আজ আরেকটি সুন্দর প্রেমের গল্প নিয়ে আমরা হাজির। এই সেরা প্রেমের গল্প সম্পর্কিত তোমার মতামত জানাতে ভুলো না যেন। আর যদি তুমিও তোমার গল্প শেয়ার করতে চাও, অবশ্যই জানাবে।
সুন্দর প্রেমের গল্প । প্রথম প্রেমের গল্প
সময়টা ছিল শীতকাল, মানে বুঝতেই পাড়ছ, রোদের কদর বেশি। আমি ও আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের রাজগঞ্জ কলেজের গেটের সামনের বসার জায়গাটায় বিন্দাস রোদের মজা নিচ্ছি, চলছে নানান গল্প গুজব, তবে সবার চোখ কিন্তু কলেজের গেটের সামনে। মানে বুঝতেই পাড়ছ, উড়তি বয়সে একটু ফুর্তি করার ইচ্ছা আরকি।
হালকা নিল রঙের সোয়েটার, কালো কুচকুচে কোমর পর্যন্ত লম্বা চুল রূপী কোনো এক মহামানবী এগিয়ে আসছে। সূর্যের কিরনের সাথে তার কপালের কালো টিপ আর ঠোঁটের লিপস্টিক, যেন একসাথে মিশে গেছে। যখন মেয়েটি আমাদের আরও কাছে এল, ততক্ষণে আমার ঘোর কেটে গেছে।
আরে এই মেয়েটাতো স্নেহা। আমি স্নেহার রুপে আগাগোড়া মুগ্ধ। তবে আমি কিন্তু স্নেহাকে বেশ কয়েকবার আমার ভালোলাগার কথা জানিয়েছি, কিন্তু কোনো উত্তর পাইনি। স্নেহা না’ও বলেনি আবার হাঁ ও বলেনি, শুধু হেসেছিল। আর এই জন্যই আমার বন্ধুরা আমাকে বলে স্নেহাও তোকে ভালোবাসে, তুই প্রপোজ কর ওকে।
স্নেহা আমাদের কাছে আসতেই, আমার বন্ধুরা আমার কানে বলতে শুরু করে দিল- দেখ তোর dream girl আসছে, কিছু একটা কর। হুম আমিও আমার মন ঠিক করে নিলাম যে, আজকে স্নেহার কাছ থেকে উত্তর নিবই। দেখতে দেখতে স্নেহা আমাদের পাশ কাটিয়ে ভিতরে চলে গেল।
দুইটা ক্লাসের পড় আমাদের ৩০ মিনিটের ব্রেক, এবার আমি ঠিক করলাম স্নেহাকে বলবই। আমি তার কাছে গিয়ে সাহস করে বলেই ফেললাম- “স্নেহা, আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।“ স্নেহা বলল- “হ্যাঁ অবশ্যই বল না বল” আমি নিজেকে সামলে নিয়ে আমার কথা তাকে বলতেই যাব, এমন সময় স্নেহাই বলে উঠল-“তুমি তো অনেক কিছুই বলেছ, তাই আজকে আমি বলব আর তুমি শুনবে”
এই কথাটি শোনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না, আমার হৃদয় কম্পন অনেক বেড়ে যাচ্ছে, আমার মনে হল এই শীতের দিনেও আমি ঘেমে যাচ্ছি। কিন্তু এরপর সে যা বলল সেই কথা শুনে আমার নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছি না। এত বার বলার পড়েও যে মেয়ে কোনো সাড়া দেয়নি, সেই মেয়েই আমাকে আমার কথার উত্তর আজ নিজেই দিচ্ছে, কি আনন্দই না হচ্ছিল। হ্যাঁ স্নেহা আমার কথা রেখেছে।
কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা গোটা কলেজে লায়লা-মজনুর মত বিখ্যাত হয়ে গেলাম। আমার বন্ধুরা সবাই স্নেহাকে বৌদি বলে ডাকা শুরু করে দেয়। এরপর আমরা দুইজনে মিলে গাজলডোবা সহ আরও বেশ কিছু জায়গায় ঘুরতে যাই। নতুন প্রেমের ভেলাতে ভেসে আমরা তখন মাঝদরিয়ার সৌন্দর্য উপলব্ধি করছি। সপ্তাহে রবিবার-তো একদম হাঁতে ধরাই ছিল, প্রতি রবিবার কোথাও না কোথাও ঘুরতে যাওয়াটা আমাদের পেশাতে পরিণত হয়েছিল।
