রূপকথার গল্প শুনতে কার না ভাল লাগে? রূপকথার গল্পের সেই অসাধারন কাহিনিগুলি জড়িয়ে আছে আমাদের ছোট বেলার স্মৃতির সাথে। তাই আজকের ব্লগে আপনাদের জন্য থাকছে একটি রূপকথার গল্প। এই রূপকথার গল্পটির নাম হল- “রত্নদ্বীপ অভিযানে রাজপুত্র”।

বাংলা নতুন রূপকথার গল্প

সুকোমল রাজ্যের রাজার খুবই অসুখ। রাজবৈদ্য বললেন এই রোগ আমার দ্বারা সারানো সম্ভব নয়। অন্যান্য বৈদ্যরাও বলে দিলেন- রাজার এখন একটিতেই শান্তি, আর সেটি হল মৃত্যু। কারণ উনি যতদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকবেন, ততদিন পর্যন্ত তাঁর শরীরের ঘা শুকানোর সম্ভাবনা খুবই কম। অতএব বেঁচে থাকা মানেই ধীরে ধীরে মৃত্যু বরণের দিকে এগিয়ে যাওয়া। কিন্তু আমাদের শাস্ত্রমতে আত্মহত্যা মহাপাপ। তাই রাজা আত্মহত্যার পথও বেঁছে নিতে পারছেন না। আর এদিকে যন্ত্রণার কষ্টও অসহনীয়।

রাজপুরীতে বিষাদের কালো ছায়া নেমে গেল। রাজার মনে শান্তি নেই, রাণীর মনে শান্তি নেই, রাজপুত্রের মনে শান্তি নেই, এমনকি প্রজাদের মধ্যেও শান্তি নেই। মহারাজ বেঁচে থেকেও মরার মতন।

রূপকথার গল্প বাংলা নতুন গল্প rupkothar golpo bangla new story
রূপকথার গল্প RUPKOTHAR GOLPO

সারা রাজ্যে ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে দেওয়া হল যিনি রাজার এই রোগ ভালো করতে পাড়বেন, তাকে অর্ধেক রাজ্য দিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু রাজ্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেও কেউই এই ঢ্যাঁড়ার কথা শুনে রাজপুরীতে এল না।

দিনের পর দিন অসহ্য যন্ত্রণা নিয়েই মহারাজের দিন কাটে, রাণীর দিন কাটে মহারাজকে সেবা করে। আর এদিকে রাজপুত্রের দিন কাটে, মাথা ভর্তি চিন্তা নিয়ে। দেখতে দেখতে এক বছর কেটে গেল, মহারাজের অবস্থার বিন্দুমাত্র উন্নতি হয়নি।

অক্ষয় তৃতীয়ার পূর্ণ তিথিতে রাজপুরীতে একজন সন্ন্যাসীর আবির্ভাব হল। সন্ন্যাসী গভীর কণ্ঠে বললেন- রাজার রোগ সারবে। তবে রত্নদ্বীপ থেকে পলাশমানিক আনতে হবে। পলাশমানিক শুধুমাত্র রত্নদ্বীপেই পয়ায় যায়। তার সাথে সাথে আনতে হবে, কনকলতার শেকড়। এটিও পাওয়া যাবে, রত্নদ্বীপেই। প্রথমে সেই কনকলতার রস দিয়ে রাজার সর্বাঙ্গে লেপন করতে হবে, তারপর ক্ষতস্থান গুলিতে পলাশমানিক বেঁটে লাগিয়ে দিলেই,কয়েকদিনের মাথায় রাজা ভালো হয়ে যাবেন। রাজা নতুন জীবন পাবেন। তবে রত্নদ্বীপে যাওয়া সহজ নয়, অনেক কষ্ট মাথায় নিয়ে সেখানে যেতে হবে। তারপর রত্নদ্বীপে নরখাদক মানুষদের মোকাবিলা করতে হবে। ওরা যেমন অসভ্য তেমন জংলী। ওখানে যেতে গেলে প্রাণ হাঁতে নিয়েই যেতে হবে।

