এই পৃথিবীতে রহস্যময় জিনিসের কমতি নেই। পৃথিবীর নানান প্রান্তে বিভিন্ন সময় ঘটে গেছে বা ঘটে যাচ্ছে বিভিন্ন রহস্যময় ঘটনা।অনেক রহস্যময় ঘটনার উত্তর মিললেও, এরকম অনেক রহস্যময় ঘটনা আছে যেগুলির সমাধান, আজও হয়নি। আজকের ব্লগে আমরা কথা বলব, এরকমই কিছু অমীমাংসিত রহস্য নিয়ে।
রহস্যময় ঘটনা।। রহস্যজনক ঘটনা
জাপানের অচেনা দেশ থেকে আসা আগন্তুকঃ-
প্রথম রহস্যময় ঘটনাটি জাপানের একটি বিমান বন্দরের। এই ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৫৪ সালে। জাপানের এয়ারপোর্টে তখন সময় দুপুর প্রায় ১২.৩০। জাপানের টোকিও বিমানবন্দরে, হেনেডা নামক বিমান ল্যান্ড করে। বিমানের প্রত্যেক যাত্রী চেকআউটের জন্য কাউন্টারে চলে যায়। সেখানকার সব যাত্রীদের প্রয়োজনীয় নথীগুলি চেক করা হচ্ছিল। হঠাৎই সেখানকার আধীকারিকেরা আবিষ্কার করেন যে, একজন যাত্রীর, পাসপোর্টে লিখা আছে যে, সেই ব্যাক্তিটি “টরেড” নামের এক দেশ থেকে এসেছেন। আধিকারিকেরা এর আগে কোনোদিনও এরকম দেশের নাম শুনেননি।
দেশটির নাম শোনার পরেই, তাদের লোকটির উপর সন্দেহ হয়। এরপর এই যাত্রীকে সুরক্ষা আধিকারিকদের হাঁতে দিয়ে দেওয়া হয়। সেই ব্যক্তিটিকে জাপানে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান যে, তিনি একজন ব্যবসায়ী, এবং ব্যবসার জন্যই এখানে এসেছেন। এরপর আধিকারিকেরা সেই ব্যক্তির পাসপোর্ট চেক করেন এবং দেশের নাম “টরেড” দেখে অবাক হয়ে যান, কারণ এর আগে এরকম কোনো দেশের নাম তারা শোনেননি। সত্যি কি এরকম নামের কোনো দেশ পৃথিবীতে আছে? এরপর সেই রহস্যময় ব্যক্তিটি জানান যে, এই পাসপোর্টের মাধ্যমে তিনি ইউরোপের বেশ কিছু দেশে ইতিমধ্যে ভ্রমণ করে ফেলেছেন, কিন্তু এরকম ভাবে কোথাও কোনো অসুবিধা হয়নি।
এরপর আধিকারিকেরা সেই মানুষটির পাসপোর্টে দেখেন যে, সেখানে অন্য দেশগুলির যে সিলমোহর ছিল, সেগুলি একদম আসল। কিন্তু এত কিছু দেখার পড়েও, আধিকারিকেরা এটা মানতে নারাজ ছিল যে, আদতেও এরকম নামের কোনো দেশ পৃথিবীতে আছে কি? এরপর আধিকারিকেরা সেই যাত্রীটিকে পৃথিবীর মানচিত্র দেখান এবং জিজ্ঞাসা করেন যে, “টরেড” দেশটি আসলে কোথায়?
