আজ আমরা মানুষের মস্তিষ্কের অজানা তথ্য জানব। আমাদের ব্রেনের সঙ্গে যুক্ত এই অবাক করা তথ্য গুলি অনেক অনুসন্ধানের ফল। আমাদের শরীরের একটি অন্যতম জটিল এবং প্রধান অঙ্গ হল মস্তিষ্ক। যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে শুরু করে, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ সবই আমাদের মস্তিষ্কের মাধ্যমে হয়ে থাকে। তাই আজ রইল মস্তিষ্কের ৩০ টি অজানা তথ্য।

মস্তিষ্কের অজানা তথ্য। মানব শরীরের অজানা তথ্য।

১. আমাদের প্রতিদিন চলতে ফিরতে সারাদিন যা কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়, তা প্রায় সবই আমাদের ব্রেনে স্টোর হয়ে থাকে। শুধু আমরা মনে করতে পারিনা বলে তা অনুধাবন করতে পাড়িনা।

২. আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা সাধারণ ছোট ছোট কথা, যেগুলি কেবলমাত্র মজার ছলে জিজ্ঞাসা করা হয়, সেগুলিরও উত্তর দিয়ে দেন, অর্থাৎ বোকাটে প্রশ্ন গুলিরও উত্তর দিয়ে দেন। এটি আসলে একটি সুস্থ ব্রেনের লক্ষণ।

৩. রাস্তায় অথবা ক্যাফেতে কাউকে দেখলেই আমাদের অনেকসময় পছন্দ হয়ে যায়। কিন্তু আপনি জানেন কি, আপনার ব্রেন কাউকে আপনার পছন্দ হবে নাকি অপছন্দ হবে তা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে প্রায় ৯০ সেকেন্ড সময় নেয়। এই সময় টুকুর মধ্যেই আপনার মস্তিষ্ক ঠিক করে নেয়, কাকে আপনি পছন্দ করবেন আর কাকে ইগ্নোর করবেন।

৪. আপনার বয়স যখন ৩০ বছর পাড় হতে শুরু করবে তখন ধীরে ধীরে আপনার মস্তিষ্কের ওজন কমতে শুরু করবে। আর এই সময়ের পর থেকেই আমাদের স্মৃতি কমতে শুরু করে। এরপর যতই বয়স বাড়তে থাকে ততই স্মৃতি ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে।

মস্তিষ্কের অজানা তথ্য
মস্তিষ্কের অজানা তথ্য

৫. সারাদিন ভালোভাবেই আমরা চলাফেরা করি, কিন্তু সারাদিনের বা কোনো সময় ঘটে যাওয়া বিশেষ ঘটনা ঘটনা রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় আমাদের মাথায় চলে আসে। যার ফলে আমাদের ঠিকমত ঘুম আসে না। এই সমস্যাটি সমাধানের জন্য, যখনই এরকম চিন্তা মাথায় আসতে থাকবে তখনই বিছানা থেকে উঠে আপনাকে একটি কলম এবং খাতা নিয়ে আপনার মাথায় যে চিন্তাটি আসছে সেটি লিখে ফেলুন, দেখবেন আপনার মাথা অনেক রিলেক্স ফিল করবে।

৬. যখন একজন মানুষ মারা যায়, তখন সাত মিনিট পর্যন্ত আমাদের মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে। এই সময়টিতেই মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিশেষ মুহূর্ত গুলি এক পলকে তার সামনে এসে হাজির হয়ে যায়।

৭. চকোলেট খাওয়ার সময় আমাদের দেহে যে রাসায়নিক পদার্থ বেড়িয়ে আসে, ঠিক প্রায় একই রকম পদার্থ আমাদের মস্তিষ্ক থেকে বেড়িয়ে আসে যখন আমরা প্রেমে পড়ি। আর এরফলেই আমাদের মস্তিষ্কে অনেকটা রিলেক্স ফিলিং আসে।

৮. আমাদের মস্তিষ্ক সেই সমস্ত মানুষদের প্রতিই সবথেকে দ্রুত সাড়া দেয়, যাদের পছন্দের সাথে আপনার পছন্দের মিল রয়েছে, তারপর সাড়া দেয়, যে মানুষকে আপনি চেনেন তার উপর।

৯. অনেকেই আছেন যারা সবার সাথে গল্প করছেন অথচ তাকে কেউ কটাক্ষ করলে বুঝতেই পাড়েন না। কোনো প্রতিক্রিয়াও দেখান না। এরকম ক্ষেত্রে আগে থেকেই সাবধান হয়ে যাওয়া উচিত, কারণ এটি আসলে আগন্তুক কোনো ব্রেনের অসুখের লক্ষণ।