রোগক্লিষ্ট রাজা বিছানায় শুয়ে সন্ন্যাসীর কথা শুনলেন, তারপর পাত্র-মিত্র রাজপুত্র সবার দিকে তাকালেন।

সবাই মাথা নিচু করলেন, কেউই প্রাণ হাঁতে নিয়ে রত্নদ্বীপে যেতে রাজি নয়।

সবার নীরবতা কাটিয়ে রাজপুত্র বললেন, আমি যাব রত্নদ্বীপে। সেখান থেকে কনকলতা আর পলাশমানিক নিয়ে আসব।

রাণী কেঁদে বললেন, রাজপুত্র ভালোমত চিন্তা কর, তুমিই আমাদের একমাত্র সন্তান। শুনেছি রত্নদ্বীপ থেকে আজ পর্যন্ত কেউই ফিরে আসতে পারেনি। রাজা এদিকে ভীষণ রোগে আক্রান্ত। তারপর তুমিও যদি ফিরে না আস তবে এই রাজ্য রাজাহীন হয়ে যাবে।

রাজপুত্র বললেন- আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি, রত্নদ্বীপে আমি যাবই। আমি কথা দিচ্ছি ৬ মাসের মধ্যে ফিরে আসবই। বাবার এই কষ্ট আমি আর সহ্য করতে পারছি না। অতএব আমি রত্নদ্বীপে যাবই।

রাজপুত্র পরের দিনই প্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং লোক নিয়ে একটি জাহাজে রত্নদ্বীপের অভিযানে বেড়িয়ে পড়লেন। এই জাহাজে করেই সাত সমুদ্র পেরিয়ে যেতে হবে। শুধু সমুদ্র আর সমুদ্র কোনো কূলকিনারার দেখা নেই। জাহাজ চলছে তো চলছেই।

রূপকথার গল্প বাংলা নতুন গল্প rupkothar golpo bangla new story
বাংলা নতুন গল্প BANGLA NOTUN GOLPO

হঠাৎ একদিন পূর্ব আকাশে কালো মেঘে ছেয়ে গেল। ঝড় উঠলো। সাংঘাতিক ঝড় উঠল। এদিকে জাহাজে জল ঢুকছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই জাহাজ ডুবে যাবে। দেখতে দেখতে জাহাজ জলে পূর্ণ হয়ে গেল, এবং জাহাজটি জলে ডুবে গেল।

কে যে কোথায় গেল, তার কোনো হদিশ পাওয়া গেল না।  রাজপুত্র সাঁতরাতে সাঁতরাতে এক নগরে গিয়ে উঠলেন। শুধু একা, কোনো সাথী-মিত্রদের হদিশ নেই।

রাজপুত্র একা একা নগরের পথে ঘুরতে লাগলেন। সঙ্গে অর্থ নেই, এদিকে খিদের জ্বালা। কি আর করা যাবে। রাজপুত্র তার পরনের জামা খুলে বিক্রি করে দিলেন, এতে তার কিছুদিনের আহার জুটে গেল। তারপর আর কোনো উপায় রইল না।

খিদের জ্বালায় কাতর রাজপুত্র একটা ময়রার দোকানে গিয়ে বললেন, আমায় কিছু খেতে দিবে গো? আমি তিনদিন কিছুই খাই নি।

ময়রা বললেন- পকেটে পয়সা আছে?

রাজপুত্র বললেন- না নেই।

ময়রা বিরক্ত হয়ে বললেন- তুমি কে হে, পকেটে পয়সা নেই অথচ খেতে এসেছ?