এরপর সেই যাত্রীটি দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপ মহাদেশের একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র অ্যান্ডোরা নামের একটি দেশকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন। এরপর সেই ব্যক্তিটি জানায়, সে বুঝতে পারছেনা তার দেশ “টরেড” এর জায়গায় “অ্যান্ডোরা” কেন লেখা আছে! আধিকারিকরা কিছুতেই বুঝতে পারছিলেননা যে, এই ব্যক্তিটি এরকম কাল্পনিক দেশের নাম কেন বলছেন, আবার তার কাছে যতসব নথিপত্র, পাসপোর্ট, ভিসা ছিল সবগুলিতে তার দেশের নাম “টরেড” লিখা আছে।
এরপর আধিকারিকেরা তাকে প্রশ্ন করে, সে এখানে কার সাথে দেখা করতে এসেছে। জবাবে সেই ব্যক্তিটি জাপানের একটি কোম্পানির নাম জানায় এবং যে হোটেলে তিনি রুম বুকিং করেছিলেন, সেটিও জানান। এরপর আধিকারিকেরা সেই কোম্পানি এবং হোটেলে যোগাযোগ করেন, এবং জানতে পাড়েন যে, এরকম কোনো ব্যক্তির ব্যবসার জন্য তাদের সঙ্গে দেখা করার কথা নেই। হোটেলটি জানায় এরকম কোনো ব্যক্তি তাদের কাছে রুম বুক করেনি।
এরপর সেই আধিকারিদের সন্দেহ হয় এবং তারা ভাবেন যে, এই মানুষটি হয়ত কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে এসেছে এবং সে নিজের পরিচয় গোপন রেখে কোনো কাজ হাসিল করতে চাইছে। তাই সেই মানুষটিকে একটি ঘড়ে বন্দী করে রাখা হয় এবং পুলিশি পাহারার মধ্যে তাকে রাখা হয়। পরের দিন, যখন সেই বন্দী মানুষটির ঘড়ের দরজা খোলা হয়, তখন সেখানে উপস্থিত সবাই থমকে যান, কারণ মানুষটি রাতের মধ্যেই ভ্যানিশ হয়ে গেছে। কিন্তু এত কঠোর পাহারার মধ্য দিয়ে পালানো সম্ভব নয়, আর রুমটির জানালাগুলিও আগে থেকেই সিল করা ছিল, তাই সেগুলি দিয়ে পালানোর কোনো প্রশ্নই উঠে না।
এরপর আধিকারিকেরা আরও অবাক হন যখন তারা দেখেন যে, সেই রহস্যময় মানুষটির প্রয়োজনীয় সব নথিপত্রও রাতের মধ্যেই ভ্যানিশ হয়ে গেছে। কেউই কিছুই বুঝতে পারছিলেন না যে, এত কিছু ঘটনা কিভাবে ঘটে গেল?
এরপর সেই ব্যক্তিটির খোঁজ আর কোথাও পাওয়া যায় নি। ইন্টারনেটে এই বিষয়ে অনেক মানুষই অনেক কথা বলেছেন। কারও মতে- “এই রহস্যময় ব্যক্তিটি অন্য গ্রহ থেকে এসেছে। সে টাইম মেশিন দিয়ে এখানে এসেছে। যখন যে দেখল যে, সে বিপদে পড়ে যাচ্ছে তখন সে হঠাৎই বেপাত্তা হয়ে যায়।“ কিন্তু এত পাহারার মধ্যে সেই মানুষটি কিভাবে পালিয়ে গেল, এবং প্রয়োজনীয় নথীগুলি সে কিভাবে নিল, সেই প্রসঙ্গে কোনো উত্তর আজও পাওয়া যায়নি।
পড়ুনঃ- পৃথিবীতে প্রাপ্ত রহস্যময় বস্তু
ফ্লাইট ৫১৩ রহস্য। ৩৭ বছর পড় আবার ফিরে আসা বিমানঃ-
কেমন হয় যদি ৩৭ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া একটি বিমান হঠাৎ করেই আবার ফিরে আসে, হুম এরকম অবিশ্বাস্য ঘটনাই ঘটেছিল, ফ্লাইট নাম্বার ৫১৩ এর সঙ্গে। ফ্লাইট ৫১৩ চিলির রাজধানী সান্টিয়াগোর একটি যাত্রীবাহী বিমান। ১৯৫৪ সালে সান্টিয়াগো এয়ারলাইন্স এর এই বিমানটি পশ্চিম জার্মানির আখেন নামক শহর থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু কেউই জানত না যে, এই বিমানটি ইতিহাসের পাতায় এক নতুন অধ্যায় যুক্ত করতে চলেছে।