১০. আপনার মস্তিষ্কের গঠন, যখনই আপনি নতুন কিছু শেখেন, তখনই কিছুটা পরিবর্তিত হয়।

১১. আমাদের মস্তিষ্কের মূল আকাঙ্খা বা চাহিদা হল চারটি জিনিস। এগুলি হল- খাদ্য, জল, ঘুম এবং সংগম (sex)।

১২. আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে তথ্যের আদান প্রদান হয়ে থাকে। আমাদের মস্তিষ্কের সবথেকে কম যেটি গতি যার মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদান হয়ে থাকে সেটি হল ২৬০ মাইল/ঘণ্টা।

মস্তিষ্কের অবাক করা তথ্য মাথার অজানা তথ্য
মস্তিষ্কের অবাক করা তথ্য মাথার অজানা তথ্য

১৩. মস্তিষ্কের গঠন খুবই জটিল হয়ে থাকে। আমাদের ব্রেনে প্রায় ১০০ বিলিয়ন নিউরন এবং প্রায় ১.১ ট্রিলিয়ন কোষ থাকে।   

১৪. মনুষ্য মস্তিষ্কের প্রায় ৭৫% অংশই জল দিয়ে গঠিত। কিন্তু সেই জল যদি আবার বাইরে থেকে সেখানে চলে যায় (দেহের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া ব্যতিরেকে) তাহলে আবার সেই জলটিকে ব্রেন গ্রহণ করেনা এবং মস্তিষ্কের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

১৫. যখন কোনো ব্যক্তি ঘুমায় তখন তার মস্তিষ্ক একপ্রকার হরমোন নির্গত করে, এরফলে মানুষের শরীর প্যারালাইজ বা পক্ষাঘাত গ্রস্থ হয়ে পড়ে।

পড়ুনঃ- ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা

১৬. আমরা নাক দিয়ে যে পরিমাণ অক্সিজেন গ্রহণ করি তার প্রায় ২০%-ই মস্তিষ্ক শুষে নেয়।

১৭. আপনি যখন ছোট ছিলেন তখন আপনার মা আপনাকে হয়ত নিশ্চয় বলেছে- “জোড়ে জোড়ে বই পড়, আমি যেন রান্না ঘড় থেকে শুনতে পাই” হ্যাঁ মায়ের এই কথাটির একটি বিজ্ঞান সম্মত ভিত্তি আছে। মানুষের ব্রেন, বিশেষত ছোট বাচ্চাদের ব্রেন জোড়ে জোড়ে শব্দ করে বই পড়ার ফলে সুষ্ঠু বিকাশ প্রাপ্ত হয় এবং মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।  

১৮. আমাদের কম্পিউটার যেমন রিফ্রেশ করতে হয়, মোবাইলে যেমন cache ক্লিয়ার করতে হয় ঠিক তেমনই আমাদের মস্তিষ্ককেও রিফ্রেশ করতে হয়। আর এই কাজটা আমাদের মস্তিষ্ক প্রতি ৯০ মিনিটে প্রায় একবার করে। এরফলে আমাদের মস্তিষ্ক পুনরায় কাজ করার শক্তি পেয়ে যায়।

১৯. মস্তিষ্কের প্রতিটা ভাগের আলাদা আলাদা কাজ রয়েছে এবং প্রতিটা কাজের জন্য কেবলমাত্র ব্রেনের ১০% অংশ সক্রিয় থাকে। বাকি অংশটি সক্রিয় থাকেনা।

মানব শরীরের অজানা তথ্য unknown facts of our brain
মানব শরীরের অজানা তথ্য unknown facts of our brain image
<

২০. অনেকের হাতের লেখা খারাপ হয়ে থাকে। কিন্তু আপনি কি জানেন এই ধরনের মানুষদের হাতের তুলনায় মস্তিষ্ক অনেক দ্রুত হয়ে থাকে।

২১. আমাদের ব্রেন কখনোই ব্যাথা অনুভব করেনা। কিন্তু শরীরের অন্যান্য অংশকে ব্যাথা অনুভব করাতে সাহায্য করে।

২২. আমাদের মধ্যে অনেকেই খুবই ঘেমে যান, কিন্তু আপনি কি জানেন প্রায় ৯০ মিনিট অনবরত যদি আপনি ঘামতে থাকেন, আপনার মস্তিষ্ক প্রায় এক বছরের মিলিত ক্লান্তির সমান ক্লান্তি অনুভব করে।

পড়ুনঃ- পৃথিবীর অজানা তথ্য

২৩. আমাদের মস্তিষ্ক এত দ্রুত কাজ করে যে, মাত্র ১৩ মিলিসেকেন্ডে দেখা কোনো ছবিকেও বোঝার ক্ষমতা রাখে।