আমাদের আশেপাশের লোকেদের নজর সবসময় আমাদের উপড়ে। কিন্তু দেখতে দেখতে সেই খুশির দিন শেষ হতে চলল, আমাদের কলেজ জীবনের শেষ দোরগড়ায় দাঁড়িয়ে আমরা। এই সময় আমাদের পেয়ে বসে একেঅপরের থেকে দূরে সরে যাওয়ার ভয়, একে অপরের সাথে সময় না কাটানোর ভয়। আমরা যে আজীবন একসাথে থাকার প্রতিশ্রুতি করেছিলাম সেটি নিমেসে ধ্বংস হতে চলল। এখন বুঝলাম, পৃথিবীর সবথেকে বড় ভয় হল প্রিয়জনকে হারানোর ভয়।
কি জানি এরপর সে কোথায় যাবে, আমি কোথায় যাব। কয়েকদিন আর কিছুই ভালো লাগছিল না। মোবাইলের ওয়ালপেপারে লাগানো আমার ও তার ছবি দেখে মনটা আরও বেশি ভেঙ্গে যাচ্ছে যেন, মনের মধ্যে হতাশাও বাড়ছে। দেখতে দেখতে কলেজ জীবন শেষ হয়ে গেল, অনেক প্রতীক্ষার পড় যাকে কাছে পেয়েছি, তার থেকে এভাবে দূরে সরে যাওয়ার কষ্টটা চেপে রেখে, তার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো ঝাপসা হতে থাকে, ধীরে ধীরে।
আমি মা-বাবার বড় সন্তান, তাই দায়িত্বটাও আমার একটু বেশি, আমার বাড়ি থেকে আমাকে বলে দিয়েছে যে- “এবার কিছু একটা কর বাবা” এই কাতর আবেদনটা সোজাসুজি বুকে এসে লেগেছিল আমার। সে যাই হোক, আমি একটি ভালো বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরির নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি পেলাম। তবে আমি স্নেহাকে যে, ভুলে গেছি তা নয়, এখনও মাঝে মাঝে তার কথা মনে পড়লে, প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠে, কেঁপে উঠে বুকটা, কোনো এক অজানা কারণে, আবার সেই হৃদ স্পন্দন বেড়ে যায়, ঠিক যেমনটি, আগে স্নেহাকে দেখলে হত। এত দিনে স্নেহাও হয়ত আমাকে ভুলে গেছে। ভুলে গেছে হয়ত আমাদের সেই মধুর স্মৃতি গুলি।
কিন্তু তখনই আমার মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন জেগে উঠে, আমি যেহেতু তাকে ভুলতে পারিনি, সে কি করে আমাকে ভুলতে পাড়ে? এই কথাটিই ভেবে নিজের মনকে শান্ত করতাম যে, সে একদিন আবার আমার কাছে ফিরে আসবে, আবার আমরা আগের মত, ঘুরব-ফিরব একসাথে বাদাম খাব, একসাথে বসে পুকুরের মাছগুলিকে খাবার ছুঁড়ে দিব, একসাথে লং ড্রাইভে যাব।
মন না থাকা সত্যেও গেলাম সেই কোম্পানিতে ইন্টার্ভিউ দিতে, এই সব চাকরির প্রতি আমার কোনো আগ্রহ নেই, কিন্তু কি আর করা যায়, পরিবার যখন বলছে। কি জানি কেন, আজ স্নেহার কথা খুবই মনে পড়ছে। ইন্টার্ভিউ এর লাইনে দাঁড়িয়েও স্নেহার চিন্তা আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। আসে পাশের এত মানুষের ভিড়েও কেমন যেন একাকীত্ব আমাকে তাড়া করছে।
কিছুক্ষণ পড় আমার দিবাস্বপ্নকে ভেঙ্গে দিয়ে অফিসের রুম থেকে একজন বেড়িয়ে এসে আমাকে বললেন- “আপনাকে ভিতরে ডাকা হচ্ছে”
আমি ভিতরে গেলাম। ভিতরে গিয়ে দেখি, একজন স্বাস্থ্যবান লোক চেয়ারে বসে আছেন, সামনের টেবিলে অনেক কাগজ পত্র পড়ে আছে।
সেই ব্যক্তিটি আমাকে বসার জন্য বললেন। আমি ধন্যবাদ জানিয়ে বসে পড়লাম। তিনি আমাকে আমার নাম জিজ্ঞাসা করলেন। এরপর আরও অনেক প্রশ্ন করলেন, আমি তার সব প্রশ্নের উত্তর খুবই কনফিডেন্সের সাথে দিয়েছিলাম। এরপর তিনি কিছু আজব প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, যেমন- তোমার বাবা কি করেন? বাড়িতে কে কে আছে? যদিও এই সব প্রশ্ন গুলি শুনে আমি ইতস্তত না হয়ে ঠিক ঠিক বলে দিয়েছিলাম।