আকাশে উড়ার কিছুক্ষণ পরেই এই বিমানটি ৯২ জন যাত্রী নিয়ে রাডার থেকে হারিয়ে যায়। খবরটি চাওর হতেই, বিশ্বের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এই বিমানটির খোঁজে নেমে পড়ে কিন্তু তারা এই হারিয়ে যাওয়ার রহস্যের সমাধান করতে পারেননি। কোথায় বিমান ভেঙ্গে পড়ার খবরও মেলেনি। অনেকে ভেবে নেন যে, আটলান্টিক মহাসাগরের উপর দিয়ে যাওয়ার সময়, এই বিমানটি ভেঙ্গে পড়ে। কিন্তু আটলান্টিক মহাসাগরে বিমানটির কোনো ধ্বংসাবশেষে মেলেনি। তাদের এই মনে করার কারণটি হল, রাডার থেকে বিমানটি হারিয়ে যায়, তখনই যখন এটি আটলান্টিক মহাসাগরের কাছাকাছি অবস্থানে ছিল।
কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে ৩৭ বছর পড় ব্রাজিলের Porto Alegre বিমান বন্দরের কন্ট্রোল রুমে কর্মরত ব্যক্তিদের রাডার সীমায় একটি বড় বিমান দেখা যায়। এই বিমানটি কোনো অনুমতি ছাড়াই বিমান বন্দরে ল্যান্ড করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। কন্ট্রোল রুমের কর্মীরা পাইলটের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও কোনো উত্তর তারা পাননি। এই ঘটনাটি দেখার পড় কন্ট্রোল রুমের আধিকারিকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েন, এবং দ্রুত ভয়েস ম্যাসেজ দ্বারা সেই ল্যান্ডিং প্লাটফর্ম খালি করার নির্দেশ দেন। কিছু সময় পড়, বিনা গাইডেন্সে সেই বিমানটি রানওয়েতে ল্যান্ড করে।
যখন আধিকারিকেরা বিমানটিকে দেখে, তখন তারা দেখে যে, বিমানটির গায়ে সেন্টিয়াগো বিমানবন্দরের নাম লিখা এবং ফ্লাইট নাম্বারও সেখানকারই। তারা দেখে যে, বিমানটি মনে হয় অনেক পুরানো। এত পুরানো বিমান আকাশে কিভাবে উড়ে এল, সেই ভাবনাই ঘুরতে থাকে আধিকারিকদের মাথায়। এরপর বিমান বন্দরের কর্মীরা বিমানটির দরজা খুলে ভিতরে ঢুকেন, এবং তারা দেখেন যে, প্রত্যেক যাত্রীর কঙ্কাল তাদের সীটে একদম ঠিকমত বসে রয়েছে। এরপর ককপীঠে দেখা যায় যে, পাইলটের কঙ্কালের হাত কন্ট্রোলারের উপর, এবং এই ঘটনা দেখে সবাই তাজ্জব বনে যায়। ৯২ টি কঙ্কাল নিয়ে জাহাজটি ল্যান্ড করেছিল, তাও আবার এতদিন পর, অবাক হওয়ার কথাই বটে!
পড়ুনঃ- পৃথিবীর রহস্যময় 3 টি জায়গা
আধিকারিকেরা কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেননা, যে একটি বিমান বিনা রেডিও কন্ট্রোলে কিভাবে,ল্যান্ড করে! বিমানের পাইলট ও যাত্রীরা অনেক আগেই মারা যাওয়া সত্যেও বিমানটি এতদিন উড়তে থাকার পর, হঠাৎ কঙ্কাল নিয়ে ল্যান্ড করার এই ঘটনা সত্যি অবিশ্বাস্য। একটি বিমান কিভাবে এতদিন বেপাত্তা হয়ে, আবার ফিরে আসে, এই ঘটনা কিছুতেই কারও মাথায় ঢুকছে না। এটি কি সত্যি টাইম ট্র্যাভেল, নাকি অন্যকিছু! কিন্তু এতপুরানো একটি বিমান কিভাবে এতদিন আকাশে উড়বে, আর জ্বালানিও বা সে কোথায় পাবে সেই প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি। সে যাই হোক এই রহস্যময় ঘটনাটি নিতান্তই গোলকধাঁধার মত অবস্থার সৃষ্টি করেছে।
আপনার গুরুত্বপূর্ণ মতামত কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আর নতুন আপডেটের জন্য আমাদের ফেসবুক পেজ এবং ফেসবুক গ্রুপে জয়েন হতে ভুলবেন না যেন।
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।