রাজপুত্র বললেন- আমি ভিনদেশী এক রাজপুত্র।

ময়রা হেঁসে বললেন- রাজপুত্রই বটে। ময়রা রাজপুত্রের মাথায় দুটি চাঁটা মেরে বললেন- যা ভাগ এখান থেকে।

রাজপুত্র মরিয়া হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে লাগলেন। তিনি শেষ পর্যন্ত একটি ফলের দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালেন। দোকানি পয়সা গুণতে ব্যস্ত। এই সুযোগে রাজপুত্র কয়েকটা ফল নিয়ে মাড়লেন এক দৌড়। খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এই জ্বালা যার পায়, কেবলমাত্র সেই বোঝে, অন্যরা আর কি বুঝবে?

এদিকে দোকানদার চোঁর চোঁর করে চেঁচিয়ে উঠলেন।

রাজপুত্র বাজারের ভীরের মধ্য থেকে কাউকে ডিঙ্গিয়ে কারো পা মাড়িয়ে ছুটে চললেন। এদিকে বাজারের অনেক লোক তার পেছেনে ছুটছে। রাজপুত্র ছুটতে ছুটতে দেখলেন, বাজার যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে সমুদ্র রয়েছে, আর পালানোর রাস্তা নেই। এদিকে বাজারের লোকগুলিও তার দিকেই ছুটে আসছে।

আর কোনো উপায় না দেখে, ফল গুলির একটি মুখে নিয়ে, বাকিগুলি পকেটে পুড়ে নিয়ে, দিলেন সমুদ্রে ঝাঁপ। সাঁতরাতে সাঁতরাতে কিছুদূর যাওয়ার পরই তিনি, একটি পালতোলা জাহাজ দেখলেন। তিনি কোনোমতে সাঁতরে সেই জাহাজটিতে গিয়ে উঠলেন, জাহাজে বসে ছিল এক বিদেশী, তিনি রাজপুত্রকে দেখা মাত্রই ছোঁড়া হাতে নিয়ে এগিয়ে এলেন। রাজপুত্র এদিকে ভয়ে কাঠ হয়ে গেছেন। মুখে কোনো কথা নেই।

রূপকথার গল্প বাংলা নতুন গল্প rupkothar golpo bangla new story
বাংলা নতুন রূপকথার গল্প Image by Rujhan Basir from Pixabay
<

রাজপুত্র সেই লোকটির মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন- তুমি আমাকে মেরো না, তুমি আমাকে যা বলবে, আমি তাই করতে রাজী আছি।

লোকটা অনেকক্ষণ পর্যন্ত রাজপুত্রের দিকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত লক্ষ্য করলেন, তারপর ছোঁড়াটাকে নামিয়ে রাখলেন।

রাজপুত্র তীরের দিকে লক্ষ্য করলেন,বাজারের চোঁর ধরতে আসা লোকগুলি তীরে চোঁর খুঁজছে। তাই রাজপুত্র আবার  সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে তীরে যাওয়ার ভাবনা ত্যাগ করলেন। রাজপুত্র জাহাজের পাটাতনের উপর লক্ষ্য করে দেখলেন, রাশি রাশি মুক্তোর ভাণ্ডার।

সেই বিদেশী লোকটি বলল- তুমি আমাদের সঙ্গে থাকলে তোমাকে ঝিনুক থেকে মুক্তো বেড় করার কাজ করতে হবে। এর বিনিময়ে আমরা তোমাকে কিছু মুক্তো ও কিছু খাবার দিব। আমরা দুই মাস বিভিন্ন দ্বীপে ঘুরব, সেখান থেকে মুক্তো সংগ্রহ করব। রাজী থাকলে বল, নাহলে তোমাকে এখানেই টুকরো টুকরো করে হাঙ্গরদের খাইয়ে দেব। অগত্যা রাজপুত্র রাজী হয়ে গেলেন।

রাজপুত্র ভেজা শরীর নিয়েই জাহাজের পাটাতনের উপর ঘুমিয়ে গেলেন। কয়েক ঘণ্টা পর বিদেশী লোকটা তাঁকে ডেকে দিলেন।