২৪. আপনি হয়ত ভেবে থাকবেন, অপারেশনের ফলে যদি আমাদের মস্তিষ্কের অর্ধেক অংশ কেটে বাদ দেওয়া হয়, তাহলে আমাদের অনেক স্মৃতি হয়ত চলে যাবে, কিন্তু আপনি কি জানেন আমাদের মস্তিষ্কের অর্ধেক অংশ কেটে বাদ দিলেও মস্তিষ্ক থেকে কোনো স্মৃতিই বাতিল হয়না। তবে এরফলে নানান অসুবিধা আপনার দেখে দেবে।

২৫. আপনি হয়ত শুনে থাকবেন যে, আমরা যখন জেগে থাকি তখন আমরা প্রায় ২০০০০ বার চোখের পলক ফেলি এবং এরফলে আমরা সারাদিনে প্রায় ৩০ মিনিট অন্ধ থাকি, কিন্তু এই তথ্যটি ভুল, কারণ আমাদের মস্তিষ্ক আগে থেকেই আমাদের সামনের বস্তুটির অবয়ব করে রাখে। যার ফলে আমরা কোনো সময়ই অন্ধ থাকিনা।

২৬. জানেন কি, মানুষ দিনের বেলা থেকে রাতের বেলায় বেশি বৃদ্ধি পায় (উচ্চতা)। আসলে আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের মস্তিষ্কে অবস্থিত পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে একপ্রকার হরমোন নিঃসৃত হয়, যা আমাদের শরীরের উচ্চতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

২৭. আমাদের কম্পিউটার অথবা মোবাইলের একটি নির্দিষ্ট ধারণ ক্ষমতা আছে। যাকে আমরা মেমোরি বলে থাকি। সেই নির্দিষ্ট কোঠা পূর্ণ হলে আর কোনো কিছুই সেখানে রাখা যায়না। কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন যে, মানুষের মস্তিষ্কের মেমোরি আনলিমিটেড অর্থাৎ কোনোদিনও পূর্ণ হয়না। উদাহরণ স্বরূপ– সময়ের সাথে সাথে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা আমাদের মনে থেকে যায়।

মস্তিষ্কের অজানা তথ্য মানব শরীরের অজানা তথ্য
মস্তিষ্কের অজানা তথ্য মানব শরীরের অজানা তথ্য

২৮. যদি আপনি দিনের অনেকটা সময় মোবাইলের সাথে কাটাচ্ছেন কিন্তু মোবাইলে শুধু ফালতু কাজই করছেন, তাহলে এই বদ-অভ্যাসটি আপনাকে দ্রুত ছাড়তে হবে, কারণ এর ফলে ব্রেনে টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

২৯. জানেন কি, টিভি বা মোবাইল দেখার ফলে আমাদের তথা বাচ্চাদের ব্রেন কম ব্যবহার হয়, যার ফলে কাজের অভাবে ব্রেন ধীরে ধীরে তার কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কিন্তু এর পরিবর্তে বাচ্চাদের যদি গল্পের বই পড়তে দেওয়া হয় বা গল্প শোনানো হয়, তাহলে তাদের ব্রেনে সেই গল্পের একটি প্রতিকৃতি তৈরি হয়। যার ফলে ব্রেনকে অনেক কাজ করতে হয়। কারণ গল্প শুনে সেই গল্পটিকে প্রসেস করে, ছবি তৈরি করতে হয়, যার ফলে ব্রেনের কাজ বেড়ে যায়, এবং মাস্তিস্ক প্রখর হয়।

পড়ুনঃ- এমনটা কেন হয়?

৩০. প্রতিদিন অন্তত ১৫-২০ মিনিট বই পড়ার অভ্যেস গড়ে তুলুন। এরফলে আমাদের মস্তিষ্কের নিউরোন মজবুত হয়। আর বই পড়ার ফলে ঘুমও খুব ভালো হয়। এই কথাটির পরীক্ষা আপনি এভাবে করতে পাড়েন- ঘুমাতে যাওয়ার আগে, মোবাইল না ঘেঁটে ১০-১৫ মিনিট কোনো বই পড়ুন, দেখবেন দ্রুত ঘুম আসবে আর ঘুমও গভীর হবে।

মানব মস্তিষ্কের অজানা তথ্য গুলি সম্পর্কিত আপনার মতামত আমাদের কাছে পৌঁছে দিতে ভুলবেন না। প্রতিদিন আপডেটের জন্য আমাদের ফেসবুক পেজ অবাক বিশ্ব অথবা গ্রুপ amazing fact (অজানা তথ্য) গ্রুপে যুক্ত হতে ভুলবেন না। মানব শরীরের অবাক করা তথ্য মাথার অজানা তথ্য

Spread the love

Leave a Reply