তার পরের প্রশ্নটি আমাকে রীতিমত চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল, তিনি জিজ্ঞাসা করলেন-“ তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?” ইন্টার্ভিউ-তে এরকম প্রশ্ন কে করে ভাই? তার প্রশ্ন শুনে আবার স্নেহার কথা মনে পড়ে গেল। যেটা সত্যি সেটাই বলেছি।
এরপর লোকটি বলল- “তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে” এরপর তিনি কলিং বেল বাজিয়ে একজন লোককে ডাকলেন, সেই লোকটিকে বললেন-“ এনাকে নীচে ম্যামের টেবিলে নিয়ে যাও” আমি সেই কর্মচারীর সাথে সেই ম্যামের টেবিলে গেলাম। ম্যাম কি যেন কাজ করছেন, আমার দিকে না ঘুরেই বললেন- স্যার আপনার কত স্যালারি লাগবে? ম্যামের আওয়াজ শুনেই আমার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল। এই আওয়াজটা কেমন যেন, আমার চেনা চেনা লাগছে, এরপর সেই ম্যাম আমার দিকে ঘুরতেই আমার সমগ্র শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল।
আরে এ যে আমার স্বপ্নের রাণী, এ যে স্নেহা। আমি কাঁপা গলায় বললাম-“স্নেহা তুমি” স্নেহা বলল- “কি ভেবেছিলে আমি তোমাকে ভুলে যাব? উঁহু না স্যার না এমনটা কি হয়?” তার কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে জল বেড়িয়ে আসার জোগাড় শুরু হয়ে গেছে, কোনোমতে নিজেকে সামলে নিলাম। স্নেহা আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। এতগুলি মানুষের সামনে একজন মেয়ে যদি এভাবে জড়িয়ে ধরে, তাও আবার আমি এখানে নতুন, কেমন লজ্জাটাই না লাগে বলুন। মুহূর্তের মধ্যে আমি যেন এক অন্য জগতে হারিয়ে গেলাম। যেন মনে হচ্ছিল একজন সর্বস্বান্ত ব্যক্তি তার হারানো দুর্লভ জিনিসটি খুঁজে পেয়েছে।
এরপর স্নেহা আমাকে বলল-“এই অফিসটি আমার বাবার, বাবাকে আমিই রাজী করিয়েছিলাম। তাই বাবাকে বলেই তোমাকে এখানে এনেছি। এটা আমার তরফ থেকে সারপ্রাইজ। আর বাবাও তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন।
এরপর যা হওয়ার তাই হল- happy ending. আমাদের পরিবারের সম্মতেই আমাদের বিয়ে হয়ে যায়। সারাজীবন পাশে থাকার যে পতিশ্রুতি আমরা করেছিলাম, শেষ পর্যন্ত সেটাই পূর্ণ হল। আজ আমরা দুইজনে একসাথে আছি। একদম কাছাকাছি, একদম পাশাপাশি।
আরও পড়ুনঃ–
আমার ভালোবাসা এখন আমার কাছে, এই বিশ্বের অপরূপ সৌন্দর্যে নয়, স্নেহার সৌন্দর্যেই যে আমি মুগ্ধ। ভগবান প্রত্যেককে তার ভালোবাসা ফিরিয়ে দিক, এটাই কামনা করি।
বন্ধুরা তোমরা যদি তোমাদের প্রেমের গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করতে চাও, আমাদের মেইল করতে পারো, charpatrablog@gmail.com অথবা সরাসরি আমাদের পেজের মেসেঞ্জার বক্সে। ভালো থেকে বন্ধু, আর যত্ন নিও তোমার ভালোবাসার। সুন্দর প্রেমের গল্প।। সেরা প্রেমের গল্প।।প্রথম প্রেমের গল্প
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।