সেই বিদেশী লোকটার নাম ঘুঙরু। এই জাহাজের মালিকের নাম লক্ষ্মীকান্ত সওদাগর। জাহাজের মালিক অসুস্থ হয়ে মারা যায়, কিন্তু মালিকের কোনো আত্মীয় না থাকায় সে ঘুঙরুকেই জাহাজের মালিক হিসেবে নিযুক্ত করে যায়। ঘুঙরু ছিল, মালিকের একজন কর্মী। এইসব কথা সেই বিদেশী লোকটি নিজেই রাজপুত্রকে বললেন।

জাহাজ সমুদ্রের মধ্য দিয়ে চলছে তো চলছেই, দিনের পর রাত আসে, রাতের পর আবার দিন আসে। কতদিন পার হয়ে গেল রাজপুত্রের কিছুই মনে নেই।

শেষ পর্যন্ত জাহাজ একটি দ্বীপের কাছে নোঙর ফেলল। রাজপুত্রের কাজও শুরু হয়ে গেল। রান্নার কাজ ছাড়াও, ঘুঙরু সহ বাকি তিনজন লোকের গায়ে তেল মালিশের কাজও রাজপুত্রকে করতে হত। কারণ তারা গভীর সমুদ্রে ডুব দিয়ে দুইহাতে ঝিনুক নিয়ে আসত, রাজপুত্রকে আবার সেই ঝিনুকগুলি ভেঙ্গে মুক্তো বেড় করতে হত। এই কাজে রাজপুত্রকে সাহায্য করত, একটি ছোট্ট ছেলে।

রূপকথার গল্প বাংলা নতুন গল্প rupkothar golpo bangla new story
রাজার গল্প RAJAR GOLPO BANGLA

ঝিনুক থেকে একটা বিশ্রী গন্ধ বেড়িয়ে আসত, কিন্তু রাজপুত্রের কাছে এই কাজ করা ছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই। আবার এই লোকগুলো তাঁকে মুক্তোর ভাগ দিবে কিনা কে জানে? তাই এদিকে রাজপুত্র লুকিয়ে দুটি বড় মুক্তো তার পকেটে ঢুকিয়ে রাখলেন।

কিছুদিন পর জাহাজ নোঙর উঠিয়ে দক্ষিণের দিকে যাত্রা শুরু করল।

একদিন রাজপুত্র গভীর রাতে জাহাজের পাটাতনের উপর বসে তার বাবা-মা কে দেওয়া প্রতিজ্ঞার কথা মনে করছে, কি জানি সে তার কাজ হাসিল করতে পারবে কি না? কিছুক্ষণ পর জাহাজের সেই ছোট্ট ছেলেটি রাজপুত্রের কাছে এসে কানে কানে বলতে লাগল- ঘুঙরুর মতলব ভালো নয়, বাঁচতে চাইলে তুমি এক্ষুনি জাহাজ থেকে পালিয়ে যাও। ঘুঙরু তোমাকে কাজ শেষ হওয়ার পর গলায় ফাঁস লাগিয়ে মেরে ফেলবে। ঘুঙরু লোকটা ডাকাত দলের সর্দার। এই জাহাজটি আগে একজন সওদাগরের ছিল, ঘুঙরু তাঁকে মেরে ফেলে এই জাহাজটিকে নিজের করে নিয়েছে।

প্রতিবার আসার সময় সে একজন নতুন লোক নিয়ে আসে, আর ফেরার সময় তাঁকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে মেরে সমুদ্রের জলে ফেলে দেয়, তোমাকে এখানে মেরে ফেললেও কেউই কিছু টের পাবে না। তাই তুমি পালিয়ে যাও, ওই যে দূরে একটা কালো ভূমির মত দেখা যাচ্ছে, সেটি সম্ভবত তীরভূমি। যাও পালিয়ে যাও।

