পাত্তা দেয়নি।

এরপর অনিক সিদ্ধান্ত নেয় যে, যেহেতু নিকিতা তাকে পছন্দই করেনা, সেহেতু সে আর তাকে বিরক্ত করবেনা। সেই এই হোস্টেল ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে ভাবে, আর কোনোদিনও সে নিকিতার জীবনে দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়াবেনা। সে চায় সবসময় নিকিতা যেন হাঁসি-খুশি থাকে। এরপর অনিক সেই শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়।

প্রায় একবছর পর, নিকিতার ফোনে পুলিশ ফাঁড়ী থেকে ফোন আসে, তারা জানায় যে, তার বন্ধু অনিক রাস্তায় অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছে। এই কথাটি শোনার পর নিকিতা কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়, তারপর সে অঝোরে কাঁদতে থাকে।

সেরা প্রেমের গল্প। হার্ট টাচিং লাভ স্টোরি
সেরা প্রেমের গল্প। হার্ট টাচিং লাভ স্টোরি
<

এরপর যখন সে পুলিশ ষ্টেশনে যায়, তখন সে জানতে পাড়ে যে, নিকিতার মোবাইল নাম্বার অনিকের এমারজেন্সি কন্টাক্ট নাম্বারে ছিল। সেখান থেকেই নাম্বার নিয়ে তাকে ফোন করা হয়েছে। পুলিশ আরও জানায়, রাস্তা দিয়ে আনমনা হয়ে হাঁটছিল অনিক। পিছন থেকে গাড়ি হর্ন বাজালেও, সে সরে নি। ড্রাইভার ভেবছিলেন অনিক সরে যাবে, কিন্তু তা হয়নি, যার ফলে অনিকের উপর দিয়ে গাড়ি চলে যায়। এই ঘটনাটি শোনার পর, নিকিতা আবার কান্না শুরু করে দেয়। এরপর পুলিশ নিকিতাকে অনিকের মোবাইলটি দিয়ে দেয়।

এই ঘটনার কয়েকদিন পর, নিকিতা অনিকের মোবাইলের ম্যাসেজ গুলি দেখছিল। সে দেখল, ড্রাফট ম্যাসেজে,  লিখা আছে, –

“প্রিয় নিকিতা, আমি তোমাকে কোনো দিনও ভুলবনা। তুমি যেন তোমার জীবনে সুখী হতে পারো, তাই আমি তোমার থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। ভালো থেকো প্রিয়া। তুমি যার সাথেই থাকো না কেন, সুখে থাকো, আমি তোমাকে আমার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ভালোবেসে যাব। অনেক মিস করব তোমায়”

যেহেতু নিকিতা অনিকের নাম্বার ব্লক করে রেখেছে, সেহেতু ম্যাসেজটি নিকিতার কাছে এসে পৌঁছায়নি। এটি দেখার পর নিকিতার হঠাৎ করেই উপলব্ধি হয়, যা কিছু ঘটেছে তার জন্যই ঘটেছে। সে অনিককে ignore না করলে হয়ত, একটি নিষ্পাপ প্রাণ, এভাবে যেতনা। সে নিজেকে আর কোনো দিনও ক্ষমা করতে পাড়বে না।

এরপর নিকিতা তার বাকি জীবন কুমারী অবস্থাতেই কাঁটায়। সে প্রতিদিন অনিকের কবরের কাছে গিয়ে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকত, আর চোখ দিয়ে ঝড়ে পড়ত অশ্রুধারা। তার ইচ্ছা তার মৃত্যুর পর যেন, অনিকের পাশেই তাকেও কবর দেওয়া হয়। তার কথা মতে- “এই জীবনে তো আর হলনা, পরবর্তী জীবন আমরা একসাথে কাঁটাতে চাই।“

সময় থাকতে ভালোবাসার মূল্য দিতে শেখো ছোট প্রেমের গল্প heart touching love story bangla
সময় থাকতে ভালোবাসার মূল্য দিতে শেখো ছোট প্রেমের গল্প Image by Ermal Tahiri from Pixabay

সুতরাং বন্ধুরা, সময় থাকতেই নিজের প্রিয়জনের যত্ন নিতে শেখো। সম্পর্কে থাকলে ঝগড়া হওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু তাই বলে সম্পর্ক ভেঙ্গে দেওয়াটা ঠিক নয়। যদি তোমরা একে-অপরকে সত্যি ভালোবেসে থাকো তাহলে, এতটুকু ঝগড়া মেনে নেওয়া যেতেই পারেই। ঝগড়া ছাড়া সম্পর্ক হয়না। কিন্তু সেই ঝগড়াকে মিটিয়ে নিয়ে, একে অপরের অভিমান মিটিয়ে দিয়ে, পুনরায় পরস্পরের কাছাকাছি আসা, সেটাই তো ভালোবাসা, সেটাই তো প্রেম। যদি এখন সামান্য ঝগড়াই মেনে নিতে না শেখো, তাহলে ভবিষ্যতে তোমরা কিভাবে একে-অপরের সাথে দিন কাটাবে? কিভাবে মিটাবে, একে-অপরের অভিমান?

ভালো থেকো বন্ধু, আর যত্ন নিতে শেখো তোমার প্রিয়জনের।

পড়ুনঃ- হৃদয়বিদারক প্রেমের গল্প

সফল প্রেমের গল্প

এই মন ছুঁয়ে যাওয়া প্রেমের গল্প দুটি পাঠিয়েছে- Anuradha Sarkar(Siliguri, West Bengal, india)

তোমরাও এখন তোমাদের গল্প আমাদের পাঠাতে পারো। গল্প পাঠানোর জন্য, এই পেজের একটু নীচে যাও। নীচে দেখবে “আপনার লেখা প্রকাশ করুন” নামে একটি বাঁটন আছে, সেখানে ক্লিক করে, অতি সহজেই তোমার লেখা পাঠাতে পারো। অথবা তোমার লেখা আমাদের মেল করতে পারো- charpatrablog@gmail.com এই ঠিকানাতে।


Spread the love

Leave a Reply