READ MORE:-

ষ্টেশনের ভুতের গল্প

সফল প্রেমের গল্প

অভিশপ্ত আয়না

রাজপুত্র সেই ছেলেটিকে গলায় জড়িয়ে ধরে বললেন- ধন্যবাদ ভাই তোমাকে, তুমি না বললে, ঘুঙরুর মতলবের কথা আমি কিছুতেই জানতে পারতাম না। এরপর ছেলেটি ঘুমাতে চলে গেল।

রাত প্রায় শেষের দিকে রাজপুত্রের চোখে ঘুম নেই। রাজপুত্র কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর একটি ছোট্ট ছুঁড়ী তার কোমরে গুঁজে নিলেন, ধীরে ধীরে জাহাজের কিনারাতে আসলেন এবং ঝাঁপ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। হঠাৎ কে যেন, পিছন থেকে এসে রাজপুত্রের চুলের মুঠি ধরে ঘাড়ে একটি ছুঁড়ী ঠেকাল। রাজপুত্র কিছু বলার আগেই, কোমর থেকে ছুঁড়ী বেড় করে, লোকটির পেটে ছুঁড়ী বসিয়ে দিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দিলেন।

এবার রাজপুত্রের মনে হাঙরের ভয় পেয়ে বসল। সে দ্রুত তীরভূমির দিকে সাঁতরে যেতে লাগল। কিছুদূর যাওয়ার পর সে লক্ষ্য করল, একটি হাঙ্গর তার দিকেই তেড়ে আসছে। রাজপুত্র বাঁচাও বাঁচাও করে চিৎকার করতে লাগল, কিন্তু কেউই সাহায্যের জন্য এগিয়ে এল না। এদিকে ঘুঙরু হা হা করে হেঁসেই যাচ্ছে, কারণ সে তো রাজপুত্রকে মারতেই চেয়েছিল। এদিকে ভোর হয়ে গেছে, সমুদ্রের জলেও অনেক ঢেউ উঠেছে।

কথায় আছে যার কেউ নেই তার ভগবান আছে, হাঙ্গর রাজপুত্রের কাছে আসতেই, হাঙরের প্রকাণ্ড ঢেউ এসে লাগল রাজপুত্রের শরীরে, একধাক্কায় রাজপুত্র অনেকটা তীরের দিকে চলে গেল, তার শরীরের শক্তি প্রায় শেষ, সে কোনো মতে তীরের বালির উপর চলে গেল, এবং অজ্ঞান হয়ে গেল।

যখন রাজপুত্রের জ্ঞান ফিরে আসল তখন সে দেখল, দুজোড়া কালো পা ওয়ালা লোক, তার থেকে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে রয়েছে। রাজপুত্র ভয়ে আবার অজ্ঞান হবার পালা। কিন্তু সে কোনমতে নিজেকে সামলে নিল।

রূপকথার গল্প বাংলা নতুন গল্প rupkothar golpo bangla new story
রাজপুত্রের গল্প রূপকথার গল্প নতুন গল্প

সেই বুনো লোকগুলির মুখে নানান চিত্র আঁকা। প্রত্যেকের হাতেই একটা করে ঢাল আর বর্শা। রাজপুত্র এর আগে এরকম বুনো লোককে আর দেখেননি। রাজপুত্রের শরীরে যতটুকু শক্তি ছিল, সবটুকু দিয়ে সে আকার-ইঙ্গিতে দেখিয়ে দিল যে সে জল চায়। এরপর জল বলে চিৎকার করেই আবার সে অজ্ঞান হয়ে গেল।

যখন তার জ্ঞান ফিরল তখন সে বুঝতে পারল যে, কেউ তাঁকে ধরে জলে ডোবাচ্ছে, এরপর রাজপুত্র সেখানে জল পাণ করে। ওরা রাজপুত্রকে ধরে কোথায় যেন নিয়ে চলল। তাদের পড়নে রয়েছে, জঙ্গল ও পাতা দিয়ে তৈরি পোশাক। ওদের শরীরের উপড়ে কোনো পোশাক নেই।

হাটতে হাটতে তারা রাজপুত্রকে তাদের আস্তানায় নিয়ে গেল, এরপর তারা একটি কুটীরের সামনে এসে দাড়িয়ে কি যেন চিৎকার করল, তাদের ভাষা রাজপুত্র কিছুই বুঝছিল না। এরপর লোকের হাড় দিয়ে তৈরি একটি মালা পড়া লোক বাইরে বেড়িয়ে এল। রাজপুত্র লোকটিকে সর্দার ভেবে নিল। তার গায়ে মানুষের হাড় দিয়ে তৈরি বিভিন্ন মালা দেখে, রাজপুত্র আরও ঘাবড়ে গেল।

সর্দার মুখের মধ্যে আঙ্গুল দিয়ে একটা বিকট চিৎকার করল, বুনোদের ভাষা রাজপুত্রের মাথায় কিছুই ঢুকছিল না। রাজপুত্র ভাবল তারও কিছু করা উচিত। সে এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখল, একটি ঢোলের মত বস্তু পড়ে আছে, সে দ্রুত সেটি হাতে উঠিয়ে নিয়ে কাপা গলায় গান জুড়ে দিল-

শোন শোন বুনো ভাই,

আমি তোমাদের বন্ধু,

তোমাদের কোনো ভয় নাই।

রাজপুত্রের গানের ভাষা বুনোরা কি বুঝল কি জানি, রাজপুত্র থামতেই সর্দার আবার ঢোলটির দিকে ইঙ্গিত দিয়ে দেখালেন, অর্থাৎ রাজপুত্রের গান সর্দারের ভালো লেগেছে। সে আরও গান করতে শুরু করে দিল, বাকি বুনো লোকেরা রাজপুত্রের গানের তালে তালে তাঁকে ঘিরে নাচতে থাকল।

রূপকথার গল্প বাংলা নতুন গল্প rupkothar golpo bangla new story
BANGLA NOTUN GOLPO বাংলা গল্প

এরপর সর্দার দুইজন বুনোকে কাছে ডেকে নিয়ে গিয়ে, কি যেন বলতে লাগল। এদিকে দিন ফুঁড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে। সেই বুনো লোকগুলি রাজপুত্রকে একটি ঘড়ে নিয়ে গেল। নরম পালকের বিছানা। সেখানে হাত পা ধুয়ে সে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নিল। এতক্ষণে তার ভয় কেটে গেছে।

কিছুক্ষণ পর দুইজন লোক এসে রাজপুত্রকে আকারে-ইঙ্গিতে বোঝাল যে, এবারে খাবার পালা। রাজপুত্র ভোজনের দৃশ্য দেখে চমকে গেলেন, একটা লোকের পা ওপড়ে একটা খুঁটীর সঙ্গে বাঁধা, নীচে আগুন জ্বলছে। বুনোরা সেই ঝোলানো পা থেকে মাংস তুলে নিয়ে খাচ্ছে। কেউ আবার খেতে খেতে নাচছে।

রাজপুত্রকে লোকদুটি সর্দারের কাছে নিয়ে গেল। রাজপুত্রকে দেখে সর্দার হাসলেন এবং তার পাশে বসতে ইঙ্গিত করলেন। এরপর একটা শুয়োর মারা হল, একবাটী রক্ত রাজপুত্রকে আরেকবাটী সর্দারকে দেওয়া হল, রক্ত দেখেই রাজপুত্র শিউরে উঠলেন, কিন্তু তাঁকে এই রক্ত খেতেই হবে, নাহলে তার কপালে কি আছে কি জানে, কোনো মতে নাক বন্ধ করে সে রক্ত খেয়ে নিল।

এরপর একটি ঝলসানো মানুষের শরীর নিয়ে এসে সর্দার ও রাজপুত্রের সামনে রাখা হল, এই দৃশ্য দেখে রাজপুত্রের মূচ্ছা যাওয়ার অবস্থা, কোনো মতে সে নিজকে সামলে নিল। সে ভেবেছিল, তাঁকে এই মাংস খেতে ডাকা হবে না, কিন্তু সর্দার তাঁকে, ইঙ্গিতে সেই মাংস খেতে বললেন, সবার সাথে। সবাই মাংস খেতে ব্যস্ত। রাজপুত্র কোনো উপায় না পেয়ে চোখ বন্ধ করে দুই টুকরো মুখে নিয়ে, ইঙ্গিতে বোঝাল, তার পেট ভরে গেছে, সর্দার রাজপুত্রকে একটি ঢোল দিলেন।

এরপর রাজপুত্রের থাকার জন্য একটি ঘড় তৈরি করে দেওয়া হল। এরমধ্যেই প্রায় একমাস কেটে গেছে।

ঘড় তৈরি হওয়ার পর, সর্দার অনেক বুনো মেয়েকে রাজপুত্রের সামনে সারি বেঁধে দাঁড় করালেন, এবং তাদের মধ্য থেকে ইঙ্গিতে স্ত্রী নির্বাচন করতে বললেন।

রাজপুত্র ঈশাড়া করে সর্দারকে বললেন, সে এখন কোনমতেই বিয়ে করতে চায় না।

কিন্তু সর্দার এই কথা বুঝতে পারল না। দুটো মেয়েকে কাছে ডেকে, রাজপুত্রের হাতে গছিয়ে দিলেন। কোনো উপায় না দেখে, রাজপুত্র সেই মেয়ে দুটিকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হল। 

এদিকে রাজপুত্র এখান থেকে পালানোর পরিকল্পনা করতে লাগল। কিন্তু সে পালানোর কোনো উপায় দেখল না, কারণ বুনোরা সবসময় তাঁকে চোখে চোখে রাখত। ইতিমধ্যেই রাজপুত্র বুনোদের ভাষা কিছুটা আয়ত্ত করে নিয়েছে। পরে সে একজন বুনোর কাছ থেকে জানতে পারে, এই দ্বীপটির নাম হল- কীড়াকূম্বা, যার বাংলা অর্থ হল- রত্নদ্বীপ। রাজপুত্র মনে মনে ভগবানকে ধন্যবাদ জানাল।

রূপকথার গল্প বাংলা নতুন গল্প rupkothar golpo bangla new story
রূপকথার গল্প ADVENTURE STORY BANGLA

তার কাঙ্ক্ষিত বস্তু এই দ্বীপেই আছে, একদিন সে তার এক স্ত্রীকে পাঠাল কনকলতার শেকড় আনতে, সে কনকলতার শেকড় গুলিকে ভালোভাবে লুকিয়ে রেখে দিল।

বাকি রইল পলাশমানিক। এক রাতে রাজপুত্র তার স্ত্রীদের সাথে এটির ব্যাপারে আলোচনা করছিল, তার স্ত্রীদের মধ্যে একজন জানায়, আমি জানি কোথায় রয়েছে পলাশমানিক। কিন্তু সেখানে যাওয়া সহজ না, সেখানে রয়েছে একটি বিশাল বড় এবং বিষাক্ত সাপ। সেখান থেকে কেউই এই সাপের কবল থেকে ফিরে আসতে পারে না। রাজপুত্রের এই বুনো স্ত্রী তাঁকে জমিতে ম্যাপের মত কিছু একটা একে দিক নির্দেশ করে দেয়। আরও জানিয়ে দেয় ওখানে আমাদের যাওয়া বারণ, আপনি কিন্তু ওদিকে আবার যাবেন না। পলাশমানিক দেখতে কেমন সেটিও রাজপুত্র জেনে নেয়। 

এরপর একদিন গভীর রাতে বুনোদের চোখ এড়ীয়ে রাজপুত্র চলল সেই পলাশমানিকের খোঁজে। বুনোস্ত্রীর নির্দেশনা মত সে যায় এবং কিছুদূর যাওয়ার পর রাজপুত্রের বুনো স্ত্রীর দেওয়া সবকিছু মিলে গেল, এবং রাজপুত্র দেখলে এখানে অনেক পলাশমানিক রয়েছে। রাজপুত্র যেই পলাশমানিক হাতে নিয়েছে, সাথে সাথেই একটি বিশাল সাপ রাজপুত্রকে আক্রমণ করল।সাপের লেজের আঘাতে রাজপুত্রের একহাত প্রায় অবশ হওয়ার পালা। এবার  রাজপুত্র কোনোমতে একটি গাছের ডাল ভেঙ্গে সেই ডালটিকে এক হাতে নিয়ে সাপটির সঙ্গে লড়াইয়ে নামল। অনেক লড়াইয়ের পর অবশেষে সাপটিকে কোনো মতে ডাল দিয়ে মেরে ঘায়েল করে রাজপুত্র সেখান থেকে পালিয়ে গেল।

এদিকে রাতও প্রায় শেষ। সে দ্রুত পলাশমানিকটিকে কনকলতার সাথে লুকিয়ে রেখে দিল।

এর কিছুদিন পর রাজকুমার তীরে দেখে ঘুঙরুর জাহাজ নোঙর ফেলেছে। রাজপুত্র সর্দারের সঙ্গে পরামর্শ করে, ঘুঙরুর জাহাজে আক্রমণ করে এবং সেই ছোট্ট ছেলেটিকে বাদে সবাইকে মেরে ফেলে। রাজকুমার কিছু মুক্তো সেই ছোট্ট ছেলেটিকে দেয় এবং কিছু নিজের কাছে রেখে দেয়, বাকি গুলো সে বুনোদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়। বুনোরা এই নতুন চকচকে জিনিসটি পেয়ে খুবই খুশী হয়।

রূপকথার গল্প বাংলা নতুন গল্প rupkothar golpo bangla new story
রূপকথার গল্প RUPKOTHAR GOLPO

জাহাজটা তীরেই ছিল, বুনো বাচ্চারা প্রতিদিন, সেই জাহাজটিতে এসে খেলা করত, একদিন রাতে রাজকুমার কনকলতা এবং পলাশমানিক নিয়ে জাহাজে চলে এল, বুনোরা কেউই টের পেল না, সে এসে সেই ছোট্ট ছেলেটিকে ঘুম থেকে ডেকে তুলল, এবং জাহাজের নোঙর তুলে তাঁরা যাত্রা শুরু করল, পিছনে পরে রইল বুনোদের দেশ আর দুই বুনো স্ত্রী। কয়েকদিন পর রাজপুত্র নিজের রাজ্যে ফিরে এলেন। রাজপুত্রকে দেখে রাণী নিজের চোখের জল সামলাতে পারলেন না, এরপর সন্ন্যাসীর দেওয়া নির্দেশ মত, কনকলতা এবং পলাশমানিক ব্যবহার করে, রাজা ভালো হয়ে উঠলেন। রাজা রোগমুক্ত হয়ে পুত্রকে গোটা রাজ্যের দায়িত্ব দিয়ে দিলেন এবং অশ্রু সজল নয়নে রাজপুত্রকে আলিঙ্গন করলেন।

রূপকথার গল্প বাংলা নতুন গল্প rupkothar golpo bangla new story
BANGLA GOLPO বাংলা নতুন গল্প

এই রূপকথার গল্পটি আপনাদের কেমন লেগেছে, তা আমাদের জানাতে ভুলবেন না যেন।

Spread the love

Leave